‘আমি সারা জীবন ভাগ্যবান ছিলাম। সবকিছুই আমাকে দেয়া হয়েছিল- চেহারা, খ্যাতি, সম্পদ, সম্মান, ভালবাসা। কিন্তু তারপরও আমি বিপর্যস্ত হয়েছি। ভয়ানক অসুস্থতা, ধ্বংসাত্মক আসক্তি, বিয়ে ভেঙে যাওয়া- এসবই ঘটেছে আমার জীবনে।’ কথাগুলো হলিউডের অন্যতম কিংবদন্তি অভিনেত্রী এলিজাবেথ টেইলরের। দুইবার অস্কার বিজয়ী এই অভিনেত্রী পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে আলোচনায় ছিলেন প্রেম ও বিয়ে সংক্রান্ত কারণে। একজনকে দুইবারসহ তিনি মোট আটবার বিয়ে করেন। বিয়ে ও বিচ্ছেদ যেন অবধারিত এক নিয়তি হয়ে উঠেছিল এলিজাবেথের জীবনে।
এলিজাবেথ টেইলরের প্রথম স্বামী ছিলেন কনরাড হিল্টন, যিনি বিখ্যাত হিল্টন হোটেল পরিবারের একজন সদস্য ছিলেন। ১৯৫০ সালে তারা বিবাহ করেন, তখন এলিজাবেথের বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর। তবে তাদের বিবাহ মাত্র ৮ মাস স্থায়ী হয় এবং ১৯৫১ সালে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। হিল্টনের অমার্জিত ও সহিংস আচরণই ছিল বিচ্ছেদের প্রধান কারণ।
এলিজাবেথের দ্বিতীয় স্বামী ছিলেন ব্রিটিশ অভিনেতা মাইকেল ওয়াইল্ডিং, যিনি এলিজাবেথের চেয়ে ২০ বছরের বড় ছিলেন। ১৯৫২ সালে তারা বিয়ে করেন। এই বিয়ে প্রায় পাঁচ বছর স্থায়ী হয়। ১৯৫৭ সালে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যান।
এলিজাবেথ টেইলরের তৃতীয় স্বামী ছিলেন প্রযোজক মাইক টড। তাদের বিয়ে খুব সুখী ছিল বলে মনে করা হয়। টডের সঙ্গে তার সম্পর্ক বেশ গভীর ছিল। তবে দুর্ভাগ্যবশত, মাইক টড ১৯৫৮ সালে একটি বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান। টডের মৃত্যু এলিজাবেথকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। তাই বলে আর কাউকে বিয়ে করেন নি, এমনটি ঘটেনি।
মাইক টডের মৃত্যুর পর, এলিজাবেথ টেইলর সম্পর্ক গড়েন এডি ফিশার নামে এক গায়ক ও অভিনেতার সঙ্গে। এডি ফিশার তখন ডেবি রেইনল্ডসের সঙ্গে সংসার করছিলেন। এলিজাবেথ ও এডির সম্পর্ক নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছিল, কেননা এডি তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে এলিজাবেথকে বিয়ে করেছিলেন। পূর্বের নিয়ম মেনে অবধারিতভাবে ১৯৬৪ সালে এলিজাবেথ ও এডির বিচ্ছেদ ঘটে।
এলিজাবেথ টেইলরের জীবনের সবচেয়ে আলোচিত ও জটিল সম্পর্ক ছিল রিচার্ড বার্টনের সঙ্গে। তারা ‘ক্লিওপেট্রা’ সিনেমায় কাজ করার সময় প্রেমে পড়েন এবং ১৯৬৪ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের সম্পর্ক ছিল উত্তাল, গভীর ও প্রেমময়। ১৯৭৪ সালে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। তবে এবারের ঘটনাটি একটু ব্যতিক্রম ও বিরল। কেননা বিচ্ছেদের পর, এলিজাবেথ ও রিচার্ড আবার মিলিত হন এবং ১৯৭৫ সালে আবার বিয়ে করেন। তবে এই বিয়েও স্থায়ী রূপ পায় নি এবং ১৯৭৬ সালে তারা আবার বিচ্ছেদের পথে হাঁটেন। তাদের সম্পর্ক প্রেমময় হলেও, এর মধ্যে ঝগড়া ও মনোমালিন্য ছিল খুবই সাধারণ ঘটনা।
এলিজাবেথ টেইলরের সপ্তম স্বামী ছিলেন রাজনীতিবিদ জন ওয়ার্নার। ১৯৭৬ সালে তারা বিয়ে করেন। ওয়ার্নার ছিলেন একজন মার্কিন সেনেটর এবং তার রাজনৈতিক জীবন এলিজাবেথের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৮২ সালে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে।
এলিজাবেথের অষ্টম ও শেষ স্বামী ছিলেন ল্যারি ফোর্টেনস্কি। ল্যারি ছিলেন একজন সাধারণ নির্মাণ শ্রমিক, যাকে এলিজাবেথ পুনর্বাসন কেন্দ্রে থাকার সময় চিনেছিলেন। ১৯৯১ সালে তাদের বিয়ে হয়, ১৯৯৬ সালে বিচ্ছেদ।
সবশেষ ল্যারি ফোর্টেনস্কির সঙ্গে বিচ্ছেদের পর, এলিজাবেথ আর কখনও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হননি ঠিক, তবু নবম বিয়ের গুজব ছড়িয়েছিল। বিশেষ করে কলিন ফারেলের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে বেশ কিছু সময় মিডিয়ায় আলোচনা হয়। তবে সেটি বিয়ে পর্যন্ত গড়ায় নি। ৮ স্বামীর মধ্যে তিনজনের ঘরে রয়েছে এলিজাবেথ টেইলরের চার সন্তান।
এলিজাবেথ টেইলর দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। তার হার্টের সমস্যা ছিল গুরুতর। কংজেসটিভ হার্ট ফেইলিওর (congestive heart failure)-এর জন্য লস অ্যাঞ্জেলেসের সিডার্স-সিনাই মেডিক্যাল সেন্টারে ভর্তি হন এই অভিনেত্রী। প্রায় ছয় সপ্তাহ হাসপাতালে থাকার পর, ২০১১ সালের ২৩ মার্চ, ৭৯ বছর বয়সে মারা যান বর্ণাঢ্য ও রহস্যময় জীবনের অধিকারী এলিজাবেথ টেইলর।
Leave a Reply
Your identity will not be published.