বলিউডের দেবী

বলিউডের দেবী

সুন্দর তকমা তার নামের সঙ্গে লেগে আছে। নাম তার শ্রীদেবী। এই রূপের রানী তার অভিনয়জীবনের পাঁচ দশক (২০১৭) পূর্ণ করেছেন। সেইসঙ্গে যুক্ত হয়েছে তিনশতম ছবির মাইলফলক। অভিনয়জীবনের এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় পাঁচটি ভাষার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। রূপে এবং অভিনয়গুণে দর্শকের হৃদয়ে সহজেই স্থান করে নিয়েছেন বলিউডের এই প্রথম নারী সুপারস্টার। এবারের বিশেষ আয়োজন এই বলিউড সম্রাজ্ঞীকে নিয়ে।

শ্ৰীকথা

রুপালি জগতে শ্রী আম্মা ইয়াঙ্গার আইয়াপ্পা নামে কেউ হয়তো তাকে চিনবে না। শ্রী রয়ে গেছে সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেবীর মহিমা। তিনি শ্রীদেবী। ভিন্ন ঘরানা থেকে পুরোপুরি বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রে নানা চরিত্র বৈচিত্র্যে নিজের জাত চিনিয়েছেন এই দক্ষিণী সুন্দরী। দক্ষিণী চলচ্চিত্র থেকে বলিউড সকল জায়গায় তিনি সফল এবং জনপ্রিয়। 

শিশুশিল্পী 

তামিল বাবা এবং তেলেগু মা পরিবারে জন্ম নেওয়া শ্রীদেবী ১৯৬৭ সালে অভিনয় জগতে পা রাখেন মাত্র চার বছর বয়সে, তামিল ছবির মাধ্যমে। সেখানে তিনি ত্রিশূল হাতে অভিনয় করেছিলেন দেবতা মুরগার ভূমিকায়। সেই থেকে অভিনয়জীবনে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয় নি। শিশুশিল্পী হিসেবে পেয়েছেন বেশকিছু পুরস্কার। তার ক্যারিয়ারে যুক্ত উল্লেখযোগ্য কিছু সিনেমা শিশুশিল্পী হিসেবে। বলিউডে অভিষেক হয় মাত্র তের বছর বয়সে, ‘জুলি’ ছবিতে, কেন্দ্রীয় চরিত্রের ছোটবোন হিসেবে।

 দক্ষিণী চলচ্চিত্রে রাজত্ব 

শ্রীদেবী কেন্দ্রীয় চরিত্রে প্রথম অভিনয় করেন তামিল ছবিতে, ১৯৭৬ সালে। ১৯৮১ সালে তামিল চলচ্চিত্রে প্রথম ফিল্মফেয়ার পান সেরা অভিনেত্রী হিসেবে। তামিলনাড়ু রাজ্য চলচ্চিত্রের সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন ১৯৮২ সালে। তার মতে বলিউড তাকে সর্বভারতীয় অভিনেত্রী হিসেবে যশখ্যাতি দিয়েছে কিন্তু মাস্টারপিস ছবিগুলো তামিল চলচ্চিত্রে করা। তার রাজত্ব এখানেই সীমাবদ্ধ নয়, তিনি তেলেগু, মালায়াম এবং কানাড়া চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। সেখানেও সাফল্য তাকে নিরাশ করে নি।

 

বলিউড যাত্রা 

শ্রীদেবীর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় আশির দশক। দক্ষিণী চলচ্চিত্রে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর ১৯৭৯ সালে নায়িকা হিসেবে বলিউডে যাত্রা শুরু হলেও দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ১৯৮৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘হিম্মতওয়ালা' ছবির মাধ্যমে। ছবিটি সেই বছর ব্লকবাস্টার হিট হয়। পরবর্তী বছর ‘তোফা’ মুক্তি পায়। এটিও বড়মাপের হিট হয়। এছাড়া তামিল ছবির রিমেক ‘সদমা' বক্স অফিসে সাফল্য না পেলেও এই ছবি সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ায়। ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের জন্য প্রথম মনোনয়ন পায়। ১৯৮৬ সালে মুক্তি পায় তাঁর বক্সব্লাস্টার হিট ছবি ‘নাগিনা'। ছবিটিকে বলিউডের সাপবিষয়ক ছবির সেরা দশ তালিকায় ঠাঁই দেয় টাইম অব ইন্ডিয়া। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত দক্ষিণ ভারত ও বলিউড মিলিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ১৫টি ছবি মুক্তি পায়। বলিউডে এসেও হয়ে ওঠেন হিন্দি ছবির এক নম্বর নায়িকা।

‘চাঁদনী’ ছবির পর যশ চোপড়ার পরবর্তী ছবির ‘লামহে'-র নায়িকা হন শ্রীদেবী। বাণিজ্যিকভাবে ফ্লপ কিন্তু ১৯৯১ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটিকে ভারতের চলচ্চিত্রের বাঁকবদলের ছবি বলা হয়। ছবির বিষয় খুব সাহসী হওয়ায় ভারতের অনেকেই মেনে নিতে পারেন নি।

অমিতাভ বচ্চনের বিপরীতে অভিনয় করেন ‘খুদা গাওয়া' ছবিতে। এর আগে অমিতাভের বিপরীতে দুই ছবি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন শ্রীদেবী। খ্যাতির শীর্ষে থাকা অমিতাভের বিপরীতে দুই ছবি ফিরিয়ে দেওয়ার সাহস তখন শুধু শ্রীদেবীই দেখাতে পেরেছিলেন। তবে অমিতাভ তো বটেই, শ্রীদেবী স্টিভেন স্পিলবার্গকেও ‘না’ করে দিতে পিছপা হন নি। ভারতেই ভালো আছি—এই ভেবে তিনি ‘জুরাসিক পার্ক’-এ কাজ করার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।

পাঁচ দশকের ক্যারিয়ারে বেশ কয়েকটি ছবিতে দ্বৈত চরিত্র করেছেন শ্রীদেবী। বলা যায়, দ্বৈত চরিত্র করে তার মতো সফল অন্য কোনো ভারতীয় অভিনেত্রী হতে পারেন নি। এর অন্যতম কারণ সাধারণ থেকে উচ্চবিত্ত, অ্যাকশন থেকে কমেডি যে-কোনো ধরনের চরিত্রেই অনায়াসে মানিয়ে যেতেন তিনি। বলিউডে কমেডি চরিত্রে সাধারণত পুরুষদেরই ভাবা হয় কিন্তু অভিনেত্রী হয়েও শ্রীদেবী ছিলেন অসাধারণ। “মি. ইন্ডিয়াতে তার চার্লি চ্যাপলিনের অনুকরণ এখনো স্মরণীয় হয়ে আছে। অনেকের কাছে।

বলিউড সিনেমার অন্যতম উপাদান নাচ-গান, যাতে শ্রীদেবী অপ্রতিদ্বন্দ্বী। কেবল রোমান্টিক নয়, আইটেম ডান্স, সর্প-নৃত্য—সব ঘরানার জনপ্রিয় নাচ আছে শ্রীদেবীর। যেমন ‘নাগিনা’ ছবির ‘ম্যায় তেরি দুশমন’কে সর্বকালের সেরা সর্প-নৃত্য বলা হয়। ডান্স নাম্বার ‘ন্যায়নো ম্যায় স্বপ্না’ এখনো দোলা দেয় ভক্তদের মনে। তাঁর ডান্স নাম্বার হিসেবে ‘হাওয়া হাওয়াই’ও কম যায় না। এ ছাড়া বৃষ্টির গানে তো তিনি সম্রাজ্ঞী। শ্রীদেবীর ‘মিস্টার ইন্ডিয়া' ছবিতে ‘কাটে নেহি কাটতে ইয়ে দিন ইয়ে রাত এখনাে দর্শকমনে অন্যরকমের শিহরণ তোলে।

১৯৯৭ সালে ‘জুদাই’ সিনেমা দিয়ে রুপালি জগতকে তখনকার মতো বিদায় জানিয়েছিলেন শ্রীদেবী।

উল্লেখযোগ্য চরিত্র 

‘সদমা’ ছবিতে এক মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়ের চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন শ্রীদেবী। উল্লেখ্য, এ ছবিটি আগে দক্ষিণ ভারতে নির্মিত হয়েছিল ‘মুণ্ডরম পিরাই’ নামে। সেই ছবির নায়িকাও ছিলেন শ্রীদেবী। তখন তার বয়স ছিল বারো এবং তার বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন কমল হাসান।...‘গুমরাহ'  ছবিতে শ্রীদেবী অভিনয় করেছেন আন্তর্জাতিক মাদক-চক্রের শিকার এক অসহায় তরুণীর চরিত্রে। ‘চাঁদনী’ ছবিতে দেখা যায় কৈশোরের সমস্ত উচ্ছলতা দিয়ে শ্রীদেবী ভালোবেসেছেন ঋষি কাপুরকে, পরে তার ঘাই-হরিণী চোখ বিদ্ধ করে বিনোদ খান্নাকে।... ‘নাগিনা’-তে তিনি একইসঙ্গে মানবী এবং সর্পিণী। ছবিতে তার সর্প-নৃত্য সত্যি মনোমুগ্ধকর।...‘লাহমে’ ছবিতে মা ও মেয়ের দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেছেন শ্রীদেবী। মা মারা গেলে মায়ের প্রেমিক (অনিল কাপুর) মেয়েটিকে বড় করে তোলে। পরিণত বয়সে মেয়েটি অনুরক্ত হয়ে পড়ে সেই ভদ্রলোকের। শুরুতে ভদ্রলােক বিষয়টি মেনে না নিলেও শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করেন।...‘চালবাজ’ ছবিতে নরম এবং গরম সম্পূর্ণ বিপরীত স্বভাবের দুবোনের চরিত্রে যথাযথ অভিনয় করেছেন শ্রীদেবী। হিন্দি ছবির এরকম বহু চরিত্র শ্রীদেবীর অভিনয়ে ভাস্বর। এ ছাড়া আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে অভিনয়শিল্পী শ্রীদেবীর সেরা কাজ আসলে রয়েছে দক্ষিণী ছবিতে।

শ্রীদেবীর নায়করা 

দক্ষিণী চলচ্চিত্রে শ্রীদেবী যেমন অভিনয় করেছেন এ নাগেশ্বর রাও-এর সঙ্গে তেমনই তার ছেলে নাগার্জুনের বিপরীতে। অভিনয় করেছেন এন টি রামারাও, কৃষ্ণ, কমল হাসান, রজনীকান্ত, চিরঞ্জীবী, বেঙ্কটেশ—এরকম তিন প্রজন্মের নায়কদের সঙ্গে। হিন্দি ছবিতে তার নায়ক ছিলেন ধর্মেন্দ্র, রাজেশ খান্না, বিনোদ খান্না, জিতেন্দ্র, অমিতাভ বচ্চন, শক্রঘ্ন সিনহা, ঋষি কাপুর, রাকেশ রোশন, মিঠুন চক্রবর্তী, সঞ্জয় দত্ত, অনিল কাপুর, সানি দেওল, সালমান খান এবং অক্ষয় কুমার।

দুই প্রতিদ্বন্দ্বী

শুরুতে জয়াপ্রদা ও শ্রীদেবীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। | কিন্তু জয়াপ্রদা ছবির পর ছবিতে সুন্দরী থেকে আরও সুন্দরী হয়ে উঠলেও অভিনয়ে ক্যারিশমা দেখাতে পারেন নি। অন্যদিকে শ্রীদেবী অভিনেত্রী হিসেবেও নিজেকে পরিণত করেছেন। যদিও পরে মাধুরীর কাছে শ্রীদেবী হেরে যান, বলিউডের এক নম্বর নায়িকার আসনটি হারান। 

শেষ সম্রাজ্ঞী

বলিউডের পুরুষ শাসিত রুপালি জগতে শ্রীদেবী ছিলেন ‘শেষ সম্রাজ্ঞী', যা রেখাও ছিলেন না। প্রথমত, শ্রীদেবী পুরোপুরি পেশাদার অভিনেত্রী। রেখার মতো তিনি প্রযোজকদের অনবরত ভোগান নি। দ্বিতীয়ত, অমিতাভের পরে তিনি ছিলেন ইন্ডাস্ট্রির সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনয়শিল্পী। যেমন, ১৯৯২ সালে সঞ্জয় দত্ত ছবিপিছু নিতেন ৩০ লাখ, আমির খান ২৫ লাখ এবং সালমান খান ২০ লাখ টাকা। সেই সময় শ্রীদেবীর পারিশ্রমিক ছিল ছবিপিছু ৩৫ লাখ টাকা। তৃতীয়ত, শুধু মেগাস্টারদের বিপরীতে নয়, মধ্যম সারির নায়কদের সঙ্গে অভিনয় করেও শ্রীদেবী আকাশছোঁয়া সাফল্য পেয়েছেন। যেমন, অনিল কাপুর অভিনীত ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’র সাফল্য দেখে ভারতীয় সাংবাদিকরা ছবিটির নাম দিয়েছিলেন ‘মিস ইন্ডিয়া। এই রসিকতা, বলাই বাহুল্য, শ্রীদেবীর সাফল্যকেই প্রমাণ করে।

 অভিনয়শৈলী

 নায়িকা হিসেবে শ্রীদেবী একটি বিশেষ অভিনয়শৈলী রপ্ত করেছিলেন। সেটি হলো যে-কোনো মুহূর্তে কিশোরীর মতো উচ্ছল ও চপল হয়ে উঠতে পারতেন তিনি। পাশাপাশি আবার তিনি অভিমান ও আবেগে কাতর এক যুবতী হয়ে উঠতে পারতেন। কখনো কৈশোর কখনো যৌবনকে চমকপ্রদভাবে প্রকাশ করার এই সাতরঙা রঙধনুই নায়িকা হিসেবে শ্রীদেবী অভিনীত বিভিন্ন চরিত্রে নিয়ে এসেছিল অনন্য এবং মোক্ষম এক আবেদন। এই আবেদনের জন্যই তিন প্রজন্মের নায়কদের কাছেই তার উপস্থিতি হয়ে উঠেছিল অমোঘ ও অনিবার্য।

একটি সিক্রেট 

শ্রীদেবীর একটি বিষয় সাধারণ দর্শকদের অনেকেই জানেন না যে, হিন্দি ছবিতে ‘জুলি’ থেকে ‘চাঁদনী’ পর্যন্ত তিনি স্বকণ্ঠে কোনো ছবিতে হিন্দি বলেন নি। তার বাচনভঙ্গিতে তামিলভাষীর একসেন্ট এত বেশি হতো যে বাধ্য হয়ে শ্রীদেবীর এইসব সুপার হিট ছবিগুলোতে তার সংলাপ নাজ নামে এক ডাবিং আর্টিস্ট দ্বারা ডাব করা হতো। ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো, যেসব ছবিতে শ্রীদেবীর নিজস্ব কণ্ঠস্বর ছিল সেইসব ছবির একটিও হিট হয় নি ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত। তারপর তো ১৯৯৭ সালে শ্রীদেবী চলচ্চিত্রে তার প্রথম ইনিংস-এর সমাপ্তিই ঘটালেন।

 প্রেম-বিয়ে বির্তক 

শ্রীদেবীর জীবনে এসেছিলেন বেশ কয়েকজন পুরুষ। যেমন টেনিস খেলোয়াড় অশোক অমৃতরাজ ছিলেন তার একসময়ের প্রেমিক। পরে তিনি জিতেন্দ্র-এর প্রেমে হাবুডুব খান।...তার সঙ্গে বাঙালি অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর বিতর্কিত প্রেম কাহিনির কথা এখনাে শােনা যায় বলিউডের অন্দরে কান পাতলেই। ’জাগ উঠা ইনসান’-এর শুটিংয়ের সময় এই নায়কের প্রেমে পড়েন শ্রীদেবী। তাদের গোপন বিয়ের কথাও শোনা যায়। বিষয়টি পরে মিঠুন স্বীকার করলেও শ্রীদেবী কখনোই মুখ খোলেন নি। শ্রীদেবী নাকি মিঠুনকে বলেছিলেন তার স্ত্রী যোগিতাবালীকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য। কিন্তু মিঠুন তা না করায় শ্রীদেবী সম্পর্ক ছেদ করে বনি কাপুরের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। ১৯৯৬ সালে তাকে বিয়ে করেন শ্রীদেবী। এটি ছিল বনি কাপুরের দ্বিতীয় বিয়ে। অবশ্য শ্রীদেবীর কথামতো বনি প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়েছিলেন। বলিউডের এসময়ের জনপ্রিয় নায়ক অর্জুন কাপুর বনির প্রথম স্ত্রীর সন্তান। এখন শ্রীদেবী ও বনি কাপুরের ঘর আলো করে আছে দুই মেয়ে খুশি ও জাহ্নবী কাপুর। বিয়ের পর ঘর-সংসার স্বামী-সন্তান নিয়ে মেতে উঠেছিলেন শ্রীদেবী। গ্ল্যামার ভুবনের মোহ তাকে সেখান থেকে ফিরিয়ে আনতে পারে নি।

পুরস্কার এবং স্বীকৃতি 

কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ বহু পুরস্কার এবং সম্মানে ভূষিত হয়েছেন শ্রীদেবী। বাণিজ্যিক সিনেমার নায়িকা থেকে একজন সুঅভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য করে তোলাটাও ছিল শ্রীদেবীর বিরাট কৃতিত্ব। ২০১৩ সালে ভারতের বেসামরিক খেতাব ‘পদ্মশ্রী’ অর্জনকারী শ্রীদেবী। সিএনএনআইবিএনের যৌথ জরিপে ভারতের ১০০ বছরের ইতিহাসে অন্যতম সেরা অভিনেত্রী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। পাঁচবার পেয়েছেন ফিল্মফেয়ার পুরস্কার। 


দ্বিতীয় ইনিংস 

সেকেন্ড ইনিংস সফল হয় না অভিনেত্রীদের, শ্রীদেবী এই মিথ ভেঙেছেন। মাঝে মধ্যে টিভিতে কয়েকবার দেখা গেলেও বড়পর্দায় আর দেখা যায় নি। দীর্ঘ পনেরো বছর পর আবার ফিরে আসেন রুপালি জগতে। শুরু করেন দ্বিতীয় ইনিংস। ফিরেই বাজিমাত করেন। সফল হয় তার কামব্যাক। ২০১২ সালে মুক্তি পায় ভিন্ন স্বাদের ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ ছবিটি। ছবিতে এক সাধারণ গৃহবধূর চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করে তার ফিরে আসা যে কেবল নামেই ফেরা নয় সেটা তিনি ভালোমতোই জানান দিয়েছিলেন। এ ছবির পাঁচ বছর পর আবারও ‘মম’ ছবি নিয়ে সম্প্রতি বলিউডে ফিরেন ৫৪ বছর বয়সী এ অভিনেত্রী।

প্রসঙ্গ: মম

মম ছবিটি একটি বিশেষ কারণে উল্লেখ্যযোগ্য। এটি শ্রীদেবীর তিনশতম ছবি। চার ভাষায় ছবিটি মুক্তি পেয়েছে, তার অভিনয়জীবনের সুবর্ণজয়ন্তীতে। স্বভাবতই সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এই ছবি। দর্শকদের চোখে আজও তিনি অনন্যা। সেই জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীদেবী যখন নতুন কোনো সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের সামনে ফিরে আসেন, তখন তো অগণিত ভক্ত-অনুরাগীদের মধ্যে দারুণ উচ্ছ্বাস, আনন্দ ছড়িয়ে পড়বেই।

‘মম’ ছবিতে মায়ের ভূমিকাতেই শ্রীদেবী অভিনয় করেছেন। ছবিতে দেখা যায় একজন সৎমায়ের লড়াই, তার সন্তানের প্রতি অবিচারের বিরুদ্ধে, যিনি খুঁজে বেড়াচ্ছেন সুবিচারের পথ। তবে সেই পথ খুঁজতে গিয়ে প্রতিবারই বিশ্বাস হারাচ্ছেন তিনি। কার ওপর ভরসা করা যায়? কোন পথে এগোনো যায়? ‘মা’-এর মনে উঠে আসছে একাধিক প্রশ্ন! রিভেঞ্জের সঙ্গে থ্রিলারের মিলেমিশে মিশেলে হয়েছে ‘মম’। | শ্রীদেবীর সন্তানের ভূমিকায় মিশেলে ‘মম’-এ  দেখা যায় দুই পাকিস্তানি শিশুশিল্পী আদনান  সিদ্দিকী ও সজল আলিকে। রবি উদয়ারের পরিচালনায় চলচ্চিত্রটিতে আরও অভিনয় করছেন অক্ষয় খান্না, অভিমন্যু সিং ও নওয়াজউদ্দীন সিদ্দিকী। ছবিটির কাহিনি লিখেছেন পরিচালক নিজেই। প্রযোজনা বনি কাপুর। ছবিটির সঙ্গীতের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন অস্কারজয়ী সঙ্গীতশিল্পী এ আর রেহমান।

Leave a Reply

Your identity will not be published.