নিউইয়র্কের ট্যাক্সিওয়ালা (পর্ব ২২)

নিউইয়র্কের ট্যাক্সিওয়ালা (পর্ব ২২)

[এই ধারাবাহিকটির লেখক তানকিউল হাসান, আর্থিক অনটন থেকে মুক্তির আশায় নিউইয়র্কের রাস্তায় শুরু করেছিলেন ট্যাক্সি চালানো। সেই সময় তিনি মুখোমুখি হন বিচিত্র অভিজ্ঞতার। সেইসব ঘটনাই ফুটে উঠেছে এই ধারাবাহিক রচনায়। আজ পড়ুন ২২তম পর্ব।]

প্রথম পর্ব দ্বিতীয় পর্ব  তৃতীয় পর্ব  চতুর্থ পর্ব  পঞ্চম পর্ব 
ষষ্ঠ পর্ব সপ্তম পর্ব অষ্টম পর্ব নবম পর্ব দশম পর্ব  পর্ব ১১ পর্ব ১২ 
পর্ব ১৩ পর্ব ১৪ পর্ব ১৫ পর্ব ১৬ পর্ব ১৭ পর্ব ১৮ পর্ব ১৯ পর্ব ২০ পর্ব ২১

আমেরিকায় পেট্রোল পাম্পকে গ্যাসষ্টেশন বলে। যে গ্যাসষ্টেশন থেকে আমি গাড়িতে তেল ভরছি সেটি আমার বাসা থেকে খুব দূরে নয়। নিউইয়র্কে প্রায় প্রতিটি গ্যাসষ্টেশনে এটেন্ডেন্ট থাকলেও সেই গ্যাসষ্টেশনে সেদিন কোনো এটেন্ডেন্ট ছিল না। আকাশ তখনো ছিল অন্ধকার। আমেরিকায় শীতের রাতগুলো বেশ লম্বা, দিনগুলো ছোট। বিকেল চারটা বাজতেই চারদিক অন্ধকার হয়ে যায়, ভোর সাতটার আগে আকাশে সূর্যের দেখা মিলে না। আমি গাড়ি থেকে নেমে ক্রেডিট কার্ডে পেমেন্ট করে আপনমনে ট্যাংকিতে তেল ভরছি। প্রচণ্ড শীত পড়েছিল সেই ভোরে। হঠাৎ লক্ষ করলাম, কেউ একজন আমার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। ঘুরে তাকানোর আগেই আমার ডান কানের নিচে অতি শীতল কোনো ধাতব বস্তুর স্পর্শ অনুভব করলাম। বুঝতে বাকি রইল না মাগারের (ছিনতাইকারী) হাতে পড়েছি।

লোকটা রাগি গলায় বলল, ডোন্ট মুভ, গিভ মি ইয়োর ওয়ালেট ওর আই উইল ব্লো ইয়োর ফাকিং ব্রেুইনস আউট (মানিব্যাগ দে, না দিলে গুলি কইরা তোর মাথার ঘিলু বাইর কইরা ফালামু)।

আমি বিনা বাক্যব্যয়ে লোকটার হাতে আমার মানিব্যাগটি দিলাম এবং মনে অনেকখানি সাহস সঞ্চয় করে বললাম, তুমি টাকা নিয়ে নাও তবে আমার মানিব্যাগটি ফেরত দাও।

ডোন্ট ফাকিং টক মাদারফাকার (একটা কথা কইবি না মাদারচোত)।

আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি হতভম্ব!

সে মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে খালি মানিব্যাগটি আমার জ্যাকেটের পকেটে ঢুকিয়ে দিতে দিতে বলল, গিভ মি ইয়োর ফাকিং সেলফোন।

আমি বললাম, ফোন আমার জ্যাকেটের বাঁ পকেটে।

সে নিজেই আমার পকেট থেকে ফোন বের করতে করতে বলল, ডোন্ট প্লে স্মার্ট উইথ মি অ্যান্ড ডোন্ট ফাকিং লুক ব্যাক! এ কথা বলেই এক দৌড়ে গ্যাসস্টেশনের বাইরে দাঁড় করা এক গাড়িতে উঠেই নিমেষে উধাও হয়ে গেল।

ছিনতাইকারীর হাতে ফোন আর টাকা খুইয়ে আমি হতভম্ব হয়ে গ্যাসস্টেশনে দাঁড়িয়ে আছি। সারা রাতে প্রায় তিন শ’ ডলার কামাই করেছিলাম, তার সবটাই গেছে। এত কষ্টের কামাই! আমার মতন নিতান্ত দরিদ্র একজন মানুষের কাছে তিন শ’ ডলার অনেক টাকা। ফোনের জন্য মন খারাপ হলো না। এক শ’ ডলার দামের অতি পুরোনো মামুলি এক ফোন। আরেকটা কেনা যাবে!

একবার ভাবলাম, পুলিশের কাছে গিয়ে রিপোর্ট করি। তারপর ভাবলাম, কী রিপোর্ট করব? লোকটাকে আমি দেখি নি সে কালো লোক, তাঁর কণ্ঠ শুনে বুঝতে পেরেছি। যে গাড়ি করে সে পালিয়ে গেছে সেই গাড়ির প্লেট নাম্বারও আমি জানি না। পুলিশের কাছে গেলে এক শ’ এক প্রশ্ন করবে, সেসব প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। তাছাড়া সারা রাত গাড়ি চালিয়ে আমি ক্লান্ত। আমি ট্যাক্সিটা পার্ক করে বাসায় ফিরে গেলাম। এই ঘটনার পর আমি যে সব গ্যাসষ্টেশনে এটেন্ডেন্ট আছে শুধু সেগুলোতেই যাই।

(চলবে…)

Leave a Reply

Your identity will not be published.