আবদুল্লাহ আল মামুন। এদেশের শিল্প-সাহিত্যের নানা ক্ষেত্রে ছিল প্রয়াত এই মানুষটির দীপ্ত পদচারণা। বিটিভিতে বহু উল্লেখযোগ্য নাটকে তিনি প্রযোজনা করেছেন। নাট্যকার হিসেবে তাঁর পরিচিতি তো সর্বজন বিদিত। কী মঞ্চ, কী বেতার, কী টেলিভিশন—এই তিনটি মাধ্যমের জন্যেই অজস্র নাটক তিনি রচনা করেছেন। মঞ্চনাটক নির্দেশনায়ও তাঁর দক্ষতা লক্ষণীয়। আর বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের পরিচালক হিসেবেও তিনি কিছুটা সফল। ঔপন্যাসিক হিসেবে তাঁর আত্মপ্রকাশ সাড়া না জাগালেও এক্ষেত্রেও তাঁর নিষ্ঠা আমাদের দৃষ্টি এড়ায় না। সর্বোপরি অভিনেতা হিসেবেও তাঁর প্রয়াস উল্লেখের দাবি রাখে। সব ক্ষেত্রেই তিনি রেখেছেন সমাজ-মনস্কতার ছাপ। বহুমুখী প্রতিভার দ্যুতিতে উদ্ভাসিত এই ব্যক্তিত্বের মুখোমুখি হয়েছিল অন্যদিন ১৯৯৯-এর মার্চে। নানা প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন মোমিন রহমান ও নবীন হোসেন।
এই আলাপচারিতার নির্বাচিত অংশ এখানে তুলে ধরা হলো, আজ ২১ আগস্ট আবদুল্লাহ আল মামুনের ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে।
যেখান থেকে শুরু
শুরুতে আমরা পারফরমিং আর্টে তাঁর পদচারণার বৃত্তান্ত সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে উঠি। এ প্রসঙ্গে মামুন বললেন, আমি যখন নবম শ্রেণির ছাত্র তখন স্কুলের একটি বার্ষিক অনুষ্ঠানে আমরা সবাই মিলে ঠিক করলাম নাটক করব। আমাদের প্রধান শিক্ষক প্রথমে রাজি না হলেও পরে সম্মতি জানালেন এই শর্তে যে, নাটকটি আমাদের রচনা করতে হবে আর কোনো মেয়ে চরিত্র থাকবে না সেই নাটকে। আমরা তাতেই রাজি। আমি অতি উৎসাহী হয়ে বাবার কাছ থেকে শোনা একটি গল্পকে উপজীব্য করে একটি নাটক লিখে ফেললাম। নির্দেশনা দেওয়ার কঠিন দায়িত্বও আমার কাঁধে চাপল। প্রধান একটি চরিত্রে অভিনয়ও করতে হলো। নাটকটির মঞ্চায়ন শেষে সবাই প্রশংসা করল। বলতে গেলে এটাই আমার শুরু, এটাই আমার প্রেরণা। নাটকটির নাম ছিল ‘নিয়তির পরিহাস’। এরপরে ঢাকা কলেজে পড়ার সময় সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে এক্ষেত্রে আরও নিবিড়ভাবে যুক্ত হলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে নাটকের রমরমা পরিবেশ পেলাম। নাটকের প্রতি আরও গভীরভাবে ঝুঁকে পড়লাম। উল্লেখ্য, পারফর্মিং আর্টে বিচরণের ক্ষেত্রে আমাকে উৎসাহ-উদ্দীপনা জুগিয়েছেন আমার বাবা এবং শিক্ষক প্রাণেশ চন্দ্র মজুমদার।
বিটিভি
আকাশ সংস্কৃতির এই যুগে বিটিভির সামাজিক প্রভাব ক্ষমতা প্রসঙ্গে মামুনের বক্তব্য হলো—পৃথিবী দিন দিন ছোটো হয়ে আসছে। ফলে এর প্রভাব সারা বিশ্বেই পড়েছে। এখন সবারই লক্ষ্যথ আকাশ জয়। কিন্তু দেখার বিষয় হলো কোন দেশ কোন বিষয়টিকে কীভাবে মূল্যায়ন করছে।... ষাট দশকের শেষে আমরা যখন টেলিভিশনে কাজ শুরু করলাম, তখন এ মাধ্যমটিকে অত্যন্ত সুকৌশলে ব্যবহার করতে থাকলাম বাঙালি সংস্কৃতি বিকাশের কাজে। ফলে তখন টিভির অনুষ্ঠান বিপুলভাবে জনপ্রিয় হয়ে গেল, এ মাধ্যমটির সূত্রে আমরা অতি দ্রুত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পৌঁছে যেতে পারতাম মানুষের মাঝে। আর এ অবস্থায় টিভির সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই চিন্তা করল—এভাবেই হয়তো সারাজীবন কেটে যাবে। ফলে যা হওয়ার তাই হলো—অন্যরা এগিয়ে গেল, আমরা পিছিয়ে পড়লাম। অনেক পরে আমরা প্যাকেজ অনুষ্ঠান নির্মাণের চিন্তা করলাম—যখন আকাশ সংস্কৃতি আমাদের গ্রাস করে ফেলেছে, আমরা দর্শক হারিয়ে ফেলেছি। সুতরাং বিটিভি যদি বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে অনুষ্ঠান নির্মাণে অগ্রসর হতো, আজ সামাজিক প্রভাব সৃষ্টির ক্ষেত্রে তার তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা থাকত।
এক প্রশ্নের জবাবে মামুন বলেন যে, মাধ্যম হিসেবে টেলিভিশনের শক্তিমত্তা আর মানুষের কাছে দ্রুত পৌঁছে যাওয়ার ক্ষমতাই তাকে এ মাধ্যমে কাজ করার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। বিটিভির স্বায়ত্তশাসন প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য—টিভির স্বায়ত্তশাসন নিয়ে যেসব কথা মাঝে মধ্যে হচ্ছে তা অস্পষ্ট, যেন ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন একটি বিষয়। এমনকী এ সম্পর্কিত কমিটিতে যারা আছেন তাঁরাও কেউ স্পষ্ট ধারণা দিতে পারবেন বলে আমার মনে হয় না।
এক সময় বিটিভির নাটকের প্রতি পশ্চিমবঙ্গের দশর্কদেরও আগ্রহ ছিল। এখন দেশীয় দর্শকদেরও তেমন আগ্রহ দেখা যায় না। কেন এমনটি হলো ? এ প্রসঙ্গে মামুন বলেন, কোনো কিছু সৃষ্টি করে দর্শক আকর্ষণ করতে গেলে সেত্রে সৃজনশীল মানুষ প্রয়োজন। অথচ টিভির মতো ক্ষুধার্ত মিডিয়ায় গত আঠারো বছরে কোনো নতুন মানুষকে নিয়োগ দেওয়া হয় নি। এমন কী প্রযোজকও নেই। অন্যদিকে, এদেশে প্যাকেজ নাটক নির্মাণের ধারা শুরু হওয়ার পরে গুণী নাট্যকার ও শিল্পীরাও টিভি মুখী হচ্ছেন না। যেহেতু সম্মানীর সেক্ষেত্রে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। ফলে ভালো নাটকের সংকট চলছে বিটিভিতে। এক্ষেত্রে আমরা সিরিয়াসনেস হারিয়ে ফেলেছি, হারিয়ে ফেলেছি দর্শক। এখন আর ‘অয়োময়’, ‘এইসব দিনরাত্রি’ ‘সংশপ্তক’-এর মতো নাটক তৈরি হবে না। যেহেতু বিটিভিতে এখন জেনুইন মানুষেরা কল্কি পাচ্ছে না।
বিটিভির নাটকের পারফরমার নির্বাচনের ক্ষেত্রে একসময় আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছিল। বিশেষত ‘হৈমন্তী’ (নাম ভূমিকার অভিনেত্রী), ‘যোগাযোগ’ (কুমু/মধুসূদন), চোখের বালি, (বিনোদনী), সংশপ্তক (হুরমতি) ইত্যাদি নাটকের ক্ষেত্রে। বয়স কিংবা অবয়বের দিক থেকে মানানসই না হলেও এই যে অভিনেতা-অভিনেত্রী নির্বাচন—এটা কি নাটকের শিল্প মানকে ক্ষুণ্ন করে না ?—আমাদের এই জিজ্ঞাসার জবাবে মামুন বলেন, না। শিল্পমান ক্ষুণ্ন হয় না। কেননা, অভিনয়ই প্রধান। যদি কুমু চরিত্রে কোনো তরুণী ফেরদৌসী মজুমদারকে পাওয়া যায়, তাহলে এর চেয়ে ভালো কিছু হবে না। কিন্তু তা পাওয়া যায় না বলেই দক্ষ অভিনেত্রীকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
মামুনের বিটিভিতে প্রিয় নাটক হচ্ছে—‘বড় দিদি’। প্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রী—গোলাম মুস্তফা, আহসান আলী সিডনী, বুলবুল আহমেদ, হুমায়ূন ফরীদি, আফজাল হোসেন, আসাদুজ্জামান নূর, আজিজুল হাকিম, ডলি আনোয়ার, সুবর্ণা মুস্তফা, ডলি জহুর ও শমী কায়সার। ভালো লাগে আখতার ফেরদৌস রানা ও মাসুম রেজার লেখা নাটক।
মঞ্চ
এ যাবৎ মঞ্চে বহু নাটকেই নির্দেশনা দিয়েছেন আ. আ. মামুন। তবে ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘এখনো ক্রীতদাস’ ও ‘কোকিলারা’ নাটকে নির্দেশনা দিতে পেরে তিনি তৃপ্তি পেয়েছেন বলে জানালেন আমাদের। তাঁর লেখা মঞ্চনাটকের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে—মধ্যবিত্ত মানুষের যাপিত জীবনের সমস্যার প্রতিফলন। মঞ্চ সাফল্যের ওপর নজর রাখতে গিয়ে নাটকের সাহিত্য গুণ ক্ষুণ্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কি না—আমাদের এই জিজ্ঞাসার জবাবে মামুন বলেন, নাটককে আমি কিন্তু মনে করি পারফরমিং আর্ট। ফলে নাটক লিখতে গেলে প্রথমেই চেষ্টা করতে হবে এটা যেন একটি নাটক হয়। এরপর নাটক লিখতে গিয়ে যদি সাহিত্য হয়ে যায় তাহলে এটি বাড়তি পাওনা।
মঞ্চে গুণী নাট্যকারের অভাব। কেন ? এই প্রশ্ন মামুনের উদ্দেশ্যে ছুড়ে দিলে তিনি বললেন, আসলে নাটক লেখার পিছনে কোনো পৃষ্ঠপোষকতা নেই। যেমন হুমায়ূন আহমেদ কিংবা ইমদাদুল হক মিলনের একটি উপন্যাস নেওয়ার জন্য প্রকাশকরা অগ্রিম টাকা দিয়ে রাখেন। কিন্তু নাটক লেখা বা নাট্যকারদের বেলায় এরকম ভাবাই যায় না। যদিও একথা সত্য যে, পাঠকদের কাছে নাটকের সমাদর কম। আর এ কারণেই একদল নাট্যকার কোনো সময় তাঁর নায্য পারিশ্রমিক পান না। সুতরাং কোনো নাট্যকারই পারেন না নাটক লেখাকে পেশা হিসেবে নিতে কিংবা নিয়মিত নাটক লিখতে।
মঞ্চে মামুনের প্রিয় হচ্ছে—বাকি ইতিহাস (নাগরিক), কিত্তনখোলা (ঢাকা থিয়েটার) এবং পাথর (আরণ্যক)। প্রিয় নির্দেশক আতাউর রহমান (গ্যালিলিও)। প্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রী—আসাদুজ্জামান নূর, হুমায়ূন ফরীদি, রাইসুল আসাদ, ফজলুর রহমান বাবু, ফেরদৌসী মজুমদার, সুবর্ণা মুস্তফা এবং ডলি জহুর।
থিয়েটার ও থিয়েটার স্কুল
থিয়েটার-এর উদ্দেশ্য ও আদর্শ কী ? সেই লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কতটুকু অর্জিত হয়েছে ? আমাদের এই প্রশ্নের জবাবে মামুন বলেন, একমাত্র অকৃত্রিম মাধ্যম হচ্ছে—মঞ্চ। এমন অনেক কথা আছে যা বেতার, টিভি, চলচ্চিত্রে বলা যায় না, কিন্তু মঞ্চে বলা যায়। এইসব কথা সরাসরি বলার জন্য আমরা স্বাধীনতার পর থিয়েটার গঠন করি। আর আমাদের আদর্শ হচ্ছে—মধ্যবিত্ত সমস্যা কেন্দ্রিক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিফলিত হয়েছে এইসব নাটকে, যা প্রচুর পরিমাণ দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
থিয়েটার স্কুলের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আমরা জানতে চাই, সৃজনশীল নির্দেশক কিংবা অভিনেতা-অভিনেত্রী সৃষ্টির পেছনে এটি কোনো রকম ভূমিকা রাখতে পারে কি না—এ ব্যাপারে আমরা কৌতূহলী হই। আমাদের কৌতূহল নিরসনে মামুন বলেন, আমরা যখন নাটকে এসেছি তখন কিন্তু পদ্ধতিগত শিক্ষার তেমন কোনো ব্যবস্থা ছিল না। আমাদের নির্দেশকরা আমাদের বলতেন, তুমি এরকম করো কিংবা দম বেশিক্ষণ রেখে অভিনয় করো। কিন্তু কীভাবে তা করব তা তাঁরা বলে দিতেন না। অথচ এখন আমরা সেই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিটা জানি—কীভাবে কোন পদ্ধতিতে দম বেশি রাখা যায় কিংবা চরিত্রের সাথে মেশা যায়। আর এই পদ্ধতি শেখানোর জন্য এখন অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এরকমই একটি প্রতিষ্ঠান—থিয়েটার স্কুল। আমরা আমাদের অভিজ্ঞতার আলোকে ছাত্রদের কিছু শেখানোর চেষ্টা করছি। এবং এর ফলাফলও ভালো। এখান থেকে বের হয়ে যারা বিভিন্ন গ্রুপে কাজ করছে, তাদের অবস্থান কিন্তু অনেক ভালো স্থানে। কারণ অনেক কিছু শিখে তারপর তারা কাজ আরম্ভ করছে এবং সহজেই তাদের অবস্থান তৈরি করে নিচ্ছে।
অভিনয়
আবদুল্লাহ আল মামুন বেতার-টিভি-মঞ্চে দাপটের সাথে অভিনয় করছেন চার দশক ধরে। কিন্তু ওভার অ্যাকটিংয়ের প্রতি দুর্বলতার কারণে তাঁর অভিনয়-শৈলী অনেকেরই কাছেই ক্লিশে। এ প্রসঙ্গে মামুন বলেন, না, ওভার আ্যাকটিংয়ের যে অভিযোগটি আমার বিরুদ্ধে রয়েছে তা সম্পূর্ণ সঠিক নয়। তবে হ্যাঁ, এ অভিযোগটি আমার বিরুদ্ধে রয়েছে। এবং এখন আমি লক্ষ রাখি বা চেষ্টা করি ওভার অ্যাকটিং যাতে না হয়। তবু কোনো কোনো নির্মাতা পছন্দ করেন আমার উচ্চকিত বলার ভঙ্গিটি। তারা হাত-পাও একটু বেশি নাড়াতে বলেন। ওভার অ্যাকটিং যে আমি ইচ্ছাকৃতভাবে করি তা ঠিক নয়। আমি এ পর্যন্ত যেসব টিভি নাটক বা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি—তার অধিকাংশ চরিত্রই লাউড অ্যাকটিং ডিমান্ড করে। তবে মঞ্চে লাউড অ্যাকটিংয়ের কারণ ভিন্ন। এখানে শেষ সারির দর্শকদের পর্যন্ত আমাকে সংলাপ পৌঁছে দিতে হয়।
মামুন কিন্তু টিভির কয়েকটি নাটকে চমৎকার আন্ডার অ্যাকটিং করেছেন। এ প্রসঙ্গে আমরা আতিকুল হক চৌধুরী ্রপ্রযোজিত ‘নীরবে নিঃশব্দে’-র কথা উল্লেখ করলে তিনি জানালেন—এ নাটকটিতে অভিনয় করে তিনিও তৃপ্ত। কিন্তু এ ধরনের নাটক বা চরিত্র পাওয়া মুশকিল।
চলচ্চিত্র
মামুনের মতে অভিনয়শিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে তাঁর সেরা কাজ হচ্ছে—‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ বিক্ষুব্ধ এক মানুষের চরিত্রে অভিনয়। তিনি জানালেন, চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন একজন উকিলের চরিত্রে (ছবির নাম মনে নেই)। তবে চিত্রনাট্য লেখার শুরু অনেক আগেই। যেমন, ‘অশিক্ষিত’, ‘জীবন নিয়ে জুয়া’, ‘অঙ্গীকার’ প্রভৃতি।
মামুন জানালেন, চলচ্চিত্রের প্রতি তার সব সময় একটি বিশেষ দুর্বলতা কাজ করে এবং চলচ্চিত্রের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি কাজ করতে ভালোবাসেন। আর্থিক সঙ্গতি থাকলে সারা জীবনই হয়তো তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণের সাথে সম্পৃক্ত থাকতেন। তবে চলচ্চিত্রকে যতই ভালোবাসেন না কেন, মঞ্চকে তিনি কোনো দিনই ছাড়তেন না।
অধুনা বাংলাদেশি মূলধারার চলচ্চিত্রের বিনোদনকে কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে তিনি দেখেন ? এ প্রসঙ্গে মামুন বললেন, আমি তো এ ধরনের চলচ্চিত্রকে চলচ্চিত্রই বলি না। চলচ্চিত্রের ন্যূনতম সংজ্ঞার মধ্যে এগুলি পড়ে না। এগুলি হচ্ছে বোম্বের ছবির সরাসরি অনুকরণ। নারী দেহ ব্যবহার এবং মানুষের মধ্যে যে আদিম প্রবৃত্তি আছে—একজনকে মারা, রক্ত দেখা—এইসব বিকৃত ব্যাপার-স্যাপারকে যে বিনোদন বলবে আমি বলব সেও বিকৃতির শিকার।
সেন্সর এবং অনুদান প্রথার বর্তমান ব্যবস্থাপনায় সন্তুষ্ট কি না জানতে চাইলে মামুন বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যে-কোনো ক্রিয়েটিভ মিডিয়ায় সেন্সর থাকা খুবই অন্যায়। কারণ এতে ক্রিয়েটিভ কিছু পাওয়া যায় না। কিন্তু এতে প্রশ্ন থেকে যায় যারা ক্রিয়েট করছে অর্থাৎ ক্রিয়েটার তারা কতখানি দায়িত্বশীল ? সবাই দায়িত্বশীল নয় বলেই সেন্সরের প্রয়োজন। আর বর্তমানের প্রচলিত অনুদান প্রথা একটি হাস্যকর বিষয়। কারণ যারা অনুদান প্রথাটা চালু করেছেন তারা কি সত্যিকার অর্থে চান একটি ভালো ছবি হোক ? যদি তারা চান তাহলে কি তারা জানেন একটি ভালো ছবি নির্মাণে কী পরিমাণ পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন ? আর অনুদান কিসের ভিত্তিতে দেওয়া হচ্ছে ? আমার তো মনে হয় আমজাদ হোসেন, সুভাষ দত্ত এদের তো পরীক্ষা করার দরকার নেই। এদের কেন বলা হচ্ছে না আপনারা একটি ছবি তৈরি করেন, আমরা আর্থিক সাপোর্ট দেব। আমার মত হচ্ছে, যদি অনুদানই দেওয়া হয় তাহলে দু’ভাবে দেওয়া উচিত। একটি হলো এসব পরীক্ষিত নির্মাতাদের অনুদান দেওয়া এবং একদম নতুনদের মাঝ থেকে চিত্রনাট্য বাছাই করে অনুদান দেওয়া। তবে অবশ্যই অনুদানের অর্থ আরও অনেক বাড়াতে হবে। চলচ্চিত্রে তিনি ‘সারেং বউ’-এর পরে ‘ফেরদৌসী মজুমদার : জীবন ও অভিনয়’-কে উল্লেখযোগ্য কাজ বলে মনে করেন। কেননা, এই প্রামাণ্য চলচ্চিত্রে তিনি ফেরদৌসীকে কেন্দ্র করে এদেশের নাট্য আন্দোলনের স্বরূপ তুলে ধরেছেন।
দেশীয় চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে মামুনের প্রিয় প্রয়াত জহির রায়হান ও আলমগীর কবির। এখনকার শহীদুল ইসলাম খোকন ও সোহানুর রহমানের ছবিও তাঁর ভালো লাগে। প্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রী : আনোয়ার হোসেন, রহমান, রাজ্জাক, কবরী ও ববিতা। বিদেশি চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে প্রিয়—আাকিরা কুরোশাওয়া, রোমান পেলোনস্কি, সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, স্পিলবার্গ। মার্লোন ব্যান্ডোর অভিনয় এক সময় তাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখত। এখন যেমন রাখেন আল পাসিনো। সোফিয়া লোরেনের অভিনয়ের অনুরাগী তিনি বরাবরই।
লেখালেখি
মামুন উপন্যাসও লিখেছেন। তার এইসব লেখালেখি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি কিন্তু সাহিত্যিক হওয়ার জন্যে উপন্যাস লিখি নি। তবে লেখালেখি করতে আমি ভালোবাসি। ফলে আমার কখনোই মনে হয় না—আমি উপন্যাস রচনায় বিশাল একটা কিছু করেছি। তবে আমি যখনই উপন্যাস লিখতে গিয়েছি, তখনই পাঠকদের কথা চিন্তা করে লিখেছি। তবে লেখালেখির এ পর্যায়ে এসে আমার মনে হয় ভবিষ্যতে হয়তো ভালো কোনো উপন্যাস আমি লিখতে পারব যদি সময় এবং সুযোগ হয়।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে মামুন জানালেন, শান্তিনিকেতনের মতো একটা আশ্রম তিনি হয়তো গড়ে তুলবেন কোনো একদিন কোনো এক থ্রামে।
Leave a Reply
Your identity will not be published.