[শহিদ হোসেন খোকন দীর্ঘদিন ধরে গল্প লিখছেন। এই প্রথমবারের মতো তিনি উপন্যাস লিখলেন। এখানে মূর্ত হয়ে উঠেছে অগ্নিঝরা একাত্তর, সেই সময়ের রাজনৈতিক আবহাওয়ার উতল হাওয়া। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। তৎকালীন পাকিস্তানের দুই অংশের পটভূমিতে এই উপন্যাসে জীবন্ত হয়ে উঠেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আমাদের প্রধান জাতীয় নেতৃবৃন্দ, ইয়াহিয়া খান, ভুট্টোসহ আরও অনেকে। আজ পড়ুন নবম পর্ব...]
আমি নিজেও যুদ্ধ অপছন্দ করি মিঃ প্রেসিডেন্ট। ভিয়েতনামে আমরা খামাখাই ট্যাক্স পেয়ারদের অর্থ ঢালছি। ১৫ বছর হয়ে এল আমরা সেখানে যুদ্ধ করছি কিন্তু জয়ের কোনো সম্ভবনা দেখছি না।
পিঁপড়ের মতো ভিয়েতনামীদের মারা হচ্ছে কিন্তু গবেটগুলো কিছুতেই হার স্বীকার করবে না। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার সোলজার মারা গেছে, আরও কত সোলজার মারা যাবে কে জানে! জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। তুমি যত দ্রুত সম্ভব এর একটা রফা দফা করো।
মিঃ প্রেসিডেন্ট সায়গনকে সাপোর্ট করছে রাশিয়া আর চায়না। আমরা সায়গনকে কমিউনিজমের ঘাঁটি হতে দিতে পারি না। আমেরিকার পাওয়ার গেইন করার জন্যেই ভিয়েতনামে আমাদের উইন হতে হবে।
আর যুদ্ধ নয়, যেভাবেই হোক তুমি মুজিবকে থামাও।
তবে মুজিব মনে হয় একটু বেশি রকম বাড়াবাড়ি করছে। আমি ঢাকায় আমাদের রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ডকে বলব সে যেন সকালেই মুজিবের সাথে দেখা করে তাকে সাবধান করে দেয়, কোনো ক্রমেই যেন তার মুখ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা না আসে। আমরা কিছুতেই ইস্ট পাকিস্তানের ইন্ডিপেন্ডেটকে রেকগনাইজ করব না। শেখ মুজিবের এ রকম পদক্ষেপের পরিণতি হবে ভয়াবহ।
হেনরি, তুমি আমার দিকে একটু ভালো করে তাকাও তো। লুক স্ট্রেট, ইয়েস। এবার আজকের পত্রিকায় শেখ মুজিবের এই ছবিটির দিকে তাকাও। ইউ লুক লাইক মুজিব, শুধু গোঁফটা জুড়ে দিলেই হলো- হা হা হা...
নিক্সনের কথা শুনে কিসিঞ্জারের চোখমুখ শক্ত হয়ে গেল। সে একটা সিগারেট ধরিয়ে নিক্সনকে বলল, মিঃ প্রেসিডেন্ট লুক, আই অ্যাম এ জার্মান। আই ডোন্ট লুক লাইক মুজিব, প্রভাবলি দিস ইডিয়েট লুকস লাইক মি।
হেনরি হেনরি, মাই ডিয়ার হেনরি... মনে হচ্ছে তুমি আমার কথায় রাগ করেছ। আই ওয়াজ জাস্ট জোকিং। আচ্ছা বাদ দাও এসব যুদ্ধের কচকচানি। তোমার গার্লফ্রেন্ডের কথা বলো হেনরি। জোয়ানার সাথে তোমার ডেটিং কেমন চলছে? হলিউডের সব অ্যাকট্রেসরা তো দেখি হেনরি বলতে পাগল।
গার্লফ্রেন্ডের প্রসঙ্গ ওঠায় কিসিঞ্জারের মন চনমন করে উঠল। সে বলল, সব পাগল হলে আমার আর আমেরিকার সিকিউরিটি এডভাইজার থাকা হবে না, আমার নিজেরই তখন সিকিউরিটির দরকার হবে।
হা হা হা ওয়েল সেইড, কাম অন চিয়ার্স।
গ্লাসে ঠোঁট ছোঁয়ানোর পর নিক্সন জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা হেনরি আমেরিকায় তো সুন্দরী কম নেই, সব ছেড়ে তোমার ঝোঁক হলিউডের সুন্দরীদের দিকে কেন?
গুড কোশ্চেন। উত্তরটা খুব সহজ মিঃ প্রেসিডেন্ট। ওরা আলো পছন্দ করে।
হা হা হা...দারুণ বলেছ হেনরি।
শুধু তাই না মিঃ প্রেসিডেন্ট, অ্যাকট্রেসদের পটানো খুব সহজ, হুইস্কির গ্লাস নিয়ে দু’তিনটা জোকস শুনলেই এরা পটে যায়।
তাই নাকি?
হু, জোয়ানা বারনেসের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর ওকে বলের জোকসটা শোনালাম। জোকস শুনে তার হাসি আর থামে না।
কোন জোকসটা এটা?
ওই যে বলের জোকসটা। আপনাকে আগেও শুনিয়েছি। জোয়ানাকে বললাম শোনো, ম্যান এট ২৫ প্লে ফুটবল। ছেলেদের বয়স যখন ২৫, তখন তারা ফুটবল খেলতে পছন্দ করে। যখন তাদের বয়স ৪০ তখন তারা পছন্দ করে টেনিস আর যখন তাদের বয়স হয়ে যায় ৬০, তখন তারা গলফ খেলতে পছন্দ করে। তুমি কি লক্ষ করেছ, পুরুষের বয়স যত বাড়তে থাকে, তাদের বল তত স্মল হতে থাকে?
হা হা হা ইউ আর এ গ্রেট জোকার হেনরি।
হলিউডের অ্যাকট্রেসদের আরেকটা ভালো দিক হলো, এদের লাজ-লজ্জা কম থাকায় আমার খাটাখাটুনিটাও কমে...
হা হা হা...চিয়ার্স হেনরি...
চিয়ার্স মিঃ প্রেসিডেন্ট।
(চলবে…)
Leave a Reply
Your identity will not be published.