বাদামের যত গুণ

বাদামের যত গুণ

একটি বীজ জাতীয় খাবার—বাদাম। ছোট্ট এই জিনিসের কী চমৎকার গুণাবলিই না রয়েছে! বিন্দুর মধ্যে সিন্ধুর মতোই বাদামের রয়েছে অসংখ্য উপকারী দিক। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই খাবারটি খেলে কয়েকটি রোগের ঝুঁকি এড়ানো যায়, দেহের প্রয়োজনীয় নানা ভিটামিনের সন্ধান মেলে, স্মৃতিশক্তি ও প্রখর মেধাশক্তির অধিকারী হওয়া যায়...। সত্যি কথা বলতে কী, বাদামের গুণের যেন শেষ নেই। এই উপকারী খাবারটির নানা গুণের কথাই তুলে ধরা হয়েছে এবারের প্রচ্ছদ রচনায়।

বন্ধুদের আড্ডা থেকে শুরু করে প্রেমিক যুগলের কাটানো একান্ত সময়, কোথায় নেই বাদামের উপস্থিতি! শুধু সময় কাটানোর দারুণ উপকরণ হিসেবেই নয় সস্তার এই খাবারটি দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে স্বাস্থ্যসচেতনদের খাবার তালিকাতেও। বাদাম যে শুধু খেতে মজা তা নয়, নানা ধরনের বাদামে রয়েছে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ। পুষ্টির জোগানদাতা হিসেবে হাজার বছর আগে থেকেই মানুষের প্রিয় খাদ্যের তালিকায় রয়েছে।

গবেষকেরা বলেছেন, স্বাস্থ্যবান পুরুষদের জন্য বাদাম উপকারী। তারা শারীরিক আকাক্সক্ষা বৃদ্ধির সঙ্গে বাদামের সম্পর্ক খুঁজে বের করেছেন। গবেষকদের মতে, দৈনিক ৬০ গ্রামের মতো বাদাম খেলে লিবিডো বাড়ে। অন্যকথায়, যারা যৌন আকাক্সক্ষার অভাবে ভুগছেন, তাদের চিকিৎসায় বাদাম কাজে লাগবে। অন্যদিকে নারী বাদামকারীদের জন্য সুখবর হলো, যারা সপ্তাহে অন্তত চারবার বাদাম খান, হৃদরোগ জটিলতায় তাদের মৃত্যুর আশঙ্কা বাদাম-না-খাওয়াদের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ কম।

আকারে ছোট হলেও পুষ্টিগুণে ভরপুর এই খাবারটিতে রয়েছে ফ্যাটি অ্যাসিড, ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট, লিউটিন, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি, ভিটামিন, মিনারেলসসহ প্রায় সকল প্রকার খাদ্যগুণ। জেনে নিন বাদামের উপকারী দিক সম্পর্কে। 

হৃৎপিণ্ডের সুরক্ষায়

বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ, পুষ্টিকর উপাদান ও হৃৎপিণ্ডের জন্য উপকারী উপাদান। গবেষণা থেকে জানা গেছে, নিয়মিত সঠিক  পরিমাণ বাদাম খেলে করোনারি হার্ট ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার হার ৩৫ শতাংশ কমে যায়।

ক্যানসার রোধে

ক্যানসার রোধে বাদামের রয়েছে কার্যকরি ভূমিকা। বিশেষ করে কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার হার কমাতে। একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে, প্রতি সপ্তাহে দু’বার করে বাদাম খাওয়া এমন নারীদের কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার হার ৫৮ শতাংশ এবং পুরুষদের কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার হার ২৭ শতাংশ কমবে।

ওজন কমাতে

মুটিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় অনেকেই বাদামকে দূরে সরিয়ে রাখেন। এটা সম্পূর্ণই ভুল ধারণা। বরং ওজন কমাতে  বাদামের রয়েছে কার্যকরি ভূমিকা। ওজন নিয়ে যারা দুশ্চিন্তায় ভোগেন তারা নিয়মিত বাদাম খেয়ে আরামসে কমিয়ে নিতে পারেন ওজন। বাদামে থাকা ফাইটোস্টেরল এবং মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড দেহের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলকে নষ্ট করতে সহায়তা করে।

স্মৃতিশক্তি প্রখর করতে

বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি, ই এবং ডি। খাবারের এই উপাদানগুলি স্মৃতিশক্তি প্রখর করতে বিশেষভাবে কাজ করে।

বার্ধক্যরোধে

বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘ই’ যা বার্ধক্যরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। 

উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণে

বাদামে থাকা ওমেগা-থ্রি, ফ্যাটি অ্যাসিড, ফাইবার, ভিটামিন ই প্রভৃতি রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধি

বাদামে এমন পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রকে পুষ্ট করে। বাদামে থাকা এল-কার্নিটাউন রিবোফ্লাবিন মস্তিষ্কের সহায়তা করে। বাদামে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম যা স্নায়ুকে সুস্থ রাখে।

ত্বকের সংক্রমণে

বাদামের বিভিন্ন উপাদান ফাংগাল ও ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের হাত থেকে ত্বককে সুরক্ষিত রাখে।

গর্ভবতী নারীদের জন্য উপকারী

বাদামে প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন-বি থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় যে-কোনো বাদাম খেলে গর্ভস্থ সন্তানের জন্ম-ত্রুটি হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।

রক্ত জমাট বাঁধার হাত থেকে সুরক্ষায়

বাদামে বিদ্যমান এল-আরজিনিন অ্যামিনো অ্যাসিডটি ধমনীতে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। ধমনীকে নমনীয় করতে সহায়তা করে এল-আরজিনিন। বাদামের এল-আরজিনিন রক্ত জমাট বাঁধার হাত থেকেও রক্ষা করে।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে বাদাম। রাতে ১০-১৫টি কাঁচা বাদাম পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

চোখের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়ক

বাদামে থাকা ভিটামিন ই চোখকে রক্ষা করে এবং লেন্সের অস্বাভাবিক পরিবর্তন কমায়।

হাড় মজবুত করে

বাদামে থাকা ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন-ই শরীরের হাড়গুলোকে শক্ত ও মজবুত করে।

ত্বকে পুষ্টি জোগায়

ত্বকের ভেতরে পুষ্টি জোগাতে প্রতিদিন বাদাম খাওয়া উচিত। কারণ এর মধ্যে রয়েছে ফ্ল্যাভোনায়েড অক্সিডেন্ট।

মানসিক অবসাদ এবং স্ট্রেস কমায়

বাদামে টাইটোফন নামক অ্যামাইনো অ্যাসিড রয়েছে, যা শরীরে নানাবিধ হরমোনের ক্ষরণকে নিয়ন্ত্রণে রেখে ডিপ্রেশন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে

বাদামে উপস্থিত ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরকে সচল ও কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে। তাই শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়াতে প্রতিদিন বাদাম খাবেন।

পুষ্টিতে ভরপুর

বাদাম ভিটামিন, খনিজ এবং পুষ্টির সমাহার। ২৪ গ্রাম বাদামে রয়েছে ৬ গ্রাম প্রোটিন, ৩.৫ গ্রাম ফাইবার, ১৪ গ্রাম ফ্যাট, ৩৭% ভিটামিন ই, ৩২% ম্যাঙ্গানিজ, ২০% ম্যাগনেসিয়াম।

এছাড়াও বাদাম ঠান্ডা, কাশি, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, খাওয়ার অরুচি, নিদ্রাহীনতা এবং রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায়। তাই প্রতিদিন একমুঠো খেলে দূরে থাকতে পারবেন বিভিন্ন রোগ থেকে।

এ ছাড়াও থাইরয়েডের সমস্যা দূরীকরণ, যৌনসক্ষমতা বৃদ্ধি, হাঁপানি, কোলন ক্যানসার, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, রক্তে পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে, দাঁত সুরক্ষা প্রভৃতিতেও রয়েছে বাদামের কার্যকরি ভূমিকা।

চিনাবাদাম, আখরোট, কাজু, আমন্ড, পেস্তা, চেস্ট নাট, ব্রাজিলনাটসহ সবধরনের বাদামেই রয়েছে এই কার্যকরি দিক। এর মধ্যে আমাদের দেশে সহজে মেলে চীনা, কাজু, কাঠ এবং পেস্তাবাদাম। জেনে নিন পুষ্টিগুণে ভরপুর এই বাদামগুলির কার্যকরিতার নানা দিক সম্পর্কে।

আখরোটের (walnut) গুণাগুণ

প্রিয় খাদ্যের তালিকায় আখরোটের উপস্থিতি সেই বহুকাল আগে থেকেই। স্বাদের কারণে তো বটেই এর বিস্ময়কর খাদ্যগুণের কারণেও আখরোটের জনপ্রিয়তা আজও অক্ষুণ্ন। খ্রিষ্টপূর্বাব্দ ৭ হাজার বছর আগে লেখা কিছু পুঁথিতে যেমন দেওয়া হয়েছে নিয়মিত আখরোট খাওয়ার পরামর্শ তেমনি আধুনিক স্বাস্থ্যবিজ্ঞানও দিচ্ছে একই পরামর্শ। এর উপকারিতা এতখানিই যে তাৎক্ষণিক ফল পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন ডাক্তাররা। বিভিন্ন গবেষণাতেও মিলেছে আখরোটের নানা উপকারিতার প্রমাণ। বলা হচ্ছে, বাদামের মধ্যে সবচেয়ে ভালো হচ্ছে আখরোট। গবেষণায় আরও দেখা গেছে অন্য বাদামের তুলনায় আখরোটে রয়েছে প্রায় ১৫ গুণ বেশি ভিটামিন-ই ও শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা এলডিএল বা ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের অক্সিডেশন রোধ করে এবং ফ্রি রেডিক্যালস বিনষ্ট করে ও কোষকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায়। একইসঙ্গে, হৃৎরোগের ঝুঁকি কমায় ও ধমনীতে চর্বি জমতে দেয় না। প্রোটিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, লোহা, ভিটামিন বি ও সি তে পরিপূর্ণ এই খাবারটি স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম আখরোটে রয়েছে ৬৫৪ কিলো ক্যালরি, ৬৫ গ্রাম ফ্যাট, ২ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ৪৪১ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ১৪ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১৫ গ্রাম প্রোটিন। এইসব উপাদান শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে দারুণভাবে কার্যকর।

১.             আখরোটে ওমেগা থ্রি ফ্যাট, প্রোটিন ও ফাইবারের যথাযথ ভারসাম্য থাকে। ফলে ওজন কমাতে এটি কার্যকরি ভূমিকা পালন করে। 

২.             নিদ্রাহীনতা দূর করতেও আখরোটের রয়েছে কার্যকরি ভূমিকা। আখরোটের  মেলাটোনিন নামক উপাদানটি ঘুমের পক্ষে ভালো।

৩.            একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত আখরোট খান তাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং মানসিক স্থিরতা আসে।

৪.             সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ২১ থেকে ৩৫ বছর বয়সী পুরুষরা যদি দৈনিক ৭৫ গ্রাম করে আখরোট খান, তাহলে তাঁদের শুক্র উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ও শুক্র কোষের স্বাস্থ্যোন্নতি ঘটে।

৫.             আখরোটে বিদ্যমান অ্যালার্জিক অ্যাসিড  এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। বার্ধক্য এবং স্নায়ুবিক রোগ প্রতিরোধেও কার্যকরি ভূমিকা পালন করে আখরোট।

৬.            আখরোট প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় এবং স্তনে টিউমারের বৃদ্ধি রোধ করে।

৭.             আখরোটে রয়েছে ভিটামন বি-এর উপাদান ফোলেট, রিবোফ্লাবিন এবং থায়ামিন, যা গর্ভবতী নারীদের জন্য আদর্শ খাবার।

৮.            দেহের জন্য প্রয়োজনীয় মিনারেলের একটি বিরাট উৎস আখরোট।

৯.            টাইপ-টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের বিপাকীয় প্রক্রিয়ার উন্নয়নে অবদান রয়েছে আখরোটের।

এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে, দুশ্চিন্তা কমাতে, রক্তনালির স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখার ক্ষেত্রেও আখরোটের রয়েছে কার্যকরি ভূমিকা।

 

কাঠবাদামের (Almond) যত গুণ

ভিটামিন এবং মিনারেলে ভরপুর কাঠবাদামে আরও রয়েছে ডায়েট ফাইবারসহ নানা খাদ্যগুণ, যা শরীরের নানা রোগ প্রতিরোধে কার্যকরি ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন মাত্র ১০ গ্রাম বাদাম খাওয়ার অভ্যাসই অনেক ধরনের রোগবালাই থেকে আমাদের দূরে রাখতে পারে।

১.             কাঠবাদামের ফাইবার শরীরে কার্বোহাইড্রেট শোষণের গতি কমায় এবং শরীরে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বাদামটি অনেক উপকারী।

২.             কাঠবাদামে আছে মনসেচুরেটেড ফ্যাট। এটি শরীরের কোলেস্টরলের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন কাঠবাদাম খেলে শরীরে HDL (এইচডিএল) কোলেস্টেরল বা ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে।

৩.            ক্যানসার প্রতিরোধেও রয়েছে কাঠবাদামের কার্যকরি ভূমিকা। কাঠবাদামে এমন একধরনের ফাইবার আছে যেটি কোলন ক্যানসার রোধে সহায়ক। তাছাড়া কাঠবাদামে উপস্থিত ভিটামিন ই, Phytochemicals Ges flavonoi ব্রেস্ট ক্যানসার রোধে সহায়তা করে।

৪.             কাঠবাদামের তেল শরীরের শক্তি সঞ্চালন করতে সহায়তা করে। এই তেলে আছে রিবফ্লাবিন, ফসফরাস, কপার, যা শরীরে শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

৫.             কাঠবাদামে থাকা ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন ডি শরীরের হাড় এবং দাঁত মজবুত করে। তা ছাড়া যাদের হাড় ক্ষয়, আর্থাইটিস রোগ আছে, তাদের জন্য কাঠবাদাম তেলের মালিশ খুবই উপকারী।

৬.            নিয়মিত চার-পাঁচটি আমন্ড খেলে  LDL (এলডিএল) কোলেস্টেরল বা ব্যাড কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। ফলে হৃৎরোগের আশঙ্কা থাকে না।

৭.             কাঠবাদাম শ্বাসকষ্ট, কোষ্ঠকাঠিন্য ও ত্বকের সমস্যায়ও খুবই উপকারী। 

এছাড়াও কাঠবাদাম এনিমিয়া, জন্মগত ত্রুটি, মস্তিষ্ক-এর শক্তি বাড়াতে সহায়ক।

কাজুবাদামের (cashew nut) উপকারী দিক

পর্তুগিজদের কল্যাণে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়া ব্রাজিলিয়ান এই বাদামটি বেশিরভাগ মানুষের কাছেই প্রিয় এর স্বাদের কারণে। তবে আমাদের শরীরের স্বাভাবিক কাজের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং মিনারেলে সমৃদ্ধ কাজু বাদাম এখন স্বাস্থ্যসচেতনদের কাছেও প্রিয় হয়ে উঠছে দিনদিন। উচ্চমাত্রার ক্যালরি থাকায় প্রতিদিন ৫-১০টা কাজুবাদাম খাওয়াই যথেষ্ট।

১.             কাজু বাদামে রয়েছে ভালো ফ্যাট এবং এতে কোনো কোলেস্টেরল থাকে না। এমনকি খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএল-এর মাত্রা কমাতেও সাহায্য করে কাজু বাদাম। এছাড়া কাজুতে রয়েছে হার্টের জন্য উপকারী অলেইক এসিড।

২.             আমাদের শরীরে দৈনিক ৩০০-৭৫০ গ্রাম ম্যাগনেসিয়াম প্রয়োজন হাড়ের মধ্যে ক্যালসিয়াম শোষণের জন্য। কাজু বাদামে থাকা ম্যাগনেসিয়ামে শক্ত হাড়ের জন্য, মাংসপেশি ও স্নায়ুর সঠিক কাজের জন্য প্রয়োজনীয়।

৩.            কাজুবাদামে সোডিয়ামের পরিমাণ কম এবং পটাশিয়াম থাকে বেশিমাত্রায়। যার ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

৪.             কাজু বাদামে রয়েছে সেলেনিয়াম এবং ভিটামিন ই যা ফ্রি র‌্যাডিকেলের জারণ প্রতিরোধ করে। যা ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কাজুতে রয়েছে  প্রচুর পরিমাণে জিংক যা ইনফেকশনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহায্য করে।

৫.             কাজুতে রয়েছে উচ্চমাত্রার কপার যা এনজাইমের কাজে, হরমোনের উৎপাদনে এবং মস্তিষ্কের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও লাল রক্ত কণিকার উৎপাদনেও সাহায্য করে বলে অ্যানেমিয়া প্রতিরোধে সহায়তা করে।

পেস্তাবাদামের (pestachu) উপকারিতা

কেবলমাত্র নানারকম খাবারের স্বাদ বাড়াতেই নয় পেস্তাবাদামের রয়েছে নানা উপকারী দিকও। প্রতিদিন অল্পকিছু পেস্তাবাদাম আপনাকে দূরে রাখতে সহায়তা করবে অনেক রোগবালাই থেকে। 

১.             পেস্তাবাদামে রয়েছে মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা কোলেস্টেরল কম রাখতে সাহায্য করে। ফলে হার্টের সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে।

২.             পেস্তা লো-গ্লিসেমিক ইনডেক্স ধরনের খাবার অর্থাৎ পেস্তা থেকে কার্বোহাইড্রেট ধীরে ধীরে ভেঙে গ্লুকোজে পরিণত হয়। ফলে রক্তে গ্লুকোজের ভারসাম্য বজায় থাকে।

৪.             সবধরনের বাদামের মধ্যে পেস্তাতে রয়েছে সবচেয়ে বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটোস্টেরল। এছাড়াও রয়েছে লুটেন নামক এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা মাংসপেশির দুর্বলতা, চোখের ছানির সমস্যাসহ বয়সজনিত কারণে সৃষ্ট নানা শারীরিক সমস্যা প্রতিরোধে সহায়তা করে।

৫.             পেস্তাবাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে। এতে ফ্যাটের পরিমাণও কম। ফলে রক্তে লিপিডের পরিমাণ বজায় রাখতে ও সাহায্য করে।

৬.            দাঁতের রোগ ও লিভারের সমস্যায় পেস্তাবাদাম বেশ উপকারী।

৭.             পেস্তাবাদামে থাকা কপার শরীরে আয়রন শোষণে সাহায্য করে। ফলে অ্যানিমিয়া রুখতে ভূমিকা রাখে পেস্তাবাদাম। এছাড়া পেস্তাবাদামের ভিটামিন বি ৬ রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।

৮.            লো ক্যালরি, লো স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও হাই প্রোটিন থাকার কারণে ওজন কমাতে সাহায্য করে পেস্তাবাদাম।

এছাড়াও পেশি সবল রাখতে, শুষ্ক ত্বকের সমস্যা দূর করতে, রক্ত শুদ্ধ করতে, লিভার ও কিডনি সুস্থ রাখতে, হজমশক্তি বৃদ্ধিতেও পেস্তাবাদামের রয়েছে কার্যকরি ভূমিকা।

চিনাবাদামের (Ground nut) কার্যকরিতা

আমাদের দেশে সবচেয়ে সহজলভ্য এবং সস্তা বাদামটি হলো চীনাবাদাম। যদিও মূলত এটি আসলে কোনো বাদামই নয়, শিম বা মটরজাতীয় বীজ বিশেষ। তবু আমাদের কাছে বাদাম হিসেবেই পরিচিত পাওয়া সস্তার এই খাবারটির উপকারী নানা দিক সম্পর্কে জেনে নিন।

১.             চিনাবাদাম ভালো কোলেস্টোরল তৈরি করে এবং খারাপ কোলেস্টেরল দূর করে দিয়ে থাকে।

২.             চিনাবাদামের ভিটামিন বি৩ মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

৩.            চিনাবাদামে উপস্থিত প্রোটিন হৃৎরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। চিনা বাদামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট  ডায়াবেটিস নির্মূলেও বিশেষভাবে কার্যকরী। এছাড়া এই বাদামটি পিত্তকোষ সংক্রান্ত ব্যাধি এবং কলেক্টোরাল ক্যানসার প্রতিরোধ করে থাকে।

এছাড়াও চিনা বাদাম ঠান্ডা, কাশি, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, খাওয়ার অরুচি এবং নিদ্রাহীনতা দূর করে এবং রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

পাইন বাদাম (চিলগজা)-এর উপকারিতা

১. পাইন বাদাম ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে

২. এই বাদামে কোষ্ঠকাঠিন্য কমে যায়।

৩. এই বাদামে জৈবিক তেল পাওয়া যায়, যা হার্ট এবং লিভারের জন্য উপকারী।

৪. এটি হাড়কে শক্তিশালী করে।

৫. এটি শরীরের মধ্যে ক্ষতিকর কলেস্টেরল পরিমাণ কমাতে কাজ করে।

 

বাদাম খান নিয়ম মেনে

এতসব উপকারী দিক থাকা সত্ত্বেও কেবল নিয়ম মেনে না খাওয়ার কারণে হিতে বিপরীতটা হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। আর তাই বাদাম খাওয়ার সময় খেয়াল রাখুন কয়েকটি বিশেষ দিক। যে-কোনো বাদাম চেষ্টা করুন কাঁচা খেতে। কাঁচা বাদাম হজমে সমস্যা হলে ভিজিয়ে খেতে পারেন। কাঁচা বাদামের খাদ্য উপাদানগুলি অবিকৃত থাকে যার কারণে কাঁচা বাদাম খেলে বাদামের সর্বোচ্চ উপকারিতাটা পাওয়া যায়। ভাজা বাদামে ফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা এসিডিটি বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া তেলে ভাজা বাদাম, মধু বা চিনি মেশানো বাদাম খেলে উপকারের পরিবর্তে অপকারের আশঙ্কাই বেশি থাকে। এর ফলে ওজন এবং  রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। অনেকে বাদামের বিকল্প হিসেবে বাদামের মাখনও (নাট বাটার) খেয়ে থাকেন। কিন্তু বাদামের মাখনে থাকা লবণ ও ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড বাদামের নানা রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতাকে কমিয়ে দিতে পারে। ফিরনি, পায়েস, হালুয়াসহ নানারকমের খাবারের স্বাদবৃদ্ধিতেও বাদাম ব্যবহার করে থাকেন অনেকেই। তবে এসব রান্নায় ব্যবহৃত বাদামও উপকারের চেয়ে অপকারই করবে বেশি। বেশিরভাগ বাদামের খোসা অনেক বেশি উপকারী হলেও কাজুবাদামের খোসা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এলার্জির সমস্যা থাকলে এড়িয়ে চলুন চিনাবাদাম। এছাড়া পরিমাণের দিকেও খেয়াল রাখুন। প্রতিদিন ৩-৫টি আখরোট আপনার স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট। কাঠবাদাম ২-৩টি আর কাজু এবং পেস্তাবাদাম প্রতিদিন ৫-৭টির বেশি না খাওয়াই ভালো। আর কাঠবাদাম রাতে ভিজিয়ে খালি পেটে খেলে ভালো। ছোট একমুঠির বেশি চিনাবাদাম খাওয়ার অভ্যাসে হতে পারে হিতে বিপরীত।

 

অতিরিক্ত বাদাম খাওয়ার অপকারিতা

বাদামের অনেক উপকারিতা থাকলেও অতিরিক্ত গ্রহণ করলে তা ক্ষতিকর হতে পারে।

বাদাম শরীরে অতিরিক্ত ফাইটিক এসিড তৈরি করে। শরীর যেহেতু ফাইটিক এসিড সরাসরি হজম করতে পারে না, তাই হজমে বাধা সৃষ্টি হয়। যাদের কিডনি ও গলব্লাডারের সমস্যা রয়েছে তাদের কাঠবাদাম ও কাজুবাদাম এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ এতে বিদ্যমান অক্সালেট ক্যালসিয়াম কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করতে পারে। অতিরিক্ত ক্যালরিসমৃদ্ধ হওয়ায় বাদাম বেশি পরিমাণে খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে। বাদাম যদি লবণ দিয়ে ভেজে খাওয়া হয় তাহলে সেটি ব্লাডপ্রেশার বাড়িয়ে দিতে পারে।

কখন কোন বাদাম

বাদামে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে কিন্তু অনেকেই জানেন না দিনের কোন সময় কোন বাদাম খেলে স্বাস্থ্যের পক্ষে বেশি উপকারী। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক গ্যাস্টোএন্টারোলস্টি ডা. সৌরভ শেঠি জানিয়েছেন বাদাম নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য। নিচে তা উল্লেখ করা হলো—

দিনের শুরুতে

ডা. সৌরভ শেঠির পরামর্শ হলো, কাঠবাদাম দিয়ে দিনটা শুরু করা উচিত। এই বাদামে ভিটামিন ই ও ম্যাগনেশিয়াম রয়েছে প্রচুর। তাই সকালে বাদাম খেলে পেটের জন্য ভালো। মন-মানসিকতার তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

দুপুরে

ডা. শেঠি বলছেন দুপুরবেলা হলো কাজুবাদাম খাওয়ার সবচেয়ে চমৎকার সময়। এই বাদামে থাকা জিংক ও আয়রন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং শক্তিও বৃদ্ধি করে।

বিকেলে

বিকেল হলো, পেস্তাবাদাম খাওয়ার আদর্শ সময়। বেলা তিনটা থেকে রাত বারোটার সময়। এই সময় পেস্তাবাদাম খেলে ক্লান্তি দূর হয়। কেননা এতে রয়েছে প্রোটিন ও ফাইবার।

 

সন্ধ্যায়

সন্ধ্যায় হলো আখরোট খাওয়ার সেরা সময়। এই বাদামে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও মেলাটোনিন ঘুমের সহায়ক এবং মস্তিষ্ক ভালো রাখে।

যে-কোনো সময়

চিনাবাদাম দিনের যে-কোনো সময় খেতে পারেন।

কোথায় পাবেন

পুরান ঢাকার চকবাজার ও বাদামতলী, কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেটে আপনি পাইকারী দরে নানা ধরনের বাদাম কিনতে পারেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন সুপারশপে পাবেন প্যাকেটজাত নানা রকম বাদাম।

 

 

 

 

Leave a Reply

Your identity will not be published.