এ দেশের একটি সোনালি অতীত রয়েছে। স্বর্ণালী সেই অধ্যায়ে আলোকিত মানুষেরা বিচরণ করতেন। তাঁরা আপন প্রতিভার দ্যুতিতে নিজেদের জীবনকে যেমন উদ্ভাসিত করেছেন, তেমনি দেশের মানুষকেও আলোকিত করার মহান ব্রতে থেকেছেন সচেষ্ট। এইসব মানুষের শেকড় সন্ধানে অন্যদিন কাজ করে যাচ্ছে।
৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়ার ১৪১তম জন্মবার্ষিকী ও ৮৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর জীবন ও জন্মভূমি সর্ম্পকে একটি বিশেষ রচনা এখানে তুলে ধরা হলো।
উত্তরবঙ্গ সফরকালে রংপুর, জয়পুরহাট ও বগুড়া জেলার মধ্যে আমরা প্রথমে রংপুর জেলা বেছে নিই। কেননা এই জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন উপমহাদেশের নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। গবেষকদের মতে, বিশ শতকের সূচনায় বাংলার মুসলমান সমাজের অনগ্রসরতা দূর করার ক্ষেত্রে যাঁদের ভূমিকা স্মরণীয়, তিনি তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব; আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম উল্লেখযোগ্য মুসলমান লেখিকা। মহিয়সী এই নারীর পরিচয় শুধু লেখিকা হিসেবে সীমিত নয়, সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রেও তাঁর ভূমিকা উদাহরণযোগ্য।
তাঁর সমাজ সংস্কার চিন্তার প্রকাশ ঘটে অবরোধ প্রথার বিরোধিতায়, নারী শিক্ষা বিস্তারের প্রয়াসে ও নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে। কাজী আবদুল ওদুদের ভাষায়, ‘মিসেস আর এস. হোসেনের প্রতিভা ভগ্নহৃদয় মুসলমানের জন্য দৈব আশ্বাস।’ একটি ব্যাপারে রোকেয়া-গবেষকগণ সকলেই একমত যে, তাঁর রচনা, সাংগঠনিক কর্ম ও যুক্তিধর্মী চিন্তার মূলে ছিল সমাজ-হিত-আকাঙ্খা।
সঙ্গী ফটোগ্রাফার বিশ্বজিৎদা’সহ রংপুরে নামার সঙ্গে সঙ্গে উপলব্ধি হয় স্থানীয় মানুষজনের উৎসুক দৃষ্টি আমাদেরকে অনুসরণ করছে। বিশ্বজিৎদা’র ক্যামেরা-ব্যাগ দেখে অনেকেই আমাদের সাংগঠনিক পরিচয়টা আঁচ করতে পেরে জিজ্ঞেস করে বলে, আপনারা কি পায়রাবন্দ যাবেন? আমরা হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়াই, রংপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত গোল্ডেন টাওয়ার আবাসিক হোটেলে ব্যাগ-পত্তর রেখে আমরা বাইরে বেরিয়ে পড়ি। হালকা ভুঁড়িভোজ শেষে আমরা পায়রাবন্দ যাওয়ার লোকেশনটা জেনে নিই। রংপুর শহরের জাহাজ কোম্পানি থেকে পায়রাবন্দ যাওয়ার দু’টি উপায় আছে। বাসে গেলে নামতে হবে মিঠাপুকুর। সেখান থেকে রিকশায় সোজা পায়রাবন্দ চলে যাওয়া সম্ভব। অথবা রিকশাতেও পায়রাবন্দ যাওয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে সময় এবং ভাড়া একটু বেশি হলেও রিকশায় ঘোরার মজাটা বেশ উপভোগ্য। আমরা রিকশা নিয়েই রওয়ানা দিই। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে রিকশা মিঠাপুকুর পৌঁছে যায়। একটি ফলকে তীরচিহ্ন দিয়ে লেখা পায়রাবন্দ গ্রাম। তার পাশেই অন্য একটি ফলকে লেখা রয়েছে মহীয়সী নারী রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন (জন্ম ১৮৮০, মৃত্যু ১৯৩২)। মিঠাপুকুর সদর রাস্তা থেকে ১০ মিনিটের ব্যবধানে আমরা পৌঁছে যাই পায়রাবন্দ গ্রামে।
রিকশা থেকে নেমে একটি ফলকের দিকে আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় যেখানে লেখা রয়েছে, নারী শিক্ষায় উৎসর্গিত প্রাণ নিত্য স্মরণীয় বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু করেন এই পায়রাবন্দ গ্রামে। জন্ম. পায়রাবন্দ ৯ ডিসেম্বর ১৮৮০, মৃত্যু কলিকাতা ৯ ডিসেম্বর ১৯৩২।
আমরা পরিচিত হই মহিয়সী নারী বেগম রোকেয়ার জন্মস্থান বেষ্টনী প্রাচীরের রক্ষক হবিবর রহমানের সঙ্গে। তিনি আমাদেরকে বেষ্টনী প্রাচীরের ভিতরে নিয়ে যান এবং জায়গাটা ঘুরে ঘুরে দেখান। বোঝা যায়, এখানে অনেকেরই পদধূলি পড়েছে। বেষ্টনী প্রাচীরের ভেতরে রোকেয়ার বসতভিটায় যে চিহ্ন রয়েছে তা একেবারেই অপ্রতুল, একটা ভগ্ন দেয়াল (খোলা দরোজার অংশসহ) কোনো রকমে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর ঘরের পিলারগুলো প্রায় মাটি লাগোয়া অবস্থায় নিজেদের অস্তিত্ব ঘোষণা করছে। পঞ্চাশোর্ধ্ব হবিবর রহমান জানান, তাঁর ছেলেবেলায় পিলারগুলোর সঙ্গে দেয়ালের অংশবিশেষও ছিল। শুধু উপরের ছাদ ছিল না। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সবকিছুই এখন বিলীন হতে বসেছে। তিনি অনেকটা আক্ষেপের সুরেই বললেন, রোকেয়ার স্মৃতিচিহ্ন রক্ষার জন্য অনেক কিছুই করা হয়েছে। কিন্তু সময়মতো না হওয়ায় বেশিরভাগই কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। রোকেয়ার বসতভিটার শেষ স্মৃতিচিহ্নটুকু দেখতে দেখতে আমাদের মনে পড়ে যায়— রোকেয়া রচনায়ও তাঁর পিতৃ-পরিবারের ঐশ্বর্যের উল্লেখ আছে, ‘আমাদের এ অরণ্যবেষ্টিত বাড়ির তুলনা কোথায়! সাড়ে তিন শত বিঘা লাখেরাজ জমির মাঝখানে কেবল আমাদের এই সুবৃহৎ বাটি।’
রোকেয়ার পিতার নাম আবু আলী সাবের, জীবদ্দশায় তিনি চারটি বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রীর নাম রাহাতুন্নেছা চৌধুরী। রোকেয়া তাঁরই গর্ভজাত সন্তান। রোকেয়ার মায়ের গর্ভে আরও দুটি পুত্র ও দুটি কন্যা জন্মগ্রহণ করে। এঁরা হলেন, আবুল আসাদ মোহাম্মদ ইব্রাহিম সাবের ও খলিলুর রহমান আবু জায়গাম সাবের এবং করিমুন্নেসা ও হোমায়রা। রোকেয়ার মাতামহের নাম হোসেন উদ্দীন। আবু আলীর তিন স্ত্রীর আরও ছয়পুত্র ও তিন কন্যা। পুত্রদের নাম আবুজ মাজহার, আবুল ফাজেল, জর্জেস, সেকান্দার, সোলেমান, ইসমাইল, মসিহুজ্জামান, কন্যা—বদরুন্নেসা, আসিয়া ও সফুরা।
লায়লা জামান রচিত ‘রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন’ জীবনীগ্রন্থ থেকে জানা যায়, রোকেয়ার পিতা আবু আলী সাবের ছিলেন বিলাসী ও অমিতব্যয়ী। মাসিহুজ্জামানের বিবরণ অনুসারে রোকেয়ার পিতা উত্তরাধিকারী রূপে রোকেয়ার পিতামহের সম্পত্তির ভাগ পেয়েছেন মোট সম্পত্তির সাত এক দশমাংশেরও কম; নিজের ও সন্তানদের বিয়েতে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে বিপুল অর্থব্যয় করে শেষ জীবনে অর্থাভাবের শিকার হন। পিতার আর্থিক দুর্দশার কালে রোকেয়ার জন্ম। আবু আলী সাহেবের পরিচয় সম্পর্কে শামসুন নাহার মাহমুদ লিখেছেন, ‘সে যুগের কুসংস্কার ও গোঁড়ামি তাহার মধ্যে পূর্ণমাত্রায় বাসা বাঁধিয়াছিল। রোকেয়ার পিতার রক্ষণশীলতার ফলে সাবের পরিবারে কঠোর পর্দাপ্রথার প্রচলন ছিল, শুধু পুরুষদের সামনে নয়, অনাত্মীয় মহিলাদের সামনেও পর্দা ব্যবহার করতে হতো।’ এ প্রসঙ্গে রোকেয়া লিখেছেন, ‘সবে মাত্র পাঁচ বৎসর হইতে আমাকে স্ত্রীলোকদের হইতেও পর্দা করিতে দেয়া হইত। ছাই কিছুই বুঝতাম না যে, কেন কাহারো সম্মুখে যাইতে নাই, অথচ পর্দা করিতে হইত, পুরুষদের অন্তঃপুরে যাইতে নিষেধ, সুতরাং তাহাদের অত্যাচার আমাকে সহিতে হয় নাই, কিন্তু মেয়ে মানুষের অবাধ গতি অথচ তাহাদের দেখিতে না দেখিতে লুকাইতে হইবে।’
বলা প্রয়োজন, পর্দা ছাড়াও বাঙালি মুসলমান অভিজাত পরিবারের অন্তঃপুরে ইংরেজি, বাংলা দুই ভাষার চর্চাই নিষিদ্ধ ছিল। একমাত্র আরবি ভাষায় চর্চা চলত, তাও শুধু কোরান পাঠের মধ্যেই সীমিত ছিল। রোকেয়া তাঁর অগ্রজ সম্পর্কে লিখেছেন, ‘চিরাচরিত প্রথা অনুসারে তাঁহাকে টিয়া পাখির মতো কোরান শরিফ ব্যতীত আর কিছুই পড়িতে দেয়া হয় নাই। কিন্তু তাহাতে তাঁহার আত্মার তৃপ্তি হইত না।... তিনি প্রাঙ্গণে মাটিতে আঁক কাটিয়া বাঙ্গালা লিখিতে শিখিয়াছিলেন।’
জন্মস্থানে প্রাচীর বেষ্টনী ঘুরে আমরা বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদের সামনে যাই। তার পাশেই রয়েছে—পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতি গণকেন্দ্র পাঠাগার। পাঠাগারের অন্যপাশে রয়েছে বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত রোকেয়া মেমোরিয়াল সাখাওয়াত একাডেমি। সেখানে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা পড়ালেখায় গভীরভাবে ব্যস্ত। লেখাপড়ার মধুরতম এই দৃশ্য দেখে আমার মনের ভেতরে অসংখ্য প্রশ্ন এসে ভিড় করে। রোকেয়া যে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে সামনে রেখে নারী জাগরণে ব্রতী হয়েছিলেন—তাঁর মৃত্যুর প্রায় সত্তর বছর পরে তাঁর বসতভিটা পায়রাবন্দের মেয়েদের ভাগ্যে কি সেই সুদিন ফিরে এসেছে? স্থানীয় লোকজনদের কাছে কথা প্রসঙ্গে জানা যায়, পায়রাবন্দ গ্রামে এখনো বাল্য বিবাহের করাল অভিশাপ লেগে রয়েছে। ১৫/১৬ বছর বয়সে মেয়েদের বিয়ের কথা তারা নিজমুখেই স্বীকার করেছেন। রোকেয়ার বিয়ে প্রসঙ্গে জানা যায়, আনুমানিক ১৬ বছর বয়সে রোকেয়ার বিয়ে হয় উর্দুভাষী সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে। বিয়ের সময় বিপত্নীক সাখাওয়াত-এর বয়স ছিল ৩৮। বিবাহিত জীবনে রোকেয়া দু’টি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন, দু’টি সন্তানেরই অকাল মৃত্যু ঘটে। একজন চার মাস অন্যজন পাঁচ বছর বয়সে মারা যায়।
রোকেয়ার কর্মজীবনে ত্রিমুখী ব্যক্তিত্বের প্রকাশ লক্ষ করা যায়। প্রথমত শিক্ষাব্রতিনী, দ্বিতীয়ত সমাজসংস্কারক, তৃতীয়ত লেখিকা। বলা প্রয়োজন, তাঁর রচনাবলী প্রধানত সমাজ সংস্কারক ও শিক্ষাব্রতিনী রোকেয়া মত প্রকাশের বাহন।
স্বামীর মৃত্যুর পাঁচ মাস পরে স্বামীর প্রদত্ত অর্থে ১৯০৯ সালের ১ অক্টোবর রোকেয়া ভাগলপুরে ‘সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গালর্স স্কুল’ স্থাপন করেন। মনুষ্যত্ববোধের উদ্বোধন ও সামাজিক সংস্কার সম্পর্কে চেতনা সৃষ্টির প্রয়াসে রোকেয়া ১৯১৬ সালে আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলাম বা মুসলিম মহিলা সমিতি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সূচনা করেন।
সমাজের মঙ্গল সাধনের উদ্দেশ্যে সমকালে যে সব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল, রোকেয়া প্রায় সব ক’টির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। নিখিল ভারতের মুসলিম মহিলা সমিতির আজীবন সদস্যপদ লাভ করেন তিনি। ‘বেঙ্গল উইমেন্স এডুকেশনাল কনফারেন্স-এর বিশিষ্ট সদস্য ছিলেন, ১৯২৬-এ এই প্রতিষ্ঠানের অধিবেশনে সভানেত্রিত্বও করেন তিনি। ডা. লুৎফর রহমান (১৮৮৯-১৯৩৬) প্রতিষ্ঠিত নারীতীর্থ (১৯২২) প্রতিষ্ঠানের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। ‘নারীতীর্থ’ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পতিতা নারীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হতো। তিনি ১৯২৫ সালে ‘আলীগড় মহিলা সমিতি’র সম্মেলনে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ লাভ করেন, ১৯২০ সালে কলকাতার স্বাস্থ্য ও শিশু প্রদর্শনীতে সভানেত্রী নির্বাচিত হন।
বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত রোকেয়া রচনাবলীতে তাঁর সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে নিম্নোক্ত অভিমত উদ্ধৃত হয়েছে বেগম রোকেয়া বা রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন নামে যিনি বহুল পরিচিত, তিনি লিখতেন, ‘মিসেস আর এস. হোসেন’ নামে, এই নামে তার বইগুলি বেরিয়েছিল। তাঁর আয়ুষ্কাল ছিল অনতিদীর্ঘ, ১৮৮০-৩২, মাত্রই ৫২/৫৩ বছর, প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যাও নিতান্তই অল্প, মাত্র পাঁচটি: ‘মতিচূর’ (প্রথম খ-, ১৯০৪), সুলতানার স্বপ্ন (১৯০৮), ‘মতিচূর’ (দ্বিতীয় খ- ১৯২২), ‘পদ্মরাগ’ (১৯২৪) এবং ‘অবরোধ বাসিনী’ (১৯৩১)।এর বাইরেও রোকেয়ার অগ্রন্থিত প্রবন্ধ, ছোটগল্প ও রসরচনা এবং অগ্রন্থিত কবিতা রোকেয়া রচনাবলীতে সংকলিত হয়েছে।
একাডেমিক ভবন পেরিয়ে আমরা বেগম মেমোরিয়াল ভবনের সামনে উপস্থিত হই। এর কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে— ছহি কোরআন শিক্ষাকেন্দ্র, বেগম রোকেয়া স্মৃতি পাঠাগার, মহিলাদের হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ ও বিক্রয়কেন্দ্র, বেগম রোকেয়া স্মৃতি পাঠাগার, মহিলাদের হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ ও বিক্রয়কেন্দ্র। মেমোরিয়াল ভবনের সামনেই রয়েছে পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়। তার পাশেই রয়েছে পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।
বিদ্যালয়ের সাইনবোর্ডে উদ্ধৃত হয়েছে বেগম রোকেয়ার বাণী: ‘শিক্ষা ছাড়া নারী সমাজের উন্নতি নাই’। বেগম রোকেয়ার পৈতৃক ভিটার সর্বাংশ জুড়েই রয়েছে নানা ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে গবেষণাধর্মী কোনো প্রতিষ্ঠান সেখানে আজোবধি গড়ে উঠে নি। বরং একটি গ্রামের সহজাত বাস্তবতা সেখানে বিদ্যমান। অথচ মহীয়সী এই নারীর স্মৃতি বিজড়িত এই প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে অনেক কিছু করাই সম্ভবপর ছিল। এমনকি পর্যটন মোটেল গড়ে তোলার মতো কোনো বাস্তব পদক্ষেপও আজোবধি গৃহীত হয় নি। দূরের দর্শনাথীদের থাকার জন্য রয়েছে জেলা পরিষদের একটি রেস্টহাউজ, যেখানে মাত্র ৪ কামরায় একজন করে ২৪ ঘণ্টা থাকার সুব্যবস্থা রয়েছে। বেগম রোকেয়ার বসতভিটার একেবারে শেষ প্রান্তের রাস্তা ঘেঁষে রয়েছে একটি মসজিদ, মসজিদের সঙ্গে রয়েছে একটি পুরোনো আমলের প্রবেশ দ্বার। এটা নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে বির্তক রয়েছে। একপক্ষ মনে এটি করে এটি রোকেয়ার বসতভিটায় ঢোকার মূল প্রবেশদ্বার। অন্যপক্ষ মনে করেন— এটি রোকেয়ার দাদার আমলের মসজিদের প্রবেশদ্বার। সেখানে আরও কিছু ধ্বংসচিহ্ন রয়েছে। মসজিদের গম্বুজের পাশে পুরোনো আমলের ইটের দেয়ালের মাটি সংলগ্ন অবস্থান নিজের অস্তিত্ব ঘোষণা করছে। এগুলোর উৎখনন কাজ সম্ভব হলে হয়তো অনেক বিতর্কের অবসান সম্ভব হতো।
পায়রাবন্দে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা একাডেমি বাস্তবায়ন করেছে ‘নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র।’ অবশ্য প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক কার্যক্রম আজও বাস্তবায়িত হয় নি। বেগম রোকেয়ার বসতভিটা থেকে বেরিয়ে আমার কেবলই মনে হতে থাকে—রোকেয়ার লেখালেখি ও সামাজিক কর্মকুশলতার মূল উদ্দেশ্য সমাজ-হিত আকাক্সক্ষা হলেও তাঁর আবাল্যের বেড়ে ওঠা জন্মভূমি পায়রাবন্দ সেই আলোয় আজও আলোকিত হয়ে পারে নি। এর জন্য প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রের ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সক্রিয় সহযোগিতায় রোকেয়ার স্বপ্নপূরণের সমূহ উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা।
Leave a Reply
Your identity will not be published.