খামখেয়ালী সভার আয়োজনে আহমদ রফিককে স্মরণ

খামখেয়ালী সভার আয়োজনে আহমদ রফিককে স্মরণ

ভাষাসংগ্রামী, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও সংগঠক আহমদ রফিক। এদেশে রবীন্দ্রচর্চায় তাঁর অবদান অপরিসীম। গত ২ অক্টোবর এই ক্ষণজন্মা মানুষটি অসীমে মিশে গিয়েছেন। তাঁর স্মরণে গতকাল, ৮ নভেম্বর, শনিবার, সন্ধ্যায় সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার মননশীল সংগঠন ‘খামখেয়ালী সভা’ রাজধানী বাংলা মোটরের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে এক স্মরণসভার আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিকের স্মৃতির উদ্দেশে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর দেখানো হয় খামখেয়ালী সভার সঙ্গে আহমদ রফিকের স্মৃতি-বিজড়িত একটি প্রামাণ্যচিত্র। জানা যায়, ২০১৪ সালে এই সংগঠনটির সূচনাকাল থেকেই আহমদ রফিক এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন, প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক শফি আহমেদ, অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী, চিত্রশিল্পী আব্দুল মান্নান, বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান লালটু, অন্যপ্রকাশের অন্যতম পরিচালক ও পাক্ষিক ‘অন্যদিন’-এর নির্বাহী সম্পাদক আবদুল্লাহ্ নাসের, অনিন্দ্য প্রকাশের প্রকাশক আফজাল হোসেন, খামখেয়ালী সভার সদস্য ও আহমদ রফিক ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি ইসরাত রহমান নাদিয়া।

সভাপতির বক্তব্যে আহমদ রফিককে ‘সবচেয়ে বড় রবীন্দ্র গবেষক’ হিসেবে অভিহিত করেন অধ্যাপক শফি আহমেদ।

অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী বলেন, “আহমদ রফিক সবসময় ঐক্যবদ্ধ সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কথা বলতেন। আমাদের তাঁর দিকনির্দেশনা মনে রাখতে হবে।...তিনি তরুণদের পছন্দ করতেন। তাই তাঁর বহু বই তিনি উৎসর্গ করেছেন সম্ভবনাময় বহু তরুণকে। তিনি একটি উপন্যাসের খসড়াও লিখে গেছেন শেষ জীবনে। তাঁর শেষ ইচ্ছা ছিল, ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁর স্মরণে একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা।

অন্যপ্রকাশের অন্যতম পরিচালক ও পাক্ষিক ‘অন্যদিন’-এর  নির্বাহী সম্পাদক আবদুল্লাহ্ নাসের বলেন, “আহমদ রফিক ছিলেন ‘অন্যদিন’-‘অন্যপ্রকাশ’-এর আপনজন। আমাদের কাছে তিনি ছিলেন অভিভাবকের মতো। তাঁর বহু বই আমরা প্রকাশ করেছি। কিছু বইয়ের বিষয় তিনিই নির্ধারণ করেছেন। আবার কিছু বই তিনি আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে লিখেছেন। তিনি খুবই অতিথিপরায়ণ ছিলেন।”

আহমদ রফিক ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল সাদি বলেন, “আহমদ রফিকের অনেক রচনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেফারেন্স বই হিসেবে পাঠ্যক্রমে যুক্ত হওয়া উচিত। যেমন, ‘পদ্মাপর্বের রবীন্দ্রগল্প’, ‘দেশবিভাগ : ফিরে দেখা’ ইত্যাদি। কিন্তু সেটি হয় নি। তবে তিনি যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হতেন, তাহলে এমন হতো না। তাঁর বহু গ্রন্থই পাঠ্য ও রেফারেন্স বই হিসেবে বিবেচিত হতো। আসলে আহমদ রফিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়তে চেয়েছিলেন। ভর্তিও হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে আবাসিক ছাত্র করা হয় নি। ফলে তিনি বাধ্য হয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন।”

কর্মসূত্রে চীন অবস্থানের কারণে উপস্থিত থাকতে পারেননি খামখেয়ালী সভা ট্রাস্টের সভাপতি মাহমুদ হাশিম। তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, অতীতের মতো ভবিষ্যতেও আহমদ রফিক জাতির দিশারি হয়ে থাকবেন। খামখেয়ালী সভার রবীন্দ্র গ্রন্থাগারে ‘আহমদ রফিকের রচনা সংগ্রহ’ সংরক্ষণ, আহমদ রফিকের রচনাকে ভিত্তি করে ‘আহমদ রফিক অধ্যয়নসভা’ শুরু এবং রবীন্দ্র গবেষকদের জন্য ‘আহমদ রফিক গবেষণা বৃত্তি’র পরিকল্পনার ঘোষণা দেন তিনি। আহমদ রফিকের স্মৃতিরক্ষায় এবং চর্চায় আহমদ রফিক ফাউন্ডেশনের সঙ্গে একযোগে কাজ করার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন খামখেয়ালী সভার সভাপতি।

অনুষ্ঠানে কলকাতার ‘টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউটের’ পক্ষ থেকে ভিডিওবার্তায় শোক ও শ্রদ্ধা জানান অধ্যাপক অভ্র বসু।

আলোচনা ফাঁকে আহমদ রফিকের কবিতা থেকে আবৃত্তি করেন আবৃত্তিশিল্পী আশরাফুল আলম ও নায়লা তারান্নুম চৌধুরী। সংগীত পরিবেশন করেন জাকির হোসেন তপন, মঞ্জু-আরা রশিদ ও নাঈমা বিন্তি।

 

Leave a Reply

Your identity will not be published.