পিয়াস মজিদ-এর সাতটি কবিতা

পিয়াস মজিদ-এর সাতটি কবিতা

ভাদুর মাইসা প্রেম

ভাদুর মাইসা সকালে

মনে পড়ে সব

বিগত ভাদ্ররে।

তোমারও কি মনে পড়ে

নাকি

ঘামের গোডাউন ০১টা বডি

স্মৃতিতে শুধু ভাসে?

স্মৃতি মানে ফুল না

ফুল তো ঝরে পড়ে,

ঘামই মেমোরি মূলত।

ঝরে গিয়ে ঘাম আবার

ফুটে থাকে

আমারই বডিতে;

তোমার ফুল হয়ে।

আমাদের কাঁচা-কাঁচা ব্যর্থতার

কত দূরে

কয়েকটা তাল পাকে?

এইবার পিঠা খাবে

নাকি

মুড়ি দিয়ে রস খাবে;

প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে

আমেস টুটুওয়ালা

কবে যে ঘুমায় গেছে

তাড়িখোড় টাইমেরও

১০টা-১২টা বাজায়ে!

তোমার নন্দনের বনে

এভাবেই আমারে পাবে

এমন অনাহূত ভাদ্রে;

কুত্তা-মরা জিন্দা সোহাগে।

 

মানিব্যাগ হারাতে হারাতে

হারাতে হারাতে

বারবার আমার

মানিব্যাগ হারায়।

অপুষ্ট মানিব্যাগটা

অপার আগ্রহ নিয়ে

নিশ্চয়ই কেউ না কেউ কুড়ায়।

মানিব্যাগে তেমন কোনো

টাকাপয়সা না পেয়ে

ছেড়াফেঁড়া কাগজপত্রের মতো

আমার একান্ত আসবাবপত্রগুলো

নিশ্চয়ই ফেলে দেয়

মানিব্যাগের নতুন বাহক।

নিজের মতো করে সাজিয়ে-গুছিয়ে

মানিব্যাগটাও হয়তো ঢুকায়

তার প্যান্টের পকেটে।

এতদিন আমার পকেটে

ঘরসংসার করে

সে-ই অজানা লোকটার পকেটে

মানিব্যাগটা আজকাল কীরকম আছে!

সে কি আমার

ছুটে চলা-বসে পড়া

আমার অভাব ও প্রাপ্তি

আমার ক্লান্তি ও শান্তির

পকেটস্থ ঘ্রাণ মিস করে এখনো!

তোমারে হারিয়ে আমার মন খারাপ ভীষণ,

তোমারও কি ০১টা প্রাক্তন পকেটের জন্য

একটুও করে কেমন কেমন;

ও আমার হারিয়ে যাওয়া মানিব্যাগের মন?

 

গন্ধের দাগ

হাঁটছি নগর ঢাকায়

পা দুটি ডুবে গেছে

মেট্রোধুলায়-ধুলায়।

ভূতের গলি বসত করে

কোথায় পাবে এমন পিওর

পরিবাগের ফ্লেভার?

ভেজাল নিয়ে-ভেজাল দিয়ে

ঝলমলে সিটিতে ঘুরি

অন্ধকার চাঁদচাষি মাঝি;

দরিয়ার দিল শুকিয়ে

তারার গায়ের ভেজা ঘাস কাটি।

এখানে আমার আত্মার আবাদ

আমাকেই ফিরিয়ে দেয়

আমার ভুখা-নাঙা স্বাদ!

একে একে ঢাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছে

যত জানে-জিগার,

শুধু চলে যাওয়ার খুশবুরা জানে

থেকে যাওয়া ঢাকা-ই

আমার মেহের নিগার।

 

মিখাইল গর্বাচেভের ০১টা ব্যর্থতা

মিখাইল গর্বাচেভ আর দুনিয়াজাহানে ছড়াই-ছিটাই থাকা

তার চেইন সাঙ্গপাঙ্গরা প্রচার করতে থাকল,

সাম্যবাদ ০১টা মরা ভূত

হাতের ৫ আঙুল কখনো সমান না

পৃথিবীতে সবচে অবাস্তব জিনিসটার নাম দিল তারা

‘সমতা’!

০১ দিন হঠাৎ কইরাই মইরা গেল মিখাইল গর্বাচেভ

যেমন মইরা যায় পৃথিবীর সবচে’ বড়লোক ব্যক্তিটা

যেমন মইরা যায় পৃথিবীর সবচে’ গরিব হতভাগা

যেমন মইরা যায় কার্ল মার্কস ও ফ্রেডরিক এঙ্গেলস

যেমন মইরা যায় ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন!

সোভিয়েত ভাইঙা হাসতে হাসতে মইরা যাইতে যাইতে

মিখাইল গর্বাচেভ দেখল,

আরে, এ তো দেখি অদ্ভুত সমতা!

বড়লোক মরে- গরিবও মরে

মার্কস-এঙ্গেলস-লেনিন মরে

আবার শালা আমিও মরি!

জীবনভর এইভাবে সাম্যবাদ খেদাইয়া

এখন ‘মওত’ নামের

সর্বজনীন সাম্যবাদী ভূতের কবলে পড়লাম!

হাতের অসম ৫ আঙুল এতটা কাল তাইলে কি

আমার আর আমার ফ্রেন্ডসার্কেলের মসৃণ মাথাগুলারে

সমানভাবে চুদুরবুদুর বুঝাইয়া গেল?

 

আবহমান

একটু শান্তির জন্য আপনি যত

নিকষ রাতের রিফিউজি হতে চাইবেন

তত আপনারে ঠেলে নিয়ে যাওয়া হবে

ফকফকা দিনের গৃহগত নিশ্চয়তার দিকে।

১০১টা

কাজের সঙ্গে

আলোর সঙ্গে

তরক্কির সঙ্গে

স্ক্রু-ড্রাইভার দিয়ে যুক্ত করে দেয়া হবে।

ভেতরে ভেতরে আপনি যত

একাকী অন্ধকার চাইবেন

বিধ্বস্ত হতে ভালোবাসবেন

নিজের চোখরে নিজের

ক্ষতের প্রদর্শনী দেখাবেন;

ততই আপনার বিরুদ্ধে

জোট বাঁধবে, তৈরি হবে

শুভ আর কল্যাণের চিরাচরিত শয়তানি।

পচতে পচতে কখনো আপনি

মরে যেতে থাকলে

জোর করে বাঁচায়ে রাখতে

ওরা আপনার ওপর ঢালবে

মোটিভেশনের বরফ।

০১ কাজ করেন বরং;

আপনি বরফের বাগানে

চুপচাপ ফুল হয়ে ফুটে থাকেন।

শালারা আপনারে আর বেশি

ত্যক্ত করার আগেই

আগুনের পাপড়ি জ্বালায়ে

ওদের বুঝিয়ে দিন,

সব শীতল সুগন্ধির ভেতরেই থাকে

কুরুক্ষেত্রের দাউদাউ রাস্তা।

আগুন নেভানোর সামর্থ্য না থাকলে

বরফরে বরফ থাকতে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

 

আসা যাওয়ার পথের ধারে

যাই,

বেঁচে থাকতে গেলে

কোথাও তো

যেতেই হয়;

বাঁচতে

কিংবা

মরতে!

 

মহাবিশ্ব

শরতের রাত;

আকাশের জেলখানায়

সাজা খাটা আসামির মতো

জেগে থাকা চাঁদ;

জ্যোৎস্নার জুলুম।

মুক্ত পৃথিবী ভেসে যায়

চাঁদতারার বন্দি বিভায়।

কতকালে

আমাদের হাত-পা থেকে ছুটবে

আলোর শেকল!

Leave a Reply

Your identity will not be published.