আবু সাঈদের নতুন চলচ্চিত্র

আবু সাঈদের নতুন চলচ্চিত্র

স্বনামধন্য চলচ্চিত্র পরিচালক আবু সাইয়ীদের সর্বশেষ চলচ্চিত্র ছিল ‘অপেক্ষা’, যা মুক্তি পেয়েছিল ২০১১০ সালে। দীর্ঘ বিরতির পর তিনি শুরু করেছেন তাঁর নতুন চলচ্চিত্রের কাজ। চলচ্চিত্রের নাম ‘ ড্রেসিং টেবিল’। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত এই চলচ্চিত্রটির শুটিং শুরু হয়েছে গত ২৪ জুলাই, চলবে ২ আগস্ট পর্যন্ত। ঢাকা শহর ও পুবাইলের একটি বাড়িতে চলছে চলচ্চিত্রের শুটিং।

‘ড্রেসিং টেবিল’ এর দুটি অংশ। প্রথম অংশের শুটিংয়ে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় অংশ নিচ্ছেন তারনি রহমান, এ কে আজাদ, নাদিয়া খানম, কে এস ফিরোজ, ইফফাত তৃষা, পরেশ আচার্য, মোহাম্মদ বারি, খলিলুর রহমান কাদেরী প্রমুখ।

‘ড্রেসিং টিবেল’র প্রথম অংশের কাহিনি ধারায় দেখা যাবে- শিলা ও রুহুল বছরখানেক হলো বিয়ে করেছে। দুজনেই এতিমখানায় বড় হয়েছে। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার, অভাব-অনটনের কারণে এখনো সংসারটা গুছিয়ে নিতে পারে নি। বাসায় কোনো ড্রেসিং টেবিল নেই। একদিন পুরোনো একটি ড্রেসিং টেবিল কিনে আনে রুহুল। হোক পুরোনো, তাতেই খুশি শিলা। পরদিন সকালেই ড্রেসিং টেবিলটা পরিস্কার করতে গিয়ে একটি ড্রয়ারের ভেতর একটি পুরোনো ডায়েরি পায় শিলা। অন্যের ডায়েরি পড়া উচিত নয়—এই ভেবে প্রথমে ডায়েরিটা না পড়লেও ঠিকানাবিহীন এই ডায়েরিটা এক রাতে পড়া শুরু করে দেয় সে। দুই-তিন পৃষ্ঠার মধ্যে এমন কিছু পায় শিলা যে, সে সারা রাত জেগে ডায়েরিটা পড়ে শেষ করে। পড়া শেষ করে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় নিজেকে আবিষ্কার করে নতুন রূপে। 

চলচ্চিত্রটিতে ড্রেসিং টেবিল-এর একটি প্রতীকী ব্যবহার রয়েছে। কেননা ড্রেসিং টেবিল থেকে পাওয়া ডায়েরি পড়েই শিলা নিজের অতীতকে জানতে পারে। তার মধ্যে একটি চেতনাগত পরিবর্তন হয়। নিজেকে গভীরভাবে জানতে পারে, বুঝতে পারে। এই চলচ্চিত্রের মধ্যে এটাই মূর্ত হয়ে উঠেছে যে, আমার অতীত যাইহোক না কেন তা আমাকে স্বীকার করতে হবে—এমনকি তা অগৌরবের হলেও। শিলার সেই অতীত, অন্যকথায়, তার মায়ের জীবন, জীবনধারা, যা সমাজের প্রচলিত নৈতিক বোধের সঙ্গে খাপ খায় না, আর এটি নিয়েই শিলার সঙ্গে রূহুলের দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

চলচ্চিত্রকার আবু সাইয়ীদ জানান, ছবির প্রথম অংশের কাজ শেষ হলে দ্বিতীয় অংশের কাজে হাত দেবেন। আর ওই অংশের অভিনয়শিল্পীদের এখনো নির্বাচিত করেন নি তিনি। অভিনয়শিল্পীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছুটা ফ্রেশ মুখ নিয়ে কাজ করেছি আমি। একেবারে অনভিজ্ঞ কাউকে নিই নি। কেননা সেক্ষেত্রে তাদের তৈরি করে নিতে হতো। কিন্তু তার জন্য যে সময় দরকার তা আমার নেই। আবু সাইয়ীদ আক্ষেপ করে বলেন, এই প্রজন্মের পারফরমারদের মধ্যে সিরিয়াসনেস নেই, কাজের প্রতি নিষ্ঠা নেই। তারা ভীষণ স্বার্থপর। শুধু নিজের দিকটাই দেখে। এতে পুরো চলচ্চিত্রের পারফরমেন্স ভালো হয় না। 

আবু সাইয়ীদ আরও জানান, ‘ড্রেসিং টেবিল’-এ আঙ্গিকগত দিক থেকে নতুনত্ব দেখা যাবে। ভাবনাগত ভিন্নতা পাওয়া যাবে এখানে। বলা যায়, চলচ্চিত্রটির ফর্ম একেবারেই আলাদা।

জানা গেছে, এখন থেকে নিয়মিত চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন আবু সাইয়ীদ। টেলিফিল্ম, টিভি নাটক—কোনো কিছুই নির্মাণ করবেন তাই তো ‘ড্রেসিং টেবিল’-এর কাজ শেষ হলে আবু সাইয়ীদ আরেকটি চলচ্চিত্র ‘সংযোগ’-এর কাজে হাত দেবেন।

উল্লেখ্য, ১৯৮৮ সালে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আবর্তন’-এর মাধ্যমে স্বলচ্চিত্রকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন আবু সাইয়ীদ। পরে তিনি নির্মাণ আরও একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ধূসর যাত্রা’ (১৯৯২)। এই দুটি রু চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন আবু সায়ীদ। 

আবু সাইয়ীদের পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্রের মধ্যে রয়েছে—কিত্তনখোলা (২০০০), শঙ্খনাদ (২০০৪), নিরন্তর (২০০৬), বাঁশি (২০০৭), রূপান্তর  (২০০৮) এবং অপেক্ষা (২০১০)। কিত্তনখোলার জন্য জাতীয় এবং ‘নিরন্তর এবং ‘রূপান্তর’-এর জন্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন আবু সাইয়ীদ।
 

Leave a Reply

Your identity will not be published.