শীতকালে পানি খেলে বহু মানুষের এমনিতেই দাঁত শিরশির করে। এদের অনেকেই ভাবেন শীতকালের পানি ঠান্ডা বলে এমনটি হয়। আসলে কি তাই?
যদি পানির ঠান্ডা হওয়াটাই কারণ হতো তবে সব মানুষেরই এই সমস্যাটি দেখা দিত। তা তো হচ্ছে না। এর মানে হচ্ছে, যাদের পানি খেতে বা পানি দিয়ে কুলি করতে শীতকালে সমস্যা হচ্ছে, তাদের মুখে একটু হলেও সমস্যা আছে। হতে পারে এর জন্য কারও কারও কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন নেই, কিন্তু অনেক সময়ই দাঁতে শিরশির করা বেশ কিছু ডেন্টাল রোগের লক্ষণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তাই আর নয় অবহেলা। এমনটি বোধ হলে অবশ্যই ডাক্তার দেখান। চেকআপ করে নিশ্চিত হোন কোনো সমস্যা আছে কি না।
তবে এর সঙ্গে মনে রাখতে হবে, শীতকালে যদি কেউ অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি পান করেন বা ব্যবহার করেন তবে কোনো সমস্যা না থাকলেও শিরশির করতে পারে। যেমনটি হয় আইসক্রিম খাওয়ার সময়। বরফ ঠান্ডা পানি বা বরফে শিরশির অনুভ‚তি দাঁতের স্বাভাবিক অবস্থারই প্রকাশ। বাইরে যত ঠান্ডাই পড়ুক, সাধারণত মুখের ভেতরের তাপমাত্রা থাকে ৯৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার কাছাকাছি। তাই বরফ ঠান্ডা যে-কোনো কিছু মুখে দিলে মুখের ভেতরের তাপমাত্রা আকস্মিক কমে যায়। সে কারণে শিরশির করে ওঠে।
দাঁতে কোনো ক্যারিজ বা দাঁতের মাঢ়িতে কোনো রোগ শুরু হচ্ছে কি না তা বোঝার জন্য একটু সাবধান থাকলেই চলে। বেশিরভাগ দাঁতের অসুখে প্রথমে শিরশির অনুভ‚তি দিয়ে লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া শুরু করে। যেমন ক্যারিজ বা ক্ষত। দাঁতে যখন ক্যারিজ বা ক্ষত হয়—প্রথমদিকে ব্যথা হয় না, দাঁতের মাঢ়ি ফুলে যায় না, দাঁত ভেঙে যায় না। প্রথম পানি খেলে শিরশির করে, টক খেলে দাঁত টকে যায়, মিষ্টি খেলে অস্বস্তি হয়। অনেকে এসে অভিযোগ করেন, মিষ্টি খেতে পারেন না, টক খেতে পারেন না। ডাক্তারি ভাষায় রোগটিকে বলা হয় হাইপারেমিয়া। এ অবস্থায় দাঁতে ফিলিং করলেই হয়ে যায়। যদি এ অবস্থাতেও চিকিৎসা করা না হয়, তবে অ্যাকিউট পাল্পাইটিসের দিকে যায়। এ অবস্থায় ঠান্ডা বা গরম পানি খেলে তীব্র ব্যথার অনুভ‚তি হয়। যদি এই ব্যথা ত্রিশ সেকেন্ডের বেশি থাকে, তবে রুট ক্যানাল চিকিৎসা করতে হয়। সাধারণত অ্যকিউট পাল্পাইটিস হলে রাতের দিকে ব্যথা বেশি হয়। অসহ্য ব্যথা হয়।
এ অবস্থাতেও যদি চিকিৎসা না করা হয় বা অন্যকোনো কারণে (যেমন পেরিওডন্টাইটিস) দাঁতের পাল্প আক্রান্ত হয় তবে ক্রনিক পাল্পাইটিস হয়। এমনটি হলে সাধারণত ব্যথা তীব্র হয় না। যদি ব্যথা হয় তবে অনেক সময় ঠান্ডা পানিতে ব্যথা না বেড়ে বরং কমে যায়। তাই বলা যায়, শীতকালে যদি কারও দাঁতের ব্যথা কমে যায় বা আগে থেকে থাকা ব্যথার অনুভ‚তি সেরে যায়, তবে বুঝতে হবে ক্রনিক পাল্পাইটিস হয়েছে। এ রোগের চিকিৎসাতেও রুট ক্যানাল করতে হয় বা দাঁত ফেলে দিতে হয়।
অনেকের দাঁতের মাঢ়িতে পাথরের মতো জমে থাকে বা দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে মাংসজাতীয় খাবার আটকে থাকে। টুথপিক দিয়ে খুচিয়ে ওইসব খাবার বের করতে গিয়ে পকেটের মতো হয়। পাথর জমে জিনজিভাইটিস হোক আর পকেট হয়ে পেরিওডন্টাইটিস হোক শীতকালে পানি লাগলে শিরশির করবেই।
যদি এমন সমস্যাও থাকে তবুও ডেন্টিস্টের কাছে গিয়ে যথাযথ চিকিৎসা নেওয়া দরকার।
অনেকে খুব জোর দিয়ে বা বেশি সময় ধরে ব্রাশ করেন। এতে দাঁতের মাঢ়ি সরে যায় বা দাঁতের গোড়ার দিকে ক্ষয়ে যায়। এমন অবস্থাতেও শিরশির করে। এ ক্ষেত্রেও ফিলিংয়ের মতো সহজ চিকিৎসা করলে সমাধান হয়ে যায়।
শীতের দিনে ব্রাশ করার আলসেমিতে ভোগেন অনেকেই। ঠান্ডা পানির ভয়ে দয়া করে এ কাজটি করবেন না। দরকার হলে একটু পানি গরম করে কুলি করার কাজে ব্যবহার করুন। দেখবেন দাঁতও পরিষ্কার থাকবে, দাঁতে অসুখও বাসা বাঁধতে পারবে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দাঁত ব্রাশ নিয়মিত না করার জন্য ক্যারিজ ও জিনজিভাইটিস রোগ দুটো শুরু হয়। এ রোগ থেকেই পরবর্তী সময়ে আরও কিছু রোগ হয়। প্রথমদিকে যেখানে খুব অল্প খরচে চিকিৎসা করা যায়, ব্যথা লাগে না—পরবর্তী পর্যায়ে ব্যাপারটি তেমন থাকে না। তখন চিকিৎসা করতে কষ্টও হয়, খরচও বেশি হয়।
Leave a Reply
Your identity will not be published.