ক্যান্সার নিয়ে মানুষের আতঙ্ক সবসময় বেশি। যেকোনো রোগ হলেই রোগী প্রথমেই ভাবেন ক্যান্সার হলো না তো ? ডাক্তার হিসেবে বহুবার রোগীর এ ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন আমাদের হতে হয়। দাঁত বা মাঢ়ির রোগ হলে এ আতঙ্ক যেন আরও বেশি।
মুখে ক্যান্সার হয়-এটা সত্যি। এই উপমহাদেশে মুখের ক্যান্সারের হার অন্য অনেক দেশের তুলনায় অনেক বেশি। এর বড় কারণ পান, বিড়ি, তামাক ইত্যাদি। তাই মুখের ক্যান্সার বিষয়ে আতঙ্কের চেয়ে বেশি প্রয়োজন সচেতনতা। কারণ ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমাতে পারবেন, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগটি বুঝতে পারলে পুরোপুরি ভালো হওয়ার সুযোগও হতে পারে। আর এগুলো সম্ভব কেবল ক্যান্সার বিষয়ে সতর্ক থাকলে।
ভালো খবর হলো, সাম্প্রতিক সময়ে ক্যান্সারের বেশ উন্নত চিকিৎসা আমাদের দেশেও শুরু হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়ের হারও বেড়েছে। আবার ক্যান্সারের চিকিৎসা নেওয়ার পর সফলতার হারও বেড়েছে।
মুখের ক্যান্সারের জন্য নিয়মিত ডেন্টিস্টকে দেখানো জরুরি। তিনি চেকআপ করলেই বুঝতে পারবেন আপনার এ জাতীয় সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি কতখানি। কিছু অসুখ আছে যেগুলো প্রি ক্যান্সারাস লেশন নামে পরিচিত-এগুলোর উপস্থিতি লক্ষ করলে তিনি চিকিৎসা দেবেন। ফলে ঝুঁকি কমবে ক্যান্সারের।
জেনে রাখা ভালো
- মুখের ক্যান্সার শুরুতে খুব ছোট থাকে। সাধারণত সাদা বা লাল রঙের স্পট বা ক্ষত মুখের ভেতরের গালে বা জিহ্বায় বা তালুতে বা ঠোঁটে দেখা দেয়।
- যারা তামাক ও তামাকজাত পণ্য ব্যবহার করেন, তাদের মুখের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। > যারা অ্যালকোহল পান করেন তাদের ক্যান্সার বেশি হয়।
- বেশি সময় রোদে থাকলে ঠোঁটের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এসব অভ্যাস না থাকলেও ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি সবার জন্যই রয়েছে।
যা থাকলে ডেন্টিস্ট দেখাতে হবেই
- মুখে ভেতরে কোথাও ক্ষত হলে বা ফোসকার মতো করে চামড়া উঠে গেলে এবং সেই ক্ষত | দুই সপ্তাহের মধ্যে না শুকালে।
- মুখের ভেতরের গাত্রের রঙ গোলাপি থেকে বদলে গেলে।
- মুখের ভেতরে শক্ত চাকার মতো কিছু হলে।
- ঠোঁটের কোথাও ব্যথা, অবশ অবশ ভাব হলে।
- চিবুনো, গেলা ও কথা বলতে অসুবিধা হলে।
- জিহ্বা নাড়াতে অসুবিধা হলে।
মুখের ক্যান্সারের কয়েকটি তথ্য
আমাদের দেশে কতজন লোক প্রতিবছর মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তবে যে কয়েকটি গবেষণা পরিচালিত হয়েছে তা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী উন্নত বিশ্বের তুলনায় এখানে মুখের ক্যান্সারের হার কয়েকগুণ বেশি। এবার জানা যাক উন্নত বিশ্বের কী পরিস্থিতি। প্রতিবছর আমেরিকাতে ৩৪ হাজার মানুষ মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং সাড়ে সাত হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে এই ক্যান্সারে। মেয়েদের চেয়ে পুরুষদের এই ক্যান্সার হওয়ার হার প্রায় দ্বিগুণ। চিকিৎসা পাওয়ার পরও ২৫ ভাগের মৃত্যু ঘটে পাঁচ বছর যেতে না যেতেই।
ক্যান্সারের বিপদ যখন
তামাক (পান, বিড়ি, সিগারেট, গুল, জর্দা, খৈনি) ও তামাকজাত পণ্য, অ্যালকোহল পান করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে তিনগুণ। তবে দেখা গেছে যাদের এসব অভ্যাস ছিল না সেরকম লোকও ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন। মোট ক্যান্সার আক্রান্তের মধ্যে ২৫ ভাগ লোকের ক্ষেত্রে এসব কারণ ছাড়াই ক্যান্সার হয়ে থাকে। চল্লিশ বছর বা তার বেশিবয়সী মানুষের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমবয়সীদের তুলনায় পাঁচগুণ বেশি। মুখের ভেতর ধারালো দাঁতের কারণেও ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। দীর্ঘদিন কোনো টিউমার চিকিৎসা না করালে সেখান থেকে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
তাই সাবধান হোন, সতর্ক থাকুন
কারণগুলো যখন জানা থাকে তখন সাবধান হওয়ার সুযোগ বেশি থাকে। এখন তো মুখের ক্যান্সার হওয়ার কারণ সম্পর্কে খানিকটা ধারণা পেলেন। এবার সতর্ক হোন। যে অভ্যাসগুলো ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায় তা বদলে ফেলুন। নিয়মিত ডেন্টিস্টকে দিয়ে মুখের ভেতরটা চেকআপ করান। বিশেষ করে বয়স চল্লিশ হওয়ার পর। দাঁতের কোনো অসুখকে ছোট মনে করবেন না বা ব্যথা হচ্ছে না বলে চিকিৎসা করা বন্ধ রাখবেন না।
Leave a Reply
Your identity will not be published.