শীতের অসুখ-বিসুখ

শীতের অসুখ-বিসুখ

শীতে কয়েকটি রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। যেমন—সর্দিজ্বর, টনসিলের প্রদাহ (টনসিলাইটিস), গলার প্রদাহ (ফ্যারিনজাইটিস, ল্যারিনজাইটিস), ত্বকের অসুখ ইত্যাদি। এ সময় ঠান্ডা লেগে শিশু-কিশোরদের নিউমোনিয়া রোগটিও বেশি দেখা যায়। এছাড়া কিছু ক্রনিক রোগ এ সময় রোগীদের বেশ কিছুটা বাড়তি ভুগিয়ে থাকে। এ রোগগুলো হচ্ছে—হাঁপানি বা অ্যাজমা, বাত বা আর্থাইটিস, ত্বকের রোগ (দাদ/একজিমা) ইত্যাদি। 
শীতের সময় রোগের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে ও ক্রনিক রোগগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে শীতকালটি বেশ ভালোভাবেই কাটবে বলা যায়। 

জ্বর-সর্দি-কাশি 
শীতে অনেকেই জ্বরের সঙ্গে সর্দি-কাশিতে ভুগে থাকে। সাধারণত ভাইরাসজনিত কারণে এমনটি হয়ে থাকে। উপসর্গগুলো হলো—গা ব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক বন্ধ থাকা, শুকনো কাশি ইত্যাদি। খাওয়া-দাওয়ায়ও রুচি থাকে না। 
কিছুটা বিশ্রাম নিলে সর্দি-কাশি-জ্বর থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা যায়। জ্বর ও গা ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল ট্যাবলেট (ফাইটামল) ৫০০ মিলিগ্রাম ১টা করে তিন-চারবার খাওয়া যেতে পারে। খুব বেশি গা-মাথা ব্যথা থাকলে অথবা জ্বর না সারলে দুটি ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে। অবশ্য শিশুদের ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল সাসপেনশন অর্থাৎ তরল ওষুধ খাওয়াতে হবে। শিশুর শরীরের প্রতি কেজি ওজনের জন্য ৫০ মিলিগ্রাম করে দিনে ৩/৫ বার। অন্য কথায় ১ বছরের কম বয়সী : আধা চামচ থেকে এক চা-চামচ; ১-৫ বছর বয়সী : ১-২ চা-চামচ; ৬-১২ বছর বয়সী : ২-৪ চা-চামচ। 
সর্দিজ্বরে যেহেতু রুচি কমে যায়, সেহেতু আনারস, বাতাবিলেবু, আমলকি, আমড়া, কমলা খেলে ভালো লাগবে। বাসায় তৈরি সব ধরনের সহজ পাচ্য খাবারই খাওয়া যাবে। সর্দিকাশিতে পাকা কলা, দই খেতে নেই—এ ধরনের কথার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তাই কলা-দই খাওয়া যেতেই পারে। তবে শীতল পানীয়, আইসক্রিম না খাওয়াই ভালো। এছাড়া কয়েকটি বিষয় মেনে চলা উচিত। যেমন— ১. গলা ব্যথার জন্য গরম পানির গড়গড়া করা উচিত। এতে আরাম পাওয়া যায়। ২. শরীরের উত্তাপ ১০০ ডিগ্রি হলে বা বেশি থাকলেই প্যারাসিটামল ওষুধ খাওয়া উচিত, ৩. কাশির জন্য এন্টি হিস্টামিন জাতীয় ট্যাবলেট বা সিরাপ খাওয়ার প্রয়োজন নেই। শুকনো কাশির জন্য উষ্ণ গরম পানি, আদা-চা বা আদার কুচি খেলে খুসখুসে কাশি চলে যায়; ৪. কাশি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য ফুটন্ত পানির ভাপ নাক বা মুখ দিয়ে নিলে উপকার পাওয়া যায়। জলীয় বাষ্প কফকে দ্রুত নরম করে। ফলে কফ তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসে এবং কাশি সেরে যায়। ৫. সাধারণত শীতের সর্দি-জ্বর এমনিতেই সেরে যায়। পাঁচদিনেও যদি না সারে, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 

হাঁপানি 
হাঁপানি বা অ্যাজমা হচ্ছে ক্রনিক বা মেয়াদি রোগ। শীতকালে এ রোগ বেড়ে যায়। তাই এ সময় ঠান্ডা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে; গরম পোশাক পরতে হবে। সকাল-সন্ধ্যায় মাফলার ও কান-ঢাকা টুপি ব্যবহার করতে হবে। ফুলের রেণু, কুকুর-বেড়ালের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে। কেননা এইসব বিষয় উপসর্গগুলো বাড়িয়ে তোলে। ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে। দু’দিন পরপর বালিশ-তোশক রোদে দেবেন। যেসব খাবার যেমন ইলিশ, চিংড়ি মাছ, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি খেলে এলার্জি হয়, সেসব খাবার খাবেন না। 
হাঁপানির উপসর্গ সাধারণত রাতে বেশি দেখা যায়। তাই সন্ধ্যার পর বাইরে কম বের হবেন। নিয়মিত ওষুধ খাবেন—ডাক্তারের পরামর্শ মতো। 

গেঁটে বাত 
গেঁটে বাত বলতে রিউমাইয়েড আর্থাইটিসকে বুঝি। এ হচ্ছে অঙ্গপ্রতঙ্গের অস্থিসন্ধিগুলোতে প্রদাহের জন্য সৃষ্ট এক ধরনের ব্যথা। শীতকালে এই ধরনের ব্যথা বেশি হয়—ঠান্ডা ও স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া তা উসকে দেয়। 
গেঁটে বাতের উপশমের জন্য প্রতিদিন কিছু হালকা ব্যায়াম করা উচিত। হট ওয়াটার ব্যাগ বা গরম পানির বোতল দিয়ে সেঁক দেওয়া যেতে পারে। ঠান্ডা ও স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। খুব বেশি ব্যথা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। 

Leave a Reply

Your identity will not be published.