ক্যানসার প্রতিরােধী খাবার

ক্যানসার প্রতিরােধী খাবার

বর্তমান পৃথিবীতে চিকিৎসাবিজ্ঞান যতটা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়েই যেন যােগ হচ্ছে নিত্যনতুন ব্যাধির। ক্যানসার তেমনই এক মরণব্যাধি। রােগটির বয়স পার হয়েছে বেশ কয়েক বছর। চিকিৎসা পদ্ধতিও আবিষ্কার হয়েছে কিছু কিছু। কিন্তু এখনাে পরােপরি নিরাময়ের চিকিৎসা রয়ে গেছে বহুদর। কিছু কিছু ক্যান্সারের চিকিৎসা এখনাে রয়ে গেছে পুরােপুরি হাতের নাগালেই। কিন্তু আশার কথা হচ্ছে রােগটির প্রতিকার খুব কঠিন হলেও প্রতিরােধটা কঠিন নয় তেমন। ক্যানসার যাতে শরীরে বাসা বাঁধতে না পারে তার জন্য শরীরকে প্রস্তুত করতে হবে আগে থেকেই। বিশ্বব্যাপী অনেক গবেষণাতেই প্রমাণিত হয়েছে শুধুমাত্র ডায়েট আর ব্যায়ামের মাধ্যমেই বেশিরভাগ ক্যানসার রােধ করা সম্ভব। প্রতিদিনকার খাদ্য তালিকায় কিছু খাবার নিয়মিত রাখা আর কিছু খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমেই ক্যানসারকে ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব অনেকাংশেই। কিছু খাবারে রয়েছে ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান। আবার কিছু নির্দিষ্ট খাবারের মধ্যে রয়েছে ক্যানসারবিরােধী উপাদান। এসব খাবার নিয়মিত গ্রহণ করলে ক্যানসারকে ঠেকিয়ে রাখা খুব কঠিন কিছু নয়।

হলুদ (Turmeric)

মসলা হিসেবেই শুধু নয় রােগ প্রতিরােধেও হলুদের রয়েছে কার্যকরী ভূমিকা। হলুদের সবচেয়ে সক্রিয় উপাদান কারকিউমিন। এটি প্রদাহজনিত সমস্যা রােধ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মানব দেহের টিস্যুর মধ্যে প্রবেশ করে ভেতর থেকে ক্যানসার প্রতিরােধী ক্ষমতা গড়ে তােলে। তরকারিতে কিংবা কাঁচা হলুদ উভয়ই শরীরকে ক্যানসার প্রতিরােধী করে তােলে।

মিষ্টি আলু (Sweet Potato) 

মিষ্টি আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারােটিন নামক এন্টি-অক্সিডেন্ট যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরােধ গড়ে তােলে। গবেষণায় দেখা যায় উচ্চ মাত্রায় বিটা ক্যারােটিন শরীরে থাকলে তা কোলন, স্তন, পেট ও ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও প্রি মেনােপজাল সময়ের মধ্যে যেসকল নারীরা। বেশি পরিমাণে মিষ্টি আলুর মতাে বিটা ক্যারােটিন, ফেলেট, ভিটামিন-সি এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান তাদের স্তন ক্যান্সারের আশংকা কমে প্রায় অর্ধেক।

জাম্বুরা ও কমলা (Pomelo and Orange)

জাম্বুরা ও কমলার ভিটামিন সি ক্যানসার সৃষ্টিকারী নাইট্রোজেন যৌগের বৃদ্ধি রােধ করে ক্যানসার প্রতিরােধ করে। জাম্বুরা, কমলার মতাে ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার খাদ্যনালী, মুত্রাশয়, স্তন, সার্ভিকাল, কোলন প্রভৃতি ক্যানসার প্রতিরােধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন সরাসরি কিংবা এক গ্লাস বাতাবি লেবুর শরবত কিংবা কমলার জুস ক্যানসার প্রতিরােধে অনেক বেশি ভূমিকা রাখে।

 

বেদানা (Pomegranate)

 বেদানায় থাকা অ্যালাজিক অ্যাসিড ক্যানসার সৃষ্টিকারী যৌগকে নিষ্ক্রিয় করে এবং ক্যানসার কোষ বৃদ্ধি বন্ধ করে ক্যানসার প্রতিরােধ করে। এছাড়াও ক্যানসারকে জটিল আকার ধারণ করার ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করে এই উপাদানটি। সরাসরি কিংবা সালাদ, জুস, মিল্কশেক , কাস্টার্ড, ফালুদা যে-কোনাে উপায়েই খেতে পারেন মজাদার এই ফলটি।

বেরি (Berry) 

বেরি এ দেশের ফল না হলেও এ ফলটি বর্তমানে আমাদের দেশে দুপ্রাপ্য নয় মােটেও। বিশেষ করে স্ট্রবেরি তাে এখন এদেশেই চাষ হচ্ছে। এ ছাড়াও রাস্পবেরি, ব্ল্যাকবেরি, ব্লুবেরি ও পাওয়া যায়। সবধরণের বেরিতেই ক্যানসার প্রতিরােধী উপাদান ‘পটেরস্টিলবন ' নামক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। খাদ্য তালিকায় নিয়মিত মৌসুম অনুযায়ি বেরি রাখলে ক্যানসার থেকে দূরে থাকা সম্ভব অনেকখানি।

রসুন ও পেঁয়াজ (Garlic and Onion) 

রসুন ও পেঁয়াজে এমন কিছু রাসায়নিক উপাদান রয়েছে যা খাদ্যনালী, পাকস্থলী, ফুসফুস এবং যকৃতের ক্যানসার প্রতিহত করে। গবেষণায় দেখা গেছে, রসুনের নির্যাস স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি শতকরা প্রায় ৭১ ভাগ কমিয়ে দেয়। বিশেষ করে গ্রাসনালি, পাকস্থলি ও স্তনের ক্যানসার কমাতে রসুন খুবই কার্যকরী। রসুনের উপাদান ক্যান্সারের বিস্তারেও বাধা দেয়। এছাড়া রসুন রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা। বাড়ায়। রসুনের মধ্যে বিদ্যমান সালফার উপাদান রক্তের ম্যাক্রোফেস ও টিলিস্ফোসাইটের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ক্যানসার কোষকে ধ্বংস করে দেয়। রান্না করা রসুনের তুলনায় কাচা রসুন বেশি কার্যকরী। রসুনের মতাে পেঁয়াজও। ক্যানসার প্রতিরােধে কার্যকরী।

চা (Tea)

 চায়ে রয়েছে ক্যাসিন নামক একটি যৌগ এবং শক্তিশালী এন্টি অক্সিডেন্ট ইজিসিজি। এই যৌগটি মানবদেহকে ক্যান্সারের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। সম্প্রতি চীনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা চা পান করেন তাদের ফুসফুস, প্রােস্টেট, কোলন এবং স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি যারা চা পান করেন। না তাদের থেকে অনেক কম। এছাড়াও মুখের ক্যানসার প্রতিরােধেও চা খুবই কার্যকরী। চায়ের মধ্যে সবুজ চা (গ্রিন টি) ক্যানসার প্রতিরােধে বেশি কার্যকরী।

কাঁকরােল (Kakrol) 

কাঁকরােল সবজি হিসেবে অনেকের কাছেই খুব বেশি প্রিয় না হলেও এ সবজিতে রয়েছে ক্যানসাররােধী ক্ষমতা। কাঁকরােলে লাইকোপিন নামক এন্টিঅক্সিডেন্ট আছে টমেটো থেকেও শতকরা ৭০ ভাগ বেশি। এই লাইকোপিন প্রােস্টেট ক্যানসাররােধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বাদাম (Nut) 

বাদামে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই। ভিটামিন-ই পাকস্থলী, কোলন, ফুসফুস, যকৃতসহ অন্যান্য ক্যানসার প্রতিরােধে খুবই কার্যকরী উপাদান। সব ধরনের বাদাম জাতীয় খাবার ক্যানসার সৃষ্টিকারী সেল বৃদ্ধি প্রতিরােধে ভূমিকা পালন করে। বাদাম শ্রেণীভুক্ত ওয়ালনাট বা আখরােটে রয়েছে প্রােস্টেট ক্যানসার। ও স্তন ক্যানসার প্রতিরােধী উপাদান। কাজুবাদাম ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। ব্রাজিল নাটে থাকা সেলেনিয়াম উপাদানটি পুরুষের প্রােস্টেট ক্যানসার প্রতিরােধে কার্যকর। ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ চীনাবাদাম কোলন, ফুসফুস, যকৃত, এবং অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। সকালে কিংবা বিকালের নাস্তায় নিয়মিত বাদাম রাখলে তা আপনার শরীরকে ক্যানসার থেকে দূরে রাখতে পারে।

সয়াবিন (Soyabean) 

সয়াবিনে বিদ্যমান সয়া অহিসােফ্রাভােন ছাড়াও রয়েছে ক্যানসাররােধী অন্তত পাঁচটি উপাদান। এসব উপাদান ক্যানসাররােধে খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে কোলন, ত্বক এবং অন্যান্য ক্যানসারকে প্রতিরােধে সয়াবিন খুবই কার্যকরী। এছাড়াও সয়াবিনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-ই যা ক্যানসার প্রতিরােধে খুবই কার্যকরী। 

আপেল (Apple)

আপেলের কোয়ার্সেটিন নামের এন্টি অক্সিডেন্ট কমিয়ে দেয় পাকস্থলি আর কোলন ক্যান্সারের সম্ভাবনা। শুধু তাই নয় এটি প্রােস্টেট ক্যান্সারের কোষের বৃদ্ধিও কমিয়ে দেয় অনেকখানি।

বাঁধাকপি, ফুলকপি, শালগম (Cabbage, Cauliflower, Turnip) 

বাঁধাকপি, ফুলকপি, শালগমসহ এই পরিবারের অন্যান্য সবজি যেমন বকচয়, ব্রাসেলস প্রাউট, কলি প্রভৃতিতেও রয়েছে ক্যানসারবিরােধী উপাদান। বিশেষ। করে কোলন, স্তন, ফুসফুস এবং গর্ভাশয়ের ক্যানসার রােধে এসব সবজি খুবই কার্যকরী। এ জাতীয় সবজি অল্প সেদ্ধ করে খেলেই উপকার বেশি। অতিরিক্ত সেদ্ধ করার ফলে সবজির উপাদান যেমন বিশেষ করে ইনডােল নষ্ট হয়ে যায়। এই ইনডােলই ক্যানসার প্রতিরােধে সাহায্য করে। এই সবজি নিয়মিত খেলে খাদ্যনালির ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রায় ৭০ ভাগ কমে যায়। আর স্তন ক্যান্সারের আশংকাও কমে যায় কয়েক গুণ।

টমেটো (Tomato) 

ক্লিনিক্যাল অনকোলজি জার্নালে ২০০৯ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে ক্যানসার প্রতিরােধি উপাদান ‘লাইকোপিন। লাইকোপিন একটি শক্তিশালী এন্টি-অক্সিডেন্ট। টমেটো সস, টমেটো পেস্ট বা টমেটো কেচাপ-লাইকোপিনের ঘন উৎস। লাইকোপিন পুরুষের প্রােস্টেট আর মহিলাদের জরায়ুর মুখ ও ডিম্বাশয়ের ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমিয়ে দেয়। এ ছাড়াও বৃহদন্ত্র, মলাশয়, পাকস্থলি, গ্রাসনালী ইত্যাদি অঙ্গের ক্যানসার প্রতিরােধেও টমেটো সহায়তা করে। বলে বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত। তাই সপ্তাহে অন্তত তিনটি টমেটো খাদ্য তালিকায় রাখলে ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকখানি দূরে রাখা সম্ভব।

 ব্রোকলি (Broccoli)

যৌগটির রয়েছে ক্যানসার স্টেম সেল ধ্বংস করার ক্ষমতা। কেমােথেরাপির মাধ্যমেও যেসব ক্যানসার স্টেম সেল ধ্বংস হয় না ব্রোকলিতে উপস্থিত এই সালফোরেন সেই সেলের পুনরােৎপাদন, বৃদ্ধি এবং বিস্তার রােধে সক্ষম অনেকাংশে। বিশেষ করে স্তন ক্যানসার প্রতিরােধে ব্রোকলির ভূমিকা সত্যিই অবিশ্বাস্য। এ ছাড়াও প্রােটেস্ট, কোলন, ব্লাডার ওভারিন ক্যানসারের বিরুদ্ধেও ব্রোকলি খুবই কার্যকরি। ব্রোকলি ভাপে অথবা অল্প সেদ্ধ করে রান্না করার চেষ্টা করুন। খুব বেশিক্ষণ রান্না করলে এর কার্যকরী উপাদানগুলাে নষ্ট হয়ে যায়।

পেঁপে (Papaya) 

কাচা পেঁপে সবজি আর পাকলে তা ফল। ফল-সবজি দুইভাবেই পেঁপে ক্যানসার প্রতিরােধে অনেক বেশি কার্যকরী। ক্যানসার প্রতিরােধী খাবারে তালিকায় পেঁপের অবস্থান প্রথম দিকেই। পেঁপেতে থাকা লাইকোপিনই মূলত ক্যানসার প্রতিরােধে ভূমিকা রাখে। এটি পুরুষের প্রােস্টেট গ্রন্থির ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও পেঁপেতে থাকা ভিটামিনএ' ফুসফুসের ধূমপানের ক্ষতি কমিয়ে ফুসফুস ক্যানসারসহ ফুসফুসের সব ধরনের রােগ থেকে সুরক্ষা দেয়।

তরমুজ (Watermelon) 

তরমুজেও রয়েছে লাইকেপিন। এই লাইকোপিনেই তরমুজকে লাল করে। ক্যানসারের উদ্রেকারী কিছু রেডিক্যালকে এই উপাদানটি প্রশমিত করে এবং ক্যান্সারের প্রক্রিয়াকে কমিয়ে দেয়। রক্তে লাইকোপিনের পরিমাণ কমে গেলে অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের আশংকা বেড়ে যায় প্রায় পাঁচ গুণ পরিমাণ। তরমুজ এই ঝুঁকি কমিয়ে দেয় অনেকাংশে।

সফেদা (Sapodilla) 

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে সফেদার রয়েছে ক্যানসার প্রতিরােধী ক্ষমতা। সফেদায় বিদ্যমান কিছু উদ্ভিজ্জ যৌগ ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি রােধ করে এবং এগুলাের মৃত্যু ঘটায়। ফলে রােগীর শরীরে ক্যানসার মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে না। বিশেষ করে যেসব টিউমারে ক্যান্সারের কোষ বিদ্যমান, সেগুলাের বৃদ্ধি রােধ করে সুস্বাদু এই ফলটি। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সফেদা রাখলে তা আমাদের শরীরে ক্যান্সারের বৃদ্ধি রােধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

গমের ভুসি (Wheat bran)

নিউইয়র্কের কয়েকটি গবেষণায় পাওয়া গেছে গমের ভুসি বৃহদান্তের ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় গমের উপস্থিতি থাকলে প্রাক ক্যানসারধর্মী খাদ্যনালীর ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায় অনেকখানি। স্বল্প চর্বিসম্পন্ন দুধ (Low fat milk) স্বল্প চর্বিসম্পন্ন দুধ ক্যানসার প্রতিরােধে সাহায্য করে। দুধে থাকা ক্যালসিয়াম, রিবােফ্লাবিন আর ভিটামিন-এ, সি, ডি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে। চেষ্টা করবেন সবসময় স্বল্প চর্বিযুক্ত দুধ খেতে। স্বল্প ননীযুক্ত কিংবা ননীমুক্ত দুধটা এক্ষেত্রে বেশি কার্যকরী। দুধের স্বাদ ঘােলে না মিটলেও ঘােলেও রয়েছে ক্যানসার বিরােধী উপাদান।

আনারস (Pineapple) 

আনারসের এন্টি-অক্সিডেন্ট এবং ব্রোমেলেইন' নামক এনজাইম ক্যানসার প্রতিরােধে ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে স্তন ও ফুসফুসের ক্যানসার প্রতিরােধে অনেক বেশি সহায়ক।

বিন (Bean)

বিনে থাকা বিভিন্ন ধরনের পােটেন্ট ফাইটোকেমিকেল ক্যানসার সৃষ্টিকারী কোষের বিস্তার রােধ করে শরীরকে ক্যানসার প্রতিরােধে সহায়তা করে।

চেরি (Cherry) 

চেরিতে রয়েছে পেরিলিল অ্যালকোহল (পিএএইচ) যা ফুসফুসের ক্যানসার প্রতিরােধে খুবই কার্যকরী।

আঙ্গুর (Grape) 

সুস্বাদু ফল হিসেবেই নয় ক্যানসার প্রতিরােধী খাবার হিসেবে ও আঙ্গুর খুবই কার্যকরী। বিশেষ করে বেগুনি এবং লাল আঙ্গুর। আঙ্গুরে থাকা রিভারেট্রল নামক শক্তিশালী এন্টি অক্সিডেন্ট মূলত ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে। আঙ্গুর খেতে ভালাে না লাগলে জুস বানিয়ে খেতে পারেন। একইরকম উপকারী।

মেনে চলুন সঠিক খাদ্যাভ্যাস

  •   কিছু খাবার যেমন ক্যানসার প্রতিরােধ করে তেমনি কিছু খাবার ক্যানসার সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। আবার যেসব খাবার ক্যানসার প্রতিরােধে ভূমিকা পালন করে প্রক্রিয়াজাতকরণ বা টিনজাতকরণের ফলে সেসব খাবারই ক্যানসার সৃষ্টিতে ভূমিকা পালন করে। যেমন-ক্যানড টমেটো, নন অর্গানিক ফুট, ফার্মড স্যামন, প্রােসেসড মিট, মাইক্রোওয়েভ পপকর্ন, ফ্রেন্স ফ্রাই, পটেটো চিপস, হাইড্রোজেনেটেড অয়েল, অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত ময়দা, পরিশােধিত চিনি প্রভৃতি খাবার ক্যানসারের আশংকা বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ। ক্যানসারকে দূরে রাখতে এড়িয়ে চলুন এসব খাবার।
  • মাংসের বিকল্প হিসেবে খাদ্য তালিকায় রাখুন টোফু জাতীয় খাবার। এতে ক্যানসার বিরােধী উপাদানটাও পাবেন।
  • দুগ্ধজাত খাবার যতটা সম্ভব কম খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে প্রােটেস্ট ক্যানসারের সম্ভাবনা কমে যাবে অনেকটা। 
  • ধুমপান ও অ্যালকোহলে অতিরিক্ত আসক্তি ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় অনেক গুণ। তাই অ্যালকোহল এড়িয়ে চললে সুরক্ষা পাবেন মুখ, গলা, কোলন, রেক্টাম এবং ব্রেস্ট ক্যানসারের মতাে কঠিন রােগ থেকে। 
  • কোলন এবং রেক্টাম ক্যানসারের ঝুঁকি এড়াতে রেডমিট, প্রক্রিয়াজাত মাংস এবং টিন জাতীয় খাবার পরিহার করুন। 
  • যে-কোনাে মাংস উচ্চ তাপে রান্না করলে এর মাঝে তৈরি হয় ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান হেটেরােসাইক্লিক অ্যামাইন। এমনকি ভাজা-পােড়া মাংসের ধোয়া সবজিতে লাগলে সে খাবারেও এই ঝুঁকি থাকতে পারে। এ কারণে মাংস উচ্চতাপে রান্না থেকে বিরত থাকুন। কোলন, রেক্টাম, ব্রেস্ট, প্রােস্টেট, কিডনি এবং প্যানক্রিয়াস ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে এড়িয়ে চলুন ভাজা-পােড়া মাংস। 
  • ইতালিতে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে গাঢ় সবুজ শাকসবজি অনেক ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। সবুজ শাকসবজিতে রয়েছে বিটাক্যারােটিন, ফোলেট, লিউটেইন। যে শাকসবজি যতাে সবুজ তাতে ততাে বেশি ক্যানসারবিরােধী উপাদান রয়েছে। 
  • সবসময় চেষ্টা করুন টাটকা খাবার খেতে। ফ্রোজেন এবং প্রােসেসিং খাবার। যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। প্রােসেসিং খাবারে পুষ্টিমান অনেক কমে যায়। অন্যদিকে এতে অনেকক্ষেত্রে নানারকম ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান যুক্ত হয় যা ক্যানসার প্রতিরােধী না বরং অনেকক্ষেত্রে ক্যানসার সৃষ্টি করে। ১ ঝলসানাে মাংস ও কাবাব, অতিরিক্ত চিনি, অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাদ্য, ফ্রিজের খাবার ইত্যাদি ক্যানসারের অন্যতম কারণ।
  •  প্রাণীজ প্রােটিনের পরিবর্তে উদ্ভিজ্জ প্রােটিন গ্রহণের চেষ্টা করুন। 
  • বেশি সেদ্ধ করে রান্না করলে সবজির উপাদান নষ্ট হয়ে যায়। চেষ্টা করুন সবজি কম সেদ্ধ করে রান্না করতে।
  • সবধরনের রােগ বালাই দূরে রাখতেই পর্যাপ্ত পানি পান জরুরি। পর্যাপ্ত পানি পান করলে মুত্রাশয়ের ক্যানসারের আশংকা কমে যায় অনেকাংশেই। 
  • রান্নার পদ্ধতি অনেক সময় ক্যানসার সৃষ্টির জন্য দায়ী। মাংস ফ্রাই কিংবা গ্রিল করলে তাতে সৃষ্ট কিছু উপাদান ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। এর পরবির্তে স্টু, মৃদু আঁচে ঢেকে কিংবা স্টিম মাংস স্বাস্থ্যের জন্য ভালাে। শাক-সবজি হালকা সেদ্ধ করে রান্না করুন। রান্নার তেল কখনাে উচ্চতাপে গরম করবেন সয়াবিনের পাশাপাশি জলপাই, বাদাম, সূর্যমুখি কিংবা তিসির তেল ব্যবহার করুন। 
  • শরীরের জন্য প্রয়ােজনীয় সুষম পুষ্টি সরাসরি খাদ্য থেকেই সংগ্রহ করুন। ভিটামিন ওষুধ বা অন্যান্য সাপ্লিমেন্ট এড়িয়ে চলুন।

ডায়েট প্ল্যান

পরিকল্পিত খাদ্যতালিকা ক্যানসার থেকে আপনাকে অনেকখানি দূরে রাখবে। নিত্যদিনের নিয়মিত খাদ্যতালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে সাধারণ কিছু বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখলেই ক্যানসার আপনার থেকে দূরে থাকবে।

সকালের নাস্তা 

প্রতিদিনের নাস্তায় মৌসুমি ফল, বাদাম জাতীয় এবং বীজ ও শস্যজাতীয় (যব, গম প্রভৃতি) খাবার রাখুন। ফলের মধ্যে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে রাখার চেষ্টা করুন।

দুপুরের খাবার

দুপুরের খাবারে লেটুস, টমেটো, গাজর, বিন, বিট, ক্যাপসিকাম, পুদিনা, গােলমরিচ, বেদানা, লেবু প্রভৃতি সবজি এবং ফল সহযােগে বড় একবাটি সালাদ রাখুন। সেই সঙ্গে গাঢ় সবুজ শাক এবং সবজি রাখুন বেশি পরিমাণে। মাংসের পরিমাণ কম রাখুন।

মধ্যবর্তী খাবার 

স্ন্যাকসে ভাজাপােড়া কিংবা চিপস জাতীয় খাবারের পরিবর্তে সতেজ ফল এবং সবজি জাতীয় (শসা, গাজর, কাঁচা পেঁপে, বিট প্রভৃতি) খাবার খান। সালাদ | ড্রেসিংয়ে ব্যবহার করুন তিসি, বাদাম অথবা জলপাই তেল। রাখুন কিছু বাদাম, অঙ্কুরিত ছােলা, বিন প্রভৃতি খাবার। কোমল পানীয়ের পরিবর্তে পানীয় হিসেবে রাখুন ঘােল বা হাতে তৈরি ফলের জুস।

রাতের খাবার

দুপুরের মতাে রাতের খাবারেও সবজি এবং সালাদ রাখুন বেশি করে। সেদ্ধ আলু, ভাপানাে ব্রোকলি, বাঁধাকপি প্রভৃতি সবজির সঙ্গে বিটলবণ, পুদিনা কুচি, লেবুর রস, গােলমরিচ গুঁড়া প্রভৃতি মিশিয়ে খেতে পারেন ভাতের পরিবর্তে।

মিষ্টান্ন

খুব বেশি চিনি জাতীয় মিষ্টান্ন এড়িয়ে চলুন। মৌসুমি ফল দিয়ে তৈরি কাস্টার্ড, ফালুদা প্রভৃতি মিষ্টান্ন খান। খেতে পারেন মিষ্টি ফলও।

Leave a Reply

Your identity will not be published.