নটরাজ-ঋতুরঙ্গমালা

নটরাজ-ঋতুরঙ্গমালা

ডেকেছ আজি, এসেছি সাজি, হে মোর লীলাগুরু, 
শীতের রাতের তোমার সাথে কী খেলা হবে শুরু। 
    ভাবিয়াছিনু খেলার দিন 
    গোধূলি-ছায়ে হল বিলীন, 
    পরান মন হিমে মলিন 
        আড়াল তারে ঘেরি—
এমন ক্ষণে কেন গগনে বাজিল তব ভেরী। 

 

উতর-বায় কারে জাগায়, কে বুঝে তার বাণী ? 
অন্ধকারে কুঞ্জদ্বারে বেড়ায় কর হানি। 
    কাঁদিয়া কয় কানন-ভ‚মি— 
    ‘কী আছে মোর, কী চাহ তুমি ? 
        শুষ্ক শাখা যাও যে চুমি 
        কাঁপাও থরথর, 
জীর্ণপাতা বিদায়গাথা গাহিছে মরমর।’ 

 

বুঝেছি তব এ অভিনব ছলনাভরা খেলা, 
তুলিছ ধ্বনি কী আগমনী আজি যাবার বেলা। 
    যৌবনেরে তুষার-ডোরে 
    রাখিয়াছিলে অসাড় ক’রে; 
    বাহির হতে বাঁধিলে ওরে 
        কুয়াশা-ঘন জালে—
ভিতরে ওর ভাঙালে ঘোর নাচের তালে তালে। 

 

নৃত্যলীলা জড়ের শিলা করুক খানখান্, 
মৃত্যু হতে অবাধ স্রোতে বহিয়া যাক প্রাণ। 
    নৃত্য তব ছন্দে তারি 
    নিত্য ঢালে অমৃতবারি, 
    শঙ্খ কহে হুহুংকারি
        বাঁধন সে তো মায়া, 
যা-কিছু ভয়, যা-কিছু ক্ষয়, সে তো ছায়ার ছায়া। 

 

এসেছে শীত গাহিতে গীত বসন্তেরই জয়—
যুগের পরে যুগান্তরে মরণ করে লয়। 
    তাণ্ডবের ঘূর্ণিঝড়ে 
    শীর্ণ যাহা ঝরিয়া পড়ে, 
    প্রাণের জয়-তোরণ গড়ে 
        আনন্দের তানে, 
বসন্তের যাত্রা চলে অনন্তের পানে। 

 

বাঁধন যারে বাঁধিতে নারে, বন্দী করি তারে 
তোমার হাসি সমুচ্ছ্বাসি উঠিছে বারে বারে। 
    অমর আলো হারাবে না যে 
    ঢাকিয়া তারে আঁধার-মাঝে, 
    নিশীথ-নাচে ডমরু বাজে 
        অরুণদ্বার খোলে— 
জাগে মুরতি, পুরানো জ্যোতি নব উষার কোলে। 

 

জাগুক মন, কাঁপুক বন, উড়–ক ঝরাপাতা, 
উঠুক জয়, তোমারি জয়, তোমারি জয়গাথা। 
    ঋতুর দল নাচিয়া চলে 
    ভরিয়া ডালি ফুলে ও ফলে, 
    নৃত্য-লোল চরণতলে 
        মুক্তি পায় ধরা— 
ছন্দে মেতে যৌবনেতে রাঙিয়ে ওঠে জরা।

Leave a Reply

Your identity will not be published.