রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বয়স তখন মাত্র আঠারো। ‘ভগ্নহৃদয়’ নামে তাঁর একটি কবিতা ছাপা হয়েছে ভারতী পত্রিকায়।
ত্রিপুরার মহারাজা বীরচন্দ্রমাণিক্যের হৃদয় তখন সত্যিকার অর্থেই ভগ্ন। তাঁর স্ত্রী মহারাণী ভানুমতি মারা গেছেন। তিনি ভগ্নহৃদয় নিয়েই রবীন্দ্রনাথের ‘ভগ্নহৃদয়’ পড়লেন। পড়ে অভিভুত হলেন। একজন রাজদূত (রাধারমন ঘোষ) পাঠালেন কিশোর কবির কাছে। রাজদূত অতীব বিনয়ের সঙ্গে জানালেন, ত্রিপুরার মহারাজা আপনাকে কবিশ্রেষ্ঠ বলেছেন। কিশোর রবীন্দ্রনাথের বিস্ময়ের সীমা রইল না।
রবীন্দ্রনাথের ভাষায়—
এই লেখা বাহির হইবার কিছুকাল পরে কলিকাতায় ত্রিপুরার স্বর্গীয় মহারাজ বীরচন্দ্রমাণিক্যের মন্ত্রী আমার সহিত দেখা করিতে আসেন। কাব্যটি মহারাজের ভালো লাগিয়াছে এবং কবির সাহিত্যসাধনার সফলতা সম্বন্ধে তিনি উচ্চ আশা পোষণ করেন, কেবল এই কথাটি জানাইবার জন্যই তিনি তাঁহার অমাত্যকে পাঠাইয়া দিয়াছিলেন।
[জীবনস্মৃতি, রবীন্দ্রনাথ]
মহারাজা বীরচন্দ্রমাণিক্য প্রতিভা চিনতে ভুল করেন নি। রবীন্দ্রনাথও বন্ধু চিনতে ভুল করেন নি। তিনি গভীর আগ্রহ এবং গভীর আনন্দ নিয়ে বারবার ত্রিপুরা গিয়েছেন। মহারাজা বীরচন্দ্রমাণিক্য এবং তাঁর পুত্র রাধাকিশোরমাণিক্যের আতিথ্য গ্রহণ করেছেন। কত না গান লিখেছেন ত্রিপুরায় বসে। যার একটি গানের সঙ্গে আমার বাল্যস্মৃতি জড়িত। আগে গানের কথাগুলি লিখি, তারপর বাল্যস্মৃতি।
ফাগুনের নবীন আনন্দে
গানখানি গাঁথিলাম ছন্দ।।
দিল তারে বনবীথি,
কোকিলের কলগীতি,
ভরি দিল বকুলের গন্ধ।।
মাধবীর মধুময় মন্ত্র
রঙে রঙে রাঙালো দিগন্ত।
বাণী মম নিল তুলি
পলাশের কলিগুলি,
বেঁধে দিল তব মণিবন্ধে।।
রচনা: আগরতলা, ১২ই ফাল্গুন ১৩৩২
সূত্র: রবীন্দ্র সান্নিধ্যে ত্রিপুরা, বিকচ চৌধুরী
এখন এই গান-বিষয়ক আমার বাল্যস্মৃতির কথা বলি। আমরা তখন থাকি চট্টগ্রামের নালাপাড়ায়। পড়ি ক্লাস সিক্সে। আমার ছোটবোন সুফিয়াকে একজন গানের শিক্ষক গান শেখান। এই গানটি দিয়ে তার শুরু। আমার নিজের গান শেখার খুব শখ। গানের টিচার চলে যাবার পর আমি তালিম নেই আমার বোনের কাছে। সে আমাকে শিখিয়ে দিল হারমোনিয়ামের কোন রিডের পর কোন রিড চাপতে হবে। আমি যখন তখন যথেষ্ট আবেগের সঙ্গেই হারমোনিয়াম বাজিয়ে গাই—‘ফাগুনের নবীন আনন্দে’।
একবার গান গাইছি, গানের শিক্ষক হঠাৎ উপস্থিত। আমার হারমোনিয়াম বাজানো এবং গান গাওয়া দেখে তাঁর ভু্রু কুঁচকে গেল। তিনি কঠিন গলায় বললেন, খোকা শোন! তোমার গলায় সুর নেই। কানেও সুর নেই। রবীন্দ্রনাথের গান বেসুরে গাওয়া যায় না। তুমি আর কখনো হারমোনিয়ামে হাত দেবে না। অভিমানে আমার চোখে পানি এসে গেল।
আমি সেই শিক্ষকের আদেশ বাকি জীবন মেনে চলেছি। হারমোনিয়ামে হাত দেই নি। এখন বাসায় প্রায়ই শাওন হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান করে। যন্ত্রটা হাত দিয়ে ধরতে ইচ্ছা করে। ধরি না। বালক বয়সের অভিমান হয়তো এখনো কাজ করে। তবে বাল্য-কৈশোর ও যৌবন পার হয়ে এসেছি বলেই হয়তো অভিমানের ‘পাওয়ার’ কিছুটা কমেছে। এখন ভাবছি কোনো একদিন গায়িকা শাওনকে বলব তুমি আমাকে ‘ফাগুনের নবীন আনন্দে’ গানটা কীভাবে গাইতে হবে শিখিয়ে দেবে?
যে ত্রিপুরা রবীন্দ্রনাথকে এত আকর্ষণ করেছে সেই ত্রিপুরা কেমন, দেখা উচিত না? রবীন্দ্রনাথের পদরেখা আমার প্রিয় পদরেখা। সেই পদরেখা অনুসরণ করব না? প্রায়ই ত্রিপুরা যেতে ইচ্ছা করে, যাওয়া হয় না, কারণ একটাই, ভ্রমণে আমার অনীহা। ঘরকুনো স্বভাব। আমার ঘরের কোনায় আনন্দ।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘প্রথম আলো’ উপন্যাস পড়ে ত্রিপুরা যাবার ইচ্ছা আবারও প্রবল হলো। উপন্যাসের শুরুই হয়েছে ত্রিপুরা মহারাজার পুণ্যাহ উৎসবের বর্ণনায়। এমন সুন্দর বর্ণনা! চোখের সামনে সব ভেসে ওঠে।
একবার ত্রিপুরা যাবার সব ব্যবহার করার পরেও শেষ মুহ‚র্তে বাতিল করে দিলাম। কেন করলাম এখন মনে নেই, তবে হঠাৎ করে ত্রিপুরা যাবার সিদ্ধান্ত কেন নিলাম সেটা মনে আছে। এক সকালের কথা, নুহাশ পল্লীর বাগানে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি, হঠাৎ দৃষ্টি আটকে গেল। অবাক হয়ে দেখি, নীলমণি গাছে থোকায় থোকায় ফুল ফুটেছে। অর্কিডের মতো ফুল। হালকা নীল রঙ। যেন গাছের পাতায় জোছনা নেমে এসেছে। সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত, যেতে হবে ত্রিপুরা। কারণ নীলমণি লতা গাছ রবীন্দ্রনাথ প্রথম দেখেন ত্রিপুরায় মাল নামের বাড়িতে। মাল বাড়িটি রাজপরিবার রবীন্দ্রনাথকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। বাড়ির চারদিকে নানান গাছ। একটা লতানো গাছে অদ্ভুত ফুল ফুটেছে। রবীন্দ্রনাথ গাছের নাম জানতে চান। স্থানীয় যে নাম তাঁকে বলা হয় তা তাঁর পছন্দ হয় না। তিনি গাছটার নাম দেন ‘নীলমণি লতা’।
আমি আমার বন্ধুদের কাছে ত্রিপুরা যাবার বাসনা ব্যক্ত করলাম। তারা একদিনের মধ্যে ব্যবস্থা করে ফেলল। বিরাট এক বাহিনী সঙ্গে যাবার জন্যে প্রস্তুত। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়—
গ্রামে গ্রামে সেই বার্তা রটি গেল ক্রমে
মৈত্রমহাশয় যাবে সাগরসংগমে
তীর্থস্নান লাগি। সঙ্গীদল গেল জুটি
কত বালবৃদ্ধ নরনারী, নৌকা দুটি
প্রস্তুত হইল ঘাটে।
আমরা অবশ্যি যাচ্ছি বাসে। সরকারি বাস। সরকার ঢাকা-আগরতলা বাস সার্ভিস চালু করেছেন। আরামদায়ক বিশাল বাস। এসির ঠান্ডা হাওয়া। সিটগুলি প্লেনের সিটের মতো নামিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়া যায়।
বাস আমাদের নিয়ে রওনা হয়েছে। বাংলাদেশ দেখতে দেখতে যাচ্ছি। কী সুন্দরই না লাগছে! যাত্রী বলতে আমরাই। বাইরের কেউ নেই। কাজেই গল্পগুজব হৈচৈ-এ বাধা নেই। দলের মধ্যে দুই শিশু। মাজহার পুত্র এবং কমল কন্যা। এই দুজন গলার সমস্ত জোর দিয়ে ক্রমাগত চিৎকার করছে। শিশুদের বাবা-মা’র কানে এই চিৎকার মধুবর্ষণ করলেও আমি অতিষ্ঠ। আমার চেয়ে তিনগুণ অতিষ্ঠ ঔপন্যাসিক ইমদাদুল হক মিলন। সে একবার আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল, মাজহারের এই বান্দর ছেলেটাকে থাপ্পড় দিয়ে চুপ করানো যায় না?
আমি বললাম, যায়। কিন্তু থাপ্পড়টা দেবে কে?
আমার নিয়মিত সফরসঙ্গীদের সঙ্গে এবারই প্রথম মিলন যুক্ত হয়েছে। আরেকজন আছেন, আমার অনেকদিনের বন্ধু, প্রতীক প্রকাশনীর মালিক আলমগীর রহমান। তাঁর বিশাল বপু। বাসের দুটা সিট নিয়ে বসার পরেও তাঁর স্থান সংকুলান হচ্ছে না।
আলমগীর রহমান দেশের বাইরে যেতে একেবারেই পছন্দ করেন না। একটা ব্যতিক্রম আছে—নেপাল। তাঁর বিদেশভ্রমণ মানেই প্লেনে করে কাঠমাণ্ডু চলে যাওয়া। নিজের শরীর পর্বতের মতো বলেই হয়তো পাহাড়-পর্বত দেখতে তাঁর ভালো লাগে। তিনি আগরতলা যাচ্ছেন ভ্রমণের জন্যে না। কাজে। আগরতলায় বইমেলা হচ্ছে। সেখানে তাঁর স্টল আছে।
বাস যতই দেশের সীমানার কাছাকাছি যেতে লাগল ভ্রমণ ততই মজাদার হতে লাগল। রাস্তা সরু। সেই সরু রাস্তা কখনো কারোর বাড়ির আঙিনার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। কখনোবা বৈঠকখানা এবং মূলবাড়ির ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। বিস্ময়কর ব্যাপার! রাস্তাঘাট না বানিয়েই আন্তর্জাতিক বাস সার্ভিস চালু করে দেওয়া একমাত্র বাংলাদেশের মতো বিস্ময়-রাষ্ট্রের পক্ষেই সম্ভব।
শুভেচ্ছা স্বাগতম
বাস বাংলাদেশ-ত্রিপুরার সীমান্তে থেমেছে। আমরা বাস থেকে নেমেছি এবং বিস্ময়ে খাবি খাচ্ছি। আমাদের আগমন নিয়ে ব্যানার শোভা পাচ্ছে। বিশাল বিশাল ব্যানার। আগরতলা থেকে কবি এবং লেখকরা ফুলের মালা নিয়ে এতদূর চলে এসেছেন। ক্যামেরার ফ্লাশলাইট জ্বলছে। ক্রমাগত ছবি উঠছে। সীমান্তের চেকপোস্টে বিশাল উৎসব।
অন্যদের কথা জানি না, আমি অভিভূত হয়ে গেলাম। প্রিয় পদরেখার সন্ধানে এসে এত ভালোবাসার মুখোমুখি হব কে ভেবেছে! ফর্সা লম্বা অতি সুপুরষ একজন, অনেক দিন অদর্শনের পর দেখা এমন ভঙ্গিতে, আমাকে জড়িয়ে ধরে আছেন। কিছুতেই ছাড়ছেন না। ভদ্রলোকের নাম রাতুল দেববর্মন। তিনি একজন কবি। মহারাজা বীরচন্দ্রমাণিক্যের বংশধর। কিংবদন্তি গায়ক শচীন দেববর্মন পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাঁকে আমি এই প্রথম দেখছি।
সীমান্তের চেকপোস্টে আরও অনেকেই এসেছিলেন, সবার নাম এই মুহ‚র্তে মনে করতে পারছি না। যাঁদের নাম মনে পড়ছে তাঁরা হলেন দৈনিক ত্রিপুরা দর্পণ সম্পাদক সমীরণ রায়, পদ্মা-গোমতী আগরতলা-র সাধারণ সম্পাদক শুভাশিস তলাপাত্র, আগরতলা পৌরসভার চেয়ারম্যান শংকর দাশ, অধ্যাপক কাশীনাথ রায়, রবীন্দ্রনাথ ঘোষ প্রমুখ। শুভেচ্ছার বাণী নিয়ে এগিয়ে নিতে আসা এইসব আন্তরিক মানুষ আমাদের ফিরে যাবার দিনও এক কাণ্ড করলেন। তাঁরা গম্ভীর ভঙ্গিতে বললেন, আপনারা আজ যেতে পারবেন না। আমরা আপনাদের আরো কিছুদিন রাখব।
তখন আমরা পুঁটলাপুঁটলি নিয়ে বাসে উঠে বসেছি। এক্ষুনি বাস ছাড়বে।
তাঁরা বললেন, আমরা বাসের সামনে শুয়ে থাকব, দেখি আপনারা কীভাবে যান।
টুরিস্ট, না লেখক?
কবি-লেখকদের সম্মিলিত হৈচৈয়ের ভেতর পড়ব এমন চিন্তা আমার মনেও ছিল না। আমার কল্পনায় ছিল বন্ধুবান্ধব নিয়ে টুরিস্টের চোখে রবীন্দ্রনাথের প্রিয়ভূমি দেখব। সেটা সম্ভব হলো না। আমাকে নিয়ে তাদের আগ্রহ দেখেও কিছুটা বিব্রত এবং বিচলিত বোধ করলাম। এত পরিচিতি ত্রিপুরায় আমার থাকার কথা না। বাংলাদেশের গল্প-উপন্যাস ত্রিপুরায় খুব যে পাওয়া যায় তাও না। টিভি চ্যানেলগুলি দেখা যায়। আমার পরিচিতির সেটা কি একটা কারণ হতে পারে? অনেক বছর ধরে দেশপত্রিকার শারদীয় সংখ্যায় উপন্যাস লিখি, সেটা কি একটা কারণ? হিসাব মিলাতে পারছি না।
প্রথম রাতেই যেতে হলো বইমেলায়। ভেবেছিলাম ছোট্ট ঘরোয়া ধরনের বইমেলা। গিয়ে দেখি হুলস্থূল আয়োজন। বিশাল জায়গা নিয়ে উৎসব মুখরিত অঙ্গন। দেখেই মন ভালো হয়ে গেল। প্রতিটি দোকান সাজানো, সুশৃঙ্খল দর্শকের সারি। মেলার বাইরে বড় বড় ব্যানারে কবি-লেখকদের রচনার উদ্ধৃতি। বাংলাদেশের কবি নির্মলেন্দু গুণের কবিতা দেখে খুবই ভালো লাগল। বাংলাদেশ থেকে একমাত্র তাঁর উদ্ধৃতিই স্থান পেয়েছে।
কবি গুণ আমার পছন্দের মানুষ। আমি তাঁর কবিতার চেয়েও গদ্যের ভক্ত। আমার ধারণা তাঁর জন্ম হয়েছিল গদ্যকার হিসেবে। অল্প বয়সেই চুল-দাড়ি লম্বা করে ফেলায় কবি হয়েছেন। যতই দিন যাচ্ছে নির্মলেন্দু গুণের চেহারা যে রবীন্দ্রনাথের মতো হয়ে যাচ্ছে— এই ব্যাপারটা কি আপনারা লক্ষ করছেন? খুবই চিন্তার বিষয়।
আমি মেলায় ঘুরছি, আগরতলার লেখকরা গভীর আগ্রহে আমাকে তাদের লেখা বইপত্র উপহার দিচ্ছেন। নিজেকে অপরাধী অপরাধী লাগছে। কারণ এই যে গাদাখানিক বই নিয়ে দেশে যাব, আমি কি বইগুলি পড়ার সময় পাব? বই এমন বিষয় ভেতর থেকে আগ্রহ তৈরি না হলে পড়া যায় না। জোর করে বই পড়া অতি কষ্টকর ব্যাপার। আমি বই পড়ি আনন্দের জন্যে। যে বইয়ের প্রথম পাঁচটি পাতা আমাকে আনন্দ দিতে পারে না, সেই বই আমি পড়ি না।
আগরতলার লেখকদের যে সব বই পেলাম, তার সিংহভাগ কবিতার। বাঙলা ভাষাভাষিরা কবিতা লিখতে এবং কবিতার বই প্রকাশ করতে পছন্দ করেন। প্রতিবছর ঢাকায় জাতীয় কবিতা সম্মেলন হয়। এই উপলক্ষে কত কবিতার বই যে বের হয়! শুনেছি গত কবিতা সম্মেলনে বাংলাদেশের পাঁচ হাজার কবি রেজিস্ট্রেশন করেছেন। কবির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এই ব্যবস্থা। নাম রেজিস্ট্রি করে রেজিস্ট্রেশন নম্বর নিতে হয়।
কবিতা প্রসঙ্গ এইখানেই শেষ। কবিরা আমার ওপর রাগ করতে পারেন। একটাই ভরসা, এই রচনা কোনো কবি পাঠ করবেন না। কবিরা গদ্য পাঠ করেন না।
উদয়পুর
বইমেলার সামনে বড়সড় একটা বাস দাঁড়িয়ে। এই বাসে করে আমরা যাব ত্রিপুরা থেকে সত্তুর কিলোমিটার দূরে উদয়পুর। বাসের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন ত্রিপুরা দর্পণ পত্রিকার সম্পাদক সমীরন বাবু। আমাদের সঙ্গে গাইড হিসেবে যাচ্ছেন কবি রাতুল দেববর্মণ। আনন্দ এবং উত্তেজনায় তিনি স্থির হয়ে এক জায়গায় বসে থাকতেও পারছেন না। ক্রমাগত সিট বদলাচ্ছেন।
বাস ছাড়বে ছাড়বে করছে—এই সময় রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভাইস চ্যান্সেলর দিলীপ চক্রবর্তী উপস্থিত হলেন। মুখে ফ্রেঞ্চ কাট দাড়ি। অতি সুদর্শন মানুষ। গায়ের রঙে সাহেবদের মতো গৌর। তিনি যখন জানলেন, বাংলাদেশ থেকে লেখকদের দল যাচ্ছে উদয়পুর— তিনি লাফ দিয়ে বাসে উঠে পড়লেন। আমাদের সফরের বাকি দিনগুলি তিনি আমাদের সঙ্গেই ছিলেন। নিজের ঘরসংসার বাদ।
আমরা আগ্রহ নিয়ে উদয়পুরের ভুবনেশ্বর মন্দির দেখতে গেলাম। এই মন্দিরে নরবলি হতো। রবীন্দ্রনাথ ‘রাজর্ষি’ লিখলেন এই মন্দির দেখে। পরে রাজর্ষিকে নিয়ে বিখ্যাত ‘বিসর্জন’ নাটকটি লেখা হলো। সবাই আগ্রহ নিয়ে ভুবনেশ্বর মন্দির দেখছে। ছবি তুলছে। আমি খটকা নিয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছি। রবীন্দ্রনাথের জীবনস্মৃতি পড়ে আমি যতটুকু জানি ‘রাজর্ষি’ লেখার সময় রবীন্দ্রনাথ ত্রিপুরায় যান নি। অনেক পরে গেছেন। ‘রাজর্ষি’র কাহিনি রবীন্দ্রনাথ পেয়েছিলেন স্বপ্নে। তিনি ফিরছেন দেওঘর থেকে। সারারাত ঘুম হয় নি। হঠাৎ ঝিমুনির মতো হলো। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়—
কোন্-এক মন্দিরের সিঁড়ির উপর বলির রক্তচিহ্ন দেখিয়া একটি বালিকা অত্যন্ত করুণ ব্যাকুলতার সঙ্গে তাহার বাপকে জিজ্ঞাসা করিতেছে, ‘বাবা এ কী! এ-যে রক্ত!’ বালিকার এই কাতরতায় তাহার বাপ অন্তরে ব্যথিত হইয়া অথচ বাহিরে রাগের ভান করিয়া কোনোমতে তার প্রশ্নটাকে চাপা দিতে চেষ্টা করিতেছে।—জাগিয়া উঠিয়াই মনে হইল, এটি আমার স্বপ্নলব্ধ গল্প। এমন স্বপ্নে-পাওয়া গল্প এবং অন্য লেখা আমার আরও আছে। এই স্বপ্নটির সঙ্গে ত্রিপুরার রাজা গোবিন্দমাণিক্যের পুরাবৃত্ত মিশাইয়া রাজর্ষি গল্প মাসে মাসে লিখিতে লিখিতে বালকে বাহির করিতে লাগিলাম।
[জীবনস্মৃতি, রবীন্দ্রনাথ]
ভুবনেশ্বরী মন্দির দর্শনের পর গেলাম ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির দেখতে। আমি ছোটখাটো মন্দির দেখে আনন্দ পাচ্ছিলাম না। ভারতবর্ষ মন্দিরের দেশ। এমনসব মন্দির সারা ভারতে ছড়ানো যা দেখতে পাওয়া বিরাট অভিজ্ঞতা। সেই তুলনায় উদয়পুরের মন্দিরগুলি তেমন কিছু না।
ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের একটা বিষয় আমার সফরসঙ্গীদের, বিশেষ করে মহিলাদের, খুব আকর্ষণ করল। সেখানে একটা বাচ্চার অন্নপ্রাশন উৎসব হচ্ছিল। বর্ণাঢ্য উৎসব। তারা উৎসবের সঙ্গে মিশে গেল। পুরোহিতের অনুমতি নিয়ে নিজেরাই আনন্দঘণ্টা বাজাতে লাগল।
উৎসবের মধ্যেই জানা গেল, পাশেই ইচ্ছাপূরণ দিঘি বলে এক দিঘি। দিঘিভর্তি মাছ। মাছকে খাবার খাওয়ালে তাদের গায়েপিঠে হাত বুলিয়ে দিলে মনের ইচ্ছা পূরণ হয়। মেয়েরা অন্নপ্রাশন উৎসব ছেড়ে রওনা হলো ইচ্ছাপূরণ দিঘির দিকে।
এই অঞ্চলেই নাকি ভারতবর্ষের সবচে’ ভালো প্যারা পাওয়া যায়। দু শ’ বছর ধরে মিষ্টির কারিগররা এই প্যারা বানাচ্ছেন। আমি গেলাম প্যারা কিনতে। ভারতবর্ষের মন্দিরগুলির সঙ্গে প্যারার কি কোনো সম্পর্ক আছে? যেখানেই মন্দির সেখানেই প্যারা। দেবতাদের ভোগ হিসেবে মিষ্টান্ন দেওয়া হয়। প্যারা কি দেবতাদের পছন্দের মিষ্টান্ন?
প্যারার একটা টুকরো ভেঙে মুখে দিলাম। যেমন গন্ধ তেমন স্বাদ। আমাদের মধ্যে প্যারা কেনার ধুম পড়ে গেল।
আমি কবি রাতুলকে প্রশ্ন করলাম, আপনার কি ধারণা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানকার প্যারা খেয়েছেন?
রাতুল প্রশ্নের জবাব দিতে পারলেন না। আমার নিজের ধারণা খেয়েছেন। ভালো জিনিসের স্বাদ তিনি গ্রহণ করবেন না তা হয় না। যদিও তাঁর সমগ্র রচনায় তিনি শারীরিক আনন্দের বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেন নি। তাঁর রচনায় মানসিক আনন্দের বিষয়টিই প্রধান। শরীর গৌণ। তাঁর বিপুল সাহিত্যকর্মে যৌনতার বিষয়টি অনুপস্থিত বললেই হয়। হৈমন্তী গল্পে একবার লিখলেন—‘তখন তাহার শরীর জাগিয়া উঠিল।’ এই পর্যন্ত লিখেই চুপ। তাঁর কাছে দেহ মনের আশ্রয় ছাড়া কিছু না। নারীদেহের দিকে তাকালে পু্রুষদের নানা সমস্যা হয়। রবীন্দ্রনাথের সমস্যা অন্যরকম—
ওই দেহ-পানে চেয়ে পড়ে মোর মনে
যেন কত শত পূর্বজনমের স্মৃতি।
সহস্র হারানো সুখ আছে ও নয়নে,
জন্মজন্মান্তের যেন বসন্তের গীতি।
[স্মৃতি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর]
কালো বুদ্ধিজীবী
বুদ্ধিজীবীরা শাদা-কালো হন না। তাদের জীবিকা বুদ্ধি। বুদ্ধি বর্ণহীন। তবে আমাদের ভ্রমণের একজন প্রধান সঙ্গী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক শফি আহমেদকে আমি ‘কালো বুদ্ধিজীবী’ ডেকে আনন্দ পাই।
চিল আকাশে উড়ে, তার দৃষ্টি থাকে স্থলে। শফি আহমেদ বাংলাদেশে বাস করেন, কিন্তু তাঁর হৃদয় পড়ে থাকে আগরতলায়। আগরতলার প্রতিটি গাছ, প্রতিটি পাথর তিনি চেনেন। আগরতলা সম্পর্কে কেউ সামান্যতম মন্দ কথা বললে তিনি সার্টের হাতা গুটিয়ে মারতে যান।
এই সদানন্দ চিরকুমার মানুষটি আমাকে মুক্তিযুদ্ধের সময় আগরতলার মহান ভূমিকার কথা কী সুন্দর করেই না বললেন! মুক্তিযোদ্ধারা কোথায় থাকত, কোথায় ছিল ফিল্ড হাসপাতাল, সব ঘুরে ঘুরে দেখালেন।
বেড়াতে গেলে আমি কখনো ইউনিভার্সিটি বা কলেজ দেখতে যাই না। কালো বুদ্ধিজীবী আমাকে জোর করে নিয়ে গেলেন আগরতলার এমবিবি কলেজে। কারণ কী? কারণ একটাই, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এই কলেজের একটা ভূমিকা আছে। কলেজটা ছিল শরণার্থী শিবির। কাজেই আমাকে দেখতে হবে।
শুনতে পাচ্ছি শফি আহমেদ সাহেব বলেছেন, মৃত্যুর পর তার কবর যেন হয় আগরতলায়। শফি সাহেবের বন্ধুবান্ধবরা চিন্তিত। ডেডবডি নিয়ে এতদূর যাওয়া সহজ ব্যাপার না।
চখাচখি
আমাদের এবারের ভ্রমণ চখাচখি ভ্রমণ। সবাই জোড়ায় জোড়ায় এসেছে। দেশের বাইরে পা দিলে চখাচখি ভাবের বৃদ্ধি ঘটে। আমাদের ক্ষেত্রেও ঘটেছে। স্ত্রীরা স্বামীদের নিয়ে নানান আহ্লাদী করছে। স্বামীরা প্রতিটি আহ্লাদীকে গুরুত্ব দিচ্ছে। খুবই চেষ্টা করছে প্রেমপূর্ণ নয়নে স্ত্রীর দিকে তাকাতে। মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতে। মাজহার এবং কমল দু’জনকেই দেখলাম স্ত্রীর মুখে তুলে প্যারা খাওয়াচ্ছে। স্ত্রীরাও এমন ভাব করছে যেন সারাজীবন তারা এভাবেই মিষ্টি খেয়ে এসেছে। এটা নতুন কিছু না।
চখাচখিদের মধ্যমণি অন্যদিন পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক নাসের এবং নাসের-পত্নী তামান্না। এটা তাদের হানিমুন ট্রিপ। কিছুদিন আগেই বিয়ে হয়েছে। তামান্নার হাতের মেহেদির দাগ তখনো ম্লান হয় নি।
আমরা কত না জায়গায় ঘুরলাম, কত কিছু দেখলাম, এই দু’জন কিছুই দেখল না। দু’জন দু’জনের দিকে তাকিয়ে রইল।
চখাচখি গ্রুপ থেকে বাদ পড়েছে মিলন ও আলমগীর রহমান। তারা স্ত্রীদের দেশে ফেলে গেছে। সবাই জোড়া বেঁধে ঘুরছে, মিলন-আলমগীরও জোড়া বেঁধে ঘুরছে। দু’জনের মুখই গম্ভীর। দু’জনই দু’জনের ওপর মহাবিরক্ত। ভদ্রতার খাতিরে কেউ বিরক্তি প্রকাশ করতে পারছে না। মজার ব্যাপার।
সবচে’ আনন্দ লাগল আর্কিটেক্ট করিম এবং তার স্ত্রী স্নিগ্ধাকে দেখে। স্নিগ্ধা সারাক্ষণ স্বামীর হাত ধরে আছে। করিমের অতি সাধারণ রসিকতায় হেসে ভেঙে পড়ছে এবং রাগ করে বলছে, তুমি এত হাসাও কেন? ছিঃ! দুষ্টু!
করিমের গানের গলা ভালো। যে কোনো বাংলা এবং হিন্দি গানের প্রথম চার লাইন সে শুদ্ধ সুরে গাইতে পারে। করিম তার এই ক্ষমতাও কাজে লাগাচ্ছে, স্নিগ্ধার প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে গানে।
শাওন একসময় আমাকে বলল, দেখ করিম চাচা স্ত্রীকে নিয়ে কত আনন্দ করছেন, আর তুমি গম্ভীর হয়ে বসে আছ!
আমি করিমকে ডেকে বললাম, তুমি শাওনের অভিযোগের উত্তর গানে গানে দাও।
করিম সঙ্গে সঙ্গে গাইল-
সখী, বহে গেল বেলা, শুধু হাসিখেলা,
এ কি আর ভালো লাগে?
বেদনার সঙ্গে জানাচ্ছি, আগরতলার আনন্দময় ভ্রমণ শেষ করেই স্নিগ্ধা তার স্বামী এবং একমাত্র শিশুপুত্র রিসাদকে ফেলে অন্য এক পুরুষের সঙ্গে গৃহত্যাগ করে।
জগতের সর্বপ্রাণী সুখী হোক।
নীরমহল
ত্রিপুরার মহারাজ (খুব সম্ভব মহারাজা বীর বিক্রম বাহাদুর) তাঁর স্ত্রীর মনোরঞ্জনের জন্যে স্ত্রীর দেশের রাজপ্রাসাদের অনুকরণে বিশাল এক জলপ্রাসাদ বানিয়েছিলেন। জলপ্রাসাদ, কারণ প্রাসাদটা জলের মাঝখানে। দিগন্তবিস্তৃত জলরাশির মাঝখানে এক রাজবাড়ি। নাম নীরমহল। জলে যার ছায়া পড়ে। যেমন কল্পনা তেমন রূপ। UNESCO মনে হয় এর খোঁজ এখনো পায় নি। খোঁজ পেলে world heritage-এর আওতায় অবশ্যই নিয়ে আসত।
আমরা একটি আনন্দময় রাত কাটালাম দূর থেকে নীরমহলের দিকে তাকিয়ে। আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল এমন একটা রেস্টহাউসে, যেখান থেকে জলপ্রাসাদ নীরমহল দেখা যায়।
রাত অনেক হয়েছে, আমরা গোল হয়ে রেস্টহাউসের বারান্দায় বসে আছি। তাকিয়ে আছি নীরমহলের দিকে। চট করে রবীন্দ্রনাথের লাইন মনে হলো—
রাজশক্তি বজ্রসুকঠিন
সন্ধ্যারক্তরাগসম তন্দ্রাতলে হয় হোক লীন,
কেবল একটি দীর্ঘশ্বাস
নিত্য-উচ্ছ্বসিত হয়ে সকরুণ করুক আকাশ,
এই তব মনে ছিল আশ।
কেন জানি মনটাই খারাপ হলো। আমি শাওনের দিকে ফিরে বললাম, গান শোনাও তো। একের পর এক রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে যাবে। stop না বলা পর্যন্ত থামবে না।
রেস্টহাউসের সব বাতি নেভানো। আমাদের দৃষ্টি দূরের নীরমহলের দিকে। গায়িকার কিন্নর কণ্ঠ বাতাসে মিশে মিশে যাচ্ছে। সে গাইছে— ‘সখী, বহে গেল বেলা।’
আমি মনে মনে বললাম, জলরাশির মাঝখানে অপূর্ব নীরমহল দেখার জন্যে আমি ত্রিপুরায় আসি নি। আমি এসেছি রবীন্দ্রনাথের প্রিয় পদরেখার সন্ধানে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আপনি আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা গ্রহণ করুন। আমার গলায় সুর নেই। আপনার অপূর্ব সঙ্গীত আমি কোনোদিনই কণ্ঠে নিতে পারব না। আমার হয়ে আপনার গান আপনাকে পাঠাচ্ছে আমার স্ত্রী শাওন। কী সুন্দর করেই সে গাইছে—তাই-না কবি?
পরিশিষ্ট
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ভগ্নহৃদয়’-এর কিছু অংশ-
ভগ্নহৃদয়
প্রথম সর্গ
দৃশ্য বন। চপলা ও মুরলা
চপলা। সখি, তুই হলি কি আপনা-হারা?
এ ভীষণ বনে পশি একেলা আছিস্ বসি
খুঁজে খুঁজে হোয়েছি যে সারা!
এমন আঁধার ঠাঁই— জনপ্রাণী কেহ নাই,
জটিল-মস্তক বট চারি দিকে ঝুঁকি!
দুয়েকটি রবিকর সাহসে করিয়া ভর
অতি সন্তর্পণে যেন মারিতেছে উঁকি।
অন্ধকার, চারি দিক হ’তে, মুখপানে
এমন তাকায়ে রয়, বুকে বড় লাগে ভয়,
কি সাহসে রোয়েছিস্ বসিয়া এখানে?
মুরলা। সখি, বড় ভালবাসি এই ঠাঁই!
বায়ু বহে হুহু করি, পাতা কাঁপে ঝর ঝরি,
স্রোতস্বিনী কুলু কুলু করিছে সদাই!
বিছায়ে শুকানো পাতা বটমূলে রাখি মাথা
দিনরাত্রি পারি, সখি, শুনিতে ও ধ্বনি।
বুকের ভিতরে গিয়া কি যে উঠে উথলিয়া
বুঝায়ে বলিতে তাহা পারি না সজনি!
যা সখি, একটু মোরে রেখে দে একেলা,
এ বন আঁধার ঘোর ভাল লাগিবে না তোর,
তুই কুঞ্জবনে, সখি, কর গিয়ে খেলা!
চপলা। মনে আছে, অনিলের ফুলশয্যা আজ?
তুই হেথা বোসে র’বি, কত আছে কাজ!
কত ভোরে উঠে বনে গেছি ছুটে,
মাধবীরে লোয়ে ডাকি,
ডালে ডালে যত ফুল ছিল ফুটে
একটি রাখি নি বাকি!
শিশিরে ভিজিয়ে গিয়েছে আঁচল,
কুসুমরেণুতে মাখা।
কাঁটা বিঁধে, সখি, হোয়েছিনু সারা
নোয়াতে গোলাপ-শাখা!
তুলেছি করবী গোলাপ-গরবী,
তুলেছি টগরগুলি,
যুঁইকুঁড়ি যত বিকেলে ফুটিবে
তখন আনিব তুলি।
আয়, সখি, আয়, ঘরে ফিরে আয়,
অনিলে দেখসে আজ—
হরষের হাসি অধরে ধরে না,
কিছু যদি আছে লাজ!
মুরলা। আহা সখি, বড় তারা ভালবাসে দুই জনে!
Leave a Reply
Your identity will not be published.