নায়করাজের সেরা গান

নায়করাজের সেরা গান

পর্দায় নায়করাজের অনেক গানই পেয়েছে জনপ্রিয়তা। যেসব গান কিংবদন্তি হয়ে আছে, তার বেশির ভাগ। সার্থকতা পেয়েছে রাজ্জাকের কারণে। সিনেমার গানের দৃশ্যে তার আবেগ ও চরিত্রানুগ অভিনয়ের গুণে সেইসব। গানগুলোও হয়েছে সমান জনপ্রিয়। সিনেমার প্রেক্ষিত অনুযায়ী অনেক রোমান্টিক, স্যাড রোমান্টিক গান জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। সুচন্দা, শবনম, কবরী, ববিতা, শাবানা–বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সোনালি যুগের সব নায়িকাকেই দেখা গেছে তার বিপরীতে জনপ্রিয় সব সিনেমায়। ধীরে ধীরে পঞ্চাশটা বছর পেরোলেও সেইসব গান এখনো চিরসবুজ মানুষের মনে। তাঁর অভিনীত ছবির গান আজও বেজে ওঠে শ্রোতাদের হৃদয়ে।

আমাকে পোড়াতে যদি এত লাগে ভালো 

অভিনেত্রী সুচন্দার বিপরীতে যে কটি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন রাজ্জাক, তার মধ্যে ১৯৬৯ সালের ‘মনের মতো বউ' উলে-খযোগ্য। সিনেমাটিতে অভিমানী রাজ্জাকের নায়িকার প্রতি আবেগতাড়িত কণ্ঠে গাওয়া আমাকে পোড়াতে যদি এত লাগে ভালো’ গানটি খুবই জনপ্রিয় হয়। রহিম নেওয়াজ পরিচালিত, জহির রায়হান প্রযোজিত ছবিতে দেখা যায় স্টুডিওতে গানটি গাইছেন রাজ্জাক। বাসায় দাড়িয়ে রেডিওতে সেটি শুনছেন সুচন্দা। অত্যন্ত শ্রোতাপ্রিয় এই গানটির শিল্পী বশীর আহমেদ। গীতিকার ও সুরকার খান আতাউর রহমান নিজেই।

 

নীল আকাশের নীচে 

‘নীল আকাশের নীচে আমি রাস্তায় চলেছি একা/ওই সবুজের শ্যামল মায়ায় দৃষ্টি পড়েছে ঢাকা’— ১৯৬৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘নীল আকাশের নীচে' ছবির টাইটেল গান এটি। নায়করাজ আর নীল আকাশের নীচে যেন একে অন্যের সমার্থক। প্রচণ্ড জনপ্রিয় হওয়া এই সিনেমার এই গানটি এখনো স্বপ্নালু তারুণ্যের প্রতীক। এখানে হাতে একটি ডায়েরি নিয়ে রাস্তায় চলতে চলতে গানটির দৃশ্যে অভিনয় করেন নায়করাজ। ছবিতে রাজ্জাকের নায়িকা ছিলেন কবরী। গাজী মাজহারুল আনোয়ারের কথায় সুর করেন সত্য সাহা। কণ্ঠ দিয়েছেন মাহমুদুন্নবী। 

প্রেমেরই নাম বেদনা

‘নীল আকাশের নীচে’ ছবির আরেকটি গান ‘প্রেমেরই নাম বেদনা'। ছবির একটি বেদনাবিধুর দৃশ্যে রমনা পার্কে বসে এই গানটি করেন রাজ্জাক। এই গানেও রাজ্জাকের বিপরীতে ছিল কবরীর উপস্থিতি। গাজী মাজহারুল আনােয়ার ও মােহাম্মদ মনিরুজ্জামানের কথায় গানটির সুর করেন সত্য সাহা। কণ্ঠ দিয়েছেন মাহমুদুন্নবী।

অনেক সাধের ময়না আমার

 ১৯৬৯ সালে নির্মিত কাজী জহির পরিচালিত রাজ্জাক-কবরী জুটির আরেকটি জনপ্রিয় ছবি ‘ময়নামতি'। এ ছবির ‘অনেক সাধের ময়না আমার বাঁধন কেটে যায়। জনপ্রিয় হওয়া এই গান এখনো জনপ্রিয়। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন বশীর আহমেদ। এখানে দেখা যায়, কবরীর বিয়ে হয়ে গেছে অন্যের সঙ্গে পালকিতে চড়ে কবরী যাচ্ছেন স্বামীর বাড়ি। তখন পেছন পেছন যাচ্ছেন রাজ্জাক আর গাইছেন এই গানটি।

 

তুমি যে আমার কবিতা

 নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘দর্পচূর্ণ' ছবির গান। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৭০ সালে। পর্দায় দেখা যায় বাড়ির ভেতর গানটির সঙ্গে অভিনয় করছেন  রাজ্জাক-কবরী জুটি। রাজ্জাক-কবরী তখন জুটির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। প্রকাশের পরপরই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, টিভি লাইভে, বেতারে আজও সমান জনপ্রিয় মিষ্টি প্রেমের এই গানটি গেয়েছেন মাহমুদুন্নবী ও সাবিনা ইয়াসমিন। কথা লিখেছেন আবু হেনা মোস্তফা কামাল। সুর করেছেন | সুবল দাস। এখনো রাজ্জাক-কবরী জুটি বলতে অনেকের মনেই ভেসে ওঠে মিষ্টি প্রেমের এই গানটি।

মাগো মা, গো মা 

‘মাগো মা ওগো মা, আমারে বানাইলি তুই দিওয়ানা/আমি দুনিয়া ছাড়ি যেতে পারি, তোকে আমি ছাড়ব না'—বাংলা চলচ্চিত্রে মাকে নিয়ে করা অন্যতম জনপ্রিয় এই গানটি দিলীপ বিশ্বাস পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘সমাধির। মুক্তি  পায় ১৯৭৬ সালে। ছবিতে মাকে নিয়ে নেচে নেচে গানটিতে পারফরম করেন রাজ্জাক। মো. খুরশীদ আলমের গাওয়া সেরা গানগুলোর একটি এটি। গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সুরকার সত্য সাহা।

আমি কার জন্যে পথ চেয়ে রবো 

‘আমি কার জন্যে পথ চেয়ে রবো, আমার কি দায় পড়েছে ? নায়িকার এমন কথার জবাবে নায়কের উত্তর, “আমার অনেক কাজ ছিল তাই তো আসতে  দেরি হয়েছে, কিছু মনে কোরো না। আজিজুর রহমানের পরিচালনায় ১৯৭৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘অমর প্রেম ছবির গান। ছবির মতো গানটিও স্মরণীয় হয়ে আছে। রাজ্জাক-শাবানা জুটির কথা এলেই চলে আসে এই গানের প্রসঙ্গ। কণ্ঠ দিয়েছেন ফেরদৌসী রহমান ও খন্দকার ফারুক আহমেদ। গাজী মাজহারুল আনোয়ারের কথায় গানটিতে সুর দেন সত্য সাহা।

এমনও তো প্রেম হয়

 ১৯৮২ সালে মুক্তি পাওয়া দুই পয়সার আলতা’ ছবির এ গানটি লাখো ভক্তের মন ছুঁয়ে আছে। পরিচালক আমজাদ হোসেন। ছবিতে রাজ্জাকের সঙ্গে নায়িকার বিরহের একটি দৃশ্যে গানটি ব্যবহৃত হয়। দৃশ্যায়ন করা হয় রাতে। রাজ্জাকের পাশাপাশি শাবানাকেও দেখা যায় গানটিতে। চলচ্চিত্রে সৈয়দ আবদুল হাদীর গাওয়া সেরা গানগুলোর একটি এটি। কথা ও সুর করেন আলাউদ্দিন আলী। চারটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায় ছবিটি। বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে ছবিটির দুটি কপি এখনো জমা আছে।

হয় যদি বদনাম হোক আরো 

১৯৮৩ সালে মুক্তি পাওয়া বদনাম’ ছবির এই গানটিতে নায়করাজকে ভিন্ন এক রূপে দেখা গেছে। দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে অলিগলি ঘুরে ঘুরে গানটিতে অভিনয় করেন তিনি। মজার বিষয় হচ্ছে, গানটি গেয়েছিলেন আরেক নায়ক প্রয়াত জাফর ইকবাল। গাজী মাজহারুল আনোয়ারের কথায় গানটিতে সুর দেন আনোয়ার পারভেজ। ছবিটি পরিচালনা করেন রাজ্জাক নিজেই।

দূর দূর-দূরান্তে

 ১৯৭০ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দীপ নেভে নাই' ছবির গান। পরিচালক নারায়ণ ঘোষ মিতা। আজও গানটি সমান জনপ্রিয়। একদিকে বন্ধুদের নিয়ে গিটার হাতে ঘরের মধ্যে গানটিতে পারফরম করেন রাজ্জাক, ওদিকে বান্ধবীদের নিয়ে গানটির সুরে মেতে ওঠেন কবরী। মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীর গাওয়া এই গানটির সুরকার সত্য সাহা। লিখেছেন ড. মো. মনিরুজ্জামান মনির।

 

আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখন 

‘হ্যালো কাকে চাই। আপনি, আপনি কে? নায়কের ফোন পেয়ে নায়িকার প্রশ্ন। উত্তরে নায়ক বলেন, ‘সেই আমি'। এরপর শুরু হয় গান। রাজ্জাক অভিনীত অন্যতম জনপ্রিয় গানটি ১৯৭১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘নাচের পুতুল’ ছবির। পরিচালক অশোক ঘোষ। এতে রাজ্জাকের বিপরীতে অভিনয় করেন শবনম। ফোনেই পুরো গানটির দৃশ্যায়ন শেষ হয়। মাহমুদুন্নবীর গাওয়া এ গানটির সুরকার রবিন ঘোষ, গীতিকার কে জি মোস্তফা।

হায় রে মানুষ রঙিন ফানুস

 গ্রামের দরবেশ আনোয়ার হোসেনের ছেলে রাজ্জাক আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। ট্রাক দুর্ঘটনায় বাবার অকাল মৃত্যুতে গ্রামে আসেন রাজ্জাক। আধ্যাত্মিক শক্তিকে স্বীকার না করলেও তার মধ্যে সেটির প্রকাশ দেখা যায় এবং মানবসেবায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৮২ সালে ‘বড় ভালো লোক ছিল’ ছবিটির ‘হায় রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘আমি চক্ষু দিয়া দেখতাছিলাম জগৎ রঙিলা’ গানগুলো লোকের মুখে মুখে ফেরে।

তুমি এমনই জাল পেতেছ সংসারে

চাষী নজরুল ইসলামের ‘শুভদা' সিনেমার গান এটি। সুবীর নন্দীর কণ্ঠে গাওয়া গানটি সিনেমায় রাজ্জাককে গাইতে দেখা যায় ঢোল বাজাতে বাজাতে। ভক্তিমূলক এই গান সঙ্গে সঙ্গেই শ্রোতাদের মনে জায়গা করে নেয়।

আমার মতো এত সুখী নয়তো কারও জীবন 

১৯৯৭ সালে রাজ্জাক পরিচালিত ‘বাবা কেন চাকর ছবির গান এটি। রাজ্জাক তার পরিবারে সুখী মানুষ। অবসরপ্রাপ্ত লোকের জীবনে বড় ছেলে, বড় বউ, তাদের তাচ্ছিল্য, ছোট ছেলের দায়িত্বশীলতা, স্ত্রীর মৃত্যু এভাবে বাস্তবসম্মত দিকগুলো স্থান পেয়েছে গানটিতে। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন বিখ্যাত শিল্পী খালিদ হাসান মিলু। | এ ছাড়া অনন্ত প্রেম ছবিতে ‘ও চোখে চোখ পড়েছে যখনি', অবুঝ মন ছবির ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়', রংবাজ ছবিতে ‘এই পথে পথে আমি একা চলি', অশিক্ষিত ছবিতে ‘মাস্টার সাব আমি নাম দস্তখত শিখতে চাই’, ‘আমি এক পাহারাদার’, ‘ঢাকা শহর আইসা আমার আশা পুরাইছে', মাটির ঘর ছবিতে আমার নায়ে পার হইতে লাগে ষোলোআনা’, বন্ধু ছবিতে ‘বন্ধু তোর বারাত নিয়ে আমি যাব', আলো তুমি আলেয়া ছবির ‘তোমাদের সুখের এই নীড়ে', ‘আমি সাত সাগর পাড়ি দিয়ে গানগুলো এখনো ব্যাপক জনপ্রিয়। যা আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে।

Leave a Reply

Your identity will not be published.