জীবদ্দশায় কত আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনে হয়েছেন বিশেষ বা প্রধান অতিথি। মধ্যমনি ছিলেন যে কোনো আড্ডার। দেশে দেশে তার বিপুল পাঠক, ভক্ত, অনুরাগী। ব্যক্তিজীবনে যেমন ছিলেন, শেষকৃত্যেও রয়ে গেল তাঁর সেই আদর্শের ছাপ।
নন্দিত সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের মহাপ্রয়াণে শোকাহত পাঠক সমাজ। আচার-অনুষ্ঠানে লেখকের বিশ্বাস না থাকায় ৯ মে অনাড়ম্বরভাবেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হলো কলকাতার নিমতলা মহাশ্মশানে। তাঁর কন্যা দোয়েল মজুমদার এই তথ্য জানান। এর আগে সমরেশের শ্যামপুকুর স্ট্রিটের বাড়িতে তাঁর দেহ শায়িত ছিলো। দুপুরে এই শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর সমরেশ মজুমদার কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। শ্বাসকষ্টে দীর্ঘদিন ভোগার পর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ নিয়ে ২৫ এপ্রিল এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সিওপিডিতে ভুগছিলেন লেখক। এর সাথে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (নিদ্রাকালীন শ্বাসব্যাঘাত) ছিলো।
সমরেশ মজুমদারের জন্ম পশ্চিমবঙ্গের গয়েরকাটায় ১৯৪২ সালের ১০ মার্চ। শৈশব কেটেছে ডুয়ার্সের চা বাগানে, স্কুলজীবন কেটেছে জলপাইগুড়িতে। স্কটিশ চার্চ কলেজে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তাঁর প্রথম গল্প প্রকাশিত হয় ‘দেশ’ পত্রিকায় ১৯৬৭ সালে, শিরোনাম ‘অন্য মাত্রা’। গৌচপ্রম ছদ্মনামে তাঁর প্রথম উপন্যাসও একই পত্রিকায় ছাপা হয় ১৯৭৫ সালে ‘দৌড়’ নামে। এরপর একদশক মোহাবিষ্ট রাখেন লেখার জাদুতে। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ, সাতকাহন, গর্ভধারিণী, তেরো পার্বণ, উনিশ-বিশ, বুনো হাঁস, দিন যায় রাত যায়, ফেরারি, বন্দি নিবাস, দাউ দাউ আগুন প্রমুখ।
বাংলার একটি বিখ্যাত পত্রিকার মাধ্যমে লেখালেখির ভুবনে প্রবেশ সমরেশের। তাঁর বিখ্যাত ‘ট্রিলজি’ তাকে খ্যাতির আলোয় নিয়ে আসে। এর প্রথম খণ্ড হলো ‘উত্তরাধিকার’। পরের খণ্ডগুলো হলো ‘কালবেলা’ ও ‘কালপুরুষ’। যার মাধ্যমে কলকাতার উত্তাল সময়ে নকশাল আন্দোলনের প্রেক্ষাপট লেখা হয়েছিলো।
বরেণ্য এই সাহিত্যিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এরমধ্যে আনন্দ পুরস্কার ১৯৮২ সালে, সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার ১৯৮৪ সালে। এ ছাড়াও চিত্রনাট্য লিখে বিএফজেএ, দিশারী ও চলচ্চিত্র প্রসার সমিতির পুরস্কারও জয় করেছেন। তাঁকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ‘বঙ্গবিভূষণ’ খেতাবেও সম্মান জানিয়েছিল।
Leave a Reply
Your identity will not be published.