ইনসমনিয়া
কার কাছে আছে লীন ঊষাকাল? মোরগের ঝুঁটি
ঊর্ধ্বগামী হতে হতে কার অহমের চেয়ে দৃঢ়
হচ্ছে এবং তাতে ঢেকে যায় কার ভুলত্রুটি?
গোপন হচ্ছে কার ব্রীড়ানত ফরসা শরীরও?
গোপন হচ্ছে চাঁদ, গোপনেই মেঘ হচ্ছে গাঢ়—
কেউ তো পেছনে আছে এর; ষড়যন্ত্র আছে কারও।
বিপরীতে প্রকাশ্যে কার আগুনের কাছে সেঁকে
রাখছে নিজস্ব রুটি; কররেখাগুলি কত চেনা?
কোন ভঙ্গিতে ঘুমাও—সমগ্র জীবন জেগে থেকে—
সমগ্র জীবন; —তবু কোনোদিন জানাই হবে না!
বিমানবালা
মেঘ তাড়িয়ে বড় হতে চেয়েছিলে।
লাফ দিতে চেয়েছিলে পালিত মেঘের
পিঠ থেকে প্রসারিত ডানায়—;
দুপুরবেলার মায়াবী হরিণ-পালের মন্থরতায়
ছড়িয়ে পড়তে চেয়েছিলে পরম নৈঃশব্দ্যে—
দিগন্তবিস্তৃত হয়ে
যেভাবে ফলের জন্য
তীব্রভাবে ছড়িয়ে যায় শৈশবের হাওয়া।
শূন্য বনভূমিতে তাই আজ নেমে আসছে
এত সংগীত, প্রতিধ্বনিরাশি।
ভ্রান্তি
বিভ্রান্ত হই প্রত্যেক জ্যোৎস্নায়। রাস্তার একলা শিরিষ গাছটিকে মনে হয় বড় দীর্ঘ ও নিঃসঙ্গ। যেন হাহাকার করছে গত বছর বাজ পড়ে মারা যাওয়া তার সঙ্গিনীর জন্য— ঈশ্বর নিয়েছে যার আয়ু, শরীরটি মানুষ নিয়েছে— শিকড়গুলোই শুধু ওপড়ানো হয়নি করুণায়। এমনকি বাতাসকেও মনে হয় মৃত্যুর বার্তাবাহক। পাশের বাসার বালিকাটি রোজ সন্ধ্যার আগে আগে তন্ময় হয়ে বসে থাকে পোষা ময়ূরের পাশে, সে ময়ূরও ডেকে ওঠে অজানা আক্রোশে, এই জ্যোৎস্নায়— মনে হয় আহত কোনো বিড়ালের সামনে থেকে কেউ কেড়ে নিচ্ছে তার সদ্যোজাত ছানাদের। আর প্রতিটা কুকুরকে মনে হয় চন্দ্রাহত, হিংস্র।
আর... অল্প আলোয় ভাগাড় হাতড়ে খাবার খোঁজা পাগলিনীকে মনে হয় আমার হারিয়ে যাওয়া ছোট বোন।
সমব্যথী
আহা, কী করুণ! পাঁজর গোনা যায়!
...ঠিক এভাবে দাঁড়াও, একটা ছবি তুলব।
তারপর নাহয় একটা জামা পরে এসো।
কর্কটরোগ
আরও মগ্নতর হই। একটি কর্কট তোমার বুকের বাঁ-দিকে বাসা বেঁধে আছে অনেককাল, হৃদপিণ্ডকে ভালোবেসে। এক বছর আয়ু জেনে আড়াল করে রাখছি তোমাকেও, এমনকি প্রদক্ষিণরত কোমল চাঁদের আলো থেকে, যেভাবে তুমি রেখেছিলে নরম ও কর্কট।
প্রসারিত ডানার নিচে, অন্ধকারে এভাবে বিশ্রাম নেয় বাদুরশাবক।
সর্বস্ব
অগ্নিকুণ্ডের কথা মনে পড়ছে।
কাঠ পুড়ছে,
ফুল পুড়ছে,
পরিধেয় জামা পুড়ছে।
আপনি শুয়ে আছেন।
নিরুপায় ব্যাঙটির কথাও মনে পড়ছে।
আমরা কাঁদছি তখন,
সামান্য অশ্রু ছিটিয়ে দেওয়ার আগ্রহ নিয়ে
দ্বিধা
অমরত্বের ওষুধ সহজলভ্য হওয়ার দীর্ঘ বছর পর যে পিতা তার সর্বস্ব দিয়ে সেটি কিনে দিয়েছিলেন সন্তানকে, আমি তাদের দুজনকেই চিনি। এমনকি সেই সন্তান সবার অজ্ঞাতে যখন সেদিনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে আত্মহত্যার (যেমন অন্যান্য আত্মহত্যার সিদ্ধান্তগুলি হয়), সেটাও আমার অজ্ঞাত ছিল না।...শুধু এক হাতে বিষের শিশি, অন্য হাতে অমরত্বের ওষুধের শিশি নিয়ে ছেলেটির ছাদে যাওয়ার কথা জানতাম না আমি।
একটি তারা তখন তীব্র উজ্জ্বল, অন্য একটি মৃদু, মলিন।
বৃষ্টি
সদ্য হাঁটা শিখছে— এমন শিশুর
মতন হাঁটছ— বিশৃঙ্খল, মেপে।
নৌকা ভাসছে— রহস্য কী? দেখি,
বৃষ্টি নামছে তোমার শরীর ব্যেপে।
যেমন কেরোসিনবিহীন এ চাঁদ
ঘন্টামিনিটব্যাপী হচ্ছে ম্লানই,
তেমন করে অবিচ্ছিন্নভাবে
জানতে পারার রহস্যটা জানি:
বুকের মধ্যে একশ কোটি এবং
ত্বকের মধ্যে লক্ষ সুইয়ের দাগে
ঠিক কীভাবে প্রেমের জন্য কোনো
হারিয়ে যাওয়া যুবক রাত্রি জাগে।
হরিদ্রাভ পুরোনো রেইনকোট
এবং কারও ভাগ্যরেখা হাতে
বৃষ্টি ঠেলে হেঁটে যাচ্ছ তুমি,
সদ্য হাঁটা শিশুর ভঙ্গিমাতে।
Leave a Reply
Your identity will not be published.