বিশ্বকবি ও বীরশ্রেষ্ঠ’র স্মৃতিধন্য নগরী

বিশ্বকবি ও বীরশ্রেষ্ঠ’র স্মৃতিধন্য নগরী

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে বঙ্গোপসাগরের কাছেই খুলনার অবস্থান। শিল্পনগরী নামে রয়েছে এর আরেক পরিচিতি। দেশের তৃতীয় বৃহত্তম শহর এটি। প্রায় ৪,৩৯৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ জেলার উত্তরে যশোর ও নড়াইল, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে বাগেরহাট এবং পশ্চিমে সাতক্ষীরা জেলা। সবুজ সৌন্দর্যের হাতছানি আর ঐতিহ্যের নীরব সাক্ষী এ বিভাগটি সবসময় ভ্রমণপিপাসুদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। তাই যতই দেখা হোক, জানা হোক। তারপরও দেখার স্বাদ মেটে না। এ কারণে বারবার দেখার পর আবারও মন ছুটে যায় ওই সবুজের পানে।

খুলনা জাদুঘর 

শহরের শিববাড়ি মোড়ে ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত খুলনা জাদুঘর। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাপ্ত নানান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বিশেষ করে ঝিনাইদহের বারবাজার, যশোরের ভরত ভায়না এবং বাগেরহাটের খানজাহান আলীর সমাধিসৌধ খননের ফলে প্রাপ্ত নানান দুর্লভ নিদর্শন প্রদর্শিত হচ্ছে এ জাদুঘরে।

শহরের কয়েকটি প্রাচীন স্থাপনা

খুলনা শহরের বেশ কয়েকটি প্রাচীন স্থাপনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে দীর্ঘ ইতিহাস, শহরের সাহেব বাজারে রেলস্টেশনের কাছে রয়েছে চার্লির বাড়ি। রেলওয়ের বিশ্রামাগার হিসেবে ব্যবহৃত এ ভবনটি শহরের প্রথম পাকা বাড়ি হিসেবে স্বীকৃত। চালিং বিদ্রোহী কৃষকদের ধরে এনে নীলকর চোটেল সাহেবের এ বাড়িতে অত্যাচার চালানো হতো। এ ছাড়া খুলনা জেলা কোর্ট ভবন, বিএল কলেজের প্রশাসনিক ভবন, করোনেশন হল, লাল দালান, শহীদ হাদিস পার্কসহ শহরের উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন প্রাচীন স্থাপনা ও জায়গাগুলোও ঘুরে দেখা যেতে পারে।

প্রেমকানন

খুলনা শহরের একটি দর্শনীয় জায়গা। নানারকম গাছপালা ছাড়াও এখানকার শান বাঁধানো পুকুরটি সবার মন কাড়ে। ব্রিটিশ আমলে প্রেমসুখ মেহতা ও পান্নালাল মেহতা নামে দুই জনৈক ব্যবসায়ীর বাগানবাড়িটি এখনকার প্রেমকানন। বর্তমানে এখানকার মূল আকর্ষণ জীবন্ত গাছের কারুকাজে তৈরি নানান পশুপাখির প্রতিকৃতি।

 

খানজাহান আলী সেতু 

খুলনা শহরের পাশেই রূপসা নদীর উপরে রয়েছে খানজাহান আলী সেতু। এটি রূপসা সেতু নামেও পরিচিত। বিকালে খান জাহান আলী সেতু বেড়াতে ভালো লাগবে সবার। সেতুটিতে রিকশা-ভ্যানের জন্য আলাদা লেন ছাড়াও পায়ে হাঁটার পথ রয়েছে।

শহীদ হাদিস পার্ক 

খুলনা শহরে ডাকবাংলো মোড় পার হলেই শহীদ হাদিস পার্ক। এটি খুলনার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। মিনারের পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে সুন্দর একটি পার্ক। নানারকম বৃক্ষ শোভিত এ পার্ক খুবই মনোমুগ্ধকর।

দক্ষিণ ডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্স

খুলনায় এলে অবশ্যই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্স ঘুরে যাবেন। এটি রবীন্দ্রনাথের শ্বশুরবাড়ি। খুলনা শহর থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার পশ্চিমের দক্ষিণডিহি গ্রামেই এই কমপ্লেক্স অবস্থিত। এখানে রবীন্দ্রনাথ ও তার পত্নীর ভাস্কর্য এবং কবির স্মৃতি বিজড়িত দ্বিতল ভবন রয়েছে।

চিড়িয়াখানা পার্ক 

খুলনার বড় একটি আকর্ষণ চিড়িয়াখানা ও পার্ক। খুলনার গিলাতলায় জাহানবাদ ক্যান্টনমেন্টে চিড়িয়াখানা ও পার্কটি অবস্থিত। এখানে হাতি, ঘোড়া, বাঘ, অজগর, সাপ, হরিণ, ময়ূরসহ বিভিন্ন পশুপাখি দেখা যাবে। আর চিড়িয়াখানার পাশেই রয়েছে চমৎকার একটি পার্ক। 

গল্লামারী স্মৃতি সৌধ বধ্যভূমি 

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী যে বর্বর অত্যাচার করেছে তার স্মৃতিচিহ্ন দেখতে যেতে পারেন গল্লামারি স্মৃতিসৌধ ও বধ্যভূমি। যুদ্ধের সময় এখানে পাকবাহিনী গণহত্যা চালায়। সেইসব শহীদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। খুলনা-সাতক্ষীরা রোডে গল্লামারী বাজারের কাছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই স্মৃতিসৌধ অবস্থিত।

 

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের মাজার

রূপসা নদীর পাড়ে পূর্ব রূপসার রয়েছে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের পাশে আরও কয়েকজন শহীদের কবরও এখানে আছে। এ ছাড়াও খুলনার দৌলতপুরে অবস্থিত সরকারি বিএল কলেজ। শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এলে দেখতে পাবেন বেশকিছু শতবর্ষের পুরাতন ভবন ও শত মনীষীর স্মৃতিচিহ্ন। খুলনা-সাতক্ষীরা রোডে রয়েছে সবুজে ঘেরা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। কাছাকাছি গেলে দেখা যাবে ভৈরব নদীতে অবস্থিত ভাসমান বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। এটিও খালিশপুরে।

খুলনার প্রত্নতত্ত্ব

খুলনা জেলার অনেক স্থানেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বেশ কিছু প্রত্নতত্ত্বের নিদর্শন। খুলনা বেড়াতে গেলে হাতে সময় থাকলে এসব প্রত্নতত্ত্ব দেখে আসতে পারেন। খুলনা শহরের ৫ নম্বর ঘাটের কাছে রয়েছে জোড়া শিব মন্দির। দৌলতপুরে মহেশ্বরপাশার মল্লিকপাড়ায় রয়েছে ভবনাথ মল্লিক জোড়াবাংলা মন্দির। শহরের বাইরে দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটি ইউনিয়নের কাটানিপাড়া গ্রামে রয়েছে একাধিক প্রত্নতত্ত্বের মন্দির ও তার ধ্বংসাবশেষ। এছাড়াও রয়েছে নেহাল উদ্দিন ফকিরের মাজার, কালীমন্দির ঢিবি, প্রত্নতত্ত্ব, পিসি রায়ের বাড়ি, রাসমনি ঢিবি, রানী রাসমনি মন্দির, শিব মন্দির, দুর্গা মন্দির, মসজিদকুর মসজিদ, প্রতাপাদিত্যের গড়, দুই সতিনের দীঘি, পদ্মপুকুর এবং শিলাপুকুর প্রত্নতত্ত্বের নিদর্শন।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেমে সড়ক, রেল ও নৌপথে খুলনা যাওয়া যায়। ঢাকার গাবতলী, কল্যাণপুর, কলাবাগান থেকে গ্রিন লাইন পরিবহন (০২-৮৩৫৩০০৪-৫), সোহাগ পরিবহন (০২-৯৩৪৪৪৭৭), ঈগল পরিবহন (০২-৮০১৭৬৯৮), শ্যামলী পরিবহন (০২-৯১৪১০৪৭), এসি বাস খুলনা যায়।

এছাড়া হানিফ, শ্যামলী, সোহাগ, ঈগল ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাস খুলনা যায়। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে সপ্তাহের সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে আন্তঃনগর ট্রেন চিত্রা এক্সপ্রেস, শনিবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৬টা ৩০ মিনিট সুন্দরবন এক্সপ্রেস যায়।

ঢাকার সদরঘাট থেকে শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টায় ছেড়ে যায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার রকেট স্টিমার (০২-৯৫৫১৮৪৬)। এছাড়া ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমান (০২-৭১৬৮৮৪২), জিএমজি এয়ারলাইনস (০২-৮৯২২২৪৮, ০২-৮৯২৪২৭৪), ইউনাইডেট এয়ারলাইন্সের (০২-৮৯৩২৩৩৮, ০২-৮৯৩১৭১২) বিমানে যশোরে গিয়ে সেখান থেকে সহজেই খুলনা আসা যায়।

কোথায় থাকবেন

শহরের কেডি এ অ্যাভিনিউতে হোটেল ক্যাসেল সালাম (০৪১-৭৩০৭২৫), কেডি এ অ্যাভিনিউতে হোটেল রয়্যাল (০৪১-৭৩১৮০৩, ০১৭১৮৬৭৯৯০০), শিববাড়ি মোড়ে হোটেল টাইগার গার্ডেন (০৪১-৭২১১০৮), মসজিদ সরণিতে হোটেল মিলেনিয়াম (০৪১-৭৩১২৮৩), খান এ সবুর সড়কে হোটেল ওয়েস্টার্ন ইন (০৪১-৮১০৮৯৯)—এ হোটেলগুলোতে ভালো মানের রেস্তোরাঁ আছে। এ ছাড়াও একটু কম দামে থাকা এবং খাওয়ার জায়গা আছে। 

Leave a Reply

Your identity will not be published.