তিনটি কবিতা

তিনটি কবিতা

পাখরিয়া
শাহীন রেজা

 

গভীর নামের ভারে পরিম্লান তুমি
কী নাম— কী নাম?
তোমার পললে জাগে বীজের প্লাবন
তুমি কি জলের নারী, নদীর পোয়াতি?
তোমাকে ভাবি না বৃক্ষ, না জল
তুমি শুধু উড়াল পঙ্খী আমার রাজহাঁস
অম্বরে মেলো ডানা চকিতে চকিতে

আজন্ম তৃষ্ণার্ত তুমি মৃদু তীরন্দাজ
তোমার ডানার নিচে ঘুমায় দুপুর
আমার স্বপ্নগুলো মায়াবী আওয়াজ
তোমাকে যতই দেখি যতবার
ততবারই তোলে ফণা রৌদ্রের সাপ

তোমাকে ডাকি না কাছে ফেরাতে পারি না
কী নাম— কী নাম?
অসীম নামের ভারে ম্রীয়মাণ তুমি
দূরে দূরে উড়ে উড়ে
তীব্র পাখরিয়া।

 

 

 

 


নন্দিত পদচিহ্নের পদাবলী
রাহমান ওয়াহিদ

 

স্বপ্নভাঙা ভোরের লোনাজল মাটিতে-ই তাহাদের সবেগ উত্থান;
তাহাদের নিচে শিরায় উপচে পড়েছে জোছনা ধোয়া ফসলের
ঘ্রাণ। সেইসব ঝজু বৃক্ষ অগ্রজদের সমুজ্জ্বল সৃজনশীলতারই
ভিন্ন নাম কবিতা।

হাঁটুজল কৈশোরে বহতা নদীর সাংগীতিক কলতান বাড়িয়ে
দিয়েছে আমাদের হামাগুড়ি বয়সের মধ্যাহ্নিক দীপ্তি।
সেইসব উদ্দীপ্ত সময়ের চলিষ্ণু স্রোতধারারই প্রতিশব্দ কবিতা।

পথহীন পথের অঙ্কুশ আল ধরে অনিশ্চিত পথ চলার পাথর
প্রত্যয় টেনে নিয়ে গেছে আমাদের বৃত্তকে ছাড়িয়ে, প্রান্তিক
অন্বেষণায়। সেইসব গন্তব্য ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাওয়া নন্দিত পদচিহ্নের
শিল্পিত শরীরই কবিতা।

 

 

 


চালচিত্র
শিউল মনজুর

 

প্রতিদিন ডিটারজেন্ট বিজ্ঞান ধুয়ে দেয় তন্তুর ময়লা—
তবু লোকমুখে ঝুলে থাকে অভাব আর অভিযোগের থলি!
প্রতিদিন ব্লিচিং জাদুতে ঝকঝক হয়ে ওঠে ঘরের মেঝে
তবু মনের মাঝে লেপ্টে থাকে কলহের কালো মেঘ!
প্রতিদিন ঝলমল দুপুরে দাঁড়িয়ে থাকে প্রযুক্তিদিন—
তবু কৃষকের মাঠে হাসে হা-ভাতের দীর্ঘ কাকতাড়ুয়া!
প্রতিদিন ভিআইপি উড়োজাহাজ গর্জন করে শাহজালালের রানওয়ে—
তবু মায়ের দৃষ্টি বারবার ঝাপসা হয়ে আসে দূরের পৃথিবী!
প্রতিদিন ডেকে ডেকে হরিণের মাংস বিক্রি করে রমনার ফেরিওয়ালা—
তবু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই রঙ বদলায় বাগানের পাতাবাহার!

Leave a Reply

Your identity will not be published.