মঞ্চ থেকে তিনি উঠে এসেছেন। জীবন ঘষে জ্বেলেছেন আগুন। শ্রম, মেধা ও সংগ্রামের মেলবন্ধনে গড়ে তুলেছেন ক্যারিয়ার। এক সময় অভিনেতা হিসেবে ছিলেন সুপরিচিত। নিজের ও অন্যের নাটকে ক্যামেরার দায়িত্বেও ছিলেন। এখন তিনি অভিনয় কমই করেন আর ক্যামেরা তো একেবারেই চালান না। তবে তার যা আসল জায়গা, সেই টিভি নাটক নির্মাণে এখনো তিনি সক্রিয়, যেখানে প্রধানত এ দেশের গ্রামবাংলার মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা মূর্ত হয়ে ওঠে। তিনি সালাউদ্দিন লাভলু। এই গুণী নির্মাতা ও অভিনেতার মুখোমুখি হয়েছিল সম্প্রতি অন্যদিন। তার সঙ্গে কথা বলেছিলেন মোমিন রহমান ও সাঈদা মিমি। সেই গল্পই এখানে তুলে ধরা হলো।
প্রসঙ্গ: সোনার পাখি রূপার পাখি
সালাউদ্দিন লাভলুর ১০তম ধারাবাহিক ‘সোনার পাখি রূপা পাখি’ নভেম্বর থেকে প্রচারিত হচ্ছে চ্যানেল আই-এ। ছয় মাসের অধিক কাজ করেছেন এর স্ক্রিপ্ট নিয়ে। পাঁচ থেকে ছয়বার কারেকশন করেছেন। তারপর কাজ শুরু করেছেন ধারাবাহিকের। লাভলু স্বকীয়তা বজায় রেখে একঝাঁক নতুন শিল্পীদের নিয়ে নেমে পড়েছেন গাজিপুরের পুবাইল শুটিং স্পটে তাঁর অনবদ্য নির্মাণে।
পরিবারকেন্দ্রিক এই নাটকের গল্পে উঠে এসেছে আমাদের বেড়ে ওঠা শৈশব-কৈশোর, যৌথ পরিবারের দেয়াল, জীবনের বিবর্তন, পরিবার প্রধানদের অবস্থা-অবস্থান। বড়দের এবং অনুজদের আচরণ, ভালোবাসা, স্নেহ, শাসন, সম্মান এই ধারাবাহিকতায় গড়ে ওঠা পরিবারের মূল অতীত থেকে বর্তমানে উঠে আসা জীবনধারার পরিবর্তন, মূল্যবোধের এইসব নিয়ে ১০৪ পর্বে এগিয়ে যাবে কাহিনি।
অভিনয় করছেন একঝাক নতুন মুখ। পুরনোদের মধ্যে খালেদা আক্তার কল্পনা, তাহমিনা সুলতানা মৌ, শাহনাজ ফারজানা চুমকি, আরফান আহমেদ প্রমুখ।
নতুনদের মধ্যে রয়েছেন- সেরা নাচিয়ের একটি ছেলে এবং দুটি মেয়ে। লাক্স-চ্যানেল আই-এর একটি মেয়ে এবং পালাকার গ্রুপের ছেলেমেয়েরা। অর্থাৎ পুরনোরা ৪৫ ভাগ এবং নতুনরা ৫৫ ভাগ; ‘রঙের মানুষ' এবং ‘খড়কুটো’তেও নতুনদের ব্রেক দেওয়ার এই কাজটি তিনি করেছেন।
এই প্রসঙ্গে লাভলু বিশদ একটা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন আমাদের। বর্তমান অর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে শিল্পী নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটু বাণিজ্যিকভাবেই ভাবতে হয়েছে তাকে। অনেক সময় এমন ঘটনা ঘটে যে, কোনো ব্যস্ত ও জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীকে কাস্ট করলে দেখা যায়, অনেকগুলো পর্বে অভিনয় করার পর তারা অন্য কাজের সিডিউল দিয়ে ফেলেন। হঠাৎ দেশের বাইরে চলে যান। তখন নির্মাতা বিপাকে পড়ে যায়। নানা বিঘ্ন আর বিপত্তি তৈরি হয়। এইসব অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখে নতুনদের লাইমলাইটে আনছেন তিনি। হয়তো এখান থেকেই বের হয়ে আসবেন আরেকজন প্রাণ রায় কিংবা আ খ ম হাসান। উল্লেখ্য, ‘সোনার পাখি রূপার পাখি' ধারাবাহিকের রচয়িতা কাজী শহিদুল ইসলাম।
ফিরে ফিরে দেখা
‘রঙের মানুষ' ২০০৪-এ নির্মিত হয়েছিল লাভলুর পরিচালনায় ধারাবাহিক ‘রঙের মানুষ'। তখন চ্যানেলগুলোতে শহরকেন্দ্রিক নাটকের প্রচার তুঙ্গে। ওই সময় সম্পূর্ণ গ্রামের পটভূমিতে নির্মিত ‘রঙের মানুষ’ রীতিমতো হইচই ফেলে দেয় নাট্যদর্শক মহলে। সেলিম আল দীন, মাসুম রেজার মতো নাট্যকার জড়িত ছিলেন এই নাটকের সঙ্গে। দর্শকরুচির সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়েছিল কলাকুশলীদের অভিনয়। প্রতিটি জীবনের আলাদা গল্প, বাচনভঙ্গি, সেন্স অব হিউমারের নিখুঁত ব্যবহার, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অভিনয়ের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যাওয়া— সব মিলিয়ে ‘রঙের মানুষ' ছিল একটি পারফেক্ট ধারাবাহিক। লাভলু স্মৃতিতাড়িত হন, সেই সময় শিল্পীদের মধ্যে অভিনয়ে একাত্ম হওয়ার প্রবণতা ছিল প্রবল; ছিল তাড়নাবোধ, দর্শকদের প্রতি এবং শিল্পের প্রতি দায়। শিল্পীরা মাসে সর্বোচ্চ দুটির বেশি নাটক করতেন না। সপ্তাহে ছয়দিন কাজ এবং একদিন বন্ধ।
এখন একজন শিল্পী সারা মাসই ব্যস্ত থাকেন। সেই টান কই, আঠা কোথায়? এই প্রসঙ্গে আমরা তারই একটি উক্তি তাকে স্মরণ করিয়ে দেই— ‘আমি শুধু বিনোদনের জন্য নাটক করি না...।’ না, অনেক বছর আগে বলা সেই উক্তিটি আবারও করতে দ্বিধান্বিত ছিলেন তিনি। মানে এই নয়, নির্মাণে তিনিও বাণিজ্যিক হয়ে গেছেন। একশতে দশভাগ বাস্তববাদী কিংবা হিসেবি হয়েছেন কেবল; জীবন খরচ, সংসার, সন্তানদের জন্য। এই উর্ধ্বমুখী খরচের বাজারে লাভলুর একমাত্র সোর্স অব ইনকাম নাটক, অভিনয় কিংবা পরিচালনা।
সুতরাং এটা থেকেই তাকে জীবন ধারণের খরচ তুলে আনতে হয়। এখনো নির্মাণের সব সিদ্ধান্ত নেন সালাহউদ্দিন লাভলু। স্পট, লাইটিং, মুভমেন্ট, ক্যামেরার কম্পোজিশন, পাত্র-পাত্রী নির্বাচন অর্থাৎ নাটক নির্মাণের সব সিদ্ধান্ত তার।
বিটিভি এবং অন্যান্য চ্যানেলসমূহ; সময়ের দ্রুততম জার্নি
আগে আমাদের টিভি বিনোদন মানেই ছিল বিটিভি। ২০০০ সালের পর বেশ কিছু ক্যাবল টিভি চ্যানেল তাদের যাত্রা শুরু করে। এই পরিক্রমের পথ ধরে বাংলাদেশে এখন পঁচিশটি ক্যাবল চ্যানেল। বিষয়টা নিয়ে সালাহউদ্দিন লাভলুর সঙ্গে দীর্ঘ কথোপকথন চলে। তার মতে, বাংলাদেশের মতো ছোট একটা দেশে এতগুলো চ্যানেল ক্যাবল কর্পোরেট বাণিজ্য বাজার তৈরি করতে পারে। এ দেশে আমরা কি পর্যাপ্ত নাট্যকার, নির্মাতা, কলাকুশলী, শিল্পী তৈরি করতে পেরেছি? যদি একেকটা চ্যানেলের জন্য প্রতিদিন দুটো করে নাটক নির্মাণ করা হয়, তবে পঁচিশটি চ্যানেলের জন্য নির্মিত নাটক সংখ্যা দাঁড়ায় ১০০-তে। স্বাভাবিকভাবেই কোয়ান্টিটি বাড়ে এবং কমতে থাকে কোয়ালিটি।
বিটিভি প্রসঙ্গে আসে সম্পূর্ণ একটি সরকার নিয়ন্ত্রিত টিভি চ্যানেলের কথা, যেখানে রয়েছে পর্যাপ্ত স্টাফ, সরকারি সুবিধা এবং আধুনিক হাইটেক মেশিন, যা অব্যবহারে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আগে দুই ঘণ্টায় দুটি নাটক নির্মাণে হিমশিম খেতে হতো, শিল্পীরা কাজ নিতেন বেছে বেছে। এখন এক জাতীয় ঘোড়াদৌড় চলছে। নাট্যশিল্পীরা সারা মাসই কাজ করে যাচ্ছেন কিন্তু শিল্পভাবনা হারিয়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই নিমগামী হচ্ছে এক ঘণ্টার নাটক কিংবা ধারাবাহিকের মান।
কলাকুশলী তৈরি, স্টার প্লাস, দর্শকের মৃত্যু এবং অন্যান্য
এখন কোনো ভালো নাটক পাচ্ছি না? বা কম পাচ্ছি? কোন ক্ষেত্রে ভালো কিছু পাচ্ছি? সংগীত, নৃত্য, শিল্পকলা, নির্মাতা, স্ক্রিপ্ট রাইটার, নাট্যকর্মী! এভাবে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলেন সালাহউদ্দিন লাভলু। বিশেষ করে শিল্পাঙ্গনে সঠিক মানুষগুলোর দিকনির্দেশনা অত্যন্ত প্রয়োজন। শিল্পের রং নির্ধারণ করবেন শিল্পী। ভারতে শিল্পীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য নানা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আমরা সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। হ্যা, মঞ্চ আছে। লাভলু নিজে মঞ্চের মানুষ। মঞ্চ থেকে উঠে আসা শিল্পীরা একসময় আলোকিত করেছেন নাট্যাঙ্গন। এখন ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অনেক তরুণ-তরুণী থিয়েটারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে পারেন না। পারিবারিক বাধা অন্যতম কারণ। বড় কারণ আরও আছে। তরুণ প্রজন্মের পড়ার চাপ, সেটা শেষ করে থিয়েটারে পৌছাতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। এত চাপে শিল্পের স্ফুরণ ঘটে না। জনবিস্ফোরণ আর যানজট নগরীকে পেষাই করছে। স্টার প্লাস সেই ক্ষেত্রে সুনামের সঙ্গে এগিয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। আমাদের শিল্পের রং হয়ে গেছে বাণিজ্যিক। হাতেগোনা কয়েকজন প্রশিক্ষিত কর্মী কাজ করে যাচ্ছেন। অপটু নতুনেরা আসছে। তাদের পথ নির্দেশনা দেওয়ার কেউ নেই। কয়টা চ্যানেল দর্শক চাহিদার কথা ভাবে? দর্শকও বিমুখ হয়ে ফিরে যাচ্ছে ইন্টারনেটে। মৃত্যু ঘটছে নাটকের দর্শকদের। বিবিধ মিশ্রণের কর্পোরেট কালার কি নান্দনিক আনন্দদায়ক হতে পারে?
পৌনপুনিক: নতুন শিল্পী, কাজ মাঝপথে রেখে হঠাৎ চলে যাওয়ার ঘোষণা
নতুনদের গড়ে নিতে প্রচণ্ড কষ্ট হয়। যার রক্তে অভিনয়ের নেশা নেই, অভিনয়ের চাতুর্যপূর্ণ খেলায় সে কীভাবে এগোবে? অনেক ক্ষেত্রে গড়তে না পেরে বাদ দেওয়ার মতো বিশ্রী সিদ্ধান্ত নিতে হয় লাভলুকে। প্রসঙ্গক্রমে প্রশিক্ষণের বিষয়টা আবারও আসে। জাত অভিনেতা প্রশিক্ষণ পেলে উৎক্ষিপ্ত লাভার মতো হয়ে ওঠে আর সত্তায় শিল্পরস নেই এমন শিল্পী প্রশিক্ষণ পেয়ে হয়ে ওঠেন আবেগহীন যান্ত্রিক, সংলাপ বলা প্রয়োজন তাই বলেন, মুখাবয়বে ভাবের রস খেলা করে- না। বাই বর্ন অভিনেতা-অভিনেত্রী প্রশিক্ষণ পেলে হয়ে উঠতে পারেন এক একটি আইকন।
মাঝপথে কোনো শিল্পীর চলে যাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। কাহিনির প্রথম পর্যায়ে থাকলে লাভলু অন্য শিল্পী নিয়ে নাটক আবার রি-শুট করেন। কিন্তু মাঝপথে? হয়তো কাহিনি পাল্টে আনতে হয় নতুন মুখ অথবা গতিশীল একটা চরিত্রকে হয়তো মেরে ফেলতে হয়। এই প্রস্তুতি লাভলু রাখেন। কেননা অন্যান্য দেশের মতোন নাটকে সাইন করে নিয়ম ভাঙলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিস্টেম বাংলাদেশে নেই।
খুচরা কথায় হাসি-আড্ডা, চা-পান পর্ব এবং জন্ম যার গ্রামে
লাভলু গ্রামকেন্দ্রিক গল্প নিয়ে কাজ করেন। অভিনয় কিংবা পরিচালনা। ‘আঁধারে ধবল দীপ’ নাটকটি ছাড়া আর সব নাটকই তার গ্রামের জীবন-ঘেঁষা। গ্রামের প্রকৃতি, মানুষ, মানুষের মূল্যবোধ তাকে বারবার আকর্ষণ করে গ্রামজীবনে হাতছানি দেয়। সপ্তাহখানেক শহরে কাটালে তিনি গাঁয়ে ছুটে যাওয়ার জন্য হাঁসফাঁস করেন। লাভলু স্পষ্ট বলেন, আমরা গ্রামকেন্দ্রিক মানুষ। আমি, আপনি, আপনারা। আমাদের সন্তানেরা হবে শহরকেন্দ্রিক। তারা একসময় গ্রামের প্রকৃতি চিনবে না। কারণ সেখানে শহুরে বাতাসের ছোঁয়া লেগেছে। তাই তিনি যতটা সম্ভব গ্রামকেন্দ্রিক নাটক নির্মাণ করেন। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আর্কাইভে রাখতে চান তা। আমরা মজা করে বলি, গ্রাম স্মৃতি জাদুঘর।
‘সোনার পাখি রূপার পাখি’দর্শকনন্দিত হলে পর্ব বাড়াবেন কি-না জানতে চাইলে সরাসরি না বলেন লাভলু। আগেও বাড়ান নি, দর্শকনন্দিত হওয়ার পরেও না। ...‘রঙের মানুষ’, ‘ঘরকুটুম’-এর পর আর কোনো ধারাবাহিক এতটা জনপ্রিয় হয় নি। আমরা সিডি কিনে দেখতাম। প্রসঙ্গটা এলে তিনি হেসে ফেলেন। ‘ঘরকুটুম’-এর পর ডিভিডির ব্যবহারই উঠে গেছে। মানুষ এখন নাটক দেখে ইউটিউবে। এই প্রসঙ্গে লাভলু জানান, তার নাটকের সবচেয়ে বেশি দর্শক হচ্ছে প্রবাসী বাঙালিরা।
একঘণ্টার নাটক নির্মাণ প্রসঙ্গ উঠে আসে। সালাহউদ্দিন লাভলু উৎসাহ দেখাতে সংকুচিত হন। নির্মাণ ব্যয় উঠে আসে না। কেবল ঈদের সময় ছাড়া।
স্মৃতিচারণ চলে- ‘একজন আয়নাল লস্কর’, ‘আধুলি’, ‘দ্বিচক্রযান’, ‘গোর’নাটকের। পরিচালক লাভলু একসময় নাটকে নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি অভিনয় করতেন। এক সময় তার মনে হলো, কোনো একটা সত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই নিজ নির্দেশনায় আর অভিনয় করতে ইচ্ছুক নন তিনি। অভিনেতা লাভলুকে এত কম পাচ্ছি কেন? শিগগিরই আসছেন তিনি। হিমেল আশরাফের পরিচালনায়, প্রসূন রহমানের নাটকে। ‘গুগল ভাই সব জানে' ধারাবাহিকে। রহস্যময় একটি চরিত্র। তার বিপরীতে সম্ভবত থাকবেন অভিনেত্রী তারিন। তা ছাড়া প্রতি ঈদে (দুই বছর ধরে) টিভি নাটকে অভিনয় করছেন তিনি।
কম্বিনেশন অব সালাহউদ্দিন লাভলু অ্যান্ড মাসুম রেজা
দু’জনেই থিয়েটারকর্মী, সালাউদ্দিন লাভলু এবং মাসুম রেজা, পেশাগত এই দিকটা সূচনামাত্র। দুজনের মধ্যে মিল ছিল চিন্তাধারার, মানসিকতার, উত্তরণের। সম্পর্কটা নিবিড় বন্ধুত্বে রূপ পেতে সময় নেয় নি। এরপর তারা গড়ে তোলেন ‘মুক্তনাট্য আন্দোলন' নামে একটা সংগঠন। জনপ্রান্তরে ঘোরা, বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের সঙ্গে মেলামেশা, তাদের সঙ্গে থাকা-খাওয়া-ওঠা-বসা আর ওদের দিয়ে গল্প লিখিয়ে নেওয়া এবং তাদের দিয়েই অভিনয় করিয়ে নেওয়ার কাজগুলো করতেন লাভলু-মাসুম। প্রসঙ্গত বলতেই হয়, সালাহউদ্দিন লাভলু এবং মাসুম রেজার বাড়ি একই জেলা কুষ্টিয়ায়। এরপরের গল্প জোয়ারের মতোন। মাসুম রেজার স্ক্রিপ্ট এবং সালাউদ্দিন লাভলুর নির্দেশনা। অসংখ্য মনজাগানিয়া, হৃদয়গ্রাহী নাটকের জন্ম।
চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বপ্ন এবং একটি ভারাক্রান্ত দিনের গল্প
ফারুক নামের সুদর্শন যে যুবকের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে লাভলুর এটা তারও গল্প। আন্তর্জাতিক ফিল্ম লেভেলে প্রচুর পড়াশোনা ছিল ফারুকের। লাভলু ফারুককে প্ররোচিত করতে পেরেছিলেন বাংলাদেশমুখী জীবনের দিকে টানতে। লাভলুর উদ্দীপনায় ফারুক লিখেছিলেন ওয়ারিশ। দীর্ঘ দেড় বছর সময় নিয়ে স্ক্রিপ্ট সাজিয়েছিলেন তারা। লোকেশন নির্বাচনের জন্য ছুটেছেন বাংলার কত প্রান্তে! এরই মাঝে ফারুক অভিনয় করে ফেলেছেন দুটি নাটকে। বাবুল স্যার এবং ভালো মানুষ।
প্রথমে ‘ওয়ারিশ’পরিচালনার কথা ছিল আব্বাসউল্লাহ সাহেবের। পরে লাভলু এর দায়িত্ব নেন। ভারতের বিখ্যাত পরিচালক বিজয় খেমকার সঙ্গে এটা নিয়ে এক কর্মশালায় অংশ নিয়েছিলেন।
ছবিটি নির্মাণের ঘোষণা দিয়ে প্রথম মহরত হয়েছিল চ্যানেল আই-এ। লাভলু শুটিংয়ের জন্য সময় চেয়েছিলেন ৭৮ দিনের। নির্মাণ খরচ নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় জাজ মাল্টিমিডিয়া এর দায়িত্ব গ্রহণ করে। সবকিছুই পরিকল্পনামতো এগোচ্ছিল। নায়িকা নির্বাচন করার পর কন্ট্রাক্ট সাইন হওয়ার জন্য সময় নেওয়া হয়ে ঈদ পরবর্তী সময়। ২০১৫ সালে রোজার ঈদে সমুদ্র হাতছানি দেয় ফারুককে। সেই ডাক শুনে একমুখী যাত্রা করেছিলেন তিনি। সাঁতার না-জানা ফারুক ডুবে যান সমুদ্রজলে। মৃত্যু একটা সম্ভাবনাকে স্থিরচিত্রে আটকে রাখে। তাহলে কি এই চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন না লাভলু? ফারুকের প্রতি দায় থেকেও নয়! না, দায় থেকে হলেও ফারুক যেভাবে লিখে গেছেন সেভাবে করতে না পারলে এই দায় বোঝা হয়ে যাবে। ফারুকের চলে যাওয়া যে শূন্যতা লাভলুর হৃদয়ে তৈরি করে গেছে, তা পূরণযোগ্য নয়। সুতরাং এই চলচ্চিত্র তার পক্ষে করা সম্ভব নয়।
পরিবেশ বিষাদময় হয়ে ওঠে। কথা চলে অপ্রাসঙ্গিক আরও কিছুক্ষণ। স্বপ্নদ্রষ্টা সালাউদ্দিন লাভলু চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বপ্ন দেখেন, যদিও এটা নিয়ে আপাতত তার কোনো প্ল্যান নেই। বিশাল বাজেট নিয়ে হয়তো কেউ এগিয়ে আসবেন একদিন। এই স্বপ্ন ততদিন তার সঙ্গে থাকুক, ন্যাপথলিনের ঘ্রাণে।
Leave a Reply
Your identity will not be published.