দেশে দেশে শেক্সপিয়ারের সৃষ্টিকে নতুন ভাবনা ও দৃষ্টির আলোকে উপস্থাপন করে চলেছেন সৃজনশীল মানুষেরা। জাপান, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্রকাররা সেই দেশের পটভূমিতে শেক্সপিয়ারের নাটক অবলম্বনে কালজয়ী সব চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। ভারতের স্বনামধন্য চলচ্চিত্রকার বিশাল বরদ্বাজ শেক্সপিয়ারের ‘ম্যাকবেথ’, ‘ওথেলো’ ও ‘হ্যামলেট’ অবলম্বনে নির্মাণ করেছেন যথাক্রমে ‘মকবুল’, ‘ওমকারা’ এবং ‘হায়দার’। ‘মকবুল’-এ মকবুল কোনো রাজা নন, আন্ডার ওয়ার্ল্ডের ডন। ‘ওমকারা’ও কোনো সেনাপতি নন। আর হায়দারও কোনো রাজার ছেলে নয়। সে কাশ্মীরের এক প্রভাবশালী ব্যক্তির পুত্র। এই সময়ের কাশ্মীরের নানা বিষয়ও ছবিটিতে ফুটে উঠেছে।
ঢাকার মঞ্চের নতুন নাটক ‘আ নিউ টেস্টামেন্ট অব রোমিও এন্ড জুলিয়েট’-এও দর্শকরা নতুন স্বাদ পাবেন। উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের ‘দ্য ট্রাজেডি অব রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’-এর আখ্যানকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে এখানে। ‘এম্পটি স্পেস’ নাট্যদল প্রযোজিত নাটকটি লিখেছেন সাইমন জাকারিয়া। ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মঞ্চে সন্ধ্যা ৭টায় নাটকটির সপ্তম মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হতে হয়। এর আগে দেশ ও দেশের বাইরে নাটকটির ৬টি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।
নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র এখনকার একজন কবি। পূর্ণিমা রাতে সমাধিতে ফোটা ফুলের গন্ধে যিনি মাতোয়ারা হন, গেয়ে ওঠেন নিষ্ঠাপ্রেমের গান। সেই রকম এক রাতে রোমিও আর জুলিয়েট এসে হাজির হয় কবির সামনে। কবি জুলিয়েটকে জানিয়ে দেন, রোমিও আসলে জুলিয়েটের আগে ভালোবাসত রোজালিনকে। তাকে দেখার জন্য বন্ধুদের সঙ্গে রাতের এক ভোজসভায় যায় সে। সেখানেই জুলিয়েটের রূপে মুগ্ধ হয়ে ভুলে যায় রোজালিনকে। এ কথায় অসহায় বোধ করে প্রেমিক যুগল। তারা সাহায্য চায় ফাদার ফায়ারের।
এই ফাদার গোপনে রোমিও-জুলিয়েটের বিয়ে সম্পন্ন করেছিলেন। সত্য প্রকাশ না করে তিনিই আবার প্যারিসের সঙ্গে জুলিয়েটের বিয়ে দিতে রাজি হয়েছিলেন। নিজের এ গোপন কর্মকে আড়াল করতে জুলিয়েটকে আত্মহত্যায় বাধ্য করেছিলেন। কবি সেটাও মনে করিয়ে দেন। কবির এইসব কাণ্ডে ফাদার আহ্বান করেন উইলিয়াম শেক্সপিয়ারকে। কবি শেক্সপিয়ারকেও ছাড়েন নি। প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে তিনি শেক্সপিয়ারের ‘দ্য ট্র্যাজেডি অব রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’ নাটকের গঠন ভেঙে দেন।
নাটকটির নির্দেশক নূর জামান বলেছেন, ‘রোমিও জুলিয়েটের বিখ্যাত বিয়োগান্তক প্রেমোপাখ্যানকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেছেন এর রচয়িতা সাইমন জাকারিয়া। একজন সমালোচকের অবস্থান থেকে তিনি রোমিও-জুলিয়েটের প্রেম পরিণয় ও বিয়োগের ঘটনাপ্রবাহগুলোকে দেখিয়েছেন একজন কবির চরিত্রের মধ্য দিয়ে। ধর্ম থেকে রাজনীতি কিংবা সংস্কৃতি যে ক্ষমতার প্রভাব বলয়ের বাইরে নয় তা উঠে এসেছে নাটকীয়তার মাধ্যমে।’
নাটকটিতে অভিনয় করেছেন লোবা আহম্মেদ, গোলাম শাহরিয়ার সিক্ত, স্বাধীন বিশ্বাস, নুরজামান রাজা, নাসিমুল হোসাইন বাধন, বাপ্পি সরদার, শুভ্র আহম্মেদ ও আরিফুল ইসলাম। আবহসঙ্গীত প্রক্ষেপণ ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা ইসমাইল হোসেন নয়ন। উল্লেখ্য, নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয় ২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মঞ্চে।
Leave a Reply
Your identity will not be published.