মুক্তিযুদ্ধের সময় তারামন বিবি ১১নং সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত নিজ গ্রাম কুড়িগ্রাম জেলার শংকর মাধবপুরে ছিলেন। তখন তার বয়স ছিল ১৩-১৪ বছর। সেই সময়ে ১১ নং সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন সেক্টর কমান্ডার আবু তাহের। মুহিব হাবিলদার নামের এক মুক্তিযোদ্ধা তারামনের পাশের গ্রামে একটি ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি তারামনকে সেই ক্যাম্পে নিয়ে আসেন রান্নাবান্নার জন্য। পরে যখন মুহিব তারামনের সাহস ও শক্তির পরিচয় পান, তখন তাকে অস্ত্র চালনা শেখান। এভাবেই তারামন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে ওঠেন।
তিনি সহকর্মী মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অনেক মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন, অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বের পরিচয় দেন। তার এই ভূমিকার জন্য ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। এরপর অবশ্য বহু বছর তারামনের খোঁজ পাওয়া যায় নি। ১৯৯৫ সালে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক বিমল কান্তি দে তারামনের সন্ধান পান। ফলে সেই বছরেরই ১৯ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকার এক অনাড়ম্বর পরিবেশে আনুষ্ঠানিকভাবে এই বীর নারীর হাতে তুলে দেয় তার বীরত্বের পুরস্কার।
বীর প্রতীক তারামন বিবিকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে যাচ্ছেন তরুণ পরিচালক আমিনুর ইসলাম লিটন। চিত্রনাট্যকার ষড়ৈশ্বর্য মুহম্মদ। উপদেষ্টা পরিচালক স্বনামধন্য চলচ্চিত্রকার নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। আর চলচ্চিত্রটির নাম ভূমিকায় অভিনয় করতে যাচ্ছেন তানহা তাসনিয়া।
জানা গেছে, এটি তারামন বিবির বায়োপিক নয়। এখানে মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বীরত্বপূর্ণ ভূমিকাটিই মূলত উঠে আসবে। এছাড়া ১৯৯৫ সালের আগে কেউ তার খোঁজ রাখে নি, এ বিষয়টিও মূর্ত হয়ে উঠবে। আর অন্যান্য নারী মুক্তিযোদ্ধার গল্পও ফুটে উঠবে এখানে।
গত ৩ নভেম্বর রাজধানীর এক রেস্টুরেন্টে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা করা হয় চলচ্চিত্রটি নির্মাণের কথা। শিল্পীদের সঙ্গেও পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। চলচ্চিত্রটির মূল চরিত্রের অভিনয়শিল্পী তানহা তাসনিয়া বলেন, ‘এই সিনেমায় কাজ করাটা আমার জন্য আনন্দের পাশাপাশি গৌরবের। আমি তারামন বিবি সম্পর্কে আগে থেকে অল্প জানি। এখন বই পড়ে আরও বড় পরিসরে জানার চেষ্টা করছি।’
‘তারামন’ সিনেমায় অন্যান্য চরিত্রের অভিনয়শিল্পীরা হলেন মোমেনা চৌধুরী, শাহানশাহ উল হক, রুহুল আমিন তুহিন, সোনিয়া আকতার প্রমুখ। চলচ্চিত্রটির শুটিং শুরু হবে আগামী ডিসেম্বরে, কুড়িগ্রামে, তারামন বিবি’র বাড়িতে।
Leave a Reply
Your identity will not be published.