সম্প্রতি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ভারতের জাতীয় নাগরিক সম্মান ‘পদ্মশ্রী’ প্রত্যাখ্যান করলেন। তার ভক্তরা শিল্পীর এই সিদ্ধান্তে যারপর নাই খুশিই হয়েছেন। কী কারণে এমনটি করলেন কিংবদিন্ত এই শিল্পী?
বাংলা গানের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। কী আধুনিক, কী চলচ্চিত্রের প্লেব্যাক, কী উচ্চাঙ্গ সংগীত- সব ধরনের গানেই তিনি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। গত বছরের পঞ্চাশ ও ষাট দশকে তিনি ছিলেন ভীষণ জনপ্রিয়। চলচ্চিত্রে সুচিত্রা সেনের লিপে তাঁর কণ্ঠ ছিল খুবই মানানসই। তাই সুচিত্রা-সন্ধ্যা জুটি গড়ে উঠেছিল সেই সময়।
মধুকণ্ঠী এই শিল্পী প্রথম কণ্ঠ দেন সুরকার রবীন চট্টোপাধ্যায়ের দুটি ছবি অঞ্জনগড় (১৯৪৮) ও সমাপিকাতে (১৯৪৮)। শৈলেন রায়ের রচনায় ‘সমাপিকা’র গান অনায়াসেই জনসমাদর পায় এবং সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় শুরুতেই পাদপ্রদীপের আলোর সামনে চলে আসেন। তাঁর গাওয়া কয়েকটি চির স্মরণীয় গান হচ্ছে, গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু, জানি না ফুরাবে কবে এই পথ চাওয়া, এ গানে প্রজাপতি, কী মিষ্টি দেখো মিষ্টি, এ শুধু গানের দিন, আমাদের ছুটি ছুটি, চোখে চোখে কথা কও, আমার বাজু-বন্ধের, এই যে কাছে ডাকা, আমি স্বপ্নে দেখেছি, ভ্রমরের গুঞ্জনে, ওগো মোর গীতিময়, হয়তোবা কিছু নাহি পাব...। অথচ গত প্রায় আট দশক সম্মান পাওয়ার যোগ্য মনে করা হয় নি তাঁকে। তাই ভারত সরকারের চতুর্থ সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘পদ্মশ্রী’ প্রত্যাখ্যান করলেন প্রবাদপ্রতিম সংগীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।
তাঁর চেয়ে কম বয়সীরাও সম্মান পেয়েছেন। তাই এখন আর সম্মানের প্রয়োজন নেই বলে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে ফোনেই জানিয়ে দিয়েছেন ৯০ বছর বয়সী এই শিল্পী।
ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, ২৫ জানুয়ারি ‘পদ্মশ্রী’ প্রাপকদের একটি তালিকা প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় সরকার। তাতে গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের নাম রয়েছে। তালিকা প্রকাশের পর শিল্পীর লেক গার্ডেন্সের বাড়িতে ফোন আসে দিল্লি থেকে। ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে তাঁকে সম্মানিত করা হচ্ছে বলে জানানো হয়। কিন্তু শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় সরাসরি জানিয়ে দেন তিনি ‘পদ্মশ্রী’ প্রত্যাখ্যান করছেন। এই সম্মাননা নিতে অপারগ তিনি।
শিল্পীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ১২ বছর বয়স থেকে গান গাইছেন। সংগীতের পেছনে জীবনের ৭৫ বছর উৎসর্গ করে দিয়েছেন। অথচ এতদিনেও তাঁর মতো সংগীতজ্ঞকে সম্মানের যোগ্য বলে মনে করা হয় নি। বরং তাঁর চেয়ে কম বয়সের শিল্পীদের সম্মানিত করা হয়েছে। আর এ কারণেই সম্মান প্রত্যাখ্যান করেছেন শিল্পী। ১৯৭১ সালে ‘জয়জয়ন্তী’ ও ‘নিশিপদ্ম’ ছবিতে গান গেয়ে শ্রেষ্ঠ গায়িকা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন সন্ধ্যা। এ ছাড়া ২০১১ সালে রাজ্য সরকার তাকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ উপাধিতে সম্মানিত করে।
Leave a Reply
Your identity will not be published.