গোলাম কিবরিয়া পিনু মূলত কবি। প্রবন্ধ, ছড়া ও অন্যান্য লেখাও লিখে থাকেন। গবেষণামূলক কাজেও যুক্ত। তাঁর জন্ম ৩০ মার্চ ১৯৫৬ গাইবান্ধায়। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক সম্মান এবং স্নাতকোত্তর, পরে পিএইচডি ডিগ্রিও লাভ করেন। লিখছেন তিন দশকের অধিককাল। এর মধ্যে কবিতা-ছড়া-প্রবন্ধ ও গবেষণা মিলে ২৯টি গ্রন্থ বের হয়েছে।
তিনি বহু ধরনের কবিতা লিখেছেন এবং সেগুলো বিভিন্ন নিরীক্ষাপ্রবণতায় সংশ্লিষ্ট। তাঁর কবিতায় জীবন আছে, সমাজ আছে, প্রকৃতি আছে, মানুষ আছে, দেশ-কাল আছে এবং আছে প্রতীকের ব্যঞ্জনাও, আছে রূপক, আছে ছন্দের বিভিন্নমুখী ব্যবহার, অনুপ্রাসের নতুন মাত্রা, মিলবিন্যাসের নিরীক্ষা ও অন্যান্য সূক্ষ্ম কারুকাজ।
কবিতার বই ছাড়াও তাঁর ছড়ার ক’টি বই আছে। আছে বাংলা নারীলেখকদের নিয়ে গবেষণা গ্রন্থ, যা বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এই গ্রন্থে নারীর আত্মপ্রতিষ্ঠা থেকে নারী লেখকদের সৃজনশীলতা ও বাংলা সাহিত্যে তাঁদের অবদান বিশেষভাবে এসেছে। এছাড়া অন্যান্য বিষয়ে প্রবন্ধের বইও রয়েছে।
শিশু-কিশোর সংগঠন খেলাঘরসহ ছাত্র সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধেও তাঁর রয়েছে ভূমিকা। বর্তমানে বাংলা একাডেমির জীবনসদস্য ও এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বাংলাদেশ-এর সদস্য। জাতীয় কবিতা পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সাহিত্যে তাৎপর্যপূণ অবদানের জন্য পেয়েছেন বহু পুরস্কার। উল্লেখযোগ্য পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে এম নুরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১০; কবি বিষ্ণু দে পুরস্কার ভারত, ২০১৬; সাতক্ষীরা কবিতা পরিষদ পুরস্কার ২০১৯।
মাত্রাজ্ঞানহীন
ভালোবাসার নামে
মোজাইক করা ঘরে পা রেখেছো,
চিকচিক করা জিনিসের প্রতি
তোমার কী লোভ!
প্রবেশাধিকার পেয়ে-
সবখানে তোমার অধিকার,
মাত্রাজ্ঞানহীন!
রেলের গতিও কমিয়ে ও থামিয়ে,
কাকে তুলছো?
কাকে ভুলছো?
বৃষ্টিতে ভেজো নি একদিনও উচ্ছাসে!
নীল আকাশও তাকিয়ে দেখো নি?
পুকুর পাড়েও বসো নি?
সেই তুমি ভালোবাসার নামে রক্ষক হয়ে
যক্ষপুরী তৈরি করে আজ কত রকমের
সর্বনাশ ডেকে আনছো!
নিজেরই টিকিট ছিল না!
ছিল না প্রবেশপত্র!
এখন কী অধিকার পেয়ে
যা খুশি যা কিছু ছুঁয়ে দেখছো,
হীরে-জহরত দেখে চোখও চড়কগাছ!
এ্যাকুরিয়ামের মাছও- ভাজা করে খাও!
পই পই করে উঠে যাচ্ছ মই পেয়ে!
ন্যাংটা হয়ে পড়ছো- খেয়াল নেই!
কবিতা স্বয়ম্ভু
পদ ও পদবি নিয়ে
কবিতাকে কতদূর নিয়ে যাবে?
চেয়ারের ক্ষমতায়
কবিতা কখনো ঐশ্বর্য্যমণ্ডিত হয় না,
শুধু মমতায় মমতায়-
সে প্রাণ পায়।
টেনে-হিঁচড়ে ও জোর করে
জোড়াতালি দিয়ে কবিতাকে বড়জোর
দোর পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারো
পদকের জন্য,
পদককেও পদাঘাত করে
কতজনের কাছ থেকে
সে চিরদিনের জন্য চলে এসেছে,
আর ফিরেও তাকায় নি!
যেমন-তেমন আবরণ ও আভরণ দিয়ে
কবিতাকে রঙকরা দেওয়ালের পলেস্তারা
করা যায় না কখনো।
নিজেরই রঙে সে আপনাআপনি
উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
অন্য কোনো উজ্জ্বলতায় সে কখনো
নিজের উজ্জ্বলতা হারায় না!
কিংবা উজ্জ্বল হয় না!
গাঁজার ধোঁয়ার মধ্যে কবিতাকে নিয়ে গিয়ে
রাখতে পারবে না,
ঘড়েল ডিপ্লোমেটের আওতায়
কবিতা কখনো থাকে না!
যে-কোনো জাহাজের প্রপেলার হয় না!
কবিতা এমনই যুদ্ধবীর-
তীর লাগা বুকেও-শ্বাস নিয়ে উঠে দাঁড়ায়,
যায় অন্তঃসলীলার কাছে-অন্তঃপ্রাণ নিয়ে!
কোনো খেয়াঘাটে কবিতা কখনো অপেক্ষায় থাকে না,
রেলস্টেশনেও না!
সে তার নিজস্ব স্বাধীন পথ খুঁজে নিয়ে চলে।
তাকে মাদুরে বসিয়ে যা তা গিলাতে পারবে না,
পাটিসাপটা পিঠার জন্য দাঁতের পাটি সে দেখায় না।
কবিতা থাকে তার নিজের প্রাণশক্তিতে
কবিতা থাকে তার নিজের ঘ্রাণশক্তিতে!
কবিতা হাঁটে তার নিজের পায়ের শক্তিতে!
কবিতা নিজেই স্বয়ম্ভু,
তার কোনো প্রভু লাগে না!
পরিপাটি
যে ডিটারজেন্ট পাউডারে
জামাটা পরিষ্কার করতে চাইছো,
তাতে সম্পূর্ণ ভালোমতো পরিষ্কার হবে না!
বেশি ময়লা হওয়া জামা
বেশিক্ষণ ডিটারজেন্ট পাউডারে
ভিজিয়ে রাখলেও চলবে না!
কচলাতেও হয়- জোরে কাচতেও হয়!
কলারের ময়লা যাবে না!
হাতার ময়লা যাবে না!
হাঁটতে গিয়ে যে দাগ লেগেছে- তা যাবে না!
অজানা উড়ন্ত পাখির বিষ্ঠার দাগ লেগেছে- তা যাবে না!
সাবানও মাখতে হয়- ক্ষারজলেও ভেজাতে হয়!
জামা পরিষ্কার করতে হলে
আরও মনোযোগ দাও,
না হলে জামার কিছু কিছু জায়গায়
ময়লা থেকে যাবে- পরিষ্কার হবে না!
ইলেকট্রিক বা কয়লার ইস্ত্রিতে- ইস্ত্রি করার পরও,
ময়লা তার নখদন্ত দেখাবে- অশালীন হয়ে উঠবে,
-বিদঘুটেও দেখাবে!
ও জামা পরে পরিপাটি হয়ে থাকতে পারবে না!
পাপোশে পা
আপসে পাপোশে পা রাখি
যারা মুনিয়া পাখি ভেবে
-আমাকেও পোষে!
তারা তো চাইবে-
তাকে নিয়ে গুনগুন করি- গান করি,
হুকুমে হুকুমে
বেহালাটাও হাতে ধরি!
ধাতু ও প্রত্যয়ে থাকা ধাই ফুল
খনিজ ধাতুতে তৈরি ফুলদানিতে রাখি।
অবশেষে তার পদপাদে সেই ফুল রাখি।
আপসের এমনি স্বভাব!
ধানগাছ কেটে সেই মাঠে
ধুতরার বীজ বপন করি!
ধামালিতে মেতে উঠি।
উঠানওয়ালা ঘরের বাসিন্দা হওয়ার পরও-
পরের ঘরের পাপোশে পা রাখি!
বিপ্রতীপ
আঙুলফুলে কলাগাছ!
কলাগাছের কলা বিক্রি করে
পুকুরে ছাড়ে মাগুর মাছ!
রাতারাতি-
তৈরি করে পাশে- সুইমিংপুল,
চলে তাতে মাতামাতি!
সাঁতার কাটে কী প্রশান্তিতে,
তার বড়ভাই!
কোনো প্রশ্ন নাই!
টিভির টকশোতে অংশ নিয়ে
আলোচনা করে- কী অবলীলায়!
দুর্নীতি নিয়ে!
ঢেকুরও তোলে পাতে নিয়ে
চুরি করা বৈয়ামের ঘিয়ে!
Leave a Reply
Your identity will not be published.