স্বনামধন্য চলচ্চিত্র পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান এখন মেঘের ওপর বাসা বেঁধেছেন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে তিনি উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে প্রয়াত হন।
সোহানের মৃত্যুটা বিস্ময়কর! অনেকটা চলচ্চিত্রের গল্পের মতোই। ১২ সেপ্টেম্বর ব্রেন স্ট্রোকে মারা যান সোহানের স্ত্রী প্রিয়া রহমান। প্রাণপ্রিয় সহধর্মিণীর এই আকস্মিক মৃত্যুতে সোহান প্রচণ্ড আঘাত পান। ফোনে তিনি বয়োজ্যেষ্ঠ পরিচালক কাজী হায়াতকে বলেছিলেন, ‘হায়াৎ ভাই, আমার জন্য দোয়া করবেন যেন আমি স্ত্রী হারানোর শোক সইতে পারি।’ সেই শোক আর তাঁকে সইতে হলো না। তিনিও স্ত্রীর সঙ্গী হলেন। উল্লেখ্য, টাঙ্গাইলে স্ত্রীর পাশেই এখন চিরনিদ্রায় শুয়ে আছেন সোহান। এমন হৃদয় বিদারক প্রস্থানে ব্যথিত তার পরিবার, সহকর্মী ও ভক্তগণ।
কেন এই আকস্মিক মৃত্যু? চিকিৎসকেরা তাঁর মৃত্যুর কারণ চিহ্নিত করতে পারেন নি। এটি শুধু জানা গেছে, সোহান ডায়াবেটিসের রোগী ছিলেন। কিছুদিন আগে নায়ক শাকিব খানকে জানিয়েছিলেন, তিনি অসুস্থ। উন্নত চিকিৎসার জন্য জাপান যাবেন। কিন্তু সেই অসুস্থতাও এমন ছিল না যে অসময়ে তাঁকে চলে যেতে হবে! আসলে স্ত্রীকে হারানোর শোকই হয়তো তিনি সইতে পারেন নি।
সোহানুর রহমান সোহানের জন্ম ১৯৬০ সালের ১৫ অক্টোবর, বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ফুলবাড়িতে। চলচ্চিত্রে তাঁর ক্যারিয়ার শুরু পরিচালক শিবলি সাদিকের হাত ধরে। ওই পরিচালকের ‘মেল ট্রেন’, ‘রেশমী চুড়ি’ ও ‘তিন কন্যা’র তিনি ছিলেন সহকারী পরিচালক। পরে তিনি শহিদুল হক খান ও এ জে মিন্টুর সহকারি হিসেবেও কাজ করেছেন।
পরিচালক হিসেবে সোহান আত্মপ্রকাশ করেন ১৯৮৮ সালে, ‘বিশ্বাস অবিশ্বাস’ ছবির মাধ্যমে। এরপর তিনি আরেকটি ছবি পরিচালনা করলেও পাদপ্রদীপের আলোর সামনে আসতে পারেন নি।
সোহান সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ১৯৯৩ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ পরিচালনা করে। যদিও এটি ছিল ভারতীয় ছবির রিমেক। কিন্তু এখানে দর্শকরা কিছুটা নতুন স্বাদ পেয়েছিল। এ ছবির ‘রাজ’ চরিত্রের অভিনেতা সালমান শাহের মাঝে কখনো কখনো মূল ছবির আমির খানের ছায়া উঁকি মারলেও ভিন্নতার স্বাক্ষর ছিল স্পষ্ট। উদাহরণ হিসেবে সেই দৃশ্যের কথা বলা যেতে পারে, বনে পথ হারিয়ে যখন রেশমীরূপী মৌসুমী ও রাজরূপী সালমান রাত্রিযাপন করছে। রাজ যেহেতু জানে রেশমী তাদের পরিবারের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন এক পরিবারের মেয়ে সেহেতু সে সংযত আচরণ করছে। এই দৃশ্যে সালমানের অভিব্যক্তির প্রকাশ স্বাতন্ত্র্যে সমুজ্জ্বল। এমনকি একটি গানের চিত্রায়নেও ভিন্নতা লক্ষণীয়। সালমানের কস্টিউমেও।
সোহানুর রহমান সোহান ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন একজন রোমান্টিক মানুষ। তাই তাঁর অধিকাংশ ছবিতেই মূর্ত হয়ে উঠেছে প্রেম, রোমান্টিসিজম। উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে আমার ঘর আমার বেহেশত, অনন্ত ভালোবাসা, স্বামী ছিনতাই, বলো না ভালোবাসি, সে আমার মন কেড়েছে, বৃষ্টি ভেজা আকাশ, কথা দাও সাথী হবে, কোটি টাকার প্রেম, দ্য স্পিড, লোভে পাপ পাপে মৃত্যু।
সোহান এ দেশের চলচ্চিত্রে কয়েকজন নতুন নায়ক-নায়িকা উপহার দিয়েছেন। তাঁর হাত ধরেই চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করে তুমুল সাড়া জাগানো সালমান শাহ, মৌসুমী। ১৯৯৭ সালে চলচ্চিত্রের আলো-ছায়ার জগতে পা রাখেন শাকিল খান (ছবি: আমার ঘর আমার বেহেশত) এবং ১৯৯৯ সালে আজকের সুপার স্টার শাকিব খান (ছবি: অনন্ত ভালোবাসা)। শাকিবের সঙ্গে একই ছবিতে ছিলেন ইরিন জামান, মৌসুমীর ছোট বোন। তিনিও ছিলেন চলচ্চিত্রে নতুন। উল্লেখ্য, সোহান সম্পর্কে শাকিব খানের ভাষ্য হলো, ‘আমার এই শাকিব নামটি সোহান ভাইয়েরই দেওয়া।’ ভক্তমাত্রই জানেন কিংখানখ্যাত শাকিবের আসল নাম মাসুদ রানা।
Leave a Reply
Your identity will not be published.