রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মিলনায়তনে প্যারিস প্রবাসী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের ৫০ বছরের শিল্পী জীবনের নির্বাচিত চিত্রকর্ম নিয়ে শুরু হয়েছে বিশেষ চিত্রপ্রদর্শনী ‘শাহাবুদ্দিন: এ রেট্রোস্পেক্টিভ ১৯৭৩-২০২৩’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ সেপ্টেম্বর ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন এই চিত্রপ্রদর্শনী। প্রদর্শিত চিত্রকর্মগুলো ঘুরেও দেখেন তিনি।
এছাড়া তিনি 'SHAHABUDDIN: A RETROSPECTIVE 1973-2023' শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকাস্থ ফরাসি দূতাবাসের মান্যবর রাষ্ট্রদূত মিসেস মেরি মাসদুপুয়। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর পর্ষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. কামরুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, এমপি।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'শিল্পী শাহাবুদ্দিন আমাদের দেশের শিল্পী। তিনি একই সাথে বীর মুক্তিযোদ্ধা। আজকের এই প্রদর্শনীতে অনেক দুর্লভ ছবি দেখা যাবে, যেগুলো আমাদের অনেকেরই দেখার সৌভাগ্য হয় নি। একজন শিল্পীর তুলির আঁচড় অনেক বেশি শক্তিশালী। তাঁর ছবিতে প্রকৃতির নানান চিত্র, ইতিহাস, ঐতিহ্য, দারিদ্র্য-পীড়িত ও সংগ্রামী মানুষের প্রতিকৃতি ফুটে উঠে। তাঁর ছবি দেখলে মনে হয় এখনো মুক্তিযুদ্ধ চলছে। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ-চেতনা কবি, শিল্পী সাহিত্যিক লেখকদের মাধ্যমেই বেঁচে থাকে। শিল্পীর আঁকা ছবি আবেগ দিয়ে উপলব্ধি করতে হয়। শিল্পী শাহাবুদ্দিন এক হাতে অস্ত্র অন্য হাতে তুলি দিয়ে ছবি এঁকেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সময়। শিল্পীর মনের আবেগ যখন বিকশিত হয়, তখন সেটা কোনো না কোনোভাবে প্রকাশিত হবেই।' উল্লেখ্য, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানাও।
স্বাগত বক্তব্যে মো. কামরুজ্জামান বলেন, 'বাংলাদেশের চিত্রশিল্পকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরার ক্ষেত্রে এদেশের যে সকল চিত্রশিল্পীর অবদান শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণীয়, প্রথিতযশা চিত্রশিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদ তাঁদের মধ্যে অন্যতম।'
শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, 'মানুষের ভালোবাসাটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া এবং আজকে আমি ভীষণ আনন্দিত। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্য আজকে আমি শিল্পী শাহাবুদ্দিন হতে পেরেছি।' এ ছাড়াও তিনি তাঁর শিল্পী হয়ে ওঠার পেছনের গল্প, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচরণ করেন।
সম্মানিত অতিথি মিসেস মেরি মাসদুপুয় বলেন, 'শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে ফ্রান্স সব সময় পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে। এজন্য বাংলাদেশের অনেক প্রতিভাবান শিল্পী আজ ফ্রান্সে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়ে সেখানে বসবাস করছেন। শিল্পী শাহাবুদ্দিন তাঁর চিত্রকর্মের মাধ্যমে ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছেন এবং সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার ক্ষেত্রে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।'
বিশেষ অতিথি খলিল আহমদ বলেন, 'শিল্পী শাহাবুদ্দিনের চিত্রকর্মে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধু, এই তিনটা উপাদান খুঁজে পাওয়া যায়। যেটা মুক্তিকামী মানুষকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করে।'
অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, 'শিল্পী শাহাবুদ্দিনের দীর্ঘ ৫০ বছরের চিত্রকর্মের নির্বাচিত চিত্রকর্ম নিয়ে মাসব্যাপী এই প্রদর্শনী। শিল্পী অত্যন্ত নান্দনিকভাবে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর চিত্রকর্মে।'
সভাপতির বক্তব্যে কে এম খালিদ, এমপি বলেন, '১৯৭৩ সাল থেকে ২০২৩ সাল, অর্থাৎ পঞ্চাশ বছরের চিত্রকর্মের নির্বাচিত ছবি নিয়ে আজকের এই প্রদর্শনী শিল্পী শাহাবুদ্দিনকে বেশি করে জানার সুযোগ করে দেবে। তিনি তাঁর চিত্রকর্মের মাধ্যমে বিশ্ব জয় করেছেন।'
উল্লেখ্য, শিল্পী শাহাবুদ্দিনের শিল্পকর্মে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বারবার ফিরে আসে। বড় ক্যানভাসে গতিশীল ও পেশিবহুল অতিমানবীয় পুরুষের ছবি আঁকতে ভীষণ পছন্দ করেন তিনি। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধকে উপজীব্য করে রংতুলির সাহায্যে যথাযথ উপস্থাপনা, প্রতিস্থাপন ইত্যাদি বিষয়গুলো সার্থক ও সফলভাবেই সম্পন্ন করেছেন তিনি। এছাড়াও শাহাবুদ্দিনের তুলিতে নারী চিত্রকর্মগুলোয় তাদের চিরায়ত কোমলতা, দ্যুতির স্পন্দন ও স্নিগ্ধতা দেখা যায়। চিত্রকলায় তাঁর পরিচয় সংগ্রামী মানুষের প্রতিকৃতিতে দুর্দমনীয় শক্তি ও অপ্রতিরোধ্য গতির ইঙ্গিতময় অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তোলার জন্য। তাঁর জীবনটাই এক বিশাল ক্যানভাস। ২০০০ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে। এছাড়া তিনি ফ্রান্সের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘নাইট’ উপাধি লাভ করেছেন ২০১৪ সালে।
প্রদর্শনটি ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ থেকে ১৪ অক্টোবর ২০২৩ পর্যন্ত শনিবার থেকে বুধবার সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এবং শুক্রবার বিকাল ৩.৩০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে। বৃহস্পতিবার ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন প্রদর্শনী বন্ধ থাকবে। মাসব্যাপী এই প্রদর্শনীতে শিল্পীর ১৪০টি শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে। এখানে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সংগ্রহ ছাড়াও ৩৮ জন সংগ্রাহকের শিল্পকর্ম উপস্থাপন করা হয়েছে। এ সকল শিল্পকর্মের মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ সংগ্রহের দুটি শিল্পকর্ম রয়েছে।
Leave a Reply
Your identity will not be published.