নানা আয়োজনে কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭৫তম জন্মদিন পালন করেছেন তাঁর ভক্ত-আনুরাগী ও তার পরিবার। ১৩ নভেম্বর সকালে গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামের নুহাশপল্লীতে হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, দুই পুত্র নিশাত ও নিনিতসহ নুহাশপল্লীর লোকজনকে নিয়ে কেক কাটেন। এ সময় হুমায়ূন আহমেদের শুভানুধ্যায়ী ও ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে লেখকের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন ও রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। এরপর সাজানো-গোছানো নুহাশপল্লীর বিভিন্ন স্থাপনা ও নান্দনিক শিল্পকর্ম ঘুরে দেখেন তারা। এ ছাড়া রবিবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে নুহাশপল্লীতে এক হাজার পঁচাত্তরটি মোমবাতি প্রজ্বালন করে সমস্ত নুহালপল্লীকে আলোকিত করা হয়।
মেহের আফরোজ শাওন সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে জানান, হুমায়ূন আহমেদের ক্যান্সার হাসপাতাল তৈরির যে স্বপ্ন ছিল তা বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা এখনো অব্যাহত আছে। হুমায়ুন আহমেদ যে ক্যান্সার হাসপাতাল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সেটা তাঁর অনুপস্থিতিতে বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন কাজ। তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো তাঁর ডাকে অনেকেই সাড়া দিতেন। কিন্তু হুমায়ুন আহমেদের অনুপস্থিতে আমি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন মানুষের কাছে গিয়েছি, তবে সেভাবে সাড়া পাইনি। এটি আমার একার পক্ষেও সম্ভব নয়। তবে আমার এখনো বিশ্বাস, লেখকের যে স্বপ্ন ছিল সেটি বাস্তবায়ন হবে। তিনি আরো জানান, সম্প্রতি কানাডার একদল চিকিৎসক ও ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তারা হাসপাতাল তৈরির বিষয়ে উদ্যোগ নিতে চান, যা একদম প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনায় রয়েছে।
কিংবদন্তির হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে উৎসবমুখর পরিবেশে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণের চেতনা চত্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হসপিটাল চ্যানেল আই ‘হুমায়ূন মেলা ২০২৩’। বিকাল ৩টা নাগাদ বেলুন ওড়ানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান।
উক্ত আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড ও চ্যানেল আই-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, ইমপ্রেস গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, প্রকৃতিবন্ধু ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মুকিত মজুমদার বাবু, কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ, লেখক মোহিত কামাল, অন্যপ্রকাশের কর্ণধার মাজহারুল ইসলাম সহ হুমায়ূন আহমেদের বন্ধু, স্বজনসহ বহু গুণীজন।
উক্ত আয়োজনে প্রকৃতিবন্ধু মুকিত মজুমদার বাবু তার বক্তব্যে বলেন, 'হুমায়ূন আহমেদ এমন একজন শিল্পী যাকে আমরা তার সৃষ্টিকৃত শিল্পের জন্য কখনোই ভুলতে পারবো না। সবাই তাকে তাঁর শিল্প-সাহিত্যের জন্য জেনে থাকলেও তিনি কিন্তু একজন প্রকৃতি প্রেমিকও ছিলেন। প্রকৃতির প্রতি তাঁর যে ভালবাসা ছিল সেটি নুহাশপল্লীতেই দৃশ্যমান। কেননা সেখানে তিনি নানান ধরনের ওষুধী গাছ রোপন করেছিলেন। এই প্রকৃতিপ্রেমী, সাহিত্যপ্রেমী, নির্মাণের জাদুকরকে আমরা সর্বদা স্মরণ করবো তাঁর সৃষ্টির মধ্য দিয়ে।'
মেলা প্রাঙ্গণে হলুদ পাঞ্জাবী আর নীল শাড়ি পরে উপস্থিত ছিলেন অসংখ্য হিমু ও রূপা। জন্মদিন উপলক্ষে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে স্থাপিত বিশেষ উন্মুক্ত মঞ্চে চলেছে হুমায়ূন আহমেদের লেখা গান ও গানের তালে নাচ।
এ ছাড়া, হুমায়ূন আহমেদের স্মরণে গতকাল দেশ-বিদেশের নানা জায়গায় ও বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ছিল নানা আয়োজন।
Leave a Reply
Your identity will not be published.