ভালোবাসার বসন্তদিনে...

ভালোবাসার বসন্তদিনে...

বসন্ত এসে গেছে। এসেছে ভালোবাসা দিবসও। কোকিলের কুহুতান শোনা যাচ্ছে ক’দিন ধরেই। গাছে গাছে শুকনো পাতা ঝরে নতুন কুঁড়িও উঁকি দিতে শুরু করেছে। জানান দিচ্ছিল, বসন্ত আসছে। আর আজ বর্ষপঞ্জির পাতাও উল্টে গেল। শীতের জীর্ণতা-শুষ্কতার পর প্রকৃতিকে নতুন রূপে সাজাতে এসেছে ফাগুন। 

বাংলা বর্ষপঞ্জির পয়লা ফাল্গুন আর খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ এক সুতোয় মিলেছে কয়েক বছর ধরে। বসন্তবরণের দিনে ভালোবাসা। এক দিনে দুই উৎসবে মেতে ওঠে উৎসবপ্রিয় বাঙালি। বেশবাসে সদ্য জেগে ওঠা প্রকৃতির ছোঁয়া নিয়ে ফাগুনের প্রথম দিনটিকে স্বাগত জানাতে বেরিয়ে পরা। লাল আর বাসন্তী রঙে প্রকৃতির সঙ্গে নিজেদের সাজিয়ে আজ বসন্ত ও ভালোবাসার উচ্ছলতা এবং উন্মাদনায় ভাসছে বাঙালি।

যুগলদের বেশ ব্যস্ততায় কাটে দুই উৎসবের এই দিন। মোড়ে মোড়ে অস্থায়ী ফুলের দোকানে দিনভর বিক্রি হয় গোলাপ, গাঁদাসহ নানা ধরনের রঙিন ফুল। তরুণ-তরুণীরা বিভিন্ন রঙে রাঙিয়ে তোলে রাজধানীর রাজপথ, বইমেলা প্রাঙ্গণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বর, পুরান ঢাকার পুরো নগরী, চারুকলার পেছনের সবুজ প্রাঙ্গণ ফুলে ফুলে বর্ণিল, উচ্ছল-উজ্জ্বল হয়ে ওঠে ভালোবাসা ও ফাল্গুন উদযাপনে।

বসন্তবরণ উৎসব যেমন সবার, তেমনি ভালোবাসার বহুমাত্রিক রূপও কিন্তু প্রকাশ করার দিন আজ। এ ভালোবাসা সন্তানের উপর বাবা-মায়ের, বাবা-মায়ের উপর সন্তানের। ভাই, বোন, বন্ধু- সবার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের দিন আজ। সবাইকে মনে করিয়ে দেওয়ার দিন জীবনে তাদের গুরুত্বের কথা। 

বসন্তবরণে কোথায় কী আয়োজন

প্রতি বছরের মতো এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় হচ্ছে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ আয়োজিত ‘বসন্ত উৎসব।’ ২৬ বছর আগে বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন করার রীতি চালু হয়। সেই থেকে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ বসন্ত উৎসব আয়োজন করে আসছে। এ বছরের বসন্ত উৎসবের অনুষ্ঠানমালায় কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। বসন্তের নাচ, গান ও কবিতার পাশাপাশি প্রতিবাদী নাচ, গান ও আবৃত্তিরও আয়োজন করেছে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ। সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে যন্ত্রসংগীতে মধ্য দিয়ে সূচনা হয় উৎসবের।

নৃত্য ও সংগীতের দল, বরেণ্য শিল্পী, শিশু-কিশোরদের পরিবেশনা ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির পরিবেশনা ছাড়াও বসন্তকথন পর্ব, প্রীতি বন্ধনী বিনিময়, আবির বিনিময় থাকবে আয়োজনে। সকালের পর্বের অনুষ্ঠান শেষ হবে ১০টায় আনন্দ শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে। শোভাযাত্রাটি চারুকলা থেকে বের হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ঘুরে আবার চারুকলায় ফিরে আসে। এরপর বিকাল ৩টা ৩০ মিনিটে বেঙ্গল পরম্পরার যন্ত্রসংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু পরের পর্বের আয়োজন। এখানেও গান, নাচসহ নানা পরিবেশনায় অংশ নেয় শিল্পীরা।

শিল্পকলা একাডেমির বসন্ত উৎসবের আয়োজনটি শুরু হয় বিকাল ৩টায়। রমনা পার্কের শতায়ু অঙ্গণে এই আয়োজনে আলোচনা সভা ও নৃত্য পরিবেশনা ছে। পরে একটি শোভাযাত্রা নিয়ে শিল্পীরা যাবেন শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। একাডেমির নন্দন মঞ্চে পরে সাংস্কৃতিক পর্ব অনুষ্ঠিত হবে।

পরীবাগে সংস্কৃতি বিকাশকেন্দ্রে রয়েছে বসন্তবরণের আয়োজন, যা শুরু হয় বিকাল ৩টায়। ছায়ানটের বসন্তের অনুষ্ঠান হবে শুক্রবার। সেদিন ছায়ানট মিলনায়তনে সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে অনুষ্ঠান শুরু হবে। অনুষ্ঠানে একক ও সম্মেলক গান, পাঠ-আবৃত্তি এবং নৃত্য পরিবেশিত হবে। সন্ধ্যায় মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হবে নাটক ‘লাভ লেটার্স’।

Leave a Reply

Your identity will not be published.