কেনাকাটার ই-দুনিয়া

কেনাকাটার ই-দুনিয়া

এই তো কিছুদিন আগের কথা। গ্রিক দেবতা অ্যাপোলোর এক বিশাল মূর্তি উদ্ধার হলো এক অনলাইন শপিং সাইটের মাধ্যমে। বছরখানিক আগেই প্রায় ৫০০ কেজি ওজনের এক অ্যাপোলোর মূর্তি পাওয়া গেল গাজায়। এমন একটা প্রাপ্তিতে যখন ভীষণ আনন্দিত হয়ে উঠেছিল তাবৎ বিশ্বের প্রত্নতত্ত্ববিদেরা ঠিক তখনই যেন ঘটে গেল বিনা মেঘে বজ্রপাত। সবার নজরদারির মধ্য থেকেই কেমন করে যেন উধাও হয়ে গেল মূর্তিটি। এরও বেশ কিছুদিন পরে গিয়ে একটি অনলাইন সাইটে পাওয়া গেল মূর্তিটির বিজ্ঞাপন। মূল্য ৩ কোটি  ১১ লাখ টাকা। এই বিজ্ঞাপনের সূত্র ধরেই শেষপর্যন্ত উদ্ধার হয় মূর্তিটি। ধারণা অনুযায়ী খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম থেকে প্রথম শতকের মধ্যে কোনো এক সময়ে তৈরি মূর্তিটি পেয়ে তো ভীষণ উচ্ছ্বসিত প্রত্নতত্ত্ববিদেরা।

আবার কিছুদিন আগেই পড়লাম মল সংস্কৃতির পথিকৃৎ আমেরিকার বেশিরভাগ শপিংমলেই নাকি জমেছে ধূলির আস্তর। বহু শপিংমল বন্ধ হয়ে গেছে অনলাইন শপের দৌরাত্মে। হয়তো ভাবছেন আদার ব্যাপারী হয়ে জাহাজের খবর নিয়ে কী লাভ? এসব শুধু ইউরোপ-আমেরিকার উন্নত দেশগুলোতেই সম্ভব। আমাদের মতো গরিব দেশের ক্ষেত্রে এ যে স্বপ্নের অতীত! কিছুদিন আগে পর্যন্ত হয়তো ব্যাপারটি সেরকমই ছিল। কিন্তু উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশেও ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে অনলাইন শপগুলো। আজকের ব্যস্ত জীবনযাত্রায় সময় বাঁচিয়ে ঝামেলাহীন শপিংয়ের জন্য অনেকেই ঝুঁকছেন অনলাইন শপিং সাইটগুলোর দিকেই। অনলাইন শপিংয়ের নানা দিক নিয়ে লিখেছেন জোবায়দা লাবণী। আলোকচিত্র: ফজলে এলাহী ইমন।

কেন অনলাইন শপিং

প্রতিটি উৎসব পার্বণেই পরিবারের সবার কেনাকাটার দায়িত্বটা পালন করতে হয় সুবর্ণাকেই। এইতো গত ঈদের আগে পুরোটা সপ্তাহ এ মার্কেট ও মার্কেটে ঘুরে তাকে শপিং করেই কাটাতে হলো। শেষে এমন জ্বর বাধল যে ঈদের দিনটা বিছানায় শুয়েই কাটাতে হলো। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শুভর ব্যাপারটা তো আরও দুঃখজনক। অনেক দিনের শখ তার একটা এনড্রয়েড মোবাইল সেটের। বাবার কাছ থেকে আদায় করা আর টিউশনির টাকা জমিয়ে বহু কষ্টে টাকাটা জোগাড় করে বন্ধুদের নিয়ে সোজা গেল মার্কেটে। এ দোকান ও দোকান ঘুরে অবশেষে জুতসই একটা সেট পছন্দ হলো। কিন্তু পকেটে হাত ঢুকাতেই যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত। মানিব্যাগটাই উধাও। এদিকে একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কর্মরত সায়মার কাছে শপিংটা রীতিমতো রিমান্ডের শামিল। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই কিছু না কিছু কেনাকাটা থাকেই। আর কেনাকাটা মানেই তো শপিংমলে গেলাম আর জিনিস পছন্দ করে টাকাটা পে করে চলে এলাম এমনটা নয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে বসে থেকে ভিড় ঠেলে পছন্দের জিনিসটা শেষপর্যন্ত কিনে বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। সব মিলিয়ে ছুটির দিনটা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হইহুল্লোড় করে কাটাবে কিংবা একান্তই বিশ্রামে কাটানোর পরিবর্তে এইসব ঝক্কি করে কাটাতে কাহাতক আর ভালো লাগে?

কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তি আমাদের ঝামেলা থেকে দিয়েছে মুক্তি। ঘুচিয়ে দিয়েছে রূপকথা আর বাস্তবের দূরত্ব। মাউসের এক ক্লিকেই প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে আপনার আঙিনায়। এমনই সুবিধাদি নিয়ে আপনারই অপেক্ষায় রয়েছে অনলাইন স্টোরগুলো। সুবিধামতো সময়ে এসব ওয়েবসাইটে ঢুকে পণ্য পছন্দ করে অর্ডার করুন। পণ্য পৌঁছে যাবে আপনার দোরগোড়ায়। সময় বাঁচিয়ে ঘরে বসেই নিরিবিলি শপিং করতে এখন শহরের বেশিরভাগ মানুষই ঝুঁকছে অনলাইন শপিংয়ের দিকে। আর যেহেতু অনলাইনে যারা পণ্য বিক্রয় করেন তাদের দোকান ভাড়াসহ আরও অনেক খরচ বেঁচে যায় সে কারণে তারা তাদের পণ্য তুলনামূলকভাবেই কম দামেই বিক্রি করতে পারে। সেক্ষেত্রে এখান থেকে তুলনামূলকভাবে কম দামেই যাবে পণ্য ক্রয় করা।

কোন ধরনের পণ্য যাবে কেনা

প্রশ্নটি বরং উল্টো হলে উত্তরটা সহজ হয়। ফুড থেকে ফ্ল্যাট সবই মিলবে অনলাইন স্টোরে। পোশাক, প্রসাধনী, এক্সেসরিজ, প্রযুক্তি পণ্য, শখের পশু-পাখি, গৃহসজ্জার জিনিসপত্র, উপহার সামগ্রী, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র থেকে শুরু করে জমি কিংবা ফ্ল্যাট কিনতে পারবেন এসব অনলাইন শপ থেকে।

চাল, ডাল, সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিস; গ্রোসারি; স্টেশনারি; বেবি প্রোডাক্ট প্রভৃতি পণ্য কিনতে পারেন chaldal.com থেকে। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পোশাক, বেবি প্রোডাক্ট, কসমেটিকস, খাবার, ফোন, ট্যাবলেট, পেনড্রাইভ, কম্পিউটার সামগ্রীর এক বিশাল সম্ভার রয়েছে dreamshopbd.com-এ। মিনা বাজার (meenabazar.com.bd) আগোরা (agorabd.com) প্রভৃতি সুপার শপগুলোতেও পাবেন হোম ডেলিভারি সুবিধা। ফ্যাশনেবল মেনজ শার্ট, পাঞ্জাবি, ঘড়ি, সানগ্লাস, চামড়ার মানিব্যাগ, বেল্ট, শিশুদের পোশাক ছাড়াও প্রিয় দলের জার্সি প্রভৃতি কিনতে iferi.com-এ ঢুঁ মারতে পারেন। ঘরে বসেই প্রিয় বই পেতে ব্রাউজ করুন rokomari.com, boi-mela.com, booksbd.com, deshiboi.com প্রভৃতি সাইট। এ ছাড়াও আগামী  প্রকাশনী (agameeprokashani-bd.com), বিদ্যাপ্রকাশ (biddyaprokash.com), সময় প্রকাশনী (somoy.com), অন্যপ্রকাশ (e-anyprokash.com)-সহ স্বনামধন্য সব প্রকাশনীর নিজস্ব ওয়েবসাইটে গিয়েও ঘরে বসেই কিনতে পারেন তাদের প্রকাশনীর বই। আপনার যদি বিশেষ কোনো ব্র্যান্ডপ্রীতি থাকে তাহলেও কোনো সমস্যা নেই। bangladeshbrands.com ব্রাউজ করেই পেতে পারেন রঙ, এক্সট্যাসি, সাদা-কালো, মেনজ ক্লাব, প্রবর্তনা, নগরদোলাসহ ৪০টির ওপরে বাংলাদেশি ব্রান্ডের পোশাক। আরও পাবেন দেশি বই, ইলেক্ট্রনিক্স ও কম্পিউটার পণ্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় নানা পণ্য।

এ ছাড়া দেশ ট্রাভেলস, ন্যাশনাল ট্রাভেলস, শ্যামলী পরিবহনসহ বিভিন্ন রুটের বাসের টিকিট কিনতে পারেন busbd.com। ঈদের অগ্রিম টিকিটও পাওয়া যাবে এই সাইটে। শুধুমাত্র কৃষিপণ্য কিনতে ব্রাউজ করুন  krishimarket.com-এ। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মেডিকেল বই ছাড়াও মেডিকেল ইন্সট্রুমেন্ট, মেডিকেল বোনস সেট, ড্রেস, মেডিকেল স্টাডি রিলেটেড সফটওয়্যার, লেকচার শিট প্রভৃতি কিনতে পারেন humanbonesbd থেকে।

এ ছাড়াও এখন আড়ং, রঙ, লা রিভ, কে-ক্রাফট, বাটা, বে, এপেক্সসহ নামিদামি বেশির ভাগ পোশাক এবং এক্সেসরিজ  ব্র্যান্ডেরই রয়েছে নিজস্ব ওয়েবসাইট ও ফেইসবুক ফ্যানপেজ। এসব থেকেও কিনতে পারেন পছন্দের পোশাক। শুধু মাছ কিনতে ব্রাউজ করতে পারেন ভরংয.পড়স-এ। এসব ওয়েব সাইটের বাইরে অনলাইন শপিংয়ের ক্ষেত্রে সমানতালেই এগিয়ে চলেছে ফেসবুক পেজ। ফেসবুকে পেজ তৈরির মাধ্যমে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা নানা ধরনের দেশি-বিদেশি পণ্য বিক্রি করছে। এমনকি দেশীয় বাজারে সহজলভ্য নয় এমন অনেক পণ্যও এখন সহজেই পেতে পারেন এসব পেইজের মাধ্যমে। ফেসবুক ভিত্তিক এসব পেজগুলোর বেশির ভাগই জনপ্রিয় পোশাক, জুয়েলারি, কসমেটিকস আর এক্সেসরিজের জন্য। পাশাপাশি নানা ধরনের ইলেক্ট্রনিক্স, প্রযুক্তিপণ্য, গিফট আইটেমও পাবেন এসব পেইজে। ফেইসবুকে জনপ্রিয়  তেমনিই কিছু পেইজ : sparklingpinies, etcetr, dazzling.haze, arobsiz, elomelo.bd, Accessories.Dreams, tukitakishoping, sparkling-corner, labonnyokutir.com, butterflybyshagufta, bdhijibji, aungona, fashion. world.dhaka.bd, Gutipoka.com, latifa.com, viperleather, styleworld.com, gorgeous & glamorous, kaymu.com.bd, fashionrevel, jhijipoka.com প্রভৃতি সাইট বেশ জনপ্রিয়। এর বাইরেও ফেইসবুক ওপেন করলেই অনলাইন শপিংয়ের নানা সাইটের অ্যাড্রেস সাজেশন করবে আপনাকে। এগুলো থেকেও সহজেই কিনতে পারেন পছন্দের পণ্য। তবে এসব পেইজ থেকে কেনাকাটা করার আগে সুযোগ থাকলে পেইজের সুনাম বা স্বত্বাধিকারী সম্পর্কে ধারণা নিয়ে নিন। তাহলে ঠকার সম্ভাবনা থাকে না।

 

অনলাইন শপিংয়ে স্বাগতম

এ দোকান ও দোকান ঘুরে, হাজারটা পণ্য যাচাই করে কেনাকাটা না করলে যাদের শপিংয়ে মন ভরে না তাদের কাছে অবশ্য অনলাইন শপিংটা আকর্ষণীয় কিছু নয় মোটেও। আবার অনেকের কাছেই এইসব ইন্টারনেট, ওয়েবসাইট, অনলাইন পেমেন্ট বেশ খটমট বিষয়ই। তার চেয়ে মার্কেটে যাও, জিনিসপত্র পছন্দ করো, দাম চুকিয়ে কিনে নিয়ে এসো সেই তো বেশ। কিন্তু দীর্ঘ যানজট আর মানুষের ভিড়ে যখন নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় তখন মনে হয় ইস! ঘরে বসেই যদি সেরে ফেলা যেত সাধের শপিং তাহলে কত ভালোই না হতো! আর তখনই উপলব্ধি হয় অনলাইন শপিংয়ের প্রয়োজনীয়তা। মনে হয় কী দরকার এত ঝক্কি পোহাবার। তার চেয়ে এই ভালো এসির বাতাস খেতে খেতে অর্ডার করা আর নিশ্চিন্ত মনে পণ্যটি বুঝে নেওয়া। শুধু কি দেশি পণ্য! চাইলে দেশের বাইরের নামিদামি ব্র্যান্ডের অনেক পণ্যও কিনতে পারবেন মাউসের এক ক্লিকেই।

এতসব সহজ সুবিধা সমৃদ্ধ নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে আপনারই অপেক্ষায় রয়েছে বিভিন্ন অনলাইন শপ। নিজের প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে ঢুঁ মেরে আসতে পারেন সেসব শপ থেকে। সেক্ষেত্রে অনলাইনে বেশ কিছু বিশেষায়িত ওয়েবসাইট আছে। সেসব ওয়েব সাইটে বিশেষ পণ্যগুলোই পাবেন। আবার কোনো কোনো ওয়েবসাইটে সব ধরনের পণ্যই পাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে অবশ্য আলাদা ক্যাটাগরি করা থাকে। আপনার প্রয়োজনের ধরন অনুযায়ীই যে-কোনো ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন। প্রয়োজনে যে অনলাইন স্টোর থেকে শপিং করার জন্য মনস্থির করেছেন সে সম্পর্কে আগেই একটু খোঁজখবর নিয়ে নিন। নিতে পারেন এ বিষয়ে ভালো জানা পরিচিতজনদের পরামর্শ। প্রয়োজনে টার্মস এন্ড কন্ডিশন, কাস্টমার রিভিউ, কমেন্ট প্রভৃতি দেখে নিন।

একই পণ্য বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে কেনার সুযোগ থাকে অনেক ক্ষেত্রে। সেক্ষেত্রে সময়সহ অন্যান্য সুবিধাদি যাচাই করে তবেই সিদ্ধান্ত নিন আপনি কোন স্টোর থেকে কিনবেন। কোনো পণ্য সম্পর্কে দ্বিধা বা কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে ম্যাসেজ অথবা কল করে ভালো করে জেনে নিন। এরপরই অর্ডার করুন পছন্দের পণ্যটি কিনতে। প্রতিটি ওয়েবসাইটের নিজস্ব সিস্টেম থাকে পণ্য অর্ডার করার। কোনোটিতে ম্যাসেজের মাধ্যমে অর্ডার করতে হয়। আবার কোনোটিতে ফোনের মাধ্যমে। নির্দেশনা পড়ে সেভাবে অর্ডার করুন। অনলাইন পণ্য কেনার ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখা জরুরি।

অনেক সময়ই একই পণ্য ভিন্ন ভিন্ন স্টোরে পাওয়া যায়। স্টোরে ভেদে দামটাও অনেক বেশি ওঠানামা করে। সে কারণেই কোনো পণ্য পছন্দ হলে সঙ্গে সঙ্গেই অর্ডার করবেন না। লিংকটি সেভ করে রাখুন। অন্যান্য সাইটগুলো ঘুরে দামটা যাচাই করে অর্ডার করুন।

যে পেজ থেকে পণ্য কেনার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন সে পেজ সম্পর্কে ধারণা পেতে অন্যান্য ক্রেতাদের কমেন্টসগুলোও পড়ুন। তাহলে সার্ভিস সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যাবে।

পরিচিতদের মধ্যে কেউ যদি সাইটগুলো সম্পর্কে অভিজ্ঞ হয় কিংবা অনলাইন স্টোর থেকে কেনাকাটা অনেক বেশি করা হয় তাহলে তার কাছ থেকেও ধারণা নিতে পারেন। এতে করে ঠকার সম্ভাবনা কম থাকে। যাচাইয়ের কাজটা নিজের পক্ষে করাটা ঝামেলার মনে হলে লিঙ্কটি অভিজ্ঞ বন্ধুদের কাউকে দিতে পারেন। যাচাইয়ের কাজটা সে-ই হয়তো করে দিতে পারবে। গুণগত মান কিংবা দাম সম্পর্কে সে-ই আপনাকে ধারণা দিতে পারবে।

ত্রুটিপূর্ণ পণ্য ফেরত দেওয়া যাবে কি না সে বিষয়ে আগেই নিশ্চিত হয়ে তবেই অর্ডার করুন।

ক্যাশ অন ডেলিভারির ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ই অতিরিক্ত চার্জ দিতে হয়। আবার অনেক সময় একাধিক পণ্য কিংবা একটি নির্দিষ্ট অ্যামাউন্টের ওপর কেনাকাটা করলেও ফ্রি হোম ডেলিভারির সিস্টেম থাকে। সেক্ষেত্রে একাধিক সাইট থেকে পণ্য না কিনে একই সাইট থেকে কেনার চেষ্টা করবেন।

পণ্যটি হাতে পেয়ে তবেই মূল্য পরিশোধ করুন। তবে মূল্যটা আগেই পরিশোধের সিস্টেম থাকলে সেক্ষেত্রে সাইটটি খুব বিশ্বস্ত না হলে সেখান থেকে না কেনাই ভালো।

অনলাইনে অর্ডারকৃত পণ্যটি এসে পৌঁছালে ভালোভাবে যাচাই করে নিন আপনার অর্ডারকৃত পণটি ঠিক আছে কিনা? আপনি যেটা অর্ডার  করেছিলেন সেটাই এসেছে কি না কিংবা কোনোরকম কোনো ত্রুটি আছে কি না?

কাজ শেষে নেট কানেকশন বিশেষ করে ওয়াই-ফাই কানেকশন হলে সেটা বন্ধ রাখুন। নয়তো ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্যাদি বা অন্যান্য পাসওয়ার্ড হ্যাক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

কিছু কিছু সাইট থেকে পণ্য নিতে হলে শুরুতেই সাইটটিতে রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজন হয়। সাইট ওপেন করলেই দেখাবে সাইন আপ অপশনটি। ইমেইল, ফোন নং প্রভৃতি দরকারি তথ্য সন্নিবেশিত করে ফ্রি রেজিস্ট্রেশন করুন। এরপর সেখান থেকে পছন্দের পণ্য কেনার পাশাপাশি তাদের নতুন কোনো অফার বা ডিসকাউন্টের আপডেটগুলোও নিয়মিত পেতে পারেন।

ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করলে ভাউচারটির প্রিন্ট আউট নিয়ে রাখবেন অবশ্যই।

 

চমকে দিন প্রিয়জনকে

উপহার ছাড়া বিশেষ দিন ভাবা যায়! বিশেষ দিন মানেই বিশেষ উপহার। তা সে ঈদ, পুজো, বড়দিন, নববর্ষই হোক আর প্রিয়বন্ধুর জন্মদিন কিংবা ভ্যালেন্টাইন ডে বা পছন্দের মানুষটিকে প্রথম মনের কথা বলে ফেলার দিনই হোক। কিন্তু আজকের ব্যস্ত নাগরিক জীবনে স্মৃতি বড়ই প্রতারক। হয়তো দিব্যি ভুলে বসে আসেন প্রিয় বন্ধুর বিবাহবার্ষিকী কিংবা প্রিয় মানুষটির জন্মদিনের কথা। মোবাইল রিমাইন্ডার কিংবা ফেসবুক নোটিফিকশন কখন যে চোখ এড়িয়ে গেছে টেরই পান নি। যখন মনে পড়ল তখন হয়তো আর সুযোগ নেই উপহার কেনার। হা-পিত্যেশ করতে করতে নিজের মাথার চুল ছেড়া ছাড়া যখন আর কিছুই থাকে না করার তখনো ভরসা সেই অনলাইন শপ। প্রচলিত চকলেট, কেক, প্রিয় ফুল, পোশাক থেকে শুরু করে ব্যতিক্রমী ও আকর্ষণীয় সব উপহার সামগ্রী মিলবে বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইটে। আপনার প্রয়োজনের ধরন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই উপহার পৌঁছে যাবে আপনার দোড়গোড়ায়। চাইলে সরাসরি প্রাপকের ঠিকানায়। উপহার পছন্দ করে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করুন। আর প্রাপকের নাম-ঠিকানা-মোবাইল নম্বর দিয়ে মেসেজ অথবা মেইল করুন। শপ কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই পৌঁছে দেবে প্রাপকের ঠিকানায়।

আর বেশির ভাগ শপই ঢাকার মধ্যে পণ্য ডেলিভারির সার্ভিস দিয়ে থাকে ফ্রিতে। শুধু ঢাকার মধ্যেই নয় চাইলে দূর গ্রাম কিংবা দেশের বাইরে প্রিয় মানুষটিকেও চমকে দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে অবশ্য আলাদা ডেলিভারি চার্জ দিতে হবে। কিন্তু তার পরিমাণটাও খুব বেশি নয়। bdgift.com, upoharbd.com, myferiwala.com, giftwithlove.com, gift2.haat.com প্রভৃতি ওয়েবসাইটে ঢুকে খুব সহজেই নিতে পারবেন এসব সেবা।

 

শুধু ক্রয় নয় বিক্রয়ও

ই-কমার্স সাইটগুলোর চেয়েও বর্তমানে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ক্ল্যাসিফাইয়েড সাইটগুলো। এ সাইটগুলোতে পণ্য ক্রয়ের সুবিধার পাশাপাশি বিক্রয় করার সুবিধাটাও থাকে। শুধু নতুন পণ্যই নয় এখানে পুরাতন পণ্যও বেচাকেনার সুবিধা পাওয়া যায়। অনেকে নিজের ঘরটিকে নতুনভাবে সাজাতে পুরাতন আসবাব বিক্রি করে আবার একই সাইট থেকেই হয়তো কিনে নিচ্ছেন পছন্দসই নতুন আসবাব। তবে এই সাইটগুলোতে তরুণদের আনাগোনাটাই বেশি। পুরাতন মোবাইল। কম্পিউটার কিংবা বাইক বিক্রি করে খোঁজ করছে লেটেস্ট মডেলের জিনিসের। এক্ষেত্রে নারীরাও অবশ্য কম যান না। শাড়ি, গয়না, ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য কিনতে হরহামেশাই ঢুঁ মারছে এই সাইটগুলোতে।

সাইটগুলোতে এই পণ্য বেচাকেনা দেশের যে-কোনো প্রান্তে বসেই করা যাচ্ছে। সাইটগুলোর একটি বড় সুবিধা হচ্ছে, পণ্যগুলো  আলাদা ক্যাটাগরিতে সাজানোর পাশাপাশি এলাকা ভেদেও আপনি সার্চ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে পণ্যটি আপনার কাছাকাছি হলে সুবিধামতো সময়ে সরাসরি পরখ করেও কিনতে পারেন। পণ্য খুঁজতে পারেন মূল্য অনুযায়ীও। সব মিলিয়েই খুব সহজেই আপনার বাজেটে অনুযায়ী পণ্য খুঁজে নিতে পারবেন এসব সাইট থেকে।

আর পণ্য বিক্রয় করতে পারবেন একেবারে ঝামেলাবিহীনভাবে। সে জন্য শুরুতেই এসব সাইটে আপনার অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। সেখানেই সন্নিবেশিত থাকবে আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য। এরপর পণ্যটির ছবি আপলোড করুন বর্ণনাসহ। ছবি ছাড়াও বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে তবে সেক্ষেত্রে ক্রেতারা আকৃষ্ট কম হবেন। ক্রেতা আকর্ষণ কিংবা পণ্যটি সম্পর্কে ক্রেতাদের একটি সাধারণ ধারণা দেওয়ার জন্য ছবিটা জরুরি। এরপর পণ্যটির বর্ণনা সন্নিবেশিত করুন। পণ্যটির বিশেষ দিকগুলো বর্ণনায় যুক্ত করুন। মনে রাখবেন বর্ণনাটা যতটা আকর্ষণীয় হবে পণ্যটি বিক্রয় করা ততখানি সহজতর হবে। তবে কখনই ভুল কোনো তথ্য দিবেন না। বিজ্ঞাপনের সঙ্গে মূল্যটিও যুক্ত করুন তাতে অযথা ফোন থেকে বেঁচে যাবেন আর ক্রেতাদেরও পছন্দ করতে সহজ হবে। পণ্যটির দর কষাকষির সুযোগ থাকলে সেটাও উল্লেখ করুন। এভাবে ঘরে বসেই অতি সহজেই বিক্রি করতে পারবেন আপনার নতুন-পুরাতন নানা জিনিস। আর এসব সুবিধা গ্রহণ করতে ঢুঁ মারতে পারেন বিক্রয় ডটকম, ওএলএক্স, এখনই ডটকম, ক্লিক বিডি, লামুডি ডটকম, কারমুডি ডটকম প্রভৃতি ওয়েবসাইটগুলোতে। আর অতি সহজেই সারতে পারেন আপনার অতি প্রয়োজনীয় ক্রয়-বিক্রয়।

অনলাইন কেনাকাটার বিশ্বচিত্র 

সারাবিশ্বেই বর্তমানে অনলাইন কেনাকাটার হার দিনদিন বেড়েই চলেছে। ‘পেপাল’-এর গবেষণা অনুযায়ী এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে ব্রিটেন। ব্রিটেনের প্রায় নব্বইভাগ জনগণই কেনাকাটার জন্য অনলাইন শপের ওপর নির্ভরশীল। এই হার গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ষোলভাগ। এরপরেই যুক্তরাষ্ট্র ৮৬ ভাগ আর জার্মানি ৮৪ ভাগ। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইতালির অবস্থানও কাছাকাছি। অনলাইন কেনাকাটায় এশিয়াও পিছিয়ে নেই মোটেও। তথ্যপ্রযুক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফরেস্টার রিসার্চ ইনকরপোরেশন ২০১৩ সালে প্রকাশিত ‘এশিয়া প্যাসিফিক অনলাইন রিটেইল ফোরকাস্ট ২০১৩ টু ২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনের ভাষ্য অনুযায়ী ২০১৩ সালে চীন, দ. কোরিয়া, জাপান, ভারত, অস্ট্রেলিয়াসহ ছয় দেশের সম্মিলিত এ বাজার ছিল ৩৯৮ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮ সালে যা দাঁড়াবে ৮৫৮ বিলিয়ন ডলারে। আর চীনের অনলাইন বাণিজ্য ছিল ২৯৪ বিলিয়ন ডলার জাপানের ৫৯ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮তে তা হতে পারে যথাক্রমে ৬৭২ আর ৯৬ বিলিয়ন ডলার। আর দ্য অ্যাসোসিয়েটেড চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অব ইন্ডিয়া’র (অ্যাসোচ্যাম) তাদের ‘ই-কমার্স ইন ইন্ডিয়া’ শীর্ষক সমীক্ষা অনুযায়ী ২০১৩ সালে ভারতেই অনলাইন বাজারের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৬০০ কোটি ডলার যা ২০০৯ সালের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি।

বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, মূলত তথ্যপ্রযুক্তির সহজলভ্যতা আর ব্যস্ত নাগরিক জীবনে সময়ের অপচয় রোধ করার মানসিকতাই অনলাইন শপিংকে এত বেশি জনপ্রিয় করে তুলেছে। এ ছাড়া শপিংমলগুলোতে দিন দিন বাড়তে থাকা নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ও শপিংমলগুলো থেকে ক্রেতাদের মুখ ফেরানোর একটা বড় কারণ।

প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ

বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেছে অনলাইন শপিং। যদিও উন্নত বিশ্বের তুলনায় পরিমাণ খুব সামান্যই।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিস (বেসিস) এর মতে ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৩ সালে ই-কমার্স বেড়েছে ১৫০ শতাংশ। ২০১৪ সালে এসেও এ ধারা অব্যাহত।

তবে ধীরে ধীরে বিকশিত হওয়া এ শপিং কালচারে এখনো কিছু ফাঁকফোকর রয়ে গেছে। যে কারণে কখনো কখনোও ক্রেতারা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বৈকি। অনেক সময় একই পণ্য বিভিন্ন সাইটে বিভিন্ন দাম, ছবিতে পণ্য একরকম দেখা গেলেই হয়তো বাস্তবে অন্যরকম, ডেলিভারির সময় না মানা প্রভৃতি সমস্যায় হয়তো ক্রেতাদের পড়তে হচ্ছে। তবে এর পরিমাণ খুবই নগণ্য। তবে এ বিষয়ে বিক্রেতাদের আরও বেশি সততা ও সচেতন হতে হবে। এ ছাড়াও অনেক ক্ষেত্রেই অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয়ের লেনদেন হয় ব্যাংকের মাধ্যমে। এ বাবদ ব্যাংক প্রতি লেনদেনে যে পরিমাণ ফি কাটছে তা উন্নত বিশ্বের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। এর ফলে পণ্যের ক্রয়মূল্যও বেড়ে যাচ্ছে। আর অনলাইনে শপিংয়ের সবচেয়ে বড় অন্তরায় ইন্টারনেট সহজলভ্য না হওয়া। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সংখ্যা এখন পর্যন্ত শহরগুলোতেই সীমাবদ্ধ। আরও নির্দিষ্ট বললে ঢাকা কেন্দ্রিক। ইন্টারনেট যত সহজলভ্য হবে অনলাইন শপিংও ততটাই দ্রুত প্রসার লাভ করবে। সব মিলিয়েই অনলাইন শপিংয়ের এই ধারা অব্যাহত থাকলে সেই সময়টা খুব দীর্ঘতর হবে না যেদিন বাংলাদেশও ই-কমার্সে উন্নত বিশ্বের সমপর্যায়ে পৌঁছে যাবে।

Leave a Reply

Your identity will not be published.