বিশ্বব্যাপী পুস্তক প্রকাশনা পেশায় যুক্ত নারীদের প্লাটফর্ম পাবলিশহার প্রবর্তিত পাবলিশহার এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ডে’র সেরা ‘ইমার্জিং লিডার’ নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশের প্রকাশক মিতিয়া ওসমান। তিনি আগামী প্রকাশনীর নির্বাহী পরিচালক।
৮ এপ্রিল ইতালির বোলোনিয়ায় মিতিয়ার হাতে পুরস্কার তুলে দেন পাবলিশহারের প্রতিষ্ঠাতা, ইন্টারন্যাশনাল পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট বদুর আল কাসিমি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বোলোনিয়া চিলড্রেন’স বুক ফেয়ারের পরিচালক এলেনা পাসোলি।
অনন্য নেতৃত্ব, সুদূরপ্রসারী চিন্তা ও ইতিবাচক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখার সক্ষমতার বিবেচনায় সারা বিশ্বের প্রকাশনা জগতের উদীয়মান তারকাদের মধ্য থেকে সর্বসম্মতিক্রমে মিতিয়াকে বেছে নেন নির্বাচকরা। ইতালির বোলোনিয়ায় আন্তর্জাতিক শিশুতোষ বইমেলার ৬১তম আসরে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনটি শাখায় পাবলিশহার কর্তৃক পাবলিশহার এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
ইমার্জিং লিডার শাখার বাছাইকৃত সংক্ষিপ্ত তালিকায় মিতিয়া ছাড়া আরো ছিলেন ব্রাজিলের ‘শি পাবলিশেস পডকাস্ট’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক ফেরনান্দা বালেজিনি ফেরেইরা এবং যুক্তরাজ্যের ‘দ্য ফ্লিপ’-এর সহপরিচালক ও ‘কলিন্স’-এর বিপণন নির্বাহী ক্যাসি রকস।
গত ১৭ মার্চ লন্ডন বইমেলায় ভিডিও বার্তার মাধ্যমে তিন শাখায় নয় জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করেন বদুর আল কাসিমি। এ পুরস্কারের জন্য বিশ্বের ৩০টি দেশ থেকে মোট ১১৩টি মনোনয়ন জমা পড়েছিল।
পাবলিশহার এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড-এর ‘লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট’ এবং ‘ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড’ শাখায় পুরস্কার জিতেছে যথাক্রমে জ্যামাইকার ‘কার্লং পাবলিশার্স’-এর চেয়ারপার্সন শার্লি ভন কারবি এবং জার্মানির ‘পালোমা পাবলিশিং’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রকাশনা পরিচালক অ্যান ফ্রাইবেল।
সারা বিশ্বে প্রকাশনা শিল্পের গভীরে প্রোথিত নারী-পুরুষ বৈষম্য কাটিয়ে ওঠাকে আন্তর্জাতিক এজেন্ডায় পরিণত করার লক্ষ্যে কাজ করছে নারী প্রকাশক ও প্রকাশনাকর্মীদের প্লাটফর্ম পাবলিশহার। প্রকাশনা শিল্পে নারীদের সাফল্য উদযাপন; বৈচিত্র্য, সমতা ও সকলের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা এবং পেশাগত উন্নয়নে সহায়তা করার লক্ষে এ বছর থেকে প্রবর্তন করা হয়েছে পাবলিশহার এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড।
পুরস্কার ও আরো কয়েকটি প্রসঙ্গে অন্যদিন-এর সঙ্গে কথা হয় মিতিয়া ওসমানের। এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আগে তো বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছি। সেটা আসলে ময়ূরপঙ্খি পেয়েছে, শিশুতোষ বই প্রকাশের জন্য। আর এই পুরস্কার আমরা তিনবার পেয়েছি। সংগত কারণেই এই বিষয়টির অনুভূতি অনেক ব্যাপক ছিল। আর এখন যে পুরস্কার পেয়েছি, এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড, এটা আসলে আমার ব্যক্তিগত পুরস্কার। বাংলাদেশের একজন উদীয়মান নারী প্রকাশক হিসেবে।’
ময়ূরপঙ্খিকে ঘিরে তাঁর আগামী দিনের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে মিতিয়া ওসমান বলেন, ‘ময়ূরপঙ্খিকে ঘিরে আমার একটা ইচ্ছে হলো, আমরা যখন বিভিন্ন দেশে যাই তখন দেখি সেখানে আন্তর্জাতিক মানের সব বই। ওই ধরনের বই আমরা আমাদের এখানে দিতে পারি না। মনে হয়, কোথাও যেন আমরা পিছিয়ে আছি। তো ওই সূত্রে আমার মনে ভাবনা জেগেছে, কীভাবে আমরা একটা আন্তর্জাতিক মানের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে পারি! কীভাবে আমাদের বইগুলো বিশ্ব দরবারে ভালোভাবে তুলে ধরতে পারি। আর ময়ূরপঙ্খি যে শুধু বাংলা বই প্রকাশ করে তা নয়, ইংরেজি বইও প্রকাশ করে। আমরা নতুন লেখকদের জায়গা করে দিতে চাই। এবং তা দিচ্ছিও। আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে, তাঁদের মাধ্যমে বাংলাদেশি গল্প বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা।’
Leave a Reply
Your identity will not be published.