রাজধানী ঢাকাকে নানা সময়ে আকর্ষনীয় করার প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। ফলে এখানে আকর্ষনীয় সব স্থানের কমতি নেই। কোন কোন স্থান আবার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের আলোয় আলোকিত। সংখ্যায় কম হলেও কোনো কোনো স্থান আবার সবুজের ছোঁয়া; প্রকৃতির অবারিত দানে সমৃদ্ধ। এইসব জায়গার উপর আলো ফেলা হল এখানে।
লালবাগ কেল্লা
বাংলায় মোগল শাসনের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে লাল্বাগ কেল্লা। এটি পুরোনো ঢাকায় অবস্থিত। ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায়- ১৬৬৩ খ্রিস্টাব্দে নবাব শায়েস্তা খান বাংলার সুবেদার নিযুক্ত হন। কিন্তু ১৬৬৭ খ্রিস্টাব্দে তাকে সম্রাট আওরঙ্গজেবের আদেশে দিল্লিতে চলে যেতে হয়। শায়েস্তা খানের জায়গায় সম্রাট আওরঙ্গজেব তার তৃতীয় পুত্র শাহজাদা আযম শাহকে বাংলার সুবেদার নিযুক্ত করেন। আযম শাহ এখানে সুবেদার হয়ে এসে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে সেনানিবাস ও রাজপ্রাসাদ-এ দু’য়ের সমন্বয়ে একটি জটিল নকশার অনুসরণে লালবাগ প্রাসাদ দূর্গের নির্মাণ কাজ শুরু করেন এবং পিতার নামে এর নাম রাখেন ‘আওরঙ্গবাদ দূর্গ’। এদিকে ১৬৮০ খ্রিস্টাব্দে নবাব শায়েস্তা খান আবার বাংলার সুবেদার হন এবং কেল্লার অসমাপ্ত নির্মাণ কাজ শেষ করেন।
১৭০৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলার শাসন কেন্দ্র মুর্শিদাবাদে স্থানান্তরিত হওয়ার ফলে দূর্গ হিসেবে লালবাগের গুরুত্ব কমে যায়। তারপর বারবার দূর্গটি ব্যবহৃত হয়েছে ইতিহাসের অপাচ্য অংশ হিসেবে। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারিতে লালবাগ কেল্লা সংরক্ষিত স্থাপত্য হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আওতাধীনে আসে।
আয়তাকার এই কেল্লার দৈর্ঘ্য ১০৮২ ফুট এবং প্রস্থ ৮০০ ফুট। আয়তন প্রায় ১৯ একর।
লালবাগ কেল্লায় বর্তমানে দেখবেন দরবারগৃহ, পরী বিবির মাজার, পুকুর, মাটির টিবি, মসজিদ, পানির লন, ফোয়ারা প্রভৃতি। লালবাগ কেল্লার গ্রীষ্মকালীন (এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর) সময়সূচি হল, সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। আর শীতকালীন (অক্টোবর থেকে মার্চ) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা। মাঝে দুপুর ১টা থেকে ৩০ মিনিটের বিরতি। শুক্রবারে মধ্যাহ্ন বিরতি থাকে সাড়ে ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত। রোববার পূর্নদিবস ও সোমবার অর্ধদিবস বন্ধ। ফোনঃ ৯৬৭৩০১৮। প্রবেশ মুল্যঃ ১০ টাকা।
কীভাবে যাবেন
পুরনো ঢাকার লালবাগে এটি অবস্থিত। ঢাকা শহরের যে কোন জায়গা থেকে এখানে যাওয়া যায়। সিএনজি, রিকশা -নানা বাহনে চড়েই আপনি যেতে পারেন। আর নিজস্ব গাড়ি হলেতো কথাই নেই।
আহসান মঞ্জিল
বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে নওয়াবদের বাসস্থান আহসান মঞ্জিল। মোগল আমলে জামাল্পুর পরগনার জমিদার শেখ এনায়েতউল্লাহ’র রংমহল ছিল এটি। তার ছেলে মতিউল্লাহর কাছ থেকে কিনে পরে ফরাসিরা এটিকে বাণিজ্য কুঠিতে রুপান্তরিত করে। ১৮৩০ সালে খাজা আলিমুল্লাহ ফরাসিদের কাছ থেকে এটি কিনে নেন। সবশেষে ১৮৭২ সাথে নবাব আব্দুল গণি এটি নতুন করে নির্মাণ করেন এবং তার ছেলে খাজা আহসানউল্লাহ’র নামে এর নামকরণ করেন।
জমিদারি উচ্ছেদ আইনের আওতায় ১৯৫২ সালে ঢাকার নওয়াব এস্টেট অধিগ্রহন করা হলে অর্থাভাবে নওয়াবদের উত্তরাধিকারীদের পক্ষে এটি রক্ষণাবেক্ষণ কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে দিনে দিনে জৌলুস হারাতে থাকে আহসান মঞ্জিল। দীর্ঘকাল অযত্নে পড়ে থাকার পর ১৯৮৫ সালে এতি সরকারের নজরে পড়ে। ১৯৯২ সালে এটিকে জাদুঘরে রুপান্তর করা হয়।
জাদুঘরে ২৩টি গ্যালারিতে দেখা যাবে আহসান মঞ্জিলের নানা কিছু। যেমন- গ্যালারি-১- এ রয়েছে কিছু নকশা ও তাম্র অবকাঠামো এবং এ সম্পর্কিত কিছু তথ্য; গ্যালারি ২- এ ফানুস, ঝাড়বাতি এবং বিভিন্ন ধরণের বাতি; গ্যালারি ৩- এ ডাইনিং রুম; গ্যালারি ৪- এ শ্বেত পাথরের গোল টেবিল, সৈন্যদের ব্যবহৃত বর্ম, হাতির মাথার কঙ্কাল ইত্যাদি। বলা যায়, নবাবদের তৈরি নানা জিনিসপত্র, অস্ত্র, তাদের প্রতিকৃতিসহ নানা কিছুতে আহসান মঞ্জিলের ইতিহাস মূর্ত হয়ে উঠেছে এসব গ্যালারিতে।
আহসান মঞ্জিল খোলা থাকে এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সকাল ১০.৩০ - বিকেল ৫.৩০ এবং অক্টোবর- মার্চ সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল ২.৩০ পর্যন্ত। শুক্রবার খোলা থাকে ২.৩০ থেকে ৭.৩০ পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার বন্ধ। প্রবেশ মূল্যঃ ১০ টাকা। ফোনঃ ৭৩৯১১২২, ৭৩৯৩৮৬৬।
কীভাবে যাবেন
এটি পুরনো ঢাকার ইসলামপুরে অবস্থিত। ঢাকা শহরের নানা জায়গা থেকে নানাভাবে যাওয়া যায়।
বলধা গার্ডেন
বহু দূর্লভ প্রজাতির বৃক্ষ রয়েছে বলধা গার্ডেনে। ১৯০৯ সালে বলধা এস্টেটের জমিদারবাবু নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখানে শুধু যে দেশীয় উদ্ভীদ রয়েছে তা নয়; বরং বিশ্বের ৫০টি দেশের বর্ণময় উদ্ভিদও স্থান করে নিয়েছে এখানে। বলধা গার্ডেন দু’টা অঞ্চলে বিভক্ত- সাইকী এবং সিবিলি। সাইকী শব্দের অর্থ হচ্ছে আত্মা এবং সিবিলি শব্দের অর্থ হচ্ছে প্রকৃতির দেবী। সিবিলি-তে দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারে প্রবেশ মূল্যের বিনিময়ে। সাইকীর প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত।
বলধা গার্ডেনের আয়তন ১.৩৩ হেক্টর। এই উদ্যানের অন্যতম আকর্ষন- সূর্য ঘড়ি। পুকুরের পাশে অবস্থিত এই গোলাকার ঘড়িটি লম্বায় ১২ ফুট। ঘড়ির নিচের অংশে সলিংয়ের আস্তরন এবং উপরের অংশ লৌহ নির্মিত। ঘড়িতে কোন ব্যাটারি নেই- সূর্যচালিত। এই বাগানের আরেকটা বৈশিষ্ট্য হরেক রকমের গাছগাছালি। প্রায় ৮০০ প্রজাতির ১৮০০০ এর মত গাছ রয়েছে। এইসব গাছের মধ্যে রয়েছে স্বর্ণ অশোক, সোনালি বাঁশ, লতাজবা, অর্কিড, ক্যাকটাস,ক্যান্ডেল,বাওরাব, এন্থুরিয়াম, ভূর্জপত্র, ভিক্টোরিয়া রিপিয়া, আমহামটিয়া কর্পুর, সুপার পাম ইত্যাদি। এছাড়া ও রয়েছে কনকসুধা, ছায়াতরী, তুলসি, কাজু, পুটিরাজ, অশোক, জ্যাকুনিয়া, বেহালা, প্যাপিরাস, ল্যাকোঙ্কা, রক্তকরবী, অড়হর ইত্যাদি। নানা ধরনের ফুল ও রয়েছে- পদ্ম, শাপলা, আমাজন লিলি, ক্যামেলিয়, গুস্তাভাত অপরাজিতা, করবী, ঝুমকা, জবা, দোলনচাঁপা, কেয়া ইত্যাদি। উল্লেখ্য যে, বলধা গার্ডেনের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রণাথ ঠাকুর তার ক্যামেলিয়া কবিতাটি লিখেছিলেন।
সাইকীতে রয়েছে দুষ্প্রাপ্য সব বৃক্ষ, বিশেষত ক্যাকটাস। এছাড়া ঘৃতকুমারী ও নানা ধরনের শাপলাও এখানে শোভাবর্ধণ করছে।
১৫ টাকা প্রবেশপত্রের বিনিময়ে ঘুরে আসতে পারেন এই মনোরম উদ্যান থেকে।
কীভাবে যাবেন
এটি পুরনো ঢাকার ওয়ারীতে অবস্থিত। মিনিবাস, সিএনজি, রিকশাসহ নানাভাবে যেতে পারেন বলধা গার্ডেনে।
বোটানিক্যাল গার্ডেন
১৯৬১ সালে ২০৮ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠে এই জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানটি। এখানে রয়েছে পাইন বাগান, পাম বাগান, গোলাপ বাগান, অর্কিড হাউজ, ভেষজ বাগান, ক্যাকটাস হাউজ, কৃত্তিম জলপ্রপাত, বাগান, শালবন, কৃত্তিম হৃদ এবং ফোয়ারা ইত্যাদি।
দেশীয় অনেক গাছই রয়েছে এই বাগানে। বিদেশী গাছের মধ্যে রয়েছে- শ্বেত চন্দন, পিচ, অ্যাান্থুরিয়াম, ছোট এলাচ, কর্পূর, জাপানী তুঁত, আফ্রিকান টিউলিপ, মোচান্ডা, ডম্বিয়া, মোমপ্রদ তালগাছ, র্যাবিট ফার্ন, আমাজন লিলি ইত্যাদি।
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান বা বোটানিক্যাল গার্ডেন খোলা থাকে মার্চ-নভেম্বর প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা এবং ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। প্রবেশ মূল্যঃ ১০ টাকা। ফোনঃ ৮০৩৩২৯২।
কীভাবে যাবেন
মিরপুরে অবস্থিত বোটানিক্যাল গার্ডেন। ঢাকা শহরের যে কোন জায়গা থেকে যাওয়া যায়। পাবলিক বাস থেকে শুরু করে সিএনজি অথবা ট্যাক্সিক্যাবে করে যেতে পারেন এখানে।
ঢাকা চিড়িয়াখানা
মোট ২১৩.৪১ একর জায়গাজুড়ে ঢাকা চিড়িয়াখানা। ১৯৭৪ সালে এটি জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এখানে নানা ধরনের বন্যপ্রানী ও পাখিদের দেখে খুশি হবেন আপনি এবং আপনার সন্তান। চিড়িয়াখানায় রয়েছে- রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, কুমীর, জলহস্তি, গন্ডার, অজগর, চিত্রা হরিণ, বানর, হনুমান, ম্যান্ড্রিল, ময়ুর, ঘড়িয়াল, চিতা বাঘ, উটপাখি, হাতি,
জাতীয় জাদুঘর
১৯১৩ সালের ৭ আগস্ট ঢাকা জাদুঘর নামে এর যাত্রা শুরু হয় বর্তমান ঢাকা মেডিকেল কলেজের একটি কক্ষে। তবে শাহবাগ এলাকায় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর হিসেবে এটি চালু হয় ১৯৮৩ সালে। প্রায় ৮ একর জমিতে নির্মিত হয়েছে চারতলা সুদৃশ্য ভবনটি। এতে মোট ২৩৮০০০ বর্গফুট আয়তনের ৪৩টি গ্যালারি জুড়ে প্রদর্শিত হচ্ছে নানান নিদর্শন।প্রশস্ত সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠলে শুরুতেই দেখা মিলবে বাংলাদেশের এক বিশাল মানচিত্রের। এরপর একে একে গ্রামীন বাংলাদেশের চিত্র সুন্দরবনের পরিবেশসহ বাংলাদেশের নানা কিছু রয়েছে।
এরপরে দেখা যাবে নানা ভাস্কর্য, দেশের উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য নিদর্শনের নমুনা, প্রাচীন মুদ্রা, অলঙ্কার, অস্ত্রসহ নানাকিছু। এরপরে রয়েছে বাংলাদেশের সেকাল ও একালের নানা বাদ্যযন্ত্র, বস্ত্র ও পোষাক। অতঃপর দেখা যাবে নকশিকাঁথা, কাঠের শিল্পকর্ম , প্রাচীন পাণ্ডুলিপি, চিত্রকলা ইত্যাদি। এরপরের গ্যালারিটি সাজানো হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের নানা নিদর্শন দিয়ে। সুন্দরবনকে নিয়ে নতুন একটি গ্যালারি স্থাপন করা হয়েছে।
বর্তমানে জাতীয় জাদুঘরের সংগ্রহে নিদর্শনের সংখ্যা চুরাশি হাজারেরও বেশী।
জাতীয় জাদুঘর খোলা থাকে এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। অক্টোবর-মার্চ সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। শুক্রবার খোলা থাকে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিবসে বন্ধ। প্রবেশ মূল্যঃ ১০ টাকা। ফোনঃ ৮৬১৯৩৯৬-৯, ৮৬১৯৪০০
কীভাবে যাবেন
ঢাকার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘর অবস্থিত। চমৎকার যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। যেতে পারেন নানাভাবেই।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
বাংলাদেশের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত নিদর্শন ও স্মারকগুলো সংগ্রহ, সংস্কার ও প্রদর্শনের জন্য সম্পূর্ন বেসরকারি উদ্যোগে ঢাকার সেগুনবাগিচায় ১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ জাদুঘরের যাত্রা শুরু।
সদর দরজা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে প্রবেশের পর প্রথমেই আপনার নজর পড়বে মার্বেল পাথরের খোদিত অংশে প্রজ্জলিত আগুনের শিখা। এ আগুনের শিখা অনির্বান জ্বলতেই থাকবে। শিখা অনির্বানের সম্মুখে একটি কালো বোর্ডে খোদিত রয়েছে পঙতিমালারঃ সাক্ষী বাংলার রক্তভেজা মাটি/ সাক্ষী আকাশের চন্দ্রতারা/ ভূলি নাই শহীদের কোন স্মৃতি/ ভুলবো না কিছুতেই আমরা।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে রয়েছে ছয়টি গ্যালারি। প্রথম গ্যালারিতে প্রদর্শিত হয়েছে বাঙ্গালির ঐতিহ্যের পরিচয় এবং ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের চিত্র। দ্বিতীয় গ্যালারিতে ১৯৪৭- এর দেশভাগ পরবর্তী পাকিস্তানি শাসন শোষনের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। তৃতীয় গ্যালারীতে রয়েছে একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন, ২৫ মার্চ সংঘটিত গণহত্যা, স্বাধীনতার ঘোষনা, পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে গড়ে তোলা প্রতিরোধ এবং পরবর্তি দূর্ভোগের চিত্র। দোতলায় তিনটি গ্যালারিতে রয়েছে প্রতিরোধ ও মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দিক। পাকিস্তানী সেনা ও এদেশীয় দোসরদের বুদ্ধিজীবী হত্যা ও বাঙ্গালীর চূড়ান্ত বিজয়ের দৃশ্য।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের গ্রীষ্মকালীন সময়সূচী হল সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা এবং শীতকালীন সময়সূচী বেলা ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। সোমবার থেকে শনিবার পর্যন্ত খোলা। রোববার বন্ধ। ফোনঃ ৯৫৫৯০৯১-২। প্রবেশ মূল্যঃ ৫ টাকা।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা শহরের নানা দিক থেকে যাওয়া যায়। প্রেস ক্লাবের উলটো দিকের গলি দিয়ে কিছুদূর যাওয়ার পর ডান্দিকের গলিতে প্রবেশ করলেই দেখা মিলবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের।
রমনা পার্ক
ঢাকা শহরের ইট-পাথরের খাঁচায় বাস করতে করতে যারা হাঁপিয়ে উঠেছেন, তাদের জন্য ক্ষণিকের শান্তি ও স্বস্তির একটি জায়গা রমনা পার্ক। বলা যায়, মরুভূমির মাঝে এ যেন একটুকরো মরুদ্যান। ১৯০৮ সালে লন্ডনের কিউই গার্ডেনের অন্যতম কর্মী আর.এল. প্রাউডলকের তত্ত্বাবধানে এই পার্কের নির্মান কাজ শুরু হয়। এ কাজে তার প্রধান সহকর্মী ছিলেন অখিল বাবু। এ কাজ শেষ হতে সময় লেগেছিল বিশ বছর। আর পার্কের বর্তমান অবয়ব পরিপূর্নতা পায় ১৯৫২ সালে।
রমনা পার্কের আয়তন ৬৮.৫০ একর। অবশ্য লেকের আয়তন ৮.৭৬ একর। যদিও বর্তমানে লেকের আগের সেই সৌন্দর্য নেই, অনেক জায়গা দখল হয়ে গেছে। রমনা পার্ক শুধু সবুজের উদ্যান নয়, বৃক্ষপ্রেমিকদের জন্য অনিন্দ্য কৌতুহল উদ্দীপক উদ্যানও। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির দুষ্প্রাপ্য গাছ আছে। রমনা পার্কে বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের অনুষ্ঠান হয়। পয়লা বৈশাখে ছায়ানটের নববর্ষ উদযাপন এর মধ্যে অন্যতম। এছাড়া স্বাস্থ্যসচেতন মানুষদেরও চমৎকার একটি জায়গা। বলা যায়, কারও হাটার, দৌড়াবার, কারওবা নিয়মিত ব্যায়ামাগার।
রমনা পার্ক রমনাতে অবস্থিত। এর একদিকে রয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, অন্যদিকে ঢাকা ক্লাব, আরেকদিকে রুপসী বাংলা হোটেল, অন্যদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।
ঢাকা শিশু পার্ক
১৯৭৮ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং ১৯৭৯ সালে সর্বসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় ঢাকা শিশু পার্ক। প্রথমে এটি পর্যটন কর্পোরেশন আওতায় থাকলেও ১৯৮২ সালে এটি সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে হস্তান্তর করা হয়। এখানকার উল্লেখযোগ্য রাইডের মধ্যে রয়েছে - গো রাউন্ড, টয় ট্রেন, জেট বিমান, রোমাঞ্চ চক্র, আনন্দঘূর্ণি, তীর ধনুক, বিস্ময়চক্র, এসো গাড়ি চড়ি, ছোট্ট সোনামনিদের রেলগাড়ি, চাকা পায়ে চলা, লম্ফ ঝম্ফ, ঝুলন্ত চেয়ার ইত্যাদি।
প্রায় ১৯ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত এ পার্কে অল্প খরচে শিশুদের নানা ধরনের বিনোদন পাওয়ার ব্যবস্থা আছে। সোমবার থেকে শনিবার দুপুর ১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা (অক্টোবর থেকে মার্চ) এবং দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা (এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত খোলা থাকে এ শিশু পার্ক। তবে বুধবার দুপুর দেড়টা থেকে ৪টা (অক্টোবর থেকে মার্চ) এবং দুপুর ২টা থেকে ৪টা (এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত দুস্থ ও ছিন্নমূল শিশুদের জন্য খোলা থাকে এটি। সাপ্তাহিক বন্ধ রবিবার। প্রবেশমূল্যঃ ১০ টাকা। তবে বিভিন্ন রাইডে চড়ার জন্য বাড়তি টিকিট কিনতে হবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে, ঢাকা ক্লাবের বিপরীতে শিশুপার্ক অবস্থিত।
বঙ্গবন্ধু জাদুঘর
ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে রয়েছে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবাহক এই বাড়িটিতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের হাতে নির্মম্ভাবে মৃত্যুর আগে স্ব-পরিবারে বাস করতেন বঙ্গবন্ধু। বর্তমানে এটি জাদুঘর। এখানে সংরক্ষিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানান কিছু, ব্যহহৃত জিনিস্পত্র। দেয়ালে দেয়ালে বুলেটের দাগ দেখে ধারনা পাবেন পঁচাত্তরের ১৫ আগষ্টের সেই নৃশংস হত্যাকান্ড সম্পর্কেও। বাড়িতে সিড়িতে যেখানে বঙ্গবন্ধুর মৃতদেহ পড়েছিল, সেই স্থানটি কাঁচ দিয়ে ঢাকা। বুধবার ছাড়া সব দিনই সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এটি খোলা থাকে।
জাতীয় স্মৃতিসৌধ
ঢাকা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে ঢাকা আরিচা মহাসড়কের পাশে সাভারের নবীনগরে রয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। ১৯৭২ সালে এটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয় এবং নির্মাণ কাজ শেষ ১৯৮২ সালে। স্থপতি সৈয়দ মঈনুল হোসেন। সাতজোড়া ত্রিভূজাকার দেয়ালের মাধ্যমে ছোট থেকে ধাপে ধাপে উঠে গেছে সৌধটি। কংক্রিটের এ সাতজোড়া দেয়ালের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাতটি সময়কাললে নির্দেশ করা হয়েছে। মোট ১০৮ একর উঁচু নিচু টিলা আকৃতির জায়গায় নির্মিত জাতীয় স্মৃতিসৌধ সবুজের ছোঁয়া, বৃক্ষের ছায়া, ফুলের সৌরভ- সব দিক থেকেই আকর্ষনীয়। এর পাশেই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের দশটি গণকবর যার চারপাশ ঘিরে রয়েছে লেক। কোনো প্রবেশ মূল্য নেই। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে। জাতীয় স্মৃতিসৌধ দেখার পাশাপাশি অদূরে কুমারপল্লী থেকেও ঘুরে আসা যেতে পারে।
কীভাবে যাবেন
ঢাকার গুলিস্তান ও গাবতলী থেকে নবীনগর, ধামরাই ও মানিকগঞ্জগামী যে কোনো বাসে স্মৃতিসৌধে যাওয়া যায়।
ফ্যান্টাসি কিংডম
আশুলিয়ার জামপাড়ায় অবস্থিত একটি আধুনিক বিনোদন কেন্দ্র। এখানে রোলার কোষ্টার, ম্যাজিক কার্পেট সহ বেশ কিছু আনন্দদায়ক ও রোমাঞ্চকর রাইড আছে। এখানে জলের রাজ্যের মজা ও রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার একটি চমৎকার জায়গা ওয়াটার কিংডম। পাশেই রয়েছে হেরিটেজ পার্ক- যেখানে তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যের নানা নিদর্শন।
কীভাবে যাবেন
মতিঝিল থেকে মঞ্জিল পরিবহন, হুইপ লাইন্স ঢাকার নানা পথ ঘুরে পৌছে ফ্যান্টাসি কিংডমে। এছাড়া হানিফ মেট্রো সার্ভিসেও আপনি ফ্যান্টাসি কিংডম যেতে পারেন।
নন্দন পার্ক
ফ্যান্টাসি কিংডমের মতোই আরেকটি বিনোদনের রাজ্য নন্দন পার্ক। এটি সাভারের অদূরে চন্দ্রার বাড়ইপাড়ায় অবস্থিত । এখানেও রয়েছে নানাধরনের রাইড এবং ওয়াটার ওয়ার্ল্ড।
কীভাবে যাবেন
মতিঝিল থেকে আবাবিল পরিবহন ঢাকার নানা জায়গা ঘুরে ইপিজেড হয়ে নন্দনে যায়। অন্যদিকে সুপার বাস মতিঝিল থেকে ছেড়ে গুলিস্তান, শাহবাগ, আসাদগেট, গাবতলী, সাভার, ইপিজেড হয়ে নন্দনে পৌছে।
Leave a Reply
Your identity will not be published.