বাড়ির পাশে আরশি নগর

বাড়ির পাশে আরশি নগর

ঢাকার নাগরিক জীবনে প্রায়ই আমরা একঘেয়েমিতে ভুগি। মনটা ছটফট করে। সে বলে, দূরের কোথাও থেকে ঘুরে আসি। কিন্তু ইচ্ছা হলেই তাে যাওয়া যায় না। নানা ধরনের সমস্যা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যে আমাদের বসবাস। সময়, অর্থসহ নানা প্রতিবন্ধকতা আমাদের পিছু টানে। ইচ্ছের ঘুড়িকে তাই আমরা মুক্ত আকাশে অবাধে বিচরণ করতে দিতে পারি না। অবশ্য দিনে দিনে বেড়ানাে যায়, এমন কোনাে জায়গা হলে কোনাে সমস্যা থাকে না। এমনি কয়েকটি স্থানের কথা এখানে উল্লেখ করা হলাে।

বিক্রমপুর

বিক্রমপুরে রয়েছে সােনালি অতীতের বেশ কিছু স্মৃতিচিহ্ন। কালের অত্যাচার সয়ে সেগুলাে এখনাে কোনাে রকমে টিকে আছে। এগুলাে দেখলে অন্য রকম অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হবে মন। এ ছাড়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেও অপরূপ বিক্রমপুর।

কী কী দেখবেন

ইদ্রাকপুর দুর্গ

বাংলার শাসক ও মােগল সেনাপতি মীর জুমলা ১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দে এটি নির্মাণ করেন যাতায়াতের সুবিধা এবং মল, পর্তুগীজ ও অহােম আক্রমণকারীদের প্রতিরোধ করার জন্য। বর্তমানে এটি জেলখানা। মুর্গীয় শহরে অবস্থিত। হযরত বাবা আদম শহীদ (রঃ)-এর মাজার হযরত বাবা আদম শহীদ (রঃ) ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে এদেশে ১১৭৩

খ্রিষ্টাব্দে এসেছিলেন। ১১৭৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি শহীদ হন। তাঁর মাজারটি মুন্সিগঞ্জের সিপাহি পাড়ার রিকাবিবাজারে। আরেক পাশে রয়েছে একটি মাদ্রাসা। বাবা আদম শহীদ (রঃ) ফোরকানিয়া মাদ্রাসা। এটি স্থাপিত হয়েছে ১৯৮৭ সালের জানুয়ারিতে।

ছয় গম্বুজ মসজিদ

এটি বাবা আদম শহীদ (রঃ)-এর মাজারের পেছনে অবস্থিত। জানা যায়, সুলতান জামাল উদ্দিন ফতেহ শাহ-এর শাসনামলে মালিক কাফুর কর্তৃক ৮৮৮ হিজরি মােতাবেক ১৪৮৩ খ্রিষ্টাব্দে মসজিদটি নির্মিত হয়। মসজিদের ভেতরে প্রবেশের পর পাথরের তৈরি স্তম্ভমূহ, সিলিং দেয়ালে লতা-পাতার কারুকাজ দেখে আপনি মুগ্ধ হবেন।

হরিশচন্দ্রের দিখি

রাজা হরিশচন্ত্রের কথা তাে শুনেছেন। গয়া-দাক্ষিণ্যের জন্য যার বেশ সুনাম ছিল। এমনকি তিনি নিজের কাজ পর্যন্ত দান করেছিলেন। যাহােক তার নামে মুন্সীগঞ্জে একটা বিশাল পিগি রয়েছে। অবশ্য এ দিঘিটি মাগী পূর্ণিমার দিঘি নামেও পরিচিত।

অতীশ দীপঙ্কর ভিটা

পজিতের ভিটা দামেও একটা পরিচিত। দীপঙ্কর শ্রী জ্ঞান, বৌদ্ধ শাস্ত্রের বিখ্যাত পতি, বাংলার রাজা প্রথম মহীপালের শাসনামলে বিক্রমশীলা (বর্তমান ভাগলপুর, বিহার) বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন, বৌদ্ধধর্মের সংস্কারের জন্য তিব্বত যান। এই মহাপণ্ডিতের জন্মস্থান মুন্সীগঞ্জের বজ্রযােগিনী গ্রাম। যে স্থানে তিনি জন্মেছিলেন, পিতা কমলশ্রী মা প্রভাবনীর আদর-যত্নে বড় হয়েছিলেন, সেই স্থানটিতে এখন জনৈক লতিফ শেখের বাড়ি। এ ছাড়া মীর কাদিম পুল, শ্যাম সিদ্ধির মঠ, সােনারং জোড়া মঠ, পদ্ম রিসাের্টসহ নানা কিছু দেখতে পাবেন। মুন্সীগঞ্জে।

বসুবাড়ি

জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসুর পৈতৃক ভিটা মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার রাঢ়ীখাল গ্রামে। বসুবাড়ির প্রাচীন ভবন কালের আঘাত সহ্য করতে করতে জীর্ণ হয়ে পড়ায় বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে ভবনের চারপাশে বৃক্ষশােভিত ৮টি পুকুর ঠিকই রয়েছে। অবশ্য এই স্থানটিতে দপ্তায়মান একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান—রাঢ়িখাল স্যার জেসি বােস ইনস্টিটিউট ও কলেজ। স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯২১ সালে আর কলেজটি ১৯৯৪ সালে। এ ছাড়া পুরাে এলাকাটি আকর্ষণীয় করার জন্য স্থাপন করা হয়েছে জেসি বােস কমপ্লেক্স। এই মনােরম কমপ্লেক্সটি ঘােরা যাবে বিশ টাকা প্রবেশ মূল্যের বিনিময়ে। এখানে রয়েছে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু জাদুঘরও—যেখানে সংরক্ষিত রয়েছে পুরনাে দিনের অনেক জিনিসপত্র।

পদ্মা রিসাের্ট

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় পদ্মার চরের মনােরম স্থানে-থানার অদূরে গড়ে উঠেছে পদ্মা রিসাের্ট। এখানে রয়েছে ১৬টি নান্দনিক কটেজ। এগুলাের ছাউনি গােলপাতা ও ছন দিয়ে তৈরি। তবে ভেতরের শয্যা, ফ্রেশরুম সর্বত্রই আধুনিকতার ছোঁয়া। খাবারের জন্য এখানে রয়েছে একটি রেস্টুরেন্টও। পদ্মা রিসাের্ট ঘুরে বেড়ানাের পাশাপাশি নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ানাে যাবে পদ্মার বুকে। ফোন : ০১৭১৩০৩৩০৪৯।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সড়ক ও জলপথে মুন্সীগঞ্জের জেলা সদরে যাওয়া যায়। ঢাকার গুলিস্তান ও বঙ্গভবনের দক্ষিণ পাশ থেকে নয়ন পরিবহন, ঢাকা ট্রান্সপাের্টসহ বেশ কিছু বাস মুগীগঞ্জ যায়। এ ছাড়া ঢাকার সদরঘাট থেকে ছােট ছোট কিছু লঞ্ এবং চাদপুরগামী বড়সড় লগ্ মুগ্গীগঞ্জের কাঠপটি ঘাট থামে।

নারায়ণগঞ্জ

ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জে রয়েছে এমন কয়েকটি জায়গা, পুরাকীর্তি, যেখানে বেড়াতে গেলে আপনি বিচরণ করবেন সােনালি অতীতে। এখানে তেমনই কয়েকটি স্মৃতি জাগানিয়া স্থানের কথা বলা হলাে।

লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির/লোকনাথ মন্দির

এ সময়ে নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে বড় মন্দির, প্রাচীন তাে বটেই। এটি ১১৭৩ বাংলা সনে স্থাপিত হয়েছে। মন্দিরের চতুরে অবশ্য মন্দিরটির নাম লেখা রয়েছে—শ্রী শ্রী রাজলক্ষ্মী নারায়ণ জিউর বিগ্রহ মন্দির। উল্লেখ্য, 'নারায়ণগঞ্জ নামটি নাকি এ মন্দিরের নাম থেকে উৎপত্তি হয়েছে।... এই মন্দিরের পাশেই রয়েছে শ্রী শ্রী লােকনাথ ব্রহ্মচারীর মন্দির। দেয়ালের গায়ে লেখা রয়েছে তার নানা বাণী। শুধু মন্দির নয়, মন্দিরের চত্বরে রয়েছে লােকনাথ আশ্রম।

মরিয়ম বিবির মসজিদ

নারায়ণগঞ্জের হাজীগঞ্জে এলাকায় অবস্থিত বলে এটি হাজীগঞ্জ মসজিদ নামেও পরিচিত। মোগল আমলে সপ্তদশ শতকে মসজিদটি নির্মিত হয়। মরিয়ম বিবি ছিলেন সুবেদার শায়েস্তা খানের কন্যা। তিনি মারা যান এখানে। মসজিদের পাশে তার কবর রয়েছে। মসজিদটির নির্মাণশৈলীতে মােগলরীতি সুস্পষ্ট।

হাজীগঞ্জ কেল্লা

এটি নির্মাণ করেছিলেন মােগল সুবেদার ইসলাম খান। সপ্তদশ শতকের প্রথম ভাগে। এটি হাজীগঞ্জের ফায়ার সার্ভিসের অদূরে অবস্থিত।

সােনাকান্দা কেল্লা

হাজীগঞ্জ ফেরিঘাট থেকে নদী পার হয়ে ওপারে পৌঁছে রিকশাযােগে পৌছে যান কেল্লায়। লক্ষ করবেন-হাজীগঞ্জের কেল্লার সঙ্গে ওই কেল্লার সাদৃশ্য রয়েছে। তবে হ্যা, এটি আকার ও আকৃতিতে বড়। বলা বাহুল্য, সােনাকেল্লার দুর্গটিও সপ্তদশ শতকের প্রথমার্ধে ইসলাম খান কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল।

কদম রসুল দরগাহ

এটিও নদীর ওপারে অবস্থিত। এখানে হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর পায়ের ছাপ রক্ষিত আছে। মাজারের দেয়ালে দেখতে পাবেন লেখা রয়েছে-হাজী নূর মােহাম্মদ (দঃ) আল আরবী এই মাজারের প্রতিষ্ঠাতা ও মালিক। প্রতিষ্ঠাকাল ১৪০৩ খ্রিষ্টাব্দ। দরগাহ'র প্রতিষ্ঠাতা এবং তার উত্তরাধিকারীদের কবরও রয়েছে।

লাঙ্গলবন্দ

কদম রসুল থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে ব্রহ্মপুত্র নদের পুরনো ধারার তীরে লাঙ্গলবন্দ। এটি হিন্দুদের একটি তীর্থস্থান। অশোকাষ্টমী তিথিতে স্নান উপলক্ষে এখানে তীর্থযাত্রীদের বিরাট সমাবেশ ও মেলা অনুষ্ঠান হয়। কথিত আছে, মাতু হস্তারক পরশুরামের কুঠারটি হাত থেকে না পড়ায় তিনি নানা স্থানে গুরে বেড়াতে থাকেন। শেষে এখানে এসে বাঁ হাত থেকে কুঠারটি পড়ে যায়।...লাঙ্গলবন্দে রয়েছে দশটি কালীমন্দির ও দশটি ঘাট। আর হ্যা, এখানে কাউন্সিল অফিসের পাশেই রয়েছে একটি যাত্রীনিবাস—এটি নির্মিত হয়েছে ১৩৪৬ সনে। তীর্থযাত্রীরা এখানে থাকতে পারেন।

এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জে দেখতে পারেন বন্দর শাহী মসজিদ। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে দেখতে পাবেন জামদানি পল্লী, মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি, রাসেল পার্ক ইত্যাদি। কাঞ্চনে দেখতে পাবেন একটি পর্যটন কেন্দ্র–পন্ডস গার্ডেন। সম্প্রতি রূপগঞ্জে গড়ে উঠেছে ঐকতান ইকো-রিসাের্ট । এরই অন্তর্গত জিন্দাপার্ক। আসলে জিন্দা নামক স্থানে পার্কটি রয়েছে বলেই এই নাম। জিন্দাপার্ক খুবই আকর্ষণীয়। ছায়া সুনিবিড় নির্জন এবং মনােরম। ফোন : ০১৭১৬২৬০৯০৮, ০১৮১৬০৭০৩৭৭।

কীভাবে যাবেন

ঢাকার গুলিস্তান থেকে বাসে চড়ে আপনি যেতে পারেন নারায়ণগঞ্জে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পাঁচ মিনিট পর পর নানা পরিবহন যাতায়াত করে। যেমন—উৎসব, বন্ধন, সেতু, আনন্দ, আশিয়ান ইত্যাদি।...লাঙ্গলবন্দ থেকে কাঁচপুর, সেখানে থেকে বাসে চড়ে রূপগঞ্জে যেতে পারেন।

সােনারগাঁ

একটি ঐতিহাসিক স্থান। কারও কারও মতে, বারাে ভূঁইয়াদের অন্যতম ঈশা খার স্ত্রীর নামানুসারে এই জায়গাটির নাম হয়েছে। আবার কেউ কেউ ভিন্নমত পােষণ করেন। যাহােক, সােনারগাঁ গেলে আপনি মুগ্ধ হবেন। অতীতের সােনালি দিনগুলোতে বিচরণ করবে আপন মন।

কী কী দেখবেন

লােকশিল্প জাদুঘর

স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের প্রচেষ্টায় এটি গড়ে উঠেছিল। জাদুঘরের সংগ্রহে রয়েছে চার হাজারের ও বেশি সংগ্রহ। জাদুঘরের বিক্রয় কেন্দ্র থেকে আপনি কারুশিল্পের বিভিন্ন সামগ্রী ও সংগ্রহ করার মতাে জিনিস কিনতে পারবেন। জাদুঘর শুক্রবার থেকে মঙ্গলবার প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত খােলা থাকে। বুধবার অর্ধদিবস সকাল দশটা থেকে বেলা দুটা পর্যন্ত খােলা থাকে। এখানে একটি লাইব্রেরিও আছে।

লেক

লােক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের চত্বরে প্রায় তিন কিলােমিটার দীর্ঘ লেক রয়েছে। এতে নৌবিহারের সুযােগ রয়েছে।

কারুশিল্প গ্রাম

ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় এখানে বছরের বিভিন্ন সময় তাঁতিরা নিজেদের তাতে জামদানি বুনে সরাসরি সরবরাহ করে । প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে এখানে অনুষ্ঠিত হয় লোকজ উৎসব ও কারুশিল্প মেলা।

ভাস্কর্য

জাদুঘর ভবনের প্রবেশ পথের ঠিক সামনেই রয়েছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের বিখ্যাত চিত্র অবলম্বনে নির্মিত ভাস্কর্য-কাদায় আটকে পড়া গরুর গাড়ি। এ ছাড়া জাদুঘর সংলগ্ন পুকুরঘাটে রয়েছে ঘােড়সওয়ার প্রহরীর ভাস্কর্য।

পানামনগর

জাদুঘর থেকে বেরিয়ে সােজা পূর্ব দিকে একটু এগােলেই দেখতে পাবেন পানামনগর। এখানে বহু পােড়ােবাড়ি রয়েছে। এগুলাের স্থাপত্যশৈলী ও প্রাচীন ডিজাইন দেখে আপনি মুগ্ধ হবেন। এখানে মসনদে আলা ঈশা খাঁর রাজত্বের সােনারগাঁ পরগনার রাজ-কর্মচারীরা থাকতেন।

দেওয়ানবাগ মসজিদ

কাঁচপুর থেকে দুই কিলােমিটার পূর্বে আকালিয়া খালের তীরে ঈশা খাঁর প্রপৌত্র মুনাওয়ার খাঁ-এর নির্মিত একটি মসজিদ রয়েছে। একটি বিশাল দিঘি এবং মসজিদের সামনের পাথর খণ্ড দেওয়ানবাগের প্রাচীনত্বকে তুলে ধরে।

সমাধি সৌধ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মােগড়াপাড়া থেকে কয়েক কিলােমিটার পশ্চিমে রয়েছে ইতিহাসখ্যাত সুলতান গিয়াসউদ্দিন আযম শাহ, তার শাসনামলের বিখ্যাত কাজী এবং পাঁচ পীরের মাজার।

বাংলার তাজমহল

সােনারগাঁ-এর তারাব এলাকায় আগ্রার তাজমহলের অবিকল অনুকরণে তৈরি করা হয়েছে বাংলার তাজমহল। প্রায় পনের একর জায়গার ওপর সাদা রঙের এ তাজমহলে এলে অনেকেই ভুল করে এটিকে ভাবতে পারেন আগ্রার তাজমহল হিসেবে। ৫০ টাকার প্রবেশ মূল্য দিয়ে এখানে ঢুকে বেড়াতে পারেন স্বচ্ছন্দে। এ ছাড়া এখানে রয়েছে পাঁচতারকা মানের রাজমণি ঈশা খা মােটেল (০২-৮৩ ২২৪২৬-৯)। দুভাবে যাওয়া যায় এখানে। প্রথমত, কাঁচপুর সেতু পেরিয়ে হাতের বাঁয়ে সিলেট মহাসড়কের বরপা হয়ে সরাসরি পৌছে যাবেন। দ্বিতীয়ত, কাঁচপুর সেতু পেরিয়ে চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে মদনপুর থেকে হাতের বাঁয়ে গাজীপুরগামী সড়ক ধরে সরাসরি বাংলার তাজমহল।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সােনারগাঁ যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সার্ভিস বােরাক, সােনারগাঁও ইত্যাদি। এ ছাড়া ঢাকা থেকে কুমিল্লা বা দাউদকান্দিগামী যে-কোনাে বাসে উঠে মােগড়াপাড়া নেমে সহজেই যাওয়া যায় সােনারগাঁয়ে।

নওয়াবগঞ্জ-কলাকোপা বান্দুরা

বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে সবুজের রাজ্য। নেই যানজট, ধুলার প্রাদুর্ভাব, কালো ধোয়া কিংবা দুর্গন্ধ। ওখানে আকাশ নীল, বাতাস নির্মল, চারদিকে বৃক্ষ, পুকুর, জলাশয়। বেড়াতে গেলে চোখ জুড়িয়ে যাবে, প্রাণ পাবে আরাম।

নবাবগঞ্জে রয়েছে মহাকবি কায়কোবাদের জন্মভিটা আগলা। এখানে গেলে দেখা যাবে সেই ডাকঘর, যেখানে কায়কোবাদ পােস্টমাস্টার হিসেবে কাজ করতেন। রয়েছে কবির জন্মভিটাও, তবে বর্তমানে সেখানে কারও কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই। রয়েছে কেবল কবির স্মৃতি বিজড়িত একটু গাছগাছালি। তবে যে মসজিদের আজান শুনে কবি বিখ্যাত 'আজান' কবিতাটি লিখেছিলেন, সেই মসজিদের দেয়াল জুড়ে রয়েছে ছােট ছােট রঙিন কাচের নান্দনিক কারুকাজ।

এ ছাড়া নবাবগঞ্জের নানা জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে পাঁচটি গির্জা-হাসনাবাদ গির্জা, গােল্লা গির্জা, বক্সনগর গির্জা, জয়কৃষ্ণপুর (শিকারিপাড়া) গির্জা এবং তােতাইল গির্জা।

কলাকোপায় রয়েছে প্রায় ২০০ বছরের পুরনাে একটি জমিদার বাড়ি-জমিদার ব্রজেন সাহার ব্রজ নিকেতন। বর্তমানে এটি জজবাড়ি নামে পরিচিত। জজবাড়ির পাশের বাড়িটিও পরিচিত, নাম কোকিলপ্যারী। এটি নির্মাণ = করেছিলেন রাধা রমন রায়। এখানে ১৩৩৬ সালে নির্মিত একটি মন্দির রয়েছে। বাড়ির পাশেই কোকিলপ্যারী বিদ্যালয়। বর্তমানে এখানে এক হাজার এক শ' জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

কলাকোপার প্রাচীন আরও দুটি বাড়ি হচ্ছে তেলেবাড়ি বা মঠবাড়ি (বর্তমানে এটি আনসার ও ভিডিপি ক্যাম্প) এবং পাইন্না বাড়ি। আরও আছে আনন্দরকোট্া

প্রাসাদ বা খেলারাম বিগ্রহ মন্দির। প্রাসাদটি বর্তমানে পরিত্যক্ত। কলাকোপায় রয়েছে গান্ধী মাঠ, ১৯৪০ সালে এখানে এসেছিলেন মহাত্মা গান্ধী। মাঠের কিছুদুর এগােলেই আর এন হাউস। প্রায় আড়াই শ' বছর আগে নির্মিত এই বাড়িটি তৈরি করেছিলেন রাধানাথ সাহা। জয়পাড়ায় রয়েছে তাঁতপল্লী। এখানকার লুঙ্গির সুখ্যাতি রয়েছে দেশে-বিদেশে। এ ছাড়া বান্দুরায় রয়েছে জপমালা রানীর গির্জাসহ আরও কয়েকটি গির্জা।

যেভাবে যাবেন

গুলিস্তান গােলাপ শাহ মাজারের মােড় থেকে নবাবগঞ্জ-কলাকোপা বান্দুরার উদ্দেশে বিভিন্ন কোম্পানির বাস যাত্রা করে। যেমন যমুনা, এন মল্লিক, দ্রুত সার্ভিস, বাংলালিংক বাস সার্ভিস। বাসভাড়া প্রতিজন ৫০-৬৫ টাকা।

নরসিংদী

নরসিংদীতে রয়েছে বেড়ানাের মতাে কয়েকটি মনােরম স্পট। নিচে এগুলাে উল্লেখ করা হলো।

ড্রিম হলিডে পার্ক

এটি নরসিংদীর পাঁচদোনায় অবস্থিত। বেড়ানো এবং পিকনিক দুটি উদ্দেশ্যই পূরণ হবে এখানে গেলে। নিরাপত্তা, গাড়ি পার্কিং-এর সুবিধা, ফ্রেশরুমের সুব্যবস্থাসহ নানা ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে যেমন মুগু হবেন এখানে এসে তেমনি ওয়াটার পার্কে পাবেন ভিন্ন স্বাদ। প্রবেশ মূল্য ১৫০ টাকা (বড়দের) এবং ১০০ টাকা (ছোটদের)। বিভিন্ন ধরনের রাইডের জন্য দিতে হবে বাড়তি ৫০ টাকা। ওয়াটার পার্কে প্রবেশ মূল্য ২০০ টাকা। ফোন : ৯৪৪৬৪৫১, ৯৫৭০১৪০-৪১, ৯৫৫৮৫৫২, ০১৬৭০-২৫৩০৩৫, ০১৮৪১ ৪৪৪৪০৯, ০১৮১৫৬২৬৭৫৮, ০১৭১২১৪৫৮৪৯।

উয়ারী বটেশ্বর

প্রাচীন সভ্যতার মূল্যবান নিদর্শনের সন্ধান মিলেছে নরসিংদীর উয়ারী বটেশ্বর। ধারণা করা হচ্ছে, খ্রিষ্টপূর্ব সপ্তম বা অষ্টম শতকের দিকে এ এলাকায় সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল। এখনাে এই এলাকায় চলছে খনন কাজ। বলা যায়, উয়ারি বটেশ্বর এক বিস্ময়কর স্থান।

সােনাটমুরি টেক

এটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। সাতটি অপরূপ চমৎকার পাহাড়, পাহাড়ের মাঝ দিয়ে হ্রদ। সব মিলে চমৎকার পরিবেশ। রয়েছে দৃষ্টিনন্দন পার্ক, পিকনিক স্পট। এ ছাড়া নরসিংদীতে কবি শামসুর রাহমানের পৈতৃক ভিটা, কুমারদি ও পারুলিয়া মসজিদ, মনােহরদী উপজেলার রামিপুরের জঞ্জালে বানরদের রাজ্য, ঘােড়াশাল সার কারখানা, দেশের বৃহৎ কাপড়ের বাজার বাবুরহাট উল্লেখযােগ্য।

কীভাবে যাবেন

সড়ক-রেলপথ—দুভাবেই নরসিংদী যাওয়া যায়। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে চট্টগ্রামগামী মহানগর এবং ব্রাহ্মণবাড়ীয়া তিতাস কমিউটার ট্রেন এবং কিশােরগঞ্জগামী এগারসিন্ধুর এক্সপ্রেসে যাওয়া যায় নরসিংদী। গুলিস্তান, কমলাপুর এবং সায়েদাবাদ থেকে নরসিংদীর বাসগুলাে ছেড়ে যায়। এছাড়া সিলেটগামী কোনাে বাসে চেপেও নরসিংদী যাওয়া যায়।

Leave a Reply

Your identity will not be published.