রসুন

রসুন

আমাদের বগুড়া শহরে, জলেশ্বরী তলায়, মেয়েটি বিখ্যাত ছিল তার নাকের নিচে ঝুলে থাকা সার্বক্ষণিক সর্দির জন্যে। আমি যখন সরকারি প্রাইমারি ইশকুলে ক্লাশ ফোরে পড়ি, তখন সে ওই স্কুলে ভর্তি হয়। ক্লাশ ওয়ানে। আমি ক্লাশ ফোরে ফেল করি, সে ক্লাশ টুতে উঠে যায়। ওই সময়, ইশকুলের বিচ্ছু ছেলে হিসেবে আমি বেশ খ্যাতিমান হয়ে উঠি।

সেই প্রাইমারি ইশকুলে আমার দৈনন্দিন কর্তব্য তালিকায় যা যা ছিল:

এক. কোনো ছেলে বা মেয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে, পিছন দিক থেকে চুপিসারে তার কাছে গিয়ে, পায়ের দু’ভাঁজে, হাঁটুর বিপরীতে, দু’হাতের ধার দিয়ে আঘাত করা। এতে আক্রান্তের পা হঠাৎ সামনের দিকে ভাঁজ হয়ে যেত, সে বসে পড়তে বাধ্য হতো।

দুই. কোনো ছেলে বা মেয়ের পেছনে গিয়ে চুপিসারে বসে পড়া। অন্য সহযোগী কর্তৃক আক্রান্তকে পেছন দিকে ধাক্কা দেওয়া। এতে আক্রান্ত চিৎপটাং হয়ে যেত।

তিন. ছোট মেয়েদের ফ্রক তুলে দ্রুত প্যান্ট ধরে নিচে টান দেওয়া। এ কাজগুলোকে খুব গুরুতর অপকর্ম হিসেবে নেওয়া সঙ্গত হবে না। কারণ আমরা ইশকুলে যেতাম খালি পায়ে, একটু পরপর স্যারকে বলতাম স্যার, পানি খাব। বাইরে যাওয়ার অনুমতি মিলত। পানি খেতে যেতে হতো জোড়ায় জোড়ায়। স্কুলের সামনে আমগাছের নিচে টিউবওয়েলের পাড়। একজন টিউবওয়েলের নলে দু’হাত ধরে পানি জমিয়ে মুখ লাগিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নিত। এই ছিল ছেলেবেলায় পানি খাওয়ার সবচেয়ে আরামদায়ক ও সহজ পদ্ধতি। আমরা টিউবওয়েলকে বলতাম কল। এর পানিকে বলতাম কলের পানি।

আর ছিল, স্যার, পেশাব করব্যার যামো। ইশকুলে একটা বাথরুম ছিল বটে, তবে ওটাতে ঢোকার অভিজ্ঞতা খুব সুখের হতো না। তবে ওটার দেওয়ালে লাল ইটের টুকরা দিয়ে বিভিন্ন বায়োলজিক্যাল চিত্র অঙ্কিত ছিল। এর মধ্যে নারী-পুরুষের প্রজনন পদ্ধতির এক নম্বর ধাপটি ছিল বেশ সাংকেতিক ফরমে চিত্রায়িত। উদাহরণ হিসেবে আমি কবাটের খিলের কথা বলি, আপনারা নিজেরা বাকিটা বুঝে নেন। বাথরুমে না গিয়ে আমরা যেতাম ইশকুল ঘরের পেছনে। লাইন ধরে পেশাব করা হতো। কাজটা খুব সহজ কারণ ঢোলা হাফপ্যান্টের এক পায়ে ফাঁক দিয়ে নুনুবাচ্চা বের করা কোনো ব্যাপারই নয়। মেয়েদের বেলায়, বিশেষ করে, ওয়ান টুয়ের মেয়েদের বেলায় ফ্রক বা স্কার্টের আড়ালে প্যান্টি নামানোর কাজটা সারা হতো। তো আমরা, আমাদের ছেলেবেলায়, ইশকুল ঘরের পেছনে লাইন দিয়ে, ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে মুততে বসতাম। জলবিয়োগের ফেনায়িত শব্দের সঙ্গে মিশিয়ে আমরা পরস্পর গল্পগুজব করতাম। ছেলেরা ছোট ছোট ইটের টুকরা, পেশাব শেষে, ধরতাম নুনুর ডগায়, কুলুক হিসেবে। মেয়েরা কী করত আমি জানি না, তখন বিষয়টা নিয়ে কৌতূহল বোধ করি নি। তবে আজো মনে পড়ে, প্রস্রাবের ক্ষারে ওই জায়গার সবুজ ঘাস হলুদ হয়ে গিয়েছিল।

এর মধ্যে ওই মেয়েটি, যার নাম এখন আমি দেব রূপা, খুব বিশিষ্ট কিছু ছিল না। গায়ের রঙ ফর্সা ছিল, আর যতদিন আমি তাকে দেখেছি, ততদিনই তার নাকের নিচে নোলকের মতো ঝুলে ছিল সর্দি।

একদিন ইশকুলে হৈচৈ পড়ে গেল। কী ব্যাপার? ব্যাপার আছে। রূপা আজ স্কার্টের নিচে কিছু পরে নি। স্কার্ট শুনে আপনারা আবার খুব হাই-ফাই ফ্যাশনদার ড্রেস ভাববেন না। ওই স্কুলে কবে কে ইউনিফর্ম প্রচলন করেছিল, শাদা শার্ট, নীল প্যান্ট, শাদা টপস, নীল স্কার্ট। অনেকে একেবারেই দুরঙা ফ্রক পরত, ওপরটা শাদা, ঘেরটা নীল।

ব্যাপারটা চেক করতে হয়। আমি দু’ক্লাশের মধ্যের বিরতিতে রূপাকে ডাকলাম। সে বেঞ্চ ছেড়ে উঠতে চাইল না। রূপার গোপন পোশাকের গূঢ়তম খবরটা কিন্তু ফাঁস করে দিয়েছে তারই ক্লাসের অন্য মেয়েরা। তারা ইঙ্গিতে আমাকে উৎসাহিত করতে লাগল। আমি বললাম, রূপা, আয়, দশ পয়সার তেঁতুলের আচার খিলামো।

রূপা তখন থেকেই, এখন বুঝতে পারি, সুযোগসন্ধানী ছিল। ও ঠিক চলে এলো বারান্দায়। আমি ফট্ করে ওর স্কার্ট টেনে উপরে তুললাম। এ ক্লাস ও ক্লাস থেকে উঁকি দিয়ে অনেকেই দেখল, কী দেখল কী দেখল, না শুধু এই তথ্য যে, রূপা প্যান্ট পরে আসে নি। তখন ওই ছোট বয়সে নিতম্ব, ঊরু, নাভি ইত্যাদি বিষয়ে কারো তেমন আগ্রহ ছিল না। হাজার হলেও, আমরা কেবল সহপাঠী নই, সহপেশাবকারীও বটে। ছেলেমেয়েরা খিলখিল করে উঠল।

রূপা বলল, ফয়সল, আচার খিলাও।

পাওনা আদায়ে সে তখন থেকেই নিষ্ঠ ছিল।

আমি বললাম, রূপা, তোর নুনু তো অরা দেখ্যা ফ্যালারো। প্যান্ট পর‌্যা আসিস নি কিসক?

রূপা বলল, অত সোজা লয়। হাউশ তো কম লয়। হামার গা দেখারা মুরাদ কারো হবি লা।

আমি বললাম, ক্যা বারে, তোর অতো দেমাগ কিসের রে?

রূপা বলল হামি রসুনের লাকান। একটা খোসা ছাড়ালে আরেকটা খোসা বারাবি।

এই হলো সেই রূপা। হ্যাঁ, শ্রোতা ভাইবোন বন্ধুগণ, এই হলো সেই রূপা। বিউটিকুইন ড্রিম গার্ল দর্শক মনোহরিণী জনগণ নন্দিতা রূপা। যিনি এখন সিনেমার নায়িকা।

আমি যতদিন বগুড়ায় ছিলাম, ততদিন রূপা বড় হচ্ছে, আর নানা জায়গায় নেচে গেয়ে আবৃত্তি করে ও একটা বেশ ধর্তব্য মেয়ে হয়ে উঠছে, দেখেছি। ওর বাবা, বগুড়া গার্লস ইশকুলের ড্রিল মাস্টার ছিলেন। সাইকেলে চড়ে ইশকুলে যেতেন।

আমি অতি কষ্টে, এসএসসি পাস করে ঢাকায় চলে এলাম। উদ্দেশ্য : কবি হমো। কবিতা লিখি। বগুড়ার আঞ্চলিক ভাষায় লিখি। কবি হতে যাতে সুবিধা হয়, সে জন্যে পত্রিকা অফিসে কাজ করি। প্রথমে ছিলাম প্রুফ রিডার। এরপর, গাড়ির মেকানিকের এসিস্টেন্ট যেমন কাজ শিখতে শিখতে একদিন নিজেই মেকানিক হয়ে ওঠে, আমি একটা পত্রিকার সাহিত্য পাতার সম্পাদক বনে গেলাম।

এদিকে রূপা ঢাকায় এসেছে। ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। আমার বন্ধু, বগুড়ার আয়ুব হোসেন বলল, ভার্সিটিতে কিসের, জগন্নাতে। চামচিকাও একটা পাখি, জগন্নাতও একটা বিশ্ববিদ্যালয়।

দেখি, রূপা আবৃত্তি করে। আবার বেইলি রোডের রাস্তার ধারে ফুচকা খায়। একদিন দেখা, বলি, রূপা, ক্যাংকা আচো? তোমার নাকের শিকন (সর্দি) ভালো হলো ক্যাংকা করো?

সে হাসল। বলল, আপনার নাম ফয়সল না? আপনার কথা আমার মনে আছে। আপনি আমাকে আট আনার আচার খাওয়াইছিলেন।

আমি বললাম, তুমি কী করতিছ?

বলল, নাটক করি ফয়সল ভাই। আপনি না সাংবাদিক? আপনার অফিসে আমি যাব।

ওকে দশ পাইয়ের আচার খাওয়াতেই চাইছিলাম, কিন্তু খাওয়াছি নাকি, মনে নাই তো।

তবে কি ও, একদিন ইশকুল ছুটি হলো ফাঁকা ক্লাসে, বেঞ্চের আড়ালে আমাকে ওর স্কার্ট উঠিয়ে দেখতে দিয়েছিল?

আট আনার দাম তখন তো অনেক। কী জানি!

ও বলল, ফয়সল ভাই, আপনি খুব ভালো কবিতা লেখেন। আপনার একটা কবিতা দিয়েন। আবৃত্তি করব।

আমি বললাম, আচ্ছা।

এরপর দেখি, রূপা শর্ট ফিল্ম করছে। আমি আমার সাহিত্যপাতায় ওর ফিল্মের ওপরে বিস্তারিত আলোচনা লিখলাম। খুব ভাষা-টাষা খাটিয়ে ফাটাফাটি লেখা বানালাম। শুরু করলাম, সুবিমল মিশ্র ও গদার দিয়ে।

আমার সাড়া জাগানো লেখার শুরুতে ছিল:

একজন শিখিয়েছিল, তার কাছেই আমার হাতেখড়ি, প্রথমে যে জিনিসটি জানা উচিত তা হলো কোনো-একটা ঘটনায় জড়িয়ে পড়ার পর কীভাবে বেরিয়ে আসা যায়, বিশেষ করে সেই মুহূর্তে, যখন মনে হবে, এক্ষুনি বেরিয়ে আসা উচিত। গদার? গদারই তো। ভ্যান গগের হলুদ সরাসরি চাপিয়ে দেন হার্ডকোর-এ।

সেক্স-ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধেই তার প্রতিবাদ।

আর সে সেক্স-ভায়োলেন্স দিয়েই তার প্রতিবাদ করতে চায়।

হয়তো, এইভাবে, এই গল্পে, স্তেফানিয়া সানদ্রেল্লি একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করতে পারতেন, মার ভূমিকায়, যে মা তার মেয়েকে নিজের স্বামীর হাতে তুলে দিচ্ছে প্রকাশ্যে।

অর্পণা আদুরে গলায় বলতে থাকে: ব্লাউজের হুকটা একটু লাগিয়ে দাও না, প্লিজ। যাকে বলে, সে তার ছেলের বন্ধু। নায়ক-নায়িকারা তখন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে হাঁটু কাঁপাতে কাঁপাতে একজন বসবে, অন্যজন তখন বসা থেকে উঠে দাঁড়াবে। তারপর দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরবে, চুমু খাওয়ার যে পোজ নেবে তার থেকে সত্যিকারের চুমু খাওয়া ভালো। এর থেকে, সুবিমল যেমন বলে, ‘ঢুকিয়ে দেয় না কেন? লাভ লাভ অ্যান্ড লাভ-হ্যাভ আ বেবি।’

ঠিকই তো। ওই যে বাংলা সিনেমা, ওখানে যা হয়, তার চেয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া ভালো। অথচ দেখুন। রূপার শর্ট ফিল্ম, অর্থাৎ আর্ট ফিল্ম, যেখানে দেখেন রূপা ব্লাউজ পরে নাই, গরিব ঘরের মেয়ে ব্লাউজ পাবে কোথায়, দেখেন সেক্স করছে, কার সঙ্গে না, হাজবেন্ডের সঙ্গে, যে কিনা পঙ্গু অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধা, কারণ তাদের ছেলে হবে, যে ছেলে কিনা দু’পেয়ে অর্থাৎ পঙ্গু নয়, অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধা নয়, তবে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি হতে পারে। দেখেন, রূপাকে, ব্লাউজ ছাড়া, ভালো লাগছে। আমি তো কবিতা লিখি, শর্ট ফিল্মের আলোচনা লিখলাম। ব্লাউজ ছাড়া রূপার ছবি ছাপলাম ৪/ড। মানে বুঝেছেন? চার কলাম অর্থাৎ পাশে ৭ ইঞ্চি।

রূপা আমাদের অফিসে এলো। বলল, খুব ভালো লেখেন তো আপনি। কবিতা দ্যান। পূর্ণেন্দু পত্রীর কথোপকথনের মতো লিখতে পারেন না?

আমি বললাম, কবিতা সঙ্গে নাই। আমার মেসে আছে। যাবে?

সে বলল, আজ না। যাব। নিশ্চয় যাব। আমাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখবেন কিন্তু।

শিশিরদার সঙ্গে দেখা। বললাম, কার্টুন কই? শিশিরদা বলে, ছবি এঁকে কী হবে? দ্যাখো ফয়সল, রিকশার পেছনে দ্যাখো, নিশান, বদলা, তিনকন্যা, কেয়ামত থেকে কেয়ামত। সিনেমার ছবি। ওই জীবনটা কত কালারফুল। ওদের ফ্যান্টাসিটাও কত কালারফুল।

শিশিরদা, কী জানি আর্টিস্টরা কী ভাবে, হয়তো নতুন কোনো পেইন্টিং করার তালে আছেন। রিকশার পেছনের ছবি মেরে দিয়ে একজন জাপানি পুরস্কার পেয়ে বড় আর্টিস্ট হয়ে গেছে।

তবে কথা কী জানেন, ওই সম্পূর্ণ রঙিন ফ্যান্টাসির মজাটা, আমরা ভদ্রলোকেরা, না পেয়ে বঞ্চিতই থেকে গেলাম।

হঠাৎ করে শুকিয়ে যাচ্ছি। ডাক্তার বলল, হিসু দিয়া চিনি যায়। দৌড়ান। দৌড়াচ্ছি। সকালবেলা। পায়ে কেড্স। দেখি এক বুড়ো হাঁটে। আরে এ তো কাইয়ুম স্যার। রূপার বাবা। বগুড়া গার্লস স্কুলের ড্রিল টিচার। সালাম দিলাম। বললাম, স্যার, চিনিছেন? বগুড়া বাড়ি। বগুড়ার ছেলে। আপনে এটি ক্যা?

স্যার জানালেন রূপা বড় চাকরি পেয়েছে। বাবা-মা-ছোট ভাইবোনকে ঢাকায় এনেছে। স্যারের মুখে সাফল্যের হাসি। পরিতৃপ্তি।

আর একদিন দেখি, আজাদ সিনেমাহলের সামনে বিশাল রূপার ছবি। আরে আরে, রূপা নায়িকা হয়ে গেছে নাকি! চিত্রালী কিনলাম। রূপা সাক্ষাৎকার দিয়েছে: গল্পের প্রয়োজনে আমি যে-কোনো পোশাক পরতে রাজি আছি। ঘোমটা পরে তো আর অভিনয় করা যায় না। রূপার সিনেমা মুক্তি পেয়ে গেল।

রাস্তায় রাস্তায় রূপার পোস্টার। আরে আরে, আমাদের সিকনা রূপা ফ্যান্টাসি হয়ে গেল। দারুণ তো!

রূপার ছবি এখন রিকশার পেছনে থাকে। একদিন দেখি, আমাদের কাগজে নায়িকা রূপার বড় ছবি ছাপা হয়েছে। রূপা ডান হাত মাথায় তুলেছে। বুকটা সামনের দিকে হেলিয়েছে। কোমরটা পেছনের দিকে। কী যে একটা পোশাক পরেছে! এটা মনে হয় কস্টিউম ফ্যান্টাসি। রূপার বুকের অর্ধেকটা বেরিয়ে আছে। বেঢপ পাকা কাঁঠালের মতো।

রূপার সিনেমা ফ্লপ করল। শুনতে পাই।

হঠাৎ একদিন রূপার ফোন। ফয়সাল ভাই, একটু বাসায় আসেন না। গেলাম। রূপা বলল, ফয়সাল ভাই। খুব ভালো আছি, হাতে ৭টা ছবি। শিডিউল দিয়ে কুলোতে পারছি না। লিখে দেন না। আপনাদের পত্রিকাটা তো বড়।

আমি বললাম, রূপা, ছেলেপুলে পাঠায়া দিবো। লেখবেনে।

না না, ফয়সাল ভাই, তুমি লেখো। তুমি কত ভালো ছেলে। ঐ যে আমার ‘সূর্য যখন উঠলো’ আর্ট ফিল্ম নিয়ে লিখেছিলে।

আমি বললাম, ছার কোনটে? ছারকে দেখি না।

এ বাড়ি তো আমাকে দিয়েছে ফন্টে ভাই।

উনি কে?

আমার ফন্টে ভাই।

মানে কী?

খোদাবাবা বলে লোকে। বুঝছেন?

বুঝলাম। তোমার গডফাদার কই?

অন্য গডটারদের কাছে গেছে মনে হয়।

আচ্ছা, লিখে দেব, আমি সেদিন উঠে পড়লাম।

রূপার সিনেমা ফ্লপ। ঢাকায় কোনো হলে নাই। কবিতা পড়তে ময়মনসিংহে গেছি। দেখি রূপার সিনেমাটা ঝুলছে। আল্লার নামে ঢুকে পড়লাম। পুরা হল ফাঁকা। ফাঁকা হলে, কোত্থেকে এনার্জি পাচ্ছে, রূপাই জানে, সে পর্দার আগা থেকে মাথা পর্যন্ত শরীর ঝাঁকাচ্ছে।

বুক নাড়ে, আর মুখে লজ্জিত হাসি দেয়। আবার দু’পায়ের জোড়টা ক্যামেরার উপরে ধরে নাড়ে।

আমি বলি, সঙ্গম তো আমি জীবনে করেছি রূপা, কিন্তু সঙ্গম করতে তো এত কষ্ট করতে হয় না। গডফাদারটা নাকি নায়িকা যশোপ্রার্থীদের তার টেবিলের নিচে বসায়া রাখে।

রূপার জন্যে আমার সংসার ভাঙলো।

গডফাদারের স্ত্রী হাসনা বানু।

সিনেমাটা দেখে শিশিরদার কথা মনে পড়ল। ওদের জীবনটা কত রঙিন। আমাদের মতো না।

আবার রূপার ফোন। ফয়সাল দা, তুমি আমাকে নিয়ে একটা লেখা লিখলে না। জান, আমি কত বড় নায়িকা। আমার সাইনমানি ৭ লাখ টাকা। (শুধু সাইন করতে ৭ লাখ? সর্বনাশ। এত দাম!) ফয়সালদা আবার এটা কাগজে লিখে দিও না। ইনকাম ট্যাক্স ঝামেলা করে।

আমার খুব শখ হলো আমি ফ্যান্টাসির শরীরটা চেপে দেখব। আমি বললাম, রূপা, বাসাটা ফাঁকা কবে হবে বলো তো। তোমার সঙ্গে প্রাইভেট কথা আছে।

চটি পত্রিকায় রূপার ফুল ন্যুড বেরিয়ে যাওয়ার তিনদিন পর, আমার সঙ্গে রূপার প্রাইভেট কথা।

আমি বললাম, তুমি নায়িকা। আমি কোনোদিন, নায়িকা নাড়ি নাই। তোমাকে নেড়ে-চেড়ে দেখি।

রূপা বলল, ফয়সালদা, তুমি বড় কবি। আমার শখ একটা কবিকে ল্যাড়া-চ্যাড়া দেখি।

বাতি জ্বালানো ছিল।

আমি রূপার শাড়ি খুলে ভাঁজ করে খাটের ডাঁটায় রাখলাম।

এত সুন্দর খাট, ফন্টে দা দিয়েছে নিশ্চয়।

রূপা নিজের ব্লাউজের হুক নিজেই খুলল। আমি ওর সায়ার ফিতা খুঁজছি। সায়ার ত্রিভুজটা কোনদিকে? রূপা হাসল।

রূপা সব খুলল।

কত আলো। আরো আলো। আরো আলো।

বলল, বুকে মুখ দিও না। আল্লার কিরা লাগে।

আমি ওকে কাছে নিলাম। আরে, একী, ওর সারা গা তো পাতলা ট্রান্সপারেন্ট স্কিন! টাইট রাবার দিয়ে মোড়া! ও হাসল।

আলো। আরো আলো। ও বলল, মেকাপ করতে করতে গায়ে এই খোসার মতো হয়েছে। নাও, ওটা খোল।

আমি একটা খোসা সরালাম।

আলো। আরো আলো।

একী? আরেকটা খোসা!

ও উম উম উম করছে। শিৎকার।

আমি আরেকটা খোসা সরালাম।

ও চুঁ চুঁ চুঁ শব্দ করছে।

ভেতরে আরেকটা খোসা।

আমি খোসা ছাড়াই। ভেতর থেকে আরেকটা খোসা বেরোয়। খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে পুরো ঘর খোসাময় হয়ে গেল।

আলো। আরো আলো।

কী ব্যাপার রূপা? কী ব্যাপার?

ও ফয়সাল ভাই, বুঝবার পাল্যা না? হামি কছনু, হামি রসুন। ছোটেবেলায় তুমি যে হামার জামা তুলছিলা। তখন যে কছনু?

হ হ, কছলু বলে যে তুই রসুন। খেয়াল পড়ছে। খেয়াল পড়ছে।

মেয়ে মানুষ হয়া জন্মাছু তো, রসুন না হলে কি বাঁচা থাকতাম! কও। ক্লাস টুয়ের রূপারেই ছাড়ো নাই, আর এই বয়সের রূপারে ছাড়বা তোমরা? কও, ছাড়বা? কী করছ হামাকে, দ্যাখো। দ্যাখো।

বর্ষ সংখ্যা ২৫, ঈদসংখ্যা ১৯৯৮

Leave a Reply

Your identity will not be published.