সার্বিয়া: শুভ্র শহরের দেশে (অষ্টম পর্ব)

সার্বিয়া: শুভ্র শহরের দেশে (অষ্টম পর্ব)

[কর্মসংস্থান, উচ্চশিক্ষা বা ঘোরাঘুরি— এসব ক্ষেত্রে ভ্রমণপিপাসু বেশির ভাগ মানুষের ঝোঁক পশ্চিম ইউরোপের দিকে। অথচ পাহাড়-নদী-প্রকৃতির সৌন্দর্যে বিখ্যাত পূর্ব ইউরোপও। যেখানে রয়েছে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য আর ইতিহাস-ঐতিহ্যের বাস্তবধর্মী পাঠ। এমনই এক দেশ সার্বিয়া। ভ্রমণের বহুরৈখিক পথে লেখকের কাছে নতুন উপজীব্য হয়ে ওঠে সার্বিয়ান এক তরুণী। ঠিক প্রেম নয়, প্রেমের চেয়ে কম কিছুও নয়। পার্থিব দৃশ্যপটের সঙ্গে উঠে এসেছে রোমান্সের হৃদয় ছোঁয়া-না ছোঁয়ার গল্পও। যার পুরো বর্ণনা থাকছে ইমদাদ হকের এই ভ্রমণকাহিনিতে। আজ পড়ুন অষ্টম পর্ব।] 

বেলগ্রেডের আবদার

গাছ থেকে পাতা পড়ে টুপ করে। টুপ করে পাতা পড়ার যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সেটা এই পাতা পড়ার মধ্যে নেই। বৃষ্টিতে ভেজা হলুদ পাতা। কাজের চাপে ভারী শরীর নিয়ে কোনো চেয়ারে ঠুস করে বসে পড়ার মতো। কোনো উচ্ছ্বাস নাই, আনন্দের বারতা নাই। সব যেন ছকে বাঁধা রুটিনের আবশ্যিক একটা অংশ, যা অবশ্যপালনীয়! ইউরোপ-আমেরিকার গাছগুলোও যেন নির্জীব। এসব অঞ্চলে শীতকালও রুক্ষ, কর্কশ। পাতা হারিয়ে শুকনো কাঠ হয়ে যায় জলজ্যান্ত তাজা গাছ। পাতাগুলো ঝরতে থাকে ধীরে ধীরে। সবুজ পাতা হয়ে যায় লালচে, হলুদ, টুকটুকে লাল, খয়েরি, বাদামি, পীত রং, আকাশি, নীল আরও কত রঙের মিশ্রণ। ঢাকার বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, নামিদামি লোকের বসার ঘরে বড় ফ্রেমে বাঁধাই করা এসব পাতার ছবি দেখেছি কত। ঝরে পড়া পাতার দেশে এখন দেখছি বাস্তবে। এগুলোর সৌন্দর্যও আছে, তবে প্রাণহীন মনে হয়। চিড়িয়াখানায় বন্দি সিংহের বাচ্চার মতো। ঢাকা শহরে খাঁচাওয়ালা ভ্যানে করে স্কুলে যাওয়া অসহায় বাচ্চাদের মতো। অথচ বন্দিত্বের, চাপিয়ে দেওয়া দায়িত্বের বেড়াজালমুক্ত হলে জীবনটা কত সুন্দর হয়ে ওঠে।

মানচিত্রে যেসব সড়ক প্রদক্ষিণ করলে শহরের অস্তিত্ব বোঝা যায়, আমাদের যাত্রাপথ সেই সড়কগুলোতে। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে কাজ করছেন ট্রাফিক পুলিশ। কারো মাথায় ছাতা আছে, কেউ ভিজছেন বৃষ্টিতে। ট্রাফিকের সিগনালে দাঁড়িয়ে পড়ে আমাদের গাড়িবহর।

দানিউব আর সাভা নদী যেখানে মিলে গেছে, সেই জায়গাতেই গড়ে উঠেছে বেলগ্রেড। এর গোড়াপত্তন এখন থেকে তাও প্রায় ৭ হাজার বছর আগে। যদিও এর মধ্যে ২ হাজার বছরের মতো সময় গেছে যুদ্ধ-বিগ্রহ, হাঙ্গামা নিয়ে। বাণিজ্যিক কারবার, পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের মধ্যে সংযোগস্থল, সংস্কৃতির মূল আধার- এসব কারণে আগে থেকেই অনন্য। আর এখন দেশটির সার্বিয়ার মূল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিধি এই শহর ঘিরেই। অতীতের ভিঞ্চা আর বর্তমানের হিপহপ মিলে সংস্কৃতির নতুন অবয়ব তৈরি হয়েছে। শিক্ষা ও গবেষণাতেও নিজেদের অস্তিত্ব ভালোভাবেই জানান দিচ্ছে বেলগ্রেড। 

প্রকৃতির নিয়ম আর প্রতিদিনের চাহিদা- পরিণত করেছে আজকের বেলগ্রেডকে। শহরের যেদিকে যাই, রূপ বৈচিত্র্যের ধারা যেন একই। সময়ের প্রয়োজনে শহরের এই যে বেড়ে ওঠা- তাও ভাগ হয়ে গেছে দুই ভাগে। এক ভাগে পুরোনো শহর, অন্যপাশে নতুন। আমরা ঘুরছি বেলগ্রেডের পুরাতন অংশ থেকে নতুন অংশে, নতুন থেকে পুরোনোতে।

সিগন্যাল ছাড়লে গাড়িবহর এগিয়ে চলে। চারপাশে কত ফাঁকা জায়গা। নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর উঁচুতলার ভবনের সারি। শপিংমল, আবাসিক ভবন, সরকারি-বেসরকারি সংস্থার দপ্তর। আবার ফাঁকা জায়গা। নিউইয়র্কের কথা মনে পড়ে, মনে করি ঢাকাকেও। নিউইয়র্কের ম্যানহাটন আকাশছোঁয়া ভবনের শহর। ঢাকাও প্রতিযোগিতা করছে আকাশের ছোঁয়া পেতে। ঢাকা শহরে ফাঁকা জায়গা নেই, খাল বিল জলাশয় ভর্তি করে দেদার গড়ে তোলা হচ্ছে বৈধ-অবৈধ বহুতল, উঁচু ভবন। প্রতিযোগিতা করে বানানো হচ্ছে উঁচু ভবন। ঢাকায় ভূমিকম্পের মাত্রা যদি ভয়াবহ হয়, তাহলে কী হবে? হয়তো কিছুই হবে না। এত এত সব ভবন, হেলে ঠেলে সব একটা আরেকটার গায়ে লেগে থাকবে। আমরা মাঝখান দিয়ে বের হয়ে যাব। আর যদি সব হুড়মুড় করে বসে পড়ে, তাহলে আমাদের কে বের করবে? সবার তো একসঙ্গেই নাই হয়ে যাওয়ার কথা!

বেলগ্রেডের পুরাতন অংশে সব একই রঙের বাড়ি, সবুজাভ একধরনের রং। ক্রিভোকাপিচ জানাল, ‘শহরের আয়তন, লোকসংখ্যার ঘনত্ব, এলাকার উপযোগিতাসহ এমন বিষয়গুলোর ওপর নির্ভর করে আবাসনব্যবস্থা। ভিন্ন ভিন্ন এলাকার ভিন্ন ভিন্ন কোড রয়েছে, যা মেনে সবাইকে বাড়ি বানাতে হয়। বাড়ি কততলা পর্যন্ত উঁচু হবে, ড্রেনেজ ব্যবস্থার ধরন, বাড়ির বাইরের রং কী, ভেতরে কী রং থাকবে, সামনে বাগান থাকলে তার আয়তন কত? বিদ্যুৎ ব্যবস্থার পদ্ধতি কী- এসব বিষয় মেনেটেনে বাড়ি করতে হয়। চাইলেও বাপু ১৪তলা ভবন করে দিবে, তা এখানে হবে না।’

শুধু বেলগ্রেডই নয়, সব উন্নত দেশেই সুশৃঙ্খল আর নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে বাড়িঘর করা হয়। বাংলাদেশে এমন কোনো বালাই নাই। ঢাকায় স্থপতিরা একধরনের নকশা তৈরি করে দেন, আর ভবন হয় অন্য রকম।

২.
‘ইউর আইজ আর ভেরি শার্প’— গাড়িতে ওঠার আগেই বলছিল মিলিচা ক্রিভোকাপিচ। ‘ঘুরে বেড়ানো আমারও শখ। ছুটি পেলেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে উড়াল দিই। সমুদ্র আমায় বেশি টানে। কিন্তু ঘুরে বেড়ানোর জন্য মুক্ত সময় দরকার। এই ট্যুরে সবকিছুই আগে থেকে নির্ধারিত। তোমাকে সার্বিয়ার কতটুকুই-বা দেখাতে পারব?’

আমি বললাম, ‘জবের ধরনই এটা। এর মধ্যেও সুযোগ করতে পারাটাই বড়ো পাওনা। যতটুকু দেখতে পারি।’

ক্রিভোর সঙ্গে থাকা সিকিউরিটি অফিসার সিচা মিভ্রোপাপিচ হ্যাঁ হ্যাঁ করে মাথা নাড়ছিল। তাকে সার্বিয়ান ভাষায় বুঝিয়ে দিল ক্রিভো। তার মাথা ঝাঁকানোর পরিমাণ বেড়ে গেল।

সারা দিনের কর্মসূচির সবকিছুই সাজানো, সময় ধরে ঠিকঠাক করা। তবুও আমার ভেতরে অস্থিরতা। নতুন নতুন নিদর্শন, জাদুঘর, জায়গা দেখার বাসনা।

‘খাবারদাবার, চা-কফির আড্ডার মতো ফরমাল কিছু জায়গা আমি এড়িয়ে চলতে চাই। সেই সময়টুকু আশপাশেই ঘুরতে চাই। একটা গাড়ি ম্যানেজ করে দিয়ো, সঙ্গে কাউকে পেলে আরও ভালো।’

ক্রিভো আমার এই আবদার রেখেছিল।

‘চোখ কান খোলা রেখো।’

আমার প্রতি ছিল তার নির্দেশনা।

শহরের অলিগলি পার হয়ে চলি। চার বা ছয় লেনের প্রশস্ত সড়ক। বাড়তি জায়গা নিয়ে করা ইউলুপ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। নিয়ম মেনে যান চলাচল। সব গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রিত। বেশির ভাগ বাড়ির সামনে ফুলফলের গাছ। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কৃত্রিম ডেকোরেশনের মতো।

ক্রিভোর ইশারায় বুঝতে পারি, নিউ বেলগ্রেড।

চোখ বন্ধ করি, ‘ছিমছাম শহরে বাদামি রঙের বাড়ি থেকে ভেসে আসে পিয়ানোর সুর। গড়নে লম্বা বাদামি চুল আর নারকেল চোখের সার্বিয়ান কিশোরীর সাদা আঙুলের চালনায় ধ্বনিত পিয়ানোর সুর। অথবা চওড়া ফুটপাতে কোমর দুলিয়ে সুগন্ধি ছড়িয়ে হেঁটে যাওয়া অষ্টাদশী সার্বিয়ান রমণী।’

ভাবনার ছন্দ ভাঙে অ্যাম্বুলেন্সের শব্দে। পাশ দিয়ে দ্রুতগতির এক্সপ্রেসওয়ে লেন। এই লেন সব সময় জরুরি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত থাকে।   

নিউ বেলগ্রেড সার্বিয়ার আধুনিক শহরগুলির একটি। সুপরিকল্পিত এ শহরটি, যার অবস্থান বেলগ্রেডের ঠিক বিপরীত দিকে সাভা নদীর বাঁ তীরে। ১৯৪৮ সালে সাভা নদীর তীরে জনবসতিহীন এলাকায় গোড়াপত্তন করা হয় এ শহরের। বেলগ্রেডের বাণিজ্যিক কেন্দ্র এটি। এ শহরের সব অবকাঠামো আধুনিক। নোভি সাদের পর সার্বিয়ার দ্বিতীয় জনবহুল পৌরসভা হলো এই নিউ বেলগ্রেড। বর্তমানে এখানে প্রায় ২ লাখ ১৪ হাজার মানুষের বাস। শহরটি নোভি বিওগ্রেড নামেও পরিচিত। বিস্তৃতি প্রায় ৪১ বর্গকিলোমিটার। শহর গড়ে ওঠার আগে শহরের বেশির ভাগ এলাকা ছিল পানির নিচে।

‘লাঞ্চের আগে ৩০ মিনিটের কফির বিরতি। নিউ বেলগ্রেড সার্বিয়ানদের গর্ব। তাই এই ট্যুরে নিউ বেলগ্রেডের অলিগলি ঘুরে দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

খুশি হলাম।

মনে করিয়ে দিলাম, ‘আমায় ঘুরতে পাঠাতে হবে।’

মাথা নেড়ে বলল, ‘ঠিক আছে।’

‘৩০ মিনিটের মধ্যে আমি তোমায় ২০ মিনিট দেব। ১০ মিনিট থাকতেই তুমি চলে আসবে।’ ক্রিভোর সময়-সতর্কতা।

‘কোনো সমস্যা নেই।’

আমি তাতেই খুশি। চুপচাপ বসে থাকার চেয়ে ২০ মিনিটই-বা কম কীসে!

গাড়ি যে গলিতে প্রবেশ করল, সেটি ঢাকার জাহাঙ্গীরগেট থেকে গিয়ে মহাখালী ডিওএইচএস এলাকায় ঢোকার গলির মতো। এখানে একটা কফির দোকান, যেটি কাঠের তৈরি। লোকজনের ভিড় নেই, অনেকটাই নির্জন। আমি গাড়িতেই বসে রই। সবাই গাড়ি থেকে নেমে যায়, ড্রাইভার আমাকে নিয়ে ছোটেন।

ড্রাইভার ইংরেজি বলতে পারেন না। কাজেই তার সঙ্গে কথাবার্তার বালাই নেই। গাড়ি চালিয়ে তিনি সামনে যান। ডানে ঘোরেন, বাঁয়ে মোড় নেন। কিছু কিছু ভবনের সামনে গিয়ে বাস বে-তে থামেন। আমার দিকে ইশারা করেন। আমি কী বুঝব, কী দেখব? গাড়ি থেকে নেমে সেলফি তুলি, ড্রাইভারও আমার ছবি তুলে দেন।

ওয়েস্টার্ন সিটি গেটে এসে থামি। এই গেট আমাদের হোটেল থেকেও দেখা যায়। ৩৮৪ ফুট উচ্চতার এই ভবনে ফ্লোরসংখ্যা ৩৫টি। ‘জেনেক্স টাওয়ার’ নামে পরিচিত এই ভবনটি আধুনিক স্থাপত্যশিল্পের এক অনন্য নিদর্শন। যদিও বিশ্বের শীর্ষ ১০-এর তালিকায় নাম নেই এই ভবনের। তবে গত শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকেই অনেক দেশ উঁচু ভবন নির্মাণ শুরু করেছে। এই তালিকায় এখন পর্যন্ত শীর্ষে রয়েছে দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা। ভবনটির উচ্চতা ২ হাজার ৭১৭ ফুট। এর পরে চীনের সাংহাই টাওয়ার। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার রয়েছে তালিকার ছয় নম্বরে। বিশ্বের উঁচু ১০টা ভবনের মধ্যে ৫টাই চীনে, তাইওয়ানকে চীনের মধ্যে ধরলে আরেকটা বাড়বে।

ড্রাইভারকে ক্রিভো বিশেষভাবে বলে দিয়েছিলেন ‘বেলগ্রেড মিউজিয়াম অব কনটেমপোর‌্যারি আর্ট’ দেখানোর জন্য। তিনি সেখানে গিয়ে গাড়ি পার্ক করে এলেন। এর সামনেও ছবি তুললাম। সাভা নদীর তীর ঘেঁষে সবুজে ঘেরা মিউজিয়াম। ভেতরে দেখতে না-পাওয়ার আফসোস সারা জীবনই রয়ে যাবে। দানিউবের তীর ঘেঁষে বিশাল সবুজ পার্ক। সিটি ট্যুরের আওতায় ট্যুরিস্ট ফার্মগুলো ট্যুরিস্ট বাসে করে পুরো শহর দেখিয়ে দেবে। এজন্য ঘণ্টাভেদে গুনতে হবে ২৪ থেকে ৪৮ সার্বিয়ান ডলার।

সার্বিয়ার সমাজতান্ত্রিক শাসনামলে এখানে বেশ কিছু ভারী শিল্পকারখানা স্থাপিত হয়। বিভিন্ন মেশিনারিজ, ট্রাক্টর শিল্প, ধাতব ও লোহার কারখানা, শিপইয়ার্ড, সাভস্কি নাসিপের বিরাট হিটিং প্ল্যান্ট, ইলেকট্রো-কনস্ট্রাকশন কোম্পানির মতো বড়োবড়ো সব শিল্পকারখানা রয়েছে এই শহরে। বড়ো দুটি বাণিজ্যিক সেন্টার সাভা সেন্টার আর ইউএসসিই সেন্টারের আশপাশে ঘুরঘুর করে ফিরে আসি। সাধারণ পর্যটকদের জন্য এ শহরে খুব বেশি কিছু না থাকলেও যারা দেশটির অর্থনীতির হালচিত্র সম্পর্কে ধারণা পেতে চান, তাদের অবশ্য গন্তব্য এ শহর।

আগের যুগোস্লাভ সমাজতান্ত্রিক সরকার উন্নয়নে অর্থনৈতিক দিকের বাইরে অন্য বিষয়গুলোতে তেমন গুরুত্ব দেন নি। এ কারণে কয়েক দশক ধরে এ সিটিতে চার্চ ছিল মাত্র একটি, বেজানিজার সেন্ট জর্জের পুরোনো চার্চ।

(চলবে…)

Leave a Reply

Your identity will not be published.