“প্রেসক্লাবের সামনের ভিড় বাড়তে বাড়তে চলে এসেছে রাস্তা অবধি। অফিসফেরত বাসযাত্রীদের বাসগুলো আটকে পড়েছে। ফলে রাস্তার জ্যাম ক্রমশ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। কৌতূহলী মানুষ তাদের জরুরি কাজ ফেলে ভিড়ের পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু পেছন থেকে সামনের ঘটনার কিছুই দেখা যাচ্ছে না। ফলে কেউ কেউ উঠে গেছে ওভারব্রিজের ওপরে। দু’ একজন তরতর করে রেইনট্রি গাছের ডাল বেয়ে উঠে গেছে। আশপাশের বাসা, অফিসের ছাদেও উৎসুক মানুষের ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। কিন্তু ঘটনা কী? ঘটনা হলো, ভিড়ের মাঝখানে দাঁড়ানো শীর্ণকায় শরীরের মানুষটা। তাঁর নাম আজিজ মাস্টার। আজিজ মাস্টার গায়ে কেরোসিন ঢেলে দাঁড়িয়ে আছেন প্রেসক্লাবের সামনে। তার বাঁ হাতে ধরা একখানা মশাল। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি সেই মশাল থেকে গায়ে আগুন ধরাবেন। কিন্তু একটু দেরি করছেন। কারণ তাঁর গলায় একখানা ছোট ব্ল্যাকবোর্ড ঝোলানো। সেই ব্ল্যাকবোর্ডে চক ঘষে স্পষ্ট বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘আমিই কোহিনুরের বাবা...।”
এ হলো জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক সাদাত হোসাইনের ‘মরণোত্তম’ উপন্যাসের অংশবিশেষ। পাঠকপ্রিয় এই উপন্যাসটি এবার আসছে ভিজ্যুয়াল মাধ্যমে। সঞ্জয় সমাদ্দারের পরিচালনায় এখানে অভিনয়শিল্পী হিসেবে থাকছেন শহিদুজ্জামান সেলিম, ইমতিয়াজ বর্ষণ, মহিমাসহ আরও কয়েকজন।
এটি বঙ্গবিডির বেজড অন বুক (বিওবি) উদ্যোগ। এ বিষয়ে উপন্যাসটির লেখক সাদাত হোসাইন অন্যদিনকে জানান, “আমি যখন ‘মরণোত্তম’ লিখি, তখন দেশে অসহনীয় একটি পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। চারদিকে ধর্ষণ আর খুনের ঘটনা ঘটছিল। এর মধ্যে নুসরাতের ঘটনা আমাকে নাড়া দেয়। আমাকে আহত করে। আমার মনে হয়, আমাকে একটা কিছু লিখতে হবে। আমি তখন ‘মরণোত্তম’ লিখি।”
তিনি আরও বলেন, “আমার ‘মরণোত্তম’ উপন্যাসটি ভিজ্যুয়াল মাধ্যমে আসছে, এটা আমার জন্য আনন্দের খবর। আমি আনন্দিত হয়েছিও। কেননা সঞ্জয় সমাদ্দারের মতো গুণী পরিচালক কাজটি করছেন। শহিদুজ্জামান সেলিমসহ প্রথিতযশা অভিনয়শিল্পীরা এখানে থাকছেন, এটাও আমার জন্য আনন্দের একটি বিষয়। তবে একটি বিষয়ে আমি শংকিত। সেটি হলো, করোনাকালীন পরিস্থিতিতে কাজটি হচ্ছে। ফলে অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করতে হবে পরিচালক ও কলাকুশলীদের। তাই প্রেসক্লাবের দৃশ্যটি, যেখানে আজিজ মাস্টার প্রতিবাদ করছেন, তাঁর চারপাশে প্রচুর মানুষজন। প্রচণ্ড ভিড়। এই দৃশ্যটি এই সময়ে যথাযথভাবে ক্যামেরাবন্দির বিষয়ে আমার সংশয় রয়েছে। মনে হচ্ছে, দৃশ্যটি পর্দায় জীবন্ত করে তোলার জন্য এই করোনাকালে যথোপযুক্ত আয়োজন করা যাবে তো? পাশাপাশি আমার আস্থাও রয়েছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও পরিচালকের প্রতি। নিশ্চয় তারা সঠিক ও নান্দনিকভাবেই পুরো কাজটি করবেন; গুছিয়ে করবেন। সব মিলিয়ে একটি চমৎকার প্রোডাকশনের প্রত্যাশা করছি আমি।”
নির্বাহী প্রযোজক ভাস্কর আবেদিন জানান, এবারের ঈদুল ফিতরে সাতটি টেলিফিল্ম নিয়ে আসছেন তারা চারটি চ্যানেলে। এগুলো হলো চ্যানেল নাইন, একুশে টেলিভিশন, গাজী টেলিভিশন এবং দীপ্ত টিভি। সবগুলো কাজই গল্প কিংবা উপন্যাসভিত্তিক। যেমন শিবব্রত বর্মণের ‘আলীবাবা এবং চার্লি চার’; মারুফ রেহমানের ‘লাবণী’; রাইদুল ইসলামের ‘চরের মাস্টার’; শাহাদুজ্জামানের ‘শহরে টুকরো রোদ’; সাদাত হোসাইনের ‘মরণোত্তম’; মাহবুব মোরশেদের ‘মিঃ কে’; জোবায়েদ আহসানের ‘কেমনে কি’। বলাই বাহুল্য, কোনোটাই পুরোপুরি সাহিত্যকে অনুসরণ করবে না। মাধ্যমগত কারণে সংযোজন এবং বিয়োজন থাকবে। আর দু’একটি ছাড়া নামও পরিবর্তন করা হয়েছে। অন্যদিকে শাহাদুজ্জামানের দুটি গল্প অবলম্বনে নির্মিত হচ্ছে ‘শহরে টুকরো রোদ’।
‘মরণোত্তম’ সম্পর্কে ভাস্কর আবেদিন বলেন, “যথোপযুক্ত আয়োজনেই আমরা টেলিফিল্মটি করছি। পরীক্ষিত নির্মাতা এবং দক্ষ অভিনয়শিল্পীরা এখানে থাকছেন। এ কথা অবশ্য সবগুলো টেলিফিল্মের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যাহোক মাধ্যমগত এবং পরিস্থিতির কারণেই এখানে কিছু পরিবর্তন থাকছে। যেমন প্রেসক্লাবের দৃশ্যটি গ্রহণ করা হবে শহীদ মিনারে। দুটি কারণে এ্টা করা হচ্ছে। প্রথমত, এখনকার প্রেসক্লাব আগের মতো নেই। এখন এর সামনে মেট্রো রেলের বড় বড় পিলার। দ্বিতীয়ত, এখন প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় মূলত শাহবাগে। আমরা শহীদ মিনারকে বেছে নিয়েছি এ কারণে যে এখানে শিক্ষকরা সমাবেশ করে থাকেন। আর আজিজ মাস্টার একজন শিক্ষক।”
আজিজ মাস্টারের ভূমিকায় কে অভিনয় করছেন? ভাস্কর আবেদিন জানালেন, এখানে চমক থাকছে। তাই বিষয়টি তারা এখনই প্রকাশ করছেন না।
পরিচালক সঞ্জয় সমাদ্দার জানিয়েছেন, টেলিফিল্মটিতে মোটা দাগে কোনো পরিবর্তন থাকছে না। তিনি মূল উপন্যাসটিকেই অনুসরণ করবেন। উল্লেখ্য, ‘মরণোত্তম’ উপন্যাসটি প্রকাশ করেছে অন্যপ্রকাশ।
Leave a Reply
Your identity will not be published.