যে নামটি শুনলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক রকস্টারের অবয়ব। যার গানে বহু রাত নির্ঘুম কেটে যায় হাজারো তরুণের। যার গান যার গানের লাইন এখনো মানুষের দুঃখ উল্লাসের খোড়াক, যে না থাকলে জমে না কোনো উৎসবের আসর। তিনি নগর বাউলখ্যাত সংগীতের কালপুরুষ জেমস। পুরো নাম ফারুক মাহফুজ আনাম জেমস। এই দিনে (২ অক্টোবর) জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই তারকা।
এই রকস্টারের জন্ম ১৯৬৪ সালে, নওগাঁয়। সেই হিসেবে আজ তাঁর ৫৯ তম জন্মদিন। বেড়ে ওঠা এবং সংগীতে জড়িয়ে পড়ার পুরোটাই চট্টগ্রামে। নগর বাউল জেমসের বাবা ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। যিনি পরবর্তীতে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
পরিবারের দ্বিমতে সংগীতচর্চা শুরু করেন জেমস। একসময় তিনি সংগীতের জন্য ঘর ছেড়ে পালিয়ে যান। ওঠেন চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিংয়ে। সেখানে থেকেই তার সংগীতের মূল ক্যারিয়ার শুরু হয়। জেমস ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ব্যান্ড ‘ফিলিংস’। তারপর ১৯৮৭ সালে প্রথম অ্যালবাম ‘স্টেশন রোড’ প্রকাশ পায়। ১৯৮৮ সালে ‘অনন্যা’ নামের একক অ্যালবাম প্রকাশ করে সুপারহিট হয়ে যান জেমস।
এরপর ১৯৯০ সালে ‘জেল থেকে বলছি’, ১৯৯৬ সালে ‘নগর বাউল’, ১৯৯৮ সালে ‘লেইস ফিতা লেইস’, ১৯৯৯ সালে ‘কালেকশন অব ফিলিংস’ অ্যালবামগুলো প্রকাশ পায়। এরপর ‘ফিলিংস’ ভেঙে জেমস গড়ে তোলেন নতুন লাইনআপে ব্যান্ড ‘নগর বাউল’। এই ব্যান্ড ‘দুষ্টু ছেলের দল’ ও ‘বিজলি’ অ্যালবাম দুটির মধ্যেই আটকে যায়।
জেমসের উল্লেখযোগ্য অ্যালবামগুলোর মধ্যে রয়েছে স্টেশন রোড (১৯৮৭), জেল থেকে বলছি (১৯৯০), নগর বাউল (১৯৯৬), লেইস ফিতা লেইস (১৯৯৮), কালেকশন অফ ফিলিংস (১৯৯৯), দুষ্টু ছেলের দল (২০০১) প্রভৃতি। জেমসের গাওয়া একক অ্যালবামগুলোর মধ্যে রয়েছে অনন্যা (১৯৮৮), পালাবি কোথায় (১৯৯৫), দুঃখিনী দুঃখ করোনা (১৯৯৭), ঠিক আছে বন্ধু (১৯৯৯), আমি তোমাদেরই লোক (২০০৩), জনতা এক্সপ্রেস (২০০৫), তুফান (২০০৬), কাল যমুনা (২০০৯)।
দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নগর বাউল জেমসের গানের জনপ্রিয়তাও বিপুল। ২০০৫ সালে বলিউডে ‘গ্যাংস্টার’ চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেন তিনি। সিনেমায় তার গাওয়া ‘ভিগি ভিগি’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। তারপর ‘লাইফ ইন এ মেট্রো’ চলচ্চিত্রে ‘রিশতে’ ও ‘আলবিদা’ দিয়ে আবার বাজিমাত করেন।
২০১৭ সালে ‘সত্ত্বা’ ছবিতে গাইতে দেখা যায়। এই ছবির ‘তোর প্রেমেতে অন্ধ আমি’ গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে, সেই বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও অর্জন করে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে উন্মাদনার আরেক নাম জেমস।
Leave a Reply
Your identity will not be published.