অমর একুশের বইমেলায় এ বছর শ্রেষ্ঠ প্যাভিলিয়নের স্বীকৃতি পেয়েছে ‘অন্যপ্রকাশ’। বাংলা একাডেমির এই পুরস্কার প্যাভিলিয়নের অঙ্গসজ্জায় নান্দনিকতার জন্য। এ জন্য সম্মানিত বিচারক ও একাডেমি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়েছে ‘অন্যপ্রকাশ’। কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে স্থপতি এস এম তাসবীরকে, যার নকশায় নির্মিত হয় প্যাভিলিয়ন।
‘সৃজনশীল প্রকাশনায় উৎকর্ষের সন্ধানে’-এই চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে যাত্রা শুরু হয় ‘অন্যপ্রকাশ’-এর। সেটা ছিল ১৯৯৭ সাল। তারপর দীর্ঘ সাতাশ বছরের পথচলায় এই চেতনাকে ‘অন্যপ্রকাশ’ লালন করেছে, চর্চা করেছে প্রতিনিয়ত। বিষয় কিংবা বিপণনের উৎকর্ষের কথা যেমন সব সময় মনে রেখেছে, তেমনি মুহূর্তকাল বিস্মৃত হয় নি নান্দনিকতার কথাও। বইয়ের প্রোডাকশন কীভাবে আরও সৌকর্যময় করে তোলা যায়, সদা সচেষ্ট থেকেছে তারা।
নান্দনিকতার এই বোধ থেকেই প্রতিবছর অমর একুশে বইমেলায় প্যাভিলিয়ন সজ্জাতেও ‘অন্যপ্রকাশ’ বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। চেষ্টা থাকে নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিকে তুলে ধরার। তারই ফলস্বরূপ কখনো প্যাভিলিয়ন হয় কার্জন হলের আদলে; আবার কখনো আহসান মঞ্জিল, বধ্যভূমি কিংবা বাঙালির মুক্তি আন্দোলন ও সংগ্রামের প্রাণকেন্দ্র বঙ্গবন্ধুর বত্রিশ নম্বরের বাড়ি।
এ বছর ‘অন্যপ্রকাশ’ প্যাভিলিয়নের মূল সুর ছিল আমাদের ঐতিহ্যের অহংকার ‘রিকশা পেইন্টিং’। আমাদের এ ঐতিহ্য সম্প্রতি বিশ্বস্বীকৃতিও লাভ করেছে। বাংলাদেশের রিকশা ও রিকশা পেইন্টিং জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। আফ্রিকার দেশ বতসোয়ানার কাসান শহরে ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ’ সংরক্ষণবিষয়ক ২০০৩ কনভেনশনের চলমান আন্তঃরাষ্ট্রীয় পরিষদের সভায় ৫ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে এই বৈশ্বিক স্বীকৃতি আসে।
এই অনন্য অর্জনের উদযাপনে তাই এ বছর ‘অন্যপ্রকাশ’ প্যাভিলিয়নের সজ্জায় থিম হিসেবে বেছে নেয় রিকশা পেইন্টিংকে। চেষ্টা করে নান্দনিক উপস্থাপনার মাধ্যমে এই শিল্পের সুষমায় জনমানুষকে সম্পৃক্ত করতে।
বলাই বাহুল্য, ‘অন্যপ্রকাশে’র এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ বহুলাংশে সফল হয়েছে। বইমেলায় আগত অজস্র পাঠক-দর্শনার্থী ‘অন্যপ্রকাশ’ প্যাভিলিয়নের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন, মোহিত হয়েছেন। সাধারণের এই ভালোবাসা ছিল সত্যিই অসাধারণ। জনমানুষের ভালোবাসা আর সেরা প্যাভিলিয়ন হিসেবে কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতি, এই দুইয়ের মেলবন্ধন সত্যিই অনন্য একটি বিষয়।
২ মার্চ বিকেলে অমর একুশে বইমেলার সমাপনী দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রেষ্ঠ প্যাভিলিয়ন হিসেবে কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। অন্যপ্রকাশের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম পরিচালক সিরাজুল কবীর চৌধুরী (কমল) এই পুরস্কার গ্রহণ করেন। তাঁর হাতে ক্রেস্ট, সনদ, পুরস্কারের অর্থমূল্য ৫০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন, প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, বিশেষ অতিথি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান ও সংস্কৃতিসচিব খলিল আহমদ।
Leave a Reply
Your identity will not be published.