আচ্ছা, ভাবুন তো! মঞ্চের ওপরে অঝোরে বৃষ্টি নেমেছে। অথবা গুরগুর করে মেঘ ডাকছে। থেকে থেকে বাজবিজুলি হানা দিচ্ছে আকাশের বুকে! ছাতা হাতে (নেহায়েত না-পাওয়া গেলে কচুপাতা মাথায় হলেও চলবে) ছোটাছুটি করছেন নটনটীর দল। নায়িকা বেচারি ছাতা নিয়ে বের হন নি কি-না, তাই একেবারে চুপ্পুস। কাপড়জামা ভিজে কাদা। দেখতে পেয়ে এগিয়ে এলেন নায়ক। দুজনের চোখাচোখি হলো। নায়কের চোখ সরছে না। কী ভেবে নায়িকা চোখ নামিয়ে নিলেন। তারপর শরমে লাজে রাঙা হয়ে নায়কের হাতে ধরা ছাতার নিচে এসে দাঁড়ালেন। দুজনের নিঃশ্বাস দুজনে অনুভব করতে পারছেন এমন নৈকট্য রচনা হয়ে গেল। এবারে প্রেমের পদাবলি গলায় উঠে এলেই ষোলো কলা পূর্ণ হয়।
সিনেমায় এমনটা হামেশাই ঘটে। বাংলা তো আছেই, মুম্বাইয়ের হিন্দি ছায়াছবিতে এমন ধারার সিকোয়েন্স যে কত শত আছে গুনে শেষ করা যাবে না! রেইন আর রোমান্স যেন মানিকজোড় সেখানে! পড়তে পড়তে আপনার মনের ভেতরঘরের একের পর এক পরত খুলে যাচ্ছে, তাই না? কত স্মৃতি কত সুরভি জমছে।
লিখতে বসে আমারও মনে দুটো গান এল। প্রথমটা অনেক দিন আগেকার ‘শ্রী ৪২০’ (১৯৫৫ খ্রি.) ছবির। স্টুডিয়োতে তোলা সিকোয়েন্স। ছাতার তলায় কাছাকাছি এসে পড়েছেন রাজ কাপুর আর নার্গিস। মান্না দে-র গলা ধার করে রাজ গাইছেন, ‘প্যার হুয়া ইকরার হুয়া হ্যায়/ প্যায় সে ফির কিঁউ ডরতা হ্যায় দিল?’ নতমুখী নার্গিস এবারে সলজ্জ ভঙ্গিতে মরালগ্রীবা তুলে লতা মঙ্গেশকরের গলায় বলছেন, ‘কেহতা দিল রাস্তা মুশকিল/ মালুম নেহি হ্যায় কাঁহা মঞ্জিল!’ সংগীত কীভাবে সংলাপময় হতে পারে, তার পরম দৃষ্টান্ত শৈলেন্দ্রর লেখা, আর শঙ্কর-জয়কিষেনের সুর করা এই গানটা। এ গান আমাদের মনে আরও দোলা দিয়ে যায় কারণ এই সুরের মধ্যে বুনে দেওয়া আছে ভৈরবীর চলন। এই চলনে আমাদের শোনা শেখা গাওয়া অসংখ্য গানের সঙ্গে মিলে যায় বলে আরও আপনার লাগে। আরেকটা গান মণিরত্মমের ‘গুরু’ (২০০৬ খ্রি) ছায়াছবির। শ্রেয়া ঘোষালের প্লেব্যাকে ‘বরসো রে মেঘা মেঘা’ গাইতে গাইতে নাচতে নাচতে রুপোলি পর্দা একেবারে ভিজিয়ে দিচ্ছেন ঐশ্বর্য রাই। কেরল-কর্ণাটকের পাহাড়ি এলাকায় নৃত্যরত নায়িকার ভাব-উচ্ছ্বাস যেন কলাপের মতো ছেয়ে ফেলেছে মেঘলা আকাশকে। এই গানেই আছে গুলজারের কলম থেকে বেরোনো সেই অবিস্মরণীয় পঙ্ক্তি ‘মিঠা হ্যায় কোসা হ্যায়/ বারিষ কা বোসা হ্যায়’। যার বাংলা করলে দাঁড়ায়—এই বৃষ্টির এই আদর বড়ই মিঠে বড়ই মুচমুচে। আল্লারাখা রহমানের সুরে মাতোয়ারা এই গান শৃঙ্গারের এত স্তর ছুঁয়ে ফেলে, সিনেম্যাটোগ্রাফার রাজীব মেননের ক্যামেরা এমন সূক্ষ্মতায় ছুঁয়ে ফেলে সঙ্গমের মাদক উচ্চতা যে ওই মণিকাঞ্চনযোগ যে-কোনো রসিক মানুষকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
থিয়েটারে এমনটা ঘটাতে গেলে ঢাকের দায়ে মনসা বিকোনোর দশা হবে। তাই স্টেজে এমন বৃষ্টি নামে না। সাত মণ তেল পোড়ালে রাধা নাচবে না তাও কি হয়? কিন্তু মুশকিল হলো, তেলের দাম জোগাবে কে? যেখানে জোগান দেওয়ার লোক আছে, যেমন ধরুন মার্কিন মুলুকের থিয়েটার পাড়া ব্রডওয়েতে কিংবা লন্ডনের থিয়েটার পাড়া ওয়েস্ট এন্ডে, যেখানে ৩০০ ডলার কিংবা ২০০ পাউন্ডের টিকেট কেটে থিয়েটারে যাওয়াটাই রেওয়াজ, সেখানে এমন মুষলধারে বৃষ্টি নামতেই পারে স্টেজের ওপরে। ‘সিঙ্গিং ইন দ্য রেইন’ নামে হলিউডের এক বাণিজ্যসফল ছায়াছবির ওয়েস্ট অ্যান্ড সংস্করণ তৈরি হয়েছিল ১৯৮৩ সালে। ঐতিহাসিক সেই প্রযোজনা যে কতবার নবীকৃত হয়েছে, এখনো হয়ে চলেছে, তা বলে শেষ করা যাবে না।
তাই বলে আমরা কি ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখব? আমাদের তো মানতেই হবে যে কয়েকটা ব্যাপারে থিয়েটারকে ছাপিয়ে গেছে সিনেমা। এর একটা যদি হয় প্রযুক্তি, আরেকটা হলো বিনিয়োগ। কাজেই আমাদের মঞ্চনাটক যতই ব্রিটিশ ঘরানার প্রসেনিয়াম থিয়েটারের তাঁবেদারি করুক না কেন, মেঘের ডাক সে ছাড়তে পারে, বৃষ্টি নামানো তার সাধ্যে কুলোয় না।
এ তো অর্থনীতির দিক। আরেকটা দিক আছে। সেটা নান্দনিক দিক। যার মধ্যে লুকিয়ে থাকে আর্টিস্টিক চয়েসের প্রশ্ন। এস্থেটিক প্যারামিটারের গজফিতে। শতখানেক বছর আগে, ‘রঙ্গমঞ্চ’ নামের এক স্মরণীয় রচনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে আমাদের দেশের নাটকে চিত্রপটের চাইতে চিত্তপটের প্রাধান্য স্বীকৃত। আমরা দৃশ্যকাব্যর সংস্কৃতির লোক। আমরা কল্পনাবৃত্তিকে যত গুরুত্ব দিই, বাস্তবতাকে দিই না। তাই বাংলার ঐতিহ্যবাহী নাটকে মঞ্চসজ্জার বালাই বড় একটা নেই। ইদানীংকালের মঞ্চনাটকে যদিও বা সেট ডিজাইনারের অনেক কারসাজি থাকে, তিনিও জানেন যে, নদীর পাড়ের দৃশ্যরচনায় এক জল কিংবা পানির কোনো দরকার পড়ে না, নেপথ্যে কুলকুল আওয়াজ আর প্রেক্ষাপটে প্রসেনিয়ামের এ-মাথা থেকে ও-মাথা অবধি টানা কাপড়ের দুলুনিতেই নদী আপনবেগে পাগলপারা হয়। তাছাড়া আমাদের মধ্যবিত্ততোষ নাটকের আট আনাই চার দেয়ালের মধ্যে কাটে। মূলত ইবসেন-চেকভের ঘরানার রিয়ালিস্টিক নাটক আর স্তানিস্লাভস্কি ঘরানার নাট্যায়ন—এ নিয়েই আমাদের সাজানো সংসার। কথাই সেখানে প্রধান। দৃশ্য নিছক প্রসাধনী। খোলা আকাশের তলায় যাওয়ার ফুরসত যেখানে নেই বললেই চলে, সেখানে নাটক যত গর্জায় তত বর্ষায় না।
প্রসেনিয়াম থিয়েটারের আরেক সীমাবদ্ধতা তার নাগরিক চরিত্রে। উপনিবেশের আমল থেকে ঐতিহাসিক বা পৌরাণিক ধারার যে নাটক আমাদের মঞ্চে এসেছে, তাতে প্রকৃতি বা পরিবেশ নেহায়েত পার্শ্বচরিত্র হতে পেলেই বর্তে গেছে। এখনকার সমাজসম্পৃক্ত বা রাজনৈতিক ভাবনার নাটকেও এর বড় একটা হেরফের হয় নি। প্রেম আমাদের সিনেমার প্রধান উপজীব্য, থিয়েটারের নয়। রোমান্টিক কমেডি বলে যে নাট্যধারা শেকসপিয়ারের লন্ডনে কি বার্নার্ড শ-র ডাবলিনে এককালে ছিল, তারও কপাল পুড়িয়েছে গেল শতাব্দ। এর আঁচ থেকে বাঁচে নি আমাদের মঞ্চনাটক। পরিবেশ আর প্রেমই যদি থিয়েটার থেকে উবে যায়, বর্ষা তবে আসবে কোন পথে?
এরই জন্য পথ কেটেছিলেন সেই রবীন্দ্রনাথ। সেই যে সাহেবি ধাঁচের ইশকুলকে কাঁচকলা দেখিয়ে শান্তিনিকেতনের বুকে প্রকৃতিবান্ধব পরিবেশে এক পাঠভবন খুললেন রবীন্দ্রনাথ, তার অঙ্গাঙ্গী হয়ে রইল ঋতু উৎসব। এই সুবাদে জন্ম নিল এক গীতিনাট্য, যার নাম ‘বর্ষামঙ্গল’। এতে গান আছে, নাচ আছে, কবিতা বলা আছে। আলগা এক আখ্যান আছে। তিলোত্তমাশিল্পের আরও অন্যান্য আভরণ—মঞ্চসজ্জা, বেশভূষা, রূপসজ্জা, আলোক পরিকল্পনা—সবই আছে। যা নেই, তা হলো সংলাপ। রবীন্দ্রজীবনীকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় লিখেছিলেন, “জোড়াসাঁকোর বাড়ির প্রাঙ্গণে বর্ষামঙ্গলের যে উৎসব অনুষ্ঠিত হইল (১৭, ১৮ ভাদ্র ১৩২৮), বাংলার চারুকলার ইতিহাসে সেটি একটি বিশেষ ঘটনা। এই দিনে যে কেবলমাত্র রবীন্দ্র-সংগীতের জলসার সূত্রপাত তাহা নহে– ঋতু-উৎসবও যে জীবনের অন্যতম আনন্দ-অনুষ্ঠান, সেদিন বাঙালি শিক্ষিত-সমাজ তা বুঝিল।” সত্যি কতটা বুঝেছিল এ নিয়ে তর্ক জোড়া যায়, তবে এ-কথা সত্যি যে শুধু জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি নয়, শান্তিনিকেতনে, এমনকি কলকাতার পাবলিক থিয়েটারেও রমরমিয়ে মঞ্চস্থ হয়েছিল ‘বর্ষামঙ্গল’। পরে তারই রূপভেদ ঘটে ‘শেষবর্ষণ’, ‘শ্রাবণগাথা’ ইত্যাদি তৈরি হয়। এ সবেরই মূলে ছিল গান এবং নাচ। রবীন্দ্রসংস্কৃতির আধুনিক পীঠস্থান কলকাতা কিংবা ঢাকায় সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে। কলকাতায় রবীন্দ্র সদন মঞ্চে কিংবা ধানমন্ডিতে ছায়ানটের মিলনায়তনে আজও সাড়ম্বরে উদ্যাপিত হচ্ছে ‘বর্ষামঙ্গল’। নাগরিক বাঙালি যত ক্লান্ত হচ্ছে, শ্রান্তি বোধ করছে দৈনন্দিনের জাঁতাকলে, তত আরও প্রাসঙ্গিকতা পাচ্ছে এ ধরনের অনুষ্ঠান। একে মঞ্চনাটকের খোপে আঁটতে না পারলেও নাটক বলতে আমাদের বাধছে না।
কারোর কাছে এ-কথা সান্ত্বনাবাক্যের মতো শোনাতে পারে, কারণ বিশ কিংবা একুশ শতকের মঞ্চনাটকের আর কোনো রূপকার বাংলা ভাষায় বর্ষা নিয়ে স্মরণীয় কোনো রচনা করেন নি। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় থেকে শুরু করে বাদল সরকার, মনোজ মিত্র, সৈয়দ শামসুল হক, মোহিত চট্টোপাধ্যায়, আবদুল্লাহ আল মামুন, মামুনুর রশীদ, সেলিম আল দীন— কারোর নাটকে বর্ষা নেমেছে বলে মনেই পড়ে না। চরিত্র হয়ে না আসুক, পটভূমিতেও তো থাকতে পারত বর্ষা, যেভাবে এসেছিল কালিদাসের কবিতা ‘মেঘদূতম্’-এ। অগত্যা এই ‘মেঘদূতম্’ থেকেই নানান রকমের বঙ্গীকরণ-সাঙ্গীকরণের রসায়নে তৈরি হয়েছে কিছু নাটক। কলকাতার মণীশ মিত্র একাধিকবার এ কাজে ব্রতী হয়েছেন। সংস্কৃত নাট্য ঐতিহ্যের পুনর্নিমাণে ক্রমশ পটু হয়ে ওঠা পিয়াল ভট্টাচার্যও হাত রেখেছেন কালিদাসের হাতে। আদতে প্রেমেরই নাটক। বিরহী যক্ষ আর যক্ষপ্রিয়ার আহত প্রেম এর আকর। রামগিরি পাহাড়ের নির্বাসন থেকে যক্ষ তাঁর প্রিয়াকে উদ্দেশ করে একের পর এক চিঠি লিখছেন। ডাকবাক্সের আগের আমল, তাই মেঘপিয়নের ব্যাগের ভেতর পুরে দিচ্ছেন মনখারাপের দিস্তা। কালিদাসের ‘শকুন্তলা’র মতো দুনিয়াজোড়া নামডাক না হলেও বাঙালির বড় প্রিয় এই ‘মেঘদূতম্’। এর নাট্যরূপটিও আমাদের নাড়া দিচ্ছে। এরই অনুষঙ্গে একটি হিন্দি নাটক এখন বাঙালির মনে ধরেছে। মোহন রাকেশের ‘আষাঢ় কা একদিন’ (১৯৫৮ খ্রি)। ঘটনাচক্রে এ নাটকের জন্ম কলকাতায় হলেও ভারতজুড়ে হিন্দিভাষী সব প্রদেশে মডার্ন ক্ল্যাসিকের মোহর লেগেছে এর গায়ে। ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে’ নামে ঢাকায় এর প্রথম সার্থক মঞ্চায়ন করেছেন অলোক বসু, সদ্যোজাত থিয়েটার ফ্যাক্টরি দল থেকে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপিরিমেন্টাল থিয়েটারে এ নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন শুরুই হয়েছিল মেঘের গর্জন দিয়ে, সেতারে-সরোদে মল্লারের মূর্ছনায়, ‘শাওন গগনে ঘোর ঘনঘটা’র রাবীন্দ্রিক চলনে। বর্ষা নেমেছিল আকাশজুড়ে। তার অভিঘাত কীভাবে পড়েছিল কালিদাস, তস্য প্রেমিকা মল্লিকা, মল্লিকার মা অম্বিকা ও অন্যান্যদের মধ্যে— এই ছিল নাটকের সূত্রপাতের আবহাওয়া। তারপর বর্ষা নেমেছিল প্রেমিকার বুকের আগল ভেঙে। বর্ষা নেমেছিল চোখের কোল বেয়ে, ভিজিয়ে দিয়েছিল ভূর্জপত্র। বিরহ আর বর্ষার যে চিরায়ত দাম্পত্য— তাই যেন অকরুণ সম্বন্ধ পেতেছিল মঞ্চজুড়ে। আজও পাতে। কোভিড-১৯ অতিমারীর কবল থেকে বেরিয়ে এসে বাংলাদেশের সর্বত্র গিয়েছে ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে’। গেছে কলকাতায়, পাটনায়, ভুবনেশ্বরে। প্রেমকে ফিরিয়ে এনেছে আধুনিকতার আয়তনে।
না-হয় আমাদের নাটককারেরা বর্ষার মধ্যে নাট্যরস পান নি, তাই বলে একেবারেই ভেজে নি আমাদের রঙ্গমঞ্চ? ভিজেছে। মনে পড়ছে রিচার্ড ন্যাশ নামে এক মার্কিন নাটককারের ‘দ্য রেইনমেকার’-এর কথা। মধ্যবিত্ত বাড়ির এক অবিবাহিতার মনের অলিগলি নিয়ে শুরু হয়ে এই নাটক গড়িয়ে গিয়েছিল এক জাদুকরের দিকে, যে তাপিত পৃথিবীর বুকে বৃষ্টি নামাবে বলে কথা দিয়েছিল। অসিত দে-র রূপান্তরে এ নাটক করেছে পশ্চিমবঙ্গের কোনো কোনো দল, যেমন শান্তিপুর সাংস্কৃতিকের ‘বৃষ্টি বৃষ্টি’। সাড়া ফেলেছে এমন নয়। মেঘে মেঘে ভেসে ভেসে একদিন বাংলাদেশেও আসবে সেই নাটক। কে বলতে পারে, ভাসিয়ে দেবে না পদ্মার পাড়?
Leave a Reply
Your identity will not be published.