[সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। আকাশের মতোই তাঁর নানা রূপ। কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, ভ্রমণকাহিনি রচয়িতা, সমালোচক, সম্পাদক...। প্রায় সাড়ে তিন শ’ গ্রন্থের লেখক। আর শুধু লেখার জন্যই সুনীল লিখেন নি, প্রতিটি ক্ষেত্রে রেখেছেন নিজস্ব স্বাক্ষর; যোগ করেছেন নতুন মাত্রা। একদা হরবোলা গোষ্ঠীর হয়ে কয়েকটি নাটকে অনবদ্য অভিনয়ও করেছিলেন। ছাত্ররাজনীতি করেছেন। কলকাতার শেরিফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন একসময়। সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ছিল নাড়ির যোগ। তিনি ছিলেন এই মাটিরই সন্তান। ২৩ অক্টোবর, তাঁর ১২তম প্রয়াণ দিবস। এ উপলক্ষে এই সাক্ষাৎকারটি পুনর্মুদ্রিত হলো। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছিলেন কাজল রশীদ শাহীন।]
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, প্রথিতযশা সাহিত্য ব্যক্তিত্ব—কবিতা-গল্প-উপন্যাস-ভ্রমণকাহিনি-প্রবন্ধ-নিবন্ধ, সমালোচনা, নাটক—সবক্ষেত্রই সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর জাদুকরী ছোঁয়ায়। ...তাঁর সঙ্গে ‘অন্যদিন’ একান্ত সাক্ষাৎকারে মিলিত হয়। যার নির্বাচিত অংশ এখানে তুলে ধরা হলো।
কাজল রশীদ শাহীন: লেখালেখি ছাড়া আপনার বর্তমানের দিনগুলো কীভাবে কাটছে?
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়: লেখালেখির বাইরে যতটা সম্ভব সমাজসেবামূলক কাজের চেষ্টা করি। আমাদের একটি প্রতিষ্ঠান আছে ‘পথের পাঁচালী সেবা সমিতি’ নামে। বন্ধা বলে একটি সীমান্ত জায়গায় অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের শিক্ষাদীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। বিশেষ করে মেয়েদের স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য কিছু প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। যার সঙ্গে আমি ও আমার স্ত্রী জড়িত। আমি প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি আর আমার স্ত্রী সেক্রেটারি।
কাজল রশীদ শাহীন: তাহলে তো ওটা আপনাদেরই সংগঠন!
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়: হ্যাঁ। তবে সংগঠনে আমরা কোনোরূপ বাইরের সাহায্য নিই না। বাইরের সাহায্য নিলে অবিশ্বাসের জায়গাটা প্রবল হয়ে ওঠে। অনেকে তখন মনে করে, প্রচুর অর্থকড়ি বাইরে থেকে নেয়া হচ্ছে কিন্তু সহায়-সম্বলহীনদের মাঝে সেই তুলনায় কিছুই দেয়া হচ্ছে না। অবশ্য ‘পথের পাঁচালী সেবা সমিতি’ এনজিও ব্যুরোর রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত। সংগঠনটি চলে মূলত বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে নেয়া সাহায্য-সহযোগিতার ওপর।
কাজল রশীদ শাহীন: কলকাতার শেরিফ হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতির কথা বলুন।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়: শেরিফ হচ্ছে সম্মানসূচক একটি পদ। এই দায়িত্ব আমাকে দেয়াতে আমার অবশ্য খুব হাসি পেয়েছিল। হাসির কারণ হলো, আমি তো পূর্ববঙ্গ অর্থাৎ এপার বাংলা থেকে গিয়েছি। সেই হিসেবে আমি তো রিফিউজি। তো একজন রিফিউজি হলো কলকাতার শেরিফ। এটা কখনো হয়! আমার তো মনে হয়েছিল, ভুল করে ফেলেছে বুঝি!
কাজল রশীদ শাহীন: সম্মানসূচক পদ হলেও আপনার তো বেশকিছু দায়িত্ব ছিল। সে সম্পর্কে বলুন।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়: দায়িত্বগুলো প্রধানত ছিল সভা-সমিতিতে যাওয়া। ‘ঢাল নেই, তলোয়ার নেই, নিধিরাম সর্দার’ হলে যেমন হয়, আমার হয়েছিল সেই দশা। নামেই শেরিফ, কিন্তু ক্ষমতা কিছুই নেই।
কাজল রশীদ শাহীন: ইতিমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি যে, আপনি ভারতের লোকসভার সদস্য হিসেবে মনোনীত হতে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে কিছু বলুন।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়: এটা তো একটা গুজব।
কাজল রশীদ শাহীন: শুধুই গুজব?
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়: আমি যেহেতু লিখিতভাবে কিছুই পাই নি, সেহেতু গুজব ছাড়া অন্যকিছু বলতেও পারব না। ওইভাবে অবশ্য মনোনীত করা হয় শিল্পী-সাহিত্যিকদের মধ্যে থেকে। কিছুদিন আগে মৃণাল সেনকে মনোনীত করা হয়েছিল। এখন ওনার সময়টা শেষ হয়ে এসেছে। এরপরে কে হবে জানা যায় নি।
কাজল রশীদ শাহীন: আপনি যাকে গুজব বলছেন সেই দায়িত্ব যদি আপনাকে দেয়া হয়, নেবেন?
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়: হ্যাঁ, দায়িত্বটা আমি নেব। কেননা ওখানে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। ওটা হলে প্রতিবছর দুই কোটি টাকা আমি খরচ করতে পারব আমার ইচ্ছেমতো। সেটা যদি আমি হই, তাহলে ওই টাকাটা দিয়ে গ্রামের অনেক কাজ করতে পারব। আমার সংগঠন ‘পথের পাঁচালী সেবা সমিতি’ যেখানে কাজ করে ওখানে রাস্তা নেই, পানীয় জল নেই, বিদ্যুৎ নেই, সেখানে আমি যতটুকু পারি সাহায্য করতে পারব।
কাজল রশীদ শাহীন: সে ক্ষেত্রে আপনাকে কি কোনো পলিটিক্যাল বাইন্ডিংসের ভেতর যেতে হবে না?
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়: না। আমাকে কোনোরূপ পলিটিক্যাল বাইন্ডিংসের ভেতর যেতে হবে না। যেহেতু এগুলো মনোনীত পদ সেহেতু এখানে কোনো ধরনের সীমাবদ্ধতা নেই। এরা কোনো রাজনৈতিক দলের নয় তো, এরা যে-কোনো জায়গায় টাকাটা খরচ করতে পারে। যারা নির্বাচিত তারা শুধু নিজের এলাকাতে কাজ করতে পারে। কিন্তু মনোনীতদের এরূপ ধরাবাঁধা কোনো নিয়মনীতি নেই।
কাজল রশীদ শাহীন: শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির মানুষদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়: রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত হলে শিল্প-সংস্কৃতি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আমি মনে করি, প্রশাসন বা রাজনীতিতে যোগ দেয়া উচিত নয়। এতে তাদের মূল কাজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। রাজনীতি মানে তো দলীয় রাজনীতি।
কাজল রশীদ শাহীন: এটা কি এই উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটে বলছেন?
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়: শুধু উপমহাদেশ কেন, পৃথিবীর সর্বত্র— রাজনীতি মানে দলীয় রাজনীতি। দলের সিদ্ধান্তে অনেক সময় আদর্শিক জায়গার তুলনায় বেশি থাকে ক্ষমতা দখলের কৌশল। সেখানে প্রচুর মিথ্যা কথা বলতে হয়। সৃজনশীল মানুষদের এসবের মধ্যে না যাওয়াটাই ভালো।
কাজল রশীদ শাহীন: ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ হুমায়ূন আহমেদের মুক্তিযুদ্ধের এই উপন্যাসটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য আপনার এবারের ঢাকায় সফর। বইটি সম্পর্কে আপনার অভিমত জানতে চাচ্ছি।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়: হুমায়ূনের ‘নন্দিত নরকে’ থেকেই আমি তাঁর লেখার নিয়মিত না হলেও একজন নিবেদিতপ্রাণ পাঠক, তাঁর ‘জোছনা ও জননীর গল্প’র অর্ধেকের মতো পড়েছি। বাকিটা পড়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি। হুমায়ূনের ভাষায় একটা টান আছে, আরম্ভ করলে ছাড়া যায় না। এই পর্যন্ত মনে হয়েছে যে, হুমায়ূন আহমেদ একটা বড় কাজ করেছেন। হুমায়ূনের লেখার বড় সার্থকতা হলো, লেখার প্রসাদগুণ অসাধারণ। সবাই পড়ে। ধরলে ছাড়া যায় না এবং তরুণ-তরুণীরাও এটা পড়বে বলে আশা করছি। এর ফলে মুক্তিযুদ্ধের সুন্দর ইতিহাস এবং ছবি পাবে; যেটা এখন অনেকে ভুলে গেছে কিংবা অনেক কিছু ভুল জানে। সেগুলো একজন বিশিষ্ট লেখকের কলমে নতুন করে জানা যাবে।
কাজল রশীদ শাহীন: ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাসে ইতিহাসের নির্যাস যখন একজন ঔপন্যাসিকের কলমে উঠে আসে তখন ইতিহাসের সারাৎসার কি খণ্ডিত হয়ে যায় না?
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়: খণ্ডিত হয়ে যায় কি? রবীন্দ্রনাথ তো অনেক আগেই বলেছেন— ‘সেই সত্য যা রচিবে তুমি, ঘটে যা তা সব সত্য নহে। /কবির মনোভূমি রামের জন্মস্থান, অযোধ্যার চেয়ে সত্য জেনো’। হুমায়ূন আহমেদের ‘জোছনা ও জননীর গল্প’র প্রসঙ্গে বলতে হয়, এতে কাহিনির জোর অত্যন্ত বেশি। ইতিহাসের পটভূমিকাটাকে কেন্দ্র করে কাহিনির জোর দিয়ে লিখেছে। আমার তো মনে হয়, এ কারণে বইটি অনেক বেশি আকর্ষণীয় হবে।
কাজল রশীদ শাহীন: আপনার ‘পূর্ব-পশ্চিম’, ‘সেই সময়’, ‘প্রথম আলো’র মতো উপন্যাসগুলো ইতিহাসের প্রেক্ষাপটকে ঘিরে আবর্তিত। এখানে দেখা যাচ্ছে ইতিহাসবেত্তা না হয়ে ঔপন্যাসিক ইতিহাসের পুনরাবর্তন ঘটিয়েছেন। তো এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়: আমি ইতিহাস ভালোবাসি। ইতিহাস পুনঃর্নির্মাণ করতে আমার সব সময়ই ইচ্ছে করে, আর এ কারণেই কাজটি করে থাকি। আমি সত্যি সত্যি ইতিহাসবিদ তো নই, আমি হলাম শখের ঐতিহাসিক। ইতিহাসের নানারকম বই পড়াশোনা করে সেই সময়টাকে তুলে ধরার চেষ্টা করি।
কাজল রশীদ শাহীন: আপনি অর্ধেক জীবন যেমন পেরিয়ে এসেছেন, অন্যদিকে ‘অর্ধেক জীবন’ গ্রন্থাকারেও বেরিয়েছে। একজন সব্যসাচী লেখক হিসেবে আপনি সমধিক পরিচিত। কবিতা ও উপন্যাসে আপনি সমানভাবে সিদ্ধহস্ত...।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়: এমন তো হতে পারে, আদতে আমি কোনোটাতেই ভালো নই। হা... হা... হা...।
কাজল রশীদ শাহীন: আমি বলতে চাচ্ছি, আপনি পূর্বের সময়বিচারে এই সময়ে উপন্যাসের মতো কবিতার প্রতি নিবেদিত নন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এর কি কোনো কারণ রয়েছে?
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়: কবিতাও তো লিখে যাচ্ছি। আমার তো মনে হয় যে, কবিতা না লিখে আমার পক্ষে থাকাও সম্ভব নয়। গদ্য একটু বেশি সময় নিয়ে লিখতে হয়, কবিতার চেয়ে গদ্যের জন্য অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়। কবিতা না লিখে বেঁচে থাকাও সম্ভব নয়। বেরোচ্ছে আমার কবিতার বইও তো নিয়মিত।
কাজল রশীদ শাহীন: দাদা, নীরার রহস্য কি কখনো উন্মোচিত হবে না? নীরার বয়স এখন কত দাদা?
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়: তোমার শেষ প্রশ্নের উত্তরটা আগে দিই। নীরার বয়স জানতে চাচ্ছ তো, নীরার এখনকার বয়স হলো—হা... হা.. হা...। তুমি বড্ড চালাক, তোমাকে বলি, তুমি কি জানো না, মেয়েদের বয়স জানতে নেই? আর নীরার রহস্যের কথা বলছ, একজীবনে এই রহস্যটা না হয় নাই-বা উন্মোচিত হলো। রহস্যটা থেকেই যাক।
কাজল রশীদ শাহীন: আপনার অটোবায়োগ্রাফিতেও কি নীরার রহস্য উন্মোচিত হবে না?
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়: না, অটোবায়োগ্রাফিতেও নীরার রহস্য উন্মোচিত হবে না। নীরার কথা নীরার কবিতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। গদ্যে কিংবা মুখের কথায় ওটা প্রকাশ করা যাবে না। কবিতা দিয়ে যতটুকু বোঝা যায়, ততটুকুই হবে।
কাজল রশীদ শাহীন: বর্তমানে কী ধরনের লেখার কথা ভাবছেন?
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়: সাম্প্রতিক কালের ইতিহাস নিয়ে একটা লেখার পরিকল্পনা অনেকদিন ধরে মাথায় রয়েছে।
কাজল রশীদ শাহীন: একটু বিস্তারিত বলবেন কি?
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়: এটাও একটি ইতিহাস আশ্রিত লেখা। ১৯৭০ সাল থেকে কাহিনি শুরু হবে।
কাজল রশীদ শাহীন: ১৯৭০ সালকে চিহ্নিত করলেন কেন?
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়: ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্ম হলো। ওটা একটা নতুন অধ্যায় আমাদের দেশের বা এই উপমহাদেশের ইতিহাসে। তো সেখান থেকেই তার পরবর্তীকালের কথা শুরু করব মনে করছি। পশ্চিম বাংলায় এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া কী সেটাও উঠে আসবে। এইসব মিলিয়ে লেখার ভাবনাটা কেবল তৈরি হয়েছে। এখন পড়াশুনা করতে হবে। তাই একটু সময় লাগবে।
কাজল রশীদ শাহীন: ইতিহাস যখন ঔপন্যাসিকের কলমে আসে তখন ইতিহাসের প্রকৃত নির্যাস কি থাকে?
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়: আমার মনে হয় ইতিহাসের তথ্য বিকৃতি করা কোনোভাবেই উচিত না। কিন্তু তার সঙ্গে তো কল্পনা মেশাতে হয়। তা না হলে উপন্যাস হয় না। সেটা তো তাহলে প্রবন্ধের বই হয়ে যায়। ইতিহাসের সঙ্গে কল্পনা মেশাতে হয়, বিভিন্ন চরিত্র আনতে হয়, যেগুলো কাল্পনিক চরিত্র। বাস্তবের কাছাকাছি কিন্তু কাল্পনিক চরিত্র। সংলাপ আনতে হয়, উপন্যাস সংলাপ ছাড়া হয় না। ইতিহাসে সংলাপ থাকে না। উপন্যাস আর ইতিহাসের মূল তফাতটা এখানে।
কাজল রশীদ শাহীন: লেখালেখিতে আপনার কোনো রুটিনমাফিক সময় আছে কি?
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়: আমি সাধারণত সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বসি এবং এই সময়ের মধ্যে লেখার চেষ্টা করি। সন্ধ্যা কিংবা রাত্রিবেলায় আমি সাধারণত লিখি না। খুব চাপ থাকলে হয়তো কখনো কখনো লিখতে হয়। বাকি সময়টা আমি পড়াশোনা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
কাজল রশীদ শাহীন: ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’র মতো ভ্রমণকাহিনিমূলক লেখাতে আপনি রহস্যের ভেতর দিয়ে চরিত্রগুলোকে এগিয়ে নেন। এই রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে থেমে যান। বলা যায় ব্রেক কষে দেন। এটা কেন?
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়: পাঠকের মধ্যে একটা তৃষ্ণা জাগিয়ে রাখার জন্য এটা করতে হয়। তৃষ্ণা জাগিয়ে রাখা তো ভালো। বাকিটা পাঠক নিজের মতো করে কল্পনা করে নেবেন। সব কখনোই বলে দিতে নেই।
কাজল রশীদ শাহীন: এ ধরনের ভ্রমণ কাহিনিমূলক লেখার নতুন কোনো প্রেক্ষাপট নিয়ে কি ভাবছেন?
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়: লিখব তো, আমার যা মাথায় আসে তাই নিয়ে লিখব। লিখেছি ‘বিজনে নিজের সঙ্গে’ বলে একটি বই। আমি দক্ষিণ আমেরিকায় গিয়েছিলাম, সেখানে কলম্বিয়া বলে একটা জায়গা আছে, তার অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছি। চীনে গিয়েছি, চীন সম্পর্কে এখনো লেখা হয় নি। হয়তো কোনো একসময় লিখব।
কাজল রশীদ শাহীন: সেটা কি উপন্যাসের ফর্মেই হবে?
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়: উপন্যাসই যে হবে তা নিশ্চিত করে এখন বলা সম্ভব নয়। ভ্রমণকাহিনিও হতে পারে।
কাজল রশীদ শাহীন: দীর্ঘ জীবন পাড়ি দিয়ে ফরিদপুরে নিজের জন্মভিটায় গিয়েছিলেন আপনি। সেই সময়ের অভিজ্ঞতা বলুন।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়: সেখানে মানুষজনের ব্যবহার অনেক ভালো লেগেছে। আমাকে তো একপ্রকার জোর করে ধরে নিয়ে গেছে। সকলেই খুব বেশি আন্তরিক। জায়গাটা মুখ্য নয়, মানুষগুলোই খুব ভালো লেগেছে।
কাজল রশীদ শাহীন: বসতভিটার জমিটা নাকি ফেরত দেওয়া হবে?
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়: সেটা নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই। দু’ একজন পাগলামি করছে। সেটা তাদের ব্যাপার।
কাজল রশীদ শাহীন: এ দেশের নন্দিত ঔপন্যাসিক-নাট্যকার-চলচ্চিত্র পরিচালক হুমায়ূন আহমেদ পত্রিকায় একটি লেখার মাধ্যমে আপনার নাগরিকত্বের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়: ওটা লিখেই হুমায়ূন আমাকে সম্মানিত করেছে। এখন হোক বা না হোক সেটাতে কিছুই আসে যায় না। ও যে লিখেছে এবং তোমরা যে মুখে বলছ, তাতেই আমি সম্মানিত বোধ করছি। ওটা বাস্তবায়ন হওয়া-না হওয়াতে কিছুই আসে যায় না। মুখে বলছ, তাতেই আমি সম্মানিত বোধ করছি। ওটা বাস্তবায়ন হওয়া-না হওয়াতে কিছুই আসে যায় না।
Leave a Reply
Your identity will not be published.