বর্ষায় টিব্যাগ স্টোরিস

বর্ষায় টিব্যাগ স্টোরিস

কাজের ফাঁকে হঠাৎ দেখলেন আকাশ কালো করে মেঘ করেছে, একটু হলেও তা আপনার মনকে নাড়া দিবে। দিবে না ? আবার ব্যস্ত রাস্তায় হাজারো ব্যস্ততা কাঁধে নিয়ে চলার পথে যখন লাল কমলায় ছেয়ে যাওয়া কৃষ্ণচূড়ার দিকে চোখ যাবে তা একটু হলেও আপনার মনকে চাঙা করবে। সারা দিনের ক্লান্ত শরীরে ঘরে ফেরার সময় মাথার উপরে হলুদ থালার মতো মস্ত একটা চাঁদ দেখলে একবার হলেও প্রিয়জনকে বলতে ইচ্ছা হবে, ‘দেখো কী সুন্দর পূর্ণিমা!’ ছোটবেলার পুরোনো বন্ধুর সাথে বসে স্মৃতিচারণ  কিছুক্ষণের জন্য হলেও আপনার মনকে ফুল চার্জড করে দিতে পারে। গোছগাছ করতে গিয়ে প্রিয় কোনো গল্পের বই পেয়ে যাওয়া, সুন্দর একটা নাটক বা সিনেমা দেখে কিছু সময় তার রেশের মধ্যে থাকা, অঝোরে বৃষ্টি ঝরার দিনে পছন্দের রবীন্দ্রসংগীত শোনা, এরকম অসংখ্য ছোট ছোট অথচ গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত নিয়েই আমরা বাঁচি।

আমি আঁকতে ভালোবাসি। ধোঁয়া-ওঠা এক কাপ চা নিয়ে যখন আঁকতে বসি, তখন কেমন একটা অন্যরকম অনুভূতি হয়। মনে হয় নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করছি কিংবা প্রকাশ! কত সময় এরকম হয় যে পানিতে তুলি ভিজাতে গিয়ে ভুল করে চায়ের কাপে ভিজিয়ে ফেলি আর নিজেই জিব কাটি। এতটাই ডুবে যাই কাজে। নিশ্চয়ই অনেকেরই হয় এমন, যারা নিজের ভেতর ডুবে গিয়ে কাজ করে। এটাই মজা। আঁকার সময় একটা অন্যজগতে চলে যাওয়া যায়, একদম নিজের মতো করে। চা আর আঁকাআঁকি নিয়ে এমন ভাবুক ভাবুক কথাগুলো বলার কারণ চা পানের সাথে আমার আঁকার যোগসূত্রটা একটু আলাদা। আর ঠিক একারণেই আজ আমার গল্পগুলোকে নিয়ে এই গল্পবলা। আমি ছবি আঁকি ব্যবহৃত টিব্যাগে। চা পানের পরে যে  ব্যবহৃত টিব্যাগগুলো ময়লার ঝুড়িতে চলে যায়, সেগুলোকেই আমি আমার ক্যানভাস বানিয়ে নিই। নিজেকে টিব্যাগ আর্টের সাথে সম্পৃক্ত করার পরে চায়ের নেশার মতো আঁকার নেশাটাও কেমন প্রাত্যহিক হয়েছে। চা যেমন আমার একটা তৃপ্তির জায়গা, আঁকাআঁকিটাও। এই দুই তৃষ্ণাকে এক করতে পারাতেই টিব্যাগ স্টোরিস-এর উদ্ভব।

আমাদের প্রতিদিনকার জীবনে অসংখ্য গল্প লুকিয়ে থাকে। কিছু গল্প খুব আলোড়ন সৃষ্টি করে, আবার কিছু গল্প থাকে একান্ত নিজের, মনের গহিনে। দেখা যায় জীবনের ব্যস্ততায় সেইসব গল্প নিয়ে ভাবার তেমন অবসরই হয় না। অথচ গল্প এগিয়ে চলে তার আপন গতিতেই। চায়ের কাপে চুমুকের সাথে সাথে যে বিক্ষিপ্ত ভাবনারা আসে, তাদের প্রকাশ করতে চাওয়ারই একরকম ক্ষুদ্র প্রয়াস আমার এই চায়ের ব্যাগে গল্প বলা। তবে এখানে আমি গল্প লিখি না, বরং রংতুলি দিয়ে আঁকার চেষ্টা করি।

প্রকৃতি আমার এই আঁকিবুঁকিতে প্রবল প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে প্রকৃতির পরিবর্তন বা এক রূপ থেকে আরেক রূপে যাওয়ার সময়টা আমাকে আলোড়িত করে প্রতিনিয়ত। বর্ষাকাল তার মাঝে অন্যতম। এই সময়টা আমি যেন আমার টিব্যাগে গল্প আঁকার আলাদা প্রেরণা অনুভব করি! আকাশে মেঘ দেখলেই মনে হয়, সব ছেড়ে রংতুলি নিয়ে বসে যাই মেঘবৃষ্টির গল্প আঁকতে। বৃষ্টি হওয়ার আগে, বৃষ্টি হওয়ার সময়, বৃষ্টি হয়ে যাওয়ার পরের প্রতিটা পরিবেশ আমাকে টানে। মনে হয় এই একেক সময় একেক রকম গল্প বলছে আমাকে। সেগুলোই আমি টিব্যাগের ক্যানভাসে তুলে ধরার চেষ্টা করি।

সব শেষে বলব, আমার এই কাজের সূচনা নিজেকে তৃপ্ত করা থেকেই। আমার উদ্দেশ্য নিজেকে ভালো রাখা এবং এই ভালোলাগাটা অন্যের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া। আনন্দ খুব সামান্য কিছু থেকেও আসতে পারে, আমি সেটাকে আমার কাজে ধারণ করার চেষ্টা করি। কতটুকু পারি জানি না, তবে আমার কাজ যদি কাউকে একটুও ভালোলাগা দিয়ে থাকে, এটা জেনে খুশি হব যে আমার টিব্যাগের গল্পরা আনন্দও ছড়ায়।

Leave a Reply

Your identity will not be published.