শম্পা কী চায়? (পর্ব ১৮)

শম্পা কী চায়? (পর্ব ১৮)

[থ্রিলার উপন্যাস। এই উপন্যাসের প্রতি পদে রহস্য ও রোমাঞ্চের হাতছানি। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার জাহিদ আহমেদ। ঢাকার রেডিসন হোটেলে শম্পা নামের একটি মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়। সেখানের একটি রুমে শম্পার সঙ্গে যাওয়ার পর কী ঘটে, তা জাহিদের মনে নেই। এরপর শম্পা জাহিদের ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজির ছাত্রী সেজে তার পিছু নেয়, অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিওর ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইলিং করতে থাকে...। এক সময় শম্পা খুন হয়। কে খুন করল শম্পাকে? জাহিদ আহমেদ নাকি অন্য কেউ? নাকি অন্য রহস্য জড়িয়ে আছে এখানে? আজ পড়ুন ১৮তম পর্ব।]

প্রথম পর্ব  দ্বিতীয় পর্ব তৃতীয় পর্ব চতুর্থ পর্ব পঞ্চম পর্ব 

ষষ্ঠ পর্ব সপ্তম পর্ব অষ্টম পর্ব নবম পর্ব দশম পর্ব  

পর্ব ১১ পর্ব ১২ পর্ব ১৩ পর্ব ১৪ পর্ব ১৫ পর্ব ১৬ পর্ব ১৭

সাদিয়া চৌধুরী খাঁচায় বন্দি ধূর্ত শেয়ালের মতো ইতিউতি তাকাচ্ছেন। রোকসানা সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, শম্পা, এটা তুমি আমার সাথে কীভাবে করলে? আমাকে দিয়ে আমার অ্যাপার্টমেন্ট বিনে ভাড়ায় নিয়ে আমার হাজব্যান্ডকে ফাঁসাতে গেলে?

স্যরি আপুমণি, আপনি জাস্ট কোল্যাটেরাল ড্যামেজ, নাথিং পার্সোনাল।

লাবণি বলল, সাদিয়া চৌধুরী ওরফে শম্পা সোহানি, এবার আপনার আসল পরিচয় দেন তো। বোঝাই যাচ্ছে সাদিয়া চৌধুরী আপনার পিতৃপ্রদত্ত নাম না।

সাদিয়া চৌধুরী গম্ভীর মুখে বললেন, আমি যে মনীষা দাস সেটা তো ধরেই ফেললেন, আর কথা বাড়িয়ে লাভ কী? আমি কী করেছি কেন করেছি বুঝতেই তো পারছেন।

পারছি, কিন্তু আপনার মুখে ব্যাখ্যাটা শুনতে চাই।

সাদিয়া চৌধুরী ওরফে শম্পা সোহানি ওরফে মনীষা দাস প্রফেসর জাহিদ আহমেদের দিকে আঙুল হেলিয়ে রাগত কণ্ঠে বলল, এই স্কাউন্ড্রেলটা বাইশ বছর আগে আমার মাকে খুন করেছিল।

কথাটা শুনে রোকসানা আহত কণ্ঠে বলল, কী বলছো এসব উলটাপালটা?

সাদিয়া চৌধুরী ওরফে শম্পা সোহানি ওরফে মনীষা দাস বলল, ঠিকই বলছি। শয়তানটা তাড়াহুড়া করে আমার মা হিমানী দাসকে খুন করে পায়ে পাথর বেঁধে পানিতে ডুবিয়ে দিয়েছিল। বুঝে নাই অত তাড়াতাড়ি দড়ির বাঁধন আলগা হয়ে আমার মার দেহটা ভেসে উঠবে। তারপর বদমাশটা বেশ কয়েকদিন ভালোমানুষের মতো কান্নাকাটি করে মওকা বুঝে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে, হোয়াট অ্যা কাওয়ার্ড!

লাবণি বলল, কীভাবে বুঝলেন প্রফেসর জাহিদ আহমেদই আপনার মাকে মেরেছেন?

বাবা মারা যাওয়ার সময় আমাকে সব কথা বলে গেছেন। ওই দিন মাকে দূর থেকে ফলো করেছিলেন বাবা। মার ওড়না হাতে প্রফেসরকে দিঘির পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন বাবা। ওই ওড়না দিয়ে আমার মার শ্বাস বন্ধ করে দিয়েছিলেন, তাই না প্রফেসর?

প্রফেসর জাহিদ কিছু একটা বলতে যাবে, ইন্সপেক্টর লাবণি ওনাকে হাতের ইশারায় থামিয়ে শম্পাকে বলল, আপনার বাবা তাহলে এ কথা তখন পুলিশকে বলেন নাই কেন?

অ্যাবিউজিভ হাজব্যান্ড হিসেবে বাবার খুব বাজে রিপিউটেশন ছিল। আর প্রফেসর ছিল মার প্রেমিক, এলাকায় জনপ্রিয় মুখ। তাছাড়া আমরা সংখ্যালঘু হিসেবে ডিজঅ্যাডভান্টেজড তো ছিলামই। কে বিশ্বাস করত আমাদের কথা?

এ কারণে আপনার বাবা চুপ থেকে গেলেন?

হুম। কিন্তু বাবাকে আমি কথা দিয়েছি প্রফেসরের মুখ থেকে সত্য জবান বের করেই ছাড়ব।

প্রফেসর এতক্ষণ কোনো রকমে নিজেকে সামলে রেখেছিলেন, এবার উত্তেজিত কণ্ঠ বললেন, আপনার বাবা মিথ্যা কথা বলেছেন। বিশ্বাস করুন হিমানীকে আমি খুন করি নি।

লাবণি এবার বলল, প্রফেসরকে নিয়ে যে নাটকটা করলেন, সেটা এতদূর টানার কোনো দরকার ছিল? মানে আরেকজন নিরীহ মেয়ের মৃতদেহ নিয়ে টানাটানি?

কোন মৃতদেহ?

আহা, এই মশকরা না করলেই কী নয়, আপনাকে কীভাবে আমি খুঁজে পেলাম বুঝেন নি? আমি ওই ডেডবডিটা ফলো করেছি। শেষ পর্যন্ত দেখা গেছে ইট কেইম ফ্রম ইওর হসপিটাল অ্যান্ড ইউ ওয়্যার সাপোজড টিবি ইন চার্জ অফ দ্যাট বডি। যা হোক, বলুন, প্রফেসরকে এত ঝামেলায় ফেললেন কেন?

ইন্সপেক্টর লাবণির কথায় সাদিয়া চৌধুরী ওরফে শম্পা সোহানি ওরফে মনীষা দাস একটু দমে গেল বোধহয়, গম্ভীর হয়ে বলল, আপনি ঠিক বলেছেন। এত নাটক করবার কোনো দরকার ছিল না। ভিডিওর ভয় দেখিয়েও হয়তো প্রফেসরকে ঘায়েল করা যেত। কিন্তু একদিন দুপুরে এই বডিটা ইমারজেন্সিতে এল, কেউ ক্লেইম করল না।

তারপর দেখলেন চেহারাটা আপনার মতো?

একদম। মেয়েটার চেহারা দেখে আমি অবাক, ওমা, প্রায় আমার মতো দেখতে। তখন মাথায় নতুন আইডিয়াটা ঝলক দিয়ে উঠল। মনে হলো প্রফেসরকে খুনের মামলায় ফাঁসালে এই লোক বাধ্য হয়ে আমার মাকে খুন করার কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করবে। এক খুন স্বীকার না করলে আরেক খুনে ফাঁসবে।

কিন্তু সেটা করতে গিয়েই শেষমেশ ফেঁসে গেলেন।

আসলে হুইমের বশে কিছু করা ঠিক না। ওভাবে অ্যানপ্ল্যান্ড কাজ করতে গিয়ে ধরাটা খেলাম।

স্টিল ইউ ডিড কোয়াইট ওয়েল। পুরো স্টেজিংটা কীভাবে ম্যানেজ করলেন? মানে এই দেয়ালে রক্ত ছেটানো, লাশ ডাস্টবিনে ফেলা।

সাদিয়া চৌধুরী ওরফে শম্পা সোহানি ওরফে মনীষা দাস মহা উৎসাহে বললেন, আমার মতো দেখতে মেয়েটা তো তখন মাত্রই মরেছে। ওকে তো আর ফিরিয়ে আনা যাবে না। তো ভাবলাম তাহলে একটা খেলা হয়ে যাক। আমি ইমারজেন্সিতে তাড়াতাড়ি ওর ব্লাড কালেক্ট করলাম। তারপর রোকসানা আপুমণিকে ফোনে জানালাম আমার বাসার বাথরুমের ট্যাপ নষ্ট, প্রফেসর যেন পরদিন আসে।

নাও তো আসতে পারত?

প্রফেসর যে রকম মেয়েদের পেছনে ছোক ছোক করে, সে আসবে আমি জানতাম। তাছাড়া ইমারজেন্সি ট্যাপ ঠিক করা লাগবে তো নাকি?

বুঝলাম, কিন্তু বডিটা কীভাবে হাসপাতাল থেক ডাস্টবিনে পাঠালেন?

বডি তো কেউ ক্লেইম করে নি। বেওয়ারিশ লাশ দাফনের জন্য গোরস্থানে নেয়ার কথা একটা দাতব্য প্রতিষ্ঠানের, ওরাই নিয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে কাজের কারণে আমার অনেকদিনের পার্সোনাল কানেকশন ছিল ওদের ভ্যান ড্রাইভারের সঙ্গে। আমার অনুরোধ এবং উপঢৌকনে বশ মেনে ড্রাইভার বডিটা ডাস্টবিনে ফেলে এসেছে। এতে অবশ্য এমন দোষের কিছু সে দেখে নি।  ক’দিন পর যে বডিটা আবার হাসপাতালেই ফেরত আসবে আমরা জানতাম। কিন্তু আমি জানতাম না যে আপনার মতো একটা ধুরন্ধর ডিটেকটিভ এই কেইসে জড়াবে। আমি ভেবেছি কোনো অ্যাভারেজ ইডিয়ট কেইসটা ডিল করবে।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ অন্তত আমার মেধাকে রেকগনাইজ করবার জন্য। আই হ্যাভ গট দা সেইম রেস্পেক্ট ফর ইয়োর ব্রিলিয়েন্স। শুধু একটাই পার্থক্য, আপনি আপনার বুদ্ধি মানুষের উপকারে না লাগিয়ে খারাপ কাজে লাগিয়েছেন।

কোথায়? খারাপ কাজে লাগাই নি তো! এই যে আমি এত মানুষকে চিকিৎসা দিচ্ছি, মৃত্যুর হাত থেকে ওদের ফিরিয়ে আনছি, তার কী হবে? আফটার অল, আমি একজন ট্রেইন্ড ডক্টর।

অথচ আমার কী ধারণা জানেন?

কী?

আপনি একজন রাশান ডল। ঠিক না?

মানে?

মানে এক পুতুলের ভেতর আরেক পুতুল, সেই পুতুলের ভেতরে আরেক পুতুল, লেয়ারে লেয়ারে খেলা?

(চলবে…)

Leave a Reply

Your identity will not be published.