হাঁচি নিয়ে বাঁচি

হাঁচি নিয়ে বাঁচি

হাঁচি দিলে আলহামদুলিল্লাহ পড়তে হয়, এটা ছোটবেলাতেই শিখেছি মায়ের কাছ থেকে। আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন। মহান আল্লাহপাক এতে নিশ্চয়ই খুশি হন। আল্লাহর মাহাত্ম্য বর্ণনা আর প্রশংসার জন্য ‘আলহামদুলিল্লাহ’-র চেয়ে উত্তম বাক্য আর নেই—একথা তিরমিজি শরীফেও আছে। কিন্তু হাঁচিদাতার চারদিকে যারা থাকেন তারা সবাই কেমন যেন ভ্রু কুঞ্চিত করে তার দিকে তাকান। জীবনে অনেক বিড়ম্বনার শিকার হয়েছি—ফুটবল খেলতে গিয়ে বল না পেয়ে পুকুরে পড়েছি, মনের কথা বলতে গিয়ে ভুল নামে ডেকেছি প্রেয়সীকে, এমনকি ভাত খেতে গিয়ে লেবুর বদলে লিচু চিপে দিয়েছি গরম ভাতের ওপর। কিন্তু আমার হাঁচিকাণ্ডের কাছে এসব ছেলেখেলা। আসল বিড়ম্বনা তখনই শুরু হয় যখন হাঁচি আসে, এবং সেটা আসে ঠিক যেখানে না-আসাটাই জরুরি!

আমার জীবনের সবচেয়ে ‘হাঁচিযুক্ত’ কেলেংকারির কথা বলি। সবে আইন সম্মান পরীক্ষার রেজাল্ট হয়েছে। এখন থেকেই পরিবারের হাল ধরার চাপ অনুভব শুরু করেছি। তাই সমবায় দপ্তরে প্রথম শ্রেণির এক পদে চাকরির দরখাস্ত করে ফেললাম। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভাইভার জন্য মনোনীত হয়েছি। এটাই আমার প্রথম চাকুরির পরীক্ষা। কাজেই প্রথম বলেই ওভার বাউন্ডারি মারা চাই। রাত-দিন চলছে ভাইভার প্রস্তুতি। পরীক্ষার আগের দিন টের পেলাম, রাত জেগে পড়ার কারণে গলায় শ্লেষ্মা জমে একাকার। খুব টেনশন নিয়ে ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছি। পরনে সাদা জামা, মাথায় চুলের ঝাঁক (যা এখন চুল নয়, স্মৃতি)। আর হাতে সকল শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট।

সালাম দিয়ে রুমে প্রবেশ করি।

তিন জনের ভাইভা বোর্ড। আমার চোখ শুধু মাঝের জনের ওপরই আটকে আছে। বুঝতে বাকি নেই তিনিই ভাইভা বোর্ডের চেয়ারম্যান। ভদ্রলোকের গায়ের রং বেজায় কালো। চোখ দুটো টকটকে লাল। যেন দুটো চেরিফল ঝুলছে। সোজা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছেন। বেশ কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর গমগমে কণ্ঠে বললেন, ‘সামনের চেয়ারে বসো।’ উনার কথা শুনে মনে হলো হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। গমগমে ভারী গলা, অমরেশ পুরীর মতো অনেকটা। আমি আর স্যারের দিকে তাকাতে সাহস করি নি।

দুহাতে সার্টিফিকেটের ব্যাগ চেপে ধরে সামনের চেয়ারে বসি।

স্যার বললেন, ‘মিস্টার হাসানুজ্জামান, আপনি কি নিজেকে যোগ্য মনে করেন ?’

আমি ঠোঁটে হালকা হাসি এনে বলতে যাচ্ছি, ‘জি স্যার, অবশ্যই—’

কিন্তু উত্তর দেওয়ার আগেই উনার নাকের নিচের গোঁফের দিকে চোখ পড়ে। সজারুর কাঁটার মতো দুই দিকের গোঁফ কান অবধি পৌঁছে গিয়েছে।

এমনিতেই ঠান্ডা লেগে ছিল। তারপর এই গোঁফ দেখে মনে হলো, এই সজারুর কাঁটা আমার নাসারন্ধ্র নাড়াচাড়া করছে।

হঠাৎ করেই এক বিকট হাঁচি এল! হ্যাঁ-চ-চো...

এই হাঁচিটা ছিল থার্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ারের মতো—চোখ মুখ লাল, গলার সুর ভাঙা, আর সাথে ছিল এক ফোঁটা ‘আশীর্বাদ’—স্যারের টেবিলের ওপর দিয়ে সরাসরি তার ঠোঁটের মাঝ বরাবর সজারু কাঁটায় ঝুলতে থাকে। আমি দুহাতে সার্টিফিকেট চেপে ধরার কারণে হাঁচি দেওয়ার সময় ভদ্রতাবশত মুখে হাত দিতে পারি নি। চেরি চোখা স্যার চশমা খুলে টিস্যু দিয়ে ঘষতে ঘষতে বললেন, “আপনি খুবই ‘ইম্প্রেসিভ’! ঝেড়ে তো কেশেই ফেলেছেন, এবার ঝেড়ে একখান দৌড় দেন দেখি!”

তারপর ? ইন্টারভিউর ফলাফল এসেছিল—‘আবেদনের জন্য ধন্যবাদ, আপনার হাঁচি যথেষ্ট আঠালো ছিল।’

আমার জীবনে সবচেয়ে বড় হাঁচি-আতঙ্ক হলো—নীরব পরিবেশে হাঁচি। যেমন লাইব্রেরি, মসজিদ বা পরীক্ষার হলে। পরীক্ষার হলে একবার হাঁচি দিয়েছিলাম—সবাই এমনভাবে তাকাল, মনে হলো আমি আজ প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দিয়েছি।

একবার বড় স্যারের সাথে বড়শি দিয়ে পুকুরে মাছ ধরতে গিয়েছি। মহা আয়োজন। আমাদের দলের কেউই তেমন পাকা মেছো নই। মাছ ধরার চাইতে গল্পগুজব নিয়েই ব্যস্ত। তব্ওু দু-একটা মাছ ধরতে না পারলে তো প্রেস্টিজ থাকে না।

ভাগ্যক্রমে বড় সাহেবের পাশে বসেই আমি চল্লিশ মিনিটের মধ্যে চারটা তেলাপিয়া মেরে দিয়েছি। বড় সাহেবের বড়শিতে মাছ টোকাও দেয় না। তিনি রাগে উশখুশ করছেন আর কটমট করে ফাতার ওপর চোখ রেখেছেন।

ওই তো, স্যারের বড়শিতে টোকা পড়েছে! স্যার দু’হাত শক্ত করে বড়শি চেপে ধরেছেন। আমাদের উত্তেজনা তুঙ্গে। কারও মুখে কথা নেই।

ওই তো, ফাতা ডুবে গেছে! স্যার খ্যাঁচ মারবেন, এই সময় আমার নাকের মধ্যে সুড়সুড়ি শুরু হলো।

হ্যাঁ-চ-চো...

হাঁচির তীব্রতা এত বেশি ছিল যে স্যারের হাত থেকে ছিপ পড়ে যায়। মাছ তো টোপ খেয়ে পগারপার!

আমার ওপর স্যার সে কী ঝাড়ি দিলেন—‘কন্ট্রোল করতে না পারলে আসেন কেন ?’ পাশে দাঁড়ানো স্যারের গানম্যান তার কোমরে গোঁজা পিস্তলের ওপর একবার হাত বুলিয়ে গেল। এমনিই হয়তো। সূর্যের চেয়ে বালি গরম টাইপের অবস্থা!

এরপর কয়েকদিন ভয়ে স্যারের রুমেই যেতে পারি নি।

পরের সপ্তাহেই স্যার আমার সেকশন বদল করে ডাম্পিং পোস্টিং দিয়ে দেন।

আর বাসে হাঁচি দিলে তো ভিন্ন কাহিনি। সবাই এমন দৃষ্টিতে তাকায় যেন বলছে, ‘এই সেই ব্যাটা যে করোনা আবার ফিরিয়ে আনছে!’ পাশের চাচা পকেট থেকে মাউথ ফ্রেশনার বের করে নিজেই নিজেকে স্প্রে করলেন! এক ফুফু গোছের মহিলা তো বলেই ফেললেন, ‘বাচ্চারা, ওর কাছ থেকে দূরে থাকো!’

সবচেয়ে বিপজ্জনক হাঁচি হয়—আধা হাঁচি। মানে, আসবে আসবে কিন্তু আসে না। এমনই একবার দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে ভূগোল ক্লাসে আগ্নেয়গিরির ওপর উপস্থাপনা দিচ্ছি। হঠাৎ হাঁচি আসবে, আমি ঠেকালাম। মুখ কাঁচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছি—মনে হচ্ছিল গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে যাবে। শেষে হাঁচি এল না, কিন্তু মুখটা এমন অদ্ভুত হয়ে গিয়েছিল যে পুরো ক্লাস হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আমি দাঁড়িয়ে আছি, এক দুঃখী হাঁচির লাশ নিয়ে।

পেছন থেকে অহনা বলেই দিল, ‘ভাগ্যিস তোর এটা সুপ্ত আগ্নেয়গিরি ছিল! তা ছাড়া তোর জ্বালা মুখের যে ব্যসার্ধ তাতে লাভা বের হলে গড়িয়ে গড়িয়ে সেটা প্রাইমারি স্কুল অবধি চলে যেত!’

এর চাইতে বেইজ্জতি আর কীবা হতে পারে!

গত রমজানের ঘটনা না বলা অবধি আমার নাকের চুলকানি থামাতে পারছি না। সন্ধ্যার সময় সবাই ইফতারির অপেক্ষায়। আমিও বসে আছি। হাতে বেগুনি, চোখে পেঁয়াজু। হঠাৎ নাক কুটকুট করে উঠল। বুঝলাম, বিপদ আসছে।

আমি হাঁচি থামাতে জোরে জোরে ‘তৌহিদেরই মুর্শিদ আমার...’ ধরেছি। তব্ওু কন্ট্রোল করতে পারছি না। হ্যালো-হ্যালো, আইসা-আইসা, ভেতরে-ভেতরে বেগুনি চেপে ধরলাম। কেউ যেন হাঁচি না বুঝতে পারে! কিন্তু হাঁচি কি আর রাজনীতি বোঝে ? সে সোজা ‘আআআআ ছিছিছিঃহাঁচ্চু!’

ইফতারের খেজুর একপাশে গেল, ছোলা অন্যপাশে। বড় ভাই চোখ চুলকে বললেন, ‘এটা কি মশা মারার বোমা না হাঁচি ?’ আর ছোট ভাই পানির বোতল নিয়ে ছুটে এসে বলল, ‘ভাইয়া করোনায় পড়ছেন না তো ?’

চাচা তখন ঘরে ঢুকলেন। বললেন, ‘এই বাসায় ঢুকলে নাকি এখন মাস্ক লাগে ?’ আর আমার বোন ? সে তো আমার হাঁচিকে টিকটকে আপলোড করে দিল ‘হাঁচি বিট রিমিক্স’ নামে! এক ভাইরাল হুজুরের বয়ানের মাঝে এটা বিট হিসেবে জুড়ে গেছে।

পরদিন স্কুলে গেলাম। ক্লাস চলাকালীন হঠাৎ আবার সেই কুটকুটে অনুভূতি। আমি জানি না কেন, পরীক্ষার হলে আর নামাজের সময়েই কেন বেশি হাঁচি আসে! হাঁচি দিলাম, এমন শব্দে যে পাশের দিদিমণি বললেন, ‘কেউ কি টেবিল ভেঙে ফেলল ?’

শিক্ষক বললেন, ‘হাসান, তুমি হাঁচলে কেন প্রশ্নপত্র উড়ে গেল ?’ আর পেছনের ফারজানা এমন ভয় পেল যে জুতাটা গায়ে ছুড়ে মারল—সোজা আমার মাথায়।

তারপর থেকে ক্লাসে আমার নতুন নাম : ‘হাঁচি ভাই’। কেউ ংহববুব করলে বলে, ‘হাসানকে ডেকো না প্লিজ!’

সেদিন থেকে তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি—জীবন যেমন আসুক, হাঁচি ঠেকানো যাবে না। কারণ হাঁচি আসবে তার নিজের ইচ্ছায়—সেটা বিবাহ প্রস্তাব দেওয়ার মুহূর্তেই হোক বা ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলেও!

হাঁচির এই অনিয়ন্ত্রিত, অপ্রত্যাশিত, অথচ চিরচেনা আগমন আমাদের জীবনের এক অনিবার্য নাটক—যার পরিচালক হাঁচি নিজেই।

কিন্তু কখনো কি এমন কিছু আপনারা শুনেছেন যে হাঁচি দেখতে বা শব্দ শুনতে মানুষ কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঢালছে ?

হ্যাঁ, আমি বাড়িয়ে বলছি না কিন্তু!

১৮৯৪ সালে ‘Fred Ott’s Sneeze’ নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যরে সিনেমা তৈরি হয়। আমেরিকানরা সেই মুভিতে Ott-এর পাঁচ সেকেন্ডের হাঁচি দেখার জন্য নাকি ২৫ সেন্ট খরচ করত, যা বর্তমান বাজারে টাকার হিসাবে এক হাজার টাকা। এবার ভাবুন, হাঁচি আসলেই ফেলনা জিনিস নয়। ছবিতে এক বড় গোঁফওয়ালা লোক শব্দহীন এক হাঁচি দিচ্ছেন। আবার ইতিহাস থেকে জানা যায়, এটাই নাকি পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম কপিরাইট করা মুভি।

হাঁচির দুর্নাম অনেক হলো। এবার বিজ্ঞানের ভাষায় হাঁচির কিছু গুণের কথা বলতে চাই।

সাইন্সের কথা হলো, হাঁচি এলে জোর করে আটকানো উচিত নয়। তাহলে নাকি নার্ভাস সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়!

আবার খুব জোরে হাঁচি দেওয়াও ঠিক না! (যাহ বাপু, একবার হাঁচি আটকাতে নিষেধ করি আরেকবার জোরে হাঁচি দিতে নিষেধ করি!) ইয়ে মানে, জোরে হাঁচি দিয়ে আপনি আপনার বুকের একটা হাঁড় ভাঙতে পারেন! হাঁচি দেওয়ার সময় আপনি আপনার চোখ খোলা রাখতে পারবেন না। সত্যি বলছি! আর যদি কোনোভাবে খুলে রাখতেও পারেন তবে শরীরের ভিতরে যে চাপ তৈরি হবে, সেটার চাপেই আপনার একটা অক্ষিগোলক খুলে আসতে পারে!

খেয়াল করে দেখবেন, স্বাভাবিক অবস্থায় মানুষ ঘুমের সময় হাঁচি দেয় না। কারণ এসময় নার্ভাস সিস্টেম মহাশয়ও ঘুমিয়ে থাকেন।

হাঁচি যখন ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে, তখন তার গতিবেগ থাকে ঘণ্টায় ১০০ মাইলেরও বেশি! বাপরে!

আরেকটি খুব দারুণ তথ্য হলো, প্রতিবার হাঁচির সাথে আপনি প্রায় এক লক্ষ জীবাণু বের করে দেন!

হাঁচির সাথে বের হওয়া জীবাণুগুলো প্রায় পাঁচ ফুট রেডিয়াস আয়তনজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকবে এবং সামনের দিকে প্রায় ত্রিশ ফুট পর্যন্ত দূরে ছিটকে যাবে।

হাঁচিতে এলার্জি ? একটানা হাঁচির সেঞ্চুরি হয়ে যায় ? মন খারাপ করবেন না ভাই। কারণ একটানা হাঁচি দেওয়ার রেকর্ড আছে টানা ৯৭৮ দিনের! সব্বনাশা এই রেকর্ডখানা করেছেন Worcestershire-এর ব্রিটিশ মহিলা Donna Griffiths! [সারাজীবন মনে হয় হাঁচিই দিছে]

বাড়িতে বিড়াল আছে ? তাহলে আপনাকে আর আবহাওয়ার সংবাদ দেখতে হবে না। কারণ, যখন আপনার বিড়াল হাঁচি দিবে বুঝে নেবেন বৃষ্টি হবে। এটা একটা মিথ ভাবতে পারেন।

এবার হাঁচি নিয়ে কিছু ঐতিহাসিক জ্ঞানের কথা বলতে চাই।

প্রাচীন রোমে বিশ্বাস করা হতো, হাঁচি দিলে আত্মা শরীর থেকে বের হয়ে যেতে পারে, তাই কেউ হাঁচি দিলে আশেপাশের মানুষ বলত ‘Jupiter bless you!’ (পরে এর আধুনিক রূপ হয় ‘Bless you’ বা ‘God bless you)। এই রীতি থেকেই আজও বিশ্বের অনেক দেশে হাঁচি দিলে ‘Bless you’ বলা হয়।

৬৯০ খ্রিস্টাব্দে, ইউরোপে যখন বিউবোনিক প্লেগ ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন হাঁচি ছিল মৃত্যুর পূর্বলক্ষণ।

তখনই পোপ গ্রেগরি নির্দেশ দেন, কেউ হাঁচি দিলে সঙ্গে সঙ্গে ‘God bless you’ বলা হোক, যাতে সে রক্ষা পায়। এই রীতি এখনো বিশ্বের বহু দেশে প্রচলিত—একেবারে একটি ধর্মীয় ও সামাজিক অভ্যাসে রূপ নিয়েছে।

একটি কিংবদন্তি রয়েছে, ফ্রান্সের সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট একবার যুদ্ধের প্রস্তুতির সময় ঘোড়ায় উঠতে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই ঘোড়াটি জোরে হাঁচি দেয়!

নেপোলিয়ন এই হাঁচিকে অশুভ সংকেত মনে করে কিছুক্ষণ দেরি করেন। সেই সময়েই শত্রুপক্ষ হানা দেয়, এবং যাত্রা বিরতির কারণে তাঁর কিছু সৈন্য প্রাণে বেঁচে যায়! পরবর্তী সময়ে নেপোলিয়ন ঘোড়ার হাঁচিকে ‘ভবিষ্যৎ বার্তা’ বলে গণ্য করতেন।

হাঁচি দিয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা!

হ্যাঁ, এটি সত্যি। ১৯৮০ সালের দিকে যুক্তরাজ্যে এক বৃদ্ধ ব্যক্তি অতিরিক্ত জোরে হাঁচি দিতে গিয়ে ঘাড়ে চোট পান এবং পরে তার মৃত্যু ঘটে।

যদিও এটি খুবই বিরল, তবে মেডিকেল ইতিহাসে নথিভুক্ত ঘটনা।

চীনা সভ্যতায় হাঁচি মানে কেউ আপনাকে স্মরণ করছে প্রাচীন চীনা বিশ্বাস অনুযায়ী, হাঁচি মানে কেউ আপনার নাম স্মরণ করছে বা আলোচনা করছে।

এই সংস্কৃতি পরে জাপান ও কোরিয়াতেও ছড়িয়ে পড়ে, আজও তারা মনে করে :

*             ১ বার হাঁচি = কেউ আপনাকে প্রশংসা করছে

*             ২ বার = কেউ গালি দিচ্ছে

*             ৩ বার = কেউ আপনাকে খুব মিস করছে!

হাঁচি হয়তো এক সেকেন্ডের ব্যাপার, কিন্তু তা নিয়ে রয়েছে :

*             ধর্মীয় রীতি

*             ভাষাগত প্রভাব

*             চিকিৎসা ইতিহাস

*             এমনকি যুদ্ধের মোড় ঘোরানোর কাহিনি!

তাই বলি, বাঁচতে হলে হাঁচতে হবে। তবে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে।

তবে শেষ করার আগে হাঁচি বন্ধ করার একটা প্রচলিত ট্রিক্স শিখিয়ে দিতে চাই। হাঁচির উদ্রেক হলেই মুখ দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নিন, হাতের তালু দিয়ে একই সাথে উপরের ঠোঁট আর নাকের ডগায় ডলাডলি করতে থাকুন। আর নাকের শেষভাগে ক্রমাগত খামচাতে থাকুন!

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ : নাকের সাথে এত ঢলাঢলি করতে গিয়ে কারও খাড়া নাক থ্যাবড়া হয়ে গেলে তার দায়ভার লেখক কোনোদিনই নেবেন না!

Leave a Reply

Your identity will not be published.