ছোটপর্দার হাসি

ছোটপর্দার হাসি

টিভি নাটকেও হাসি। শুরুতে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। এদেশের স্বাধীনতার আগের একটি বিখ্যাত হাসির টিভি নাটক হলো, ‘মুখরা রমণী বশীকরণ’। শেক্সপিয়রের বিখ্যাত ‘টেমিং অব দ্য শ্রু’-এর অনুবাদ করেছিলেন মুনীর চৌধুরী আর প্রযোজক ছিলেন মুস্তাফা মনোয়ার। প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন গোলাম মুস্তাফা ও আজমেরী জামান রেশমা। এখানে দেখানো হয়েছে, উদ্ধত, স্বাধীনচেতা ও কর্কশ স্বভাবের ক্যাথরিনাকে বিয়ের পর কীভাবে প্রেক্রচিও নানা মানসিক ও শারীরিক কৌশলের মাধ্যমে একজন অনুগত ও বাধ্য নারীতে রূপান্তরিত করেন।

আমজাদ হোসেন রচিত এবং মুস্তাফিজুর রহমান প্রযোজিত ‘এতদিন কোথায় ছিলেন’। এখানে জব্বার আলি নামের এক লোকের নানা কাণ্ডকারখানা হাস্য-কৌতুকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে, যার কাজ হলো সমাজের জন্য ক্ষতিকর বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া। প্রধান চরিত্রে আমজাদ হোসেন স্বয়ং অভিনয় করেছেন।

হুমায়ূন আহমেদ বহু হাসির নাটক লিখেছেন। যেমন, ‘একদিন হঠাৎ’। বিটিভির এই নাটকে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারকে ঘিরে নানা মজার কাণ্ড দেখা যায়। বাড়ির গৃহশিক্ষক (হুমায়ূন ফরীদি) তার বালক ছাত্রকে ঢাকা চিড়িয়াখানায় বেড়াতে নিয়ে গিয়ে একাকী ফিরে আসেন। জানান, ছাত্রকে তিনি ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন কীভাবে বাসায় ফিরতে হবে। শুনে বাড়ির সবাই চিন্তিত হয়ে পড়ে। গৃহশিক্ষককে একটি ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়, পরিবারের অন্য সদস্য ফরিদ মামার সঙ্গে। কিন্তু দেখা যায়, সেই বালক ঠিকই চিড়িয়াখানা থেকে একা-একা ফিরে আসে। এছাড়া ‘হাবলঙ্গের বাজারে’, ‘টুয়েন্টি ফোর ক্যারেট ম্যান’, ‘জুতা বাবা’, ‘বুয়া বিলাস’সহ বহু হাসির নাটক লিখেছেন হুমায়ূন আহমেদ। ২০০০ সালে লরেল-হার্ডি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে হুমায়ূন আহমেদ লিখেছিলেন ‘তারা তিন জন’ নাটকটি। এটি জনপ্রিয় হওয়ায় পরে তিনি লিখেন ‘টি মাস্টার’, ‘তারা তিনজন ঝামেলা’, ‘তারা তিনজন হে পৃথিবী বিদায়’, ‘তারা তিনজন এবং ঝুনু খালা’সহ বেশ কয়েকটি নাটক।

তা ছাড়া ইমদাদুল হক মিলনের ‘নায়ক-নায়িকা’, ‘কোন গ্রামের মেয়ে’; রেজাউর রহমান ইজাজের ‘প্রিয় জন’, ‘চেনা চেনা মুখ’; মমতাজউদ্দিন আহমদের ‘প্রেম বিবাহ সুটকেশ’, ‘হৃদয়ঘটিত ব্যাপার-স্যাপার’, ‘ইদানীং শুভ বিবাহ’; বৃন্দাবন দাসের ‘হারকিপ্টে’ ‘তিন গেদা’ এবং ‘মজনু একজন পাগল নহে’ হাসির নাটক হিসেবে দর্শকপ্রিয়তা লাভ করে।

এবার ধারাবাহিক নাটক প্রসঙ্গ। গত বছরের ষাট দশকে যখন ডিআইটি (এখনকার রাজউক)-তে ৩০ী২২ ফুট স্টুডিও ছিল, সেই স্টুডিওতে ধারণকৃত ‘ত্রিরত্ন’ ধারাবাহিকটি সেকালের দর্শকদের হাসির বেশ খোরাক জুগিয়েছিল। এই ধারাবাহিকের তিনটি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন আশীষ কুমার লোহ (হীরা), খান জয়নুল (চুনী) এবং আবদুল জলিল (পান্না)। ধারাবাহিকটির প্রতিটি পর্বের ব্যাপ্তি ছিল পঁচিশ থেকে ত্রিশ মিনিট। শুরুতে প্রযোজক ছিলেন মোমিনুল হক, পরে আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম।

স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে বিটিভির হাসির ধারাবাহিকের মধ্যে সবিশেষ উল্লেখযোগ্য হলো, ‘বহুব্রীহি’। হুমায়ূন আহমেদ রচিত এই নাটকে পরিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক মূল্যবোধের চিত্র চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। একটি টিয়াপাখির মুখে ‘তুই রাজাকার’ সংলাপটি সেই সময়ে খুবই আলোড়ন তুলেছিল। প্রধান চরিত্র সোবহান সাহেবের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন আবুল হায়াত।

ইমদাদুল হক মিলনের ‘বারো রকম মানুষ’ ধারাবাহিকটিও বিটিভির দর্শকদের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। এখানে তারিক আনাম খান, নিমা রহমান, নাদের চৌধুরী, ফারুক আহমেদের মতো অভিনয়শিল্পীরা অভিনয় করেছিলেন। তারিক আনাম খানের ‘থামলে...ভালো লাগে’ সংলাপটি সেকালের দর্শকদের মুখে মুখে ফিরেছে।

বৃন্দাবন দাসের হাসির ধারাবাহিক ‘ঘরকুটুম’। একটি গ্রামের পরিচিতি হলো চোরদের গ্রাম হিসেবে। এই গ্রাম এবং তার মানুষজন নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘ঘরকুটুম’ ধারাবাহিকটি। সালাউদ্দিন লাভলু পরিচালিত এই ধারাবাহিকটি মোশাররফ করিম, এটিএম শামসুজ্জামান এবং চঞ্চল চৌধুরীর মতো প্রতিভাবান অভিনয়শিল্পীদের চমৎকার অভিনয়ে ভাস্বর। বৃন্দাবন দাস ও সালাউদ্দিন লাভলু জুটির আরেকটি জনপ্রিয় হাসির ধারাবাহিক হলো ‘সাকিন সারিসুরি’।

এবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাংলা কমেডি নাটক প্রসঙ্গ। ২০২০ সালে স্টার জলসায় প্রচারিত হয়েছিল লীনা গঙ্গোপাধ্যায় রচিত হাসির নাটক ‘খড়কুটো’। এখানে দেখা যায়, একটি একান্নবর্তী পরিবারে বধূ হিসেবে আসে এক ধনী চিকিৎসকের আদুরে কন্যা। সে পুরো পরিবারে আনন্দের বন্যা বইয়ে দেয়। এরকম বেশ কয়েকটি হাসির ধারাবাহিক কলকাতায় জনপ্রিয় হয়েছে।   

Leave a Reply

Your identity will not be published.