নিউইয়র্কের ট্যাক্সিওয়ালা (পর্ব ১৫)

নিউইয়র্কের ট্যাক্সিওয়ালা (পর্ব ১৫)

[এই ধারাবাহিকটির লেখক তানকিউল হাসান, আর্থিক অনটন থেকে মুক্তির আশায় নিউইয়র্কের রাস্তায় শুরু করেছিলেন ট্যাক্সি চালানো। সেই সময় তিনি মুখোমুখি হন বিচিত্র অভিজ্ঞতার। সেইসব ঘটনাই ফুটে উঠেছে এই ধারাবাহিক রচনায়। আজ পড়ুন ১৫তম পর্ব।]

প্রথম পর্ব দ্বিতীয় পর্ব  তৃতীয় পর্ব  চতুর্থ পর্ব  পঞ্চম পর্ব 

ষষ্ঠ পর্ব সপ্তম পর্ব অষ্টম পর্ব নবম পর্ব দশম পর্ব 

পর্ব ১১ পর্ব ১২ পর্ব ১৩ পর্ব ১৪

সারাদিন কাজ শেষে বিকেলবেলা পার্টনারকে তার বাড়ি থেকে উঠাতে গেছি। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন নিউইয়র্ক শহরে ট্যাক্সিড্রাইভাররা দুই শিফটে কাজ করে। একজন দিনের শিফট, অন্যজন রাতের শিফট। আমার ট্যাক্সিটি রাতের শিফটে যে চালায় সে আমার পুরনো বন্ধু। তার বাসার সামনে পৌঁছে হর্ন টিপতেই সে বের হয়ে এলো। সে এখন আমাকে আমার বাসায় নামিয়ে দিয়ে গাড়ি নিয়ে ম্যানহাটানে চলে যাবে। আমাদের ট্যাক্সি ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে ম্যানহাটান। একশো জন প্যাসেঞ্জারের শতকরা নব্বইজনই ম্যানহাটান থেকে গাড়িতে ওঠে এবং ম্যানহাটানের কোথাও নামে। বন্ধুটি গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে ঢোকার সময় রাস্তা থেকে একটা ব্যাগ তুলে আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, এটা তোর ব্যাগ?

আমি বললাম, না তো! কই পেলি?

সিট আর দরজার মাঝখানে পড়েছিল।

আমি ব্যাগটির দিকে তাকালাম, ডাইরির আকারের পেটমোটা বাদামি রঙের চামড়ার ট্রাভেল ব্যাগ।

বন্ধুকে বললাম, ব্যাগটা খুলে দেখত ভেতরে কী?

সে ব্যাগ খুলল। ব্যাগের ভেতরে একটি জাপানিজ পাসপোর্ট। এ ছাড়া বেশকিছু ইয়েন/ডলার আর ছোট্ট একটি এড্রেসবুক। বুঝতে পারলাম, ভোরবেলা যে জাপানিজদের কেনেডি এয়ারপোর্ট থেকে উঠিয়েছিলাম আর বুড়ো যে লোকটি আমার পাশে বসেছিল সে-ই এই ব্যাগের মালিক। সারাদিন আর কেউই সামনের সিটে বসে নি। বন্ধুটি আমাকে আমার বাসায় নামিয়ে দিয়ে কাজে চলে গেল। বাসায় ফিরে খাওয়াদা-ওয়া সারলাম, তারপর বসলাম ব্যাগ নিয়ে। এই ব্যাগের মালিককে যেভাবেই হোক খুঁজে বের করতে হবে। বিদেশ বিভূঁইয়ে বেচারা ব্যাগ হারিয়ে নিশ্চয়ই চোখে সর্ষেফুল দেখছে! ব্যাগে অর্থের পরিমাণ অনেক। প্রায় তিন হাজার ইউএস ডলার আর বেশ কিছু জাপানিজ ইয়েন। ইয়েনের পরিমাণ বুঝতে পারলাম না। কারণ প্রতিটি নোটেই অনেকগুলো শূন্য বসানো। এড্রেসবুকের পাতা উল্টাতে শুরু করলাম। কিছুই বুঝলাম না। কারণ সবকিছুই জাপানিজ ভাষায় লেখা। হঠাৎ মনে পড়ল জাপানিজ লোকটা নামার সময় আমার কাছ থেকে ভাড়ার রিসিট নিয়েছে। সে নিশ্চয়ই ট্যাক্সি অ্যান্ড লিমোজিন কমিশনের সাথে যোগাযোগ করবে। টিএলসির কাছে সব ট্যাক্সিড্রাইভারের ফোন নম্বর আছে। তাছাড়া গাড়ি যে গ্যারাজের সে গ্যরাজের নম্বরও আছে। দু’দিন কেটে গেল কেউই আমাকে ফোন করলো না!

দু’ দিন পরের এক দুপুরবেলা। সেদিন আমার ছুটি। ছুটি-ছাটার দিনে আমার স্ত্রী রান্না করে না। বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসি। আমরা যে অ্যাপার্টমেন্টে থাকি তার নিচের তলায় নতুন এক জাপানিজ রেস্টুরেন্ট কিছুদিন হয় চালু হয়েছে। ভাবলাম আজ দুপুরে জাপানিজ খাবার চেখে দেখি। এর আগে কখনো জাপানিজ খাবার খাওয়া হয় নি। জাপানিজ রেস্টুরেন্টে যাব বলে বাসা থেকে বের হচ্ছি, ঠিক তখনই আমার স্ত্রী বলল, এই তুমি যে ব্যাগটি পেয়েছে সেটা ওই রেস্টুরেন্টের কাউকে দেখালে কেমন হয়? এড্রেস বুকে কী লেখা আছে ওরা নিশ্চয়ই বুঝবে, ওরাও-তো জাপানিজ! আমার স্ত্রী অতি রূপবতী এবং বোকাসোকা টাইপের মহিলা রূপবতীদের বেলায় যা হয় আরকি; তার মাথায় এমন একটা আইডিয়া আসতে পারে তা আমি স্বপ্নেও ভাবি নি। স্ত্রীর বুদ্ধিমত্তায় আমি তখন বিস্মিত!

(চলবে…)

Leave a Reply

Your identity will not be published.