[এই ধারাবাহিকটির লেখক তানকিউল হাসান, আর্থিক অনটন থেকে মুক্তির আশায় নিউইয়র্কের রাস্তায় শুরু করেছিলেন ট্যাক্সি চালানো। সেই সময় তিনি মুখোমুখি হন বিচিত্র অভিজ্ঞতার। সেইসব ঘটনাই ফুটে উঠেছে এই ধারাবাহিক রচনায়। আজ পড়ুন ১৭তম পর্ব।]
প্রথম পর্ব দ্বিতীয় পর্ব তৃতীয় পর্ব চতুর্থ পর্ব পঞ্চম পর্ব
ষষ্ঠ পর্ব সপ্তম পর্ব অষ্টম পর্ব নবম পর্ব দশম পর্ব
পর্ব ১১ পর্ব ১২ পর্ব ১৩ পর্ব ১৪ পর্ব ১৫ পর্ব ১৬
আমি গাড়ি পার্ক করে পুরো সিট, মেঝে, সিটের পেছন সবই দেখলাম। কিছুই বাদ দিলাম না। কিন্তু কোথায় কী?
টিএলসি আবারও ফোন করল। তাদের বললাম, প্যাসেঞ্জার দশটার দিকে উঠেছে, এখন বাজে দুপুর একটা। এই দুই তিন ঘণ্টায় নিউইয়র্ক শহরের ট্যাক্সির পেছনের সিটে ডায়মন্ডের ব্রেসলেট পেলে কি কখনও ড্রাইভারকে তা ফেরত দেবে?
টিএলসির মহিলা ওপাশ থেকে হেসে বলল, ঠিকই বলেছ। তোমার সময় নষ্ট করার জন্য দুঃখিত।
ফোন ছেড়ে গাড়িতে প্যাসেঞ্জার উঠিয়েছি ঠিক তখনই মনে পড়ল এক কালো লোক আমার গাড়ি থেকে খুব খোশমেজাজে নেমেছিল আর আমাকে বলছিল, ‘এটা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ ক্যাব রাইড।’ সে কি ব্রেসলেটটি পেয়েছিল? কে জানে!
মুকুল আসাদুজ্জামান নামক এক বাংলাদেশির গাড়িতে এক বাহাত্তর বছরের বৃদ্ধা একুশ হাজার ডলার ফেলে গিয়েছিলেন। মুকুল সাহেব অনেক ঝামেলা করে সেই বৃদ্ধাকে খুঁজে বের করে তার টাকা ফেরত দিয়েছিলেন। আফ্রিকান এক ড্রাইভার ডায়মন্ড ও স্বর্ণালংকার ভর্তি ব্যাগ তার মালিককে খুঁজে ফেরত দিয়েছিলেন।
এরকম ঘটনা অসংখ্য। আমার ষোল বছরের ক্যাবজীবনে অনেক মানুষ অনেক কিছুই আমার ট্যাক্সিতে ফেলে গেছে। যা যা ফেলে গেছে তার ছোট্ট একটি তালিকা দিচ্ছি।
ফোন: অসংখ্যবার। অনেকগুলো ফেরত দিয়েছি এবং ভালো বকশিস পেয়েছি। স্ক্রিন লকের কারণে কিছু কিছু ফেরত দেওয়া সম্ভব হয়নি এবং ফোনের মালিকও ফোন করে নি। তিন-চারটি আইফোন এখনো আমার ড্রয়ারে পড়ে আছে।
ল্যাপটপ: তিনবার ফেলে গেছে। দুটো মূল মালিকের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছে, একটা পুলিশের লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ডে জমা দিয়েছি।
স্যুটকেস: এক মহিলা গাড়ি থেকে নেমে হনহন করে হেঁটে টাইমস স্কয়ারের জনসমুদ্রে হারিয়ে গেল। আমি গাড়ির ট্রাংক খুলে তাকে আর পাই না। তাকে কোথা থেকে উঠিয়েছিলাম সেটা মনে ছিল। আমি স্যুটকেস দুটো ওই মহিলার অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিঙয়ের ডোরম্যানের কাছে ফেরত দিয়েছি। ডোরম্যান আমাকে বিশ টাকা বকশিস দিয়েছিল।
ছাতা: বৃষ্টির দিনে সবাই গাড়িতে ছাতা ফেলে যায়। আমার সংগ্রহে অনেকগুলো ছাতা। ছাতাতে তো কারও নাম-ঠিকানা লেখা থাকে না। অতএব মালিক খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। আমি আমার আত্মীয়স্বজনকে অনেক ছাতা উপহার দিয়েছি, আবার অনেকসময় পূর্ববর্তী প্যাসেঞ্জারের ছাতা পরবর্তী প্যাসেঞ্জারকেও দিয়েছি।
গাঁজার পোটলা/ কোকেইন: ফেলে দিয়েছি। দুই একবার ইয়াং ছেলেপেলে গাড়িতে উঠলে তাদের উপহার দিয়েছি। তাদের দেওয়া বকশিস আমাকে হতভম্ব করেছে।
গ্লাভস, হ্যাট, স্যুয়েটার, জ্যাকেট: কাজ শেষে ময়লার ঝুরিতে ফেলেছি কিংবা গ্যাসস্টেশনের এটেন্ডেন্টকে উপহার দিয়েছি।
লন টেনিস রেকেট: বিখ্যাত টেনিস প্লেয়ার জন ম্যাকেনরো তাঁর টেনিস রেকেট আমার গাড়িতে ফেলে গিয়েছিল। সেটা তাকে ফেরত দিয়েছি। এখানে উল্লেখ্য যে, নিউইয়র্ক শহরের রেন্ডালস আইল্যান্ডে জন ম্যাকেনরোর টেনিস একাডেমি আছে। তাকে আমি সেখানে নামিয়েছিলাম।
(চলবে…)
Leave a Reply
Your identity will not be published.